![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা এখন। অফিস শেষ হতে দেরী হবে দেখে ড্রাইভার কে ছেড়ে দিয়েছি। খুব ভালো ড্রাইভ করতে না পারলেও কাজ চালিয়ে নিতে পারি। ফাঁকা রাস্তা হওয়াতে একটু ভালোই হয়েছে। নিজে চালাচ্ছি বলেই বোধ হয় নিয়ম একটু বেশী মানছি। সব ক্রসিং এ নিয়ম মানছি। ট্রাফিক না থাকলেও।
আরও একটা কারণে আজ মেজাজ বেশ ফুরফুরে। একটা পত্রিকা থেকে অফার পেয়েছি ঈদ সংখ্যায় লেখা দেয়ার। রাজশাহীতে থাকতে ওখানকার লোকাল পত্রিকায় কিছু গল্প ছাপিয়েছিলাম। কখনও একে তাঁকে ধরে। কখনও পয়সা দিয়ে। খুব ভালো লিখি কি না জানি না, তবে বড় কোন পত্রিকায় লেখা পাঠাতে সাহস করিনি। আজকে ব্যাংকে এসেছিলেন এক বড় পত্রিকার সম্পাদক। কিছু লোন চাই। নিজের একটা প্রকাশনা খুলবেন।
সুযোগটা কাজে লাগালাম। বাই দ্যা ওয়ে জানাচ্ছি এমন ভাব করে নিজের সুপ্ত প্রতিভার কথাটা বললাম। বেশ কিছু কাগজপত্র পূরণ করার কাজ ছিল। তাই চুপচাপ বসে না থেকে আমার একটা লেখা পড়তে অনুরোধ করলাম। ভদ্রতার খাতিরেই বোধ হয় পড়লেন। চেহারা দেখে মনে হল না খুব ভালো লেগেছে, তারপরও প্রশংসা করলেন।
“আরও কিছু লেখেন। সামনের বইমেলায় তাহলে একটা বই ছাপানো যাবে।“
হয়তো লোন দ্রুত পাওয়ানোর জন্য বললেন। খুব সিরিয়াসলি নিই নি। প্রকাশনার যা নিয়ম কানুন, আমাকে হয়তো কিছু ঢালতে হবে বই ছাপানোর জন্য। সে দেখা যাবে। আপাতত কথাটা শুনে রাখলাম। পরে একবার টোকা দিয়ে দেখা যাবে।
ফর্ম গুলো পূরণ করিয়ে উনাকে ছেড়ে দিলাম। খুব দ্রুতই উনার লোন টা পাইয়ে দিব কথা দিলাম।
‘এবারের আমার পত্রিকার ঈদ সংখ্যার জন্য একটা লেখা দেন’ ভদ্রলোক উঠতে উঠতে বললেন।
যদিও জানি আশ্বাস টা মিথ্যা। জমা হয়তো নেবেন কিন্তু ছাপবেন না। তারপরও কেন যেন আরেকটা গল্প লিখতে মন চাচ্ছে। আতিপাতি করে গল্পের প্লট খুঁজছি। যাই দেখছি তাঁর ভেতরেই গল্প খোঁজার চেষ্টা করছি। স্মৃতি রোমন্থন, ক্লায়েন্টদের গল্প, কলিগদের গল্প সব কিছুই ঘুরছে মাথায় কিন্তু গল্প হচ্ছে না।
ক্যান আই হ্যাভ আ লিফট?
২
কোথায় যাবেন?
আমি তো বাসায় যাব।
আমাকে বাসায় নিয়ে যাবেন?
মেয়েটা তো বেশ স্মার্ট। নিজের পেশার পরিচয় একটু ঘুরিয়ে কিন্তু বেশ সুন্দরভাবে দিতে জানে। আমিও যে একেবারে বুঝিনি, তা না। তবে বেশভূষা এতোটাই স্মার্ট যে একটু দ্বন্দে পরে গিয়েছিলাম। আর এমন একটা পরিচয় নিজে থেকে স্বীকার না করলে তো আর ঠিক জিজ্ঞেস করা যায় না। যদি তেমন কিছু না হয়?
প্রথমটায় বেশ চমকে উঠেছিলাম। কিছুটা অন্যমনস্ক থাকার জন্যই বোধহয় লক্ষই করিনি কখন মেয়েটা এসে গাড়ীর জানালার পাশে দাঁড়িয়েছে। এতো রাতে এখানে কি করে? বাজে পেশাটার কথা প্রথমেই মনে এসেছিল। আবার ভাবলাম, হয়তো সত্যিই বিপদে পড়েছে। এদিকে কোথাও এসেছিল, যাওয়ার জন্য কিছু পাচ্ছে না দেখে লিফট চাইছে।
মনের কোনে বোধহয় একটা ইন্টিউশান কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল একটা গল্পের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। এই মেয়ের হয়তো একটা দারুণ হৃদয়বিদারক কাহিনী আছে। একটু সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে হয়তো গল্পটা বলতেও পারে। ওদের আবার অনেক মিথ্য গল্পও তৈরি থাকে। তেমন একটা গল্প পেলেও চলবে। আসলে কিছু ভেবে ওকে গাড়ীতে উঠাইনি। অনেকটা ‘দেখা যাক কি হয়’ টাইপ একটা খেলা খেলতেই হয়তো এই লিফট দিচ্ছি।
ব্যাচেলার?
না। দুটো মেয়েও আছে।
একটা কথা বলব?
বল।
এধরনের লিফট দিতে রাজী হওয়া মানে কিন্তু আমরা ধরে নিই, আপনি রাজী।
এবার মেয়েটার দিকে ভালোভাবে আবার তাকালাম। কেমন আট্রাকশান বোধ করছি। কেন যেন কিছুটা সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে। বললাম,
পরিচিত কোন জায়গা আছে? আই মিন সিকিউরড।
মেয়েটা আড় চোখে তাকাল। আঁচ করার চেষ্টা করছে আমাকে। চোখে কিছুটা সন্দেহ। কিছুটা দ্বিধাও আছে। নেমে যেতে চাইবে কিনা ভাবছে? নেহাত ভদ্রলোক হলে আজকের রাতটা নষ্ট যাবে।
আমাকে বরং নামিয়ে দিন।
৩
বস।
এটা কার বাসা?
আমার এক বন্ধুর। ওরা একটু বাইরে গেছে। কেয়ার টেকার আমাকে চেনে, তাই চাবি দিয়ে দিল।
কাজটাতে কিন্তু রিস্ক আছে। ও কিন্তু বলে দিবে।
রিস্ক নেয়া ছাড়া আড় কোন উপায় ছিল না।
আমাকে নামিয়ে দিলেই তো পারতেন।
দেখো, বুঝতেই তো পারছো, এটা আমার প্রথম এক্সপেরিয়েন্স। কিছু ব্যাপার কিন্তু আমার জানা নেই।
ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কি প্রসঙ্গে কথাটা বললাম বোঝার চেষ্টা করছে। কেয়ারটেকার কিভাবে ম্যানেজ করবো না তাঁর ব্যাপারে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো,
যেমন?
এই যেমন, তোমাদের খাওয়া অফার করতে হয় কি না? আই মিন কখন খেয়েছ?
মেয়েটা হেসে ফেলল। বেশ সুন্দর হাসি। এরপর দুষ্টামি ভরা চোখে তাকাল
-কৃপণরা খাওয়ায় না। তবে অনেকেই খাওয়ায়। বিশেষকরে পুরো রাতের ক্লায়েন্টরা।
-আমি যদিও কৃপণ বাট আমার নিজেরও যেহেতু খাওয়া হয় নি খাওয়ার আনাবো। আর তোমাকে খেতে না দিয়ে শুধু শুধু সামনে বসিয়ে রাখতে বিবেকে লাগবে।
-একটা কথা বলব?
-না। খাওয়া শেষ হোক তারপরে। আড় হ্যাঁ পেট ভরেই খেও। তোমার পেমেন্ট থেকে কাটা যাবে না।
মেয়েটা হাসছে।
-বসুন। আমি সারভ করছি।
-হাসছো কেন?
-খাওয়া শেষ হোক, তারপরে।
৪
বাসায় ফোন করে দিয়েছি। আজকে আসবো না। ফলে সেদিক দিয়ে তেমন সমস্যা হবে না। তবে এখানে একজন মেয়ে সহ আসার ব্যাপারটা জানাজানি হওয়া আটকাবার তেমন কোন বুদ্ধি পাচ্ছি না। ব্যাপারটা আসবার সময়ি ভেবেছি। সত্যি কথা বললে বিশ্বাস করবে কি না কে জানে। তবে কেয়ারটেকার কে টাকা দেয়া যাবে না। আমার বন্ধুর খুব বিশ্বস্ত লোক। টাকা দিতে চাইলে বরং এখান থেকে চলে যেতে বলবে। বরং বলব, মেয়েটা আমার পরিচিত। আজকে রাতটা এখানে থাকবে। বলে যদি আমি চলে যাই, তেমন আপত্তি করবে না। অনেক ভেবে ঠিক করলাম, অনেস্ট কনফেশান করব। যে কারণে এসেছি, সেটাই বলব।
এ নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আপাততঃ নিজের কাজে মন দিই। মেয়েটাকে ডাকলাম
চল।
কোথায়?
ব্যল্কনিতে।
মানে? ওখানে?
কিছুক্ষণ আগে তুমি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে। সেটা শুনবো।
খুব জরুরী কিছু না।
তা হয়তো। তারপরও, শুনবো। আসলে ওখানে আমি একটা সিগারেট খাবো। একা বসার চেয়ে বরং দুইজন গল্প করি।
বেশ অনিচ্ছা নিয়েই মেয়েটা এসে বসল। ব্যল্কনিটা বেশ বড়। একটা ছোট টেবিল আড় দুটো চেয়ার আছে। মুখোমুখি বসলাম। নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম,
এক কাপ চাপ হলে বেশ ভালো লাগতো না?
বানাবো?
তা বানাতে পার। সবকিছুই হয়তো কিচেনে আছে। কেয়ারটেকার কে ডাকছি।
লাগবে না। আমি খুঁজে নেব।
আমি হেল্প করবো?
নিজের বাড়ীতেও হেল্প করেন?
৫
আমি কিন্তু পেমেন্ট নিব।
চায়ে চুমুক দিতে যাচ্ছিলাম। প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলাম। মেয়েটা কি ভেবেছে পেমেন্ট দিবো না? নাকি এখনই অগ্রিম টাকা দেয়া নিয়ম। কিন্তু মেয়েটার কথার ভেতরে কি যেন একটা ছিল। জিজ্ঞেস করলাম,
পেমেন্ট দিব না সন্দেহ করছো?
আমাকে কেন এনেছেন?
বেশ সরাসরি প্রশ্ন। মনে হচ্ছে বুঝে ফেলেছে। আমি নিজেও হয়তো কিছুক্ষণ পরে বলতাম। কি বলব, কিভাবে বলব কথাগুলো, সেটাই গুছাচ্ছিলাম। অনেকটাই তৈরি করে ফেলেছি। কিভাবে শুরু করবে ভাবছি।
চা টা সুন্দর হয়েছে।
আমার যেটা মনে হচ্ছে, আপনি প্রথমে বুঝতে পারেন নি আমি কি। যখন বুঝলেন তখন ভাবলেন না বুঝে আমার আজকের রাতের ইনকাম নষ্ট করার জন্য আপনি নিজে দায়ী। আড় তাই বিবেকের তাড়নায় এখানে নিয়ে এসেছেন, কিছুক্ষণ গল্প করবেন আর আমার পেমেন্ট দিয়ে দিবেন।
এঁরা সম্ভবতঃ খুব ভালো সাইকোলজিস্ট হয়। মেয়েটার কথা বলায় কোথায় যেন একটা রাগ ছিল। আমার বোকামির জন্য রাগ? নাকি এভাবে টাকা নিতে রাগ?
তোমার মা এখন কোথায়?
মায়ের প্রসঙ্গ আসছে কেন?
বেঁচে আছে?
না। আমি ব্যক্তিগত আর কোন প্রশ্নের উত্তর দিব না।
ঐ নির্জন রাস্তায় এতো রাতে কেমন মেয়েরা দাঁড়ায়, তা না বোঝার মত বোকা তো আমি না। আর বুঝেই তো গেছো, এমন মেয়েদের প্রয়োজন পড়ে, আমি এধরনের লোকও না। তোমার একবারও সন্দেহ হয় নি, অন্য কিছু হতে পারে?
মেয়েটা এবার দ্বন্দ্বে পড়েছে। বেশ কনফিউসড। এতক্ষণ বেশ কনফিডেন্ট ছিল আমাকে নিয়ে। এবার বুঝে উঠতে পারছে না আমার উদ্দেশ্য।
আজ থেকে বিশ বছর আগের কথা। একটা মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেম ছিল। আমার বয়স তখন একুশ বাইশ। সেই বয়সের ইচ্ছা তো বোঝোই। একদিন ঝোকের মাথায় মেয়েটাকে রেপ করে ফেলি। এরপরে আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।
মেয়েটা নির্নিমেষে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে হঠাৎ গল্প শুরু করলাম কেন?
তোমাকে দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। আমার সেই প্রেমিকার সঙ্গে তোমার চেহারার অদ্ভুত মিল। সম্ভবতঃ তোমার মা ই আমার সেই প্রেমিকা। তাই জানতে চেয়েছিলাম তোমার মা বেঁচে আছে কি না। কোন ছবি আছে সঙ্গে?
না।
মেয়েটার চোখ থেকে এবার টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। একসময় শান্ত হল। নিজের সম্পর্কে বলতে শুরু করলো। তার আসল নাম, কিসে পড়ে, বাসায় আর কে কে আছে, কি করে, কিভাবে এই পথে এলো। বেশ মনোযোগ দিয়েই ওর গল্প শুনলাম। গল্পটা খারাপ না। একেবারে দারিদ্রের ঘ্যান ঘ্যানানি নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। প্রেম, রেপ, ধোঁকা সবই আছে। সব মিলিয়ে গল্পের প্লট হিসেবে দারুণ।
সুন্দর একটা গল্পের প্লট পেতে আমাদের কত কি মিথ্যে যে বলতে হয়!
২| ১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:০৩
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫৪
আরজু পনি বলেছেন:
সুন্দর একটা গল্পের প্লট পেতে আমাদের কত কি মিথ্যে যে বলতে হয়!
১৩ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৩ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: থিমটা অন্যরকম! ভাল হয়েছে! ++++
১৩ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১৪ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৪৯
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভালো লাগলো ভাইয়া
১২ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১১
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
মায়াবী ছায়া বলেছেন: +++