![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষটি এটি অন্যায় করেছিলেন। তবে খুব সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। তারপরও কাজটাকে কুকীর্তিই বলা হবে। সে সম্পর্কে একটু পরে বলব। তাঁর আগে বলব দারুণ মেধাবী এই গবেষক মানুষটার জীবনে ঘটে যাওয়া প্রথম বিতর্কের গল্প।
মানুষটির নাম জি এইচ আরমার হ্যানসেন। জন্ম ১৮৪১ এর ২৯শে জুলাই নরওয়েতে। পনের সন্তানের ভেতর তিনি ছিলেন অষ্টম। পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ১৮৪০ এর কঠিন সময়ে তিনি ব্যবসায় লস করে দেউলিয়া যান। সংসারকে সাহায্য করতে তাই হ্যানসেন ক্রিস্টিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। মেডিকেল স্কুলে পড়াশুনা কালীন তিনি প্রায়ই তাঁর শিক্ষকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়তেন। তাঁকে একসময় অ্যানাটমির খন্ডকালীন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়। ছাত্রদের ভেতর দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
১৮৬৬ তে তিনি মেডিসিনে অনার্স মার্ক পেয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ক্রিস্টিয়ানা ন্যাশনাল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করে লফটনের এক ছোট মৎস কমিউনিটির চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৮৬৮ তে চলে আসেন মাতৃভূমি নরওয়ের বারগান এ। উদ্দেশ্য গবেষণা করা।
সে সময়ে লেপ্রোসি বা কুষ্ঠ রোগীদের দেখাশুনা করতেন নান এবং ধর্মযাজক রা। খুব অল্প সংখ্যক হাসপাতালেও এই সব রুগীদের থাকতে দেয়া হত। তাঁর একটি ছিল সেন্ট জর্গান হাসপাতাল। এর চীফ ফিজিশিয়ান ছিলেন ড্যানিয়েল ডেনিলসেন। তিনি ১৮৩৯ থেকে ১৮৪০ পর্যন্ত কার্ল উইলহেম বোয়েক কে সঙ্গে নিয়ে লেপ্রোসি নিয়ে গবেষণা চালান, এবং লেপ্রোসি গবেষণার ওপর তাঁদের গবেষণাপত্র তৈরি করেন। প্রকাশিত হওয়ার পরে দারুণ প্রচারণা পায় গবেষণাপত্রটি। লেপ্রোসি গবেষণার একটি পীঠস্থান হয়ে ওঠে বারগান শহর।
১৮৪৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় লাঙ্গেগারদেন লেপ্রোসী হাসপাতাল। ডেনিলসন ছিলেন তাঁর মুখ্য চিকিৎসক। ডেনিলসন এবং এবং তাঁর সহ গবেষক বোয়েক দুজনেই মনে করতেন লেপ্রোসি বংশগত রোগ।
এদিকে লেপ্রোসি রুগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় আরেকটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এই হাসপাতালেই হ্যানসেন এসে যোগ দেন ১৮৬৮ তে। সেই হাসপাতালের চীফ ফিজিশিয়ান তখন ড্যানিলসন। কিছুদিনের ভেতরই তিনি তাঁর সহকারী নিযুক্ত হন। একদিন তাঁর মতবিরোধ হয়ে যায় ড্যানিলসনের সঙ্গে। লেপ্রোসির কারণ নিয়ে। ড্যানিলসনের মতে এরোগ ‘বংশগত’ আর তাঁর ধারণা এই রোগ ‘ব্যক্টেরিয়ার’ কারণে।
১৮৭০ এ হ্যানসেন একটি গ্র্যান্ট পেলেন বন এবং ভিয়েনায় যেয়ে হিস্টোপ্যাথলজি নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য। ড্যানিলসনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ততদিনে মিটে গেছে। তিনি তাঁকে অনুমুতি দিলেন পড়াশোনা করতে যাওয়ার। ফিরে এলেন ১৮৭৩ সালে। বিয়ে করলেন ড্যানিলসনের কন্যা স্তিফেন মেরি কে। ফিরে এসেই হ্যানসেন লেগে পড়েন লেপ্রোসির কারণ অনুসন্ধানের গবেষণায়। প্রথমে খুজলেন লেপ্রোসি রুগীর রক্তে। পেলেন না। এরপর খুজলেন রোগীর নডিউলে। এখানে তিনি লম্বা আকৃতির জীবাণুর দেখা পেলেন। এগুলোকে তিনি ‘ব্যাকটেরিয়া’ বললেন এবং লেপ্রোসীর কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন। এসব আবিস্কার নিয়ে তিনি তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন ১৮৭৪এ।
‘ব্যাক্টেরিওলজি’ তখন শৈশব চলছে। জীবাণু দেখবার কিংবা সেসব ‘স্টেইন’ বা ‘রঞ্জিত’ করবার খুব ভালো ব্যবস্থা তখনও তৈরি হয় নি। তাঁর এই আবিস্কার খুব বেশী গ্রহণযোগ্যতা পেল না। এমন সময় ১৮৭৯ তে একদিন রবার্ট কক এর ছাত্র অ্যালবার্ট নিসার (যিনি গনোরিয়ার জীবাণু আবিস্কার করেন) এলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁকে তিনি জানালেন তাঁর আবিস্কারের কথা। কিছু ‘স্পেসিমেন’ তাকে দিলেন যা তিনি লেপ্রোসি রুগীর ‘নডিউল’ থেকে বের করেছেন। নিসার সেসব সঙ্গে করে নিয়ে এলেন। কিছুদিন পরে তিনি উন্নত পদ্ধতিতে এসব ব্যাকটেরিয়া রঞ্জিত করতে পারলেন। খুব সুন্দরভাবে এগুলো দেখা যেতে লাগলো। তিনি দাবী করে বসলেন ‘তিনিই লেপ্রোসীর জীবাণুর আবিষ্কর্তা’। তাঁর জীবনের প্রথম বিতর্ক।
এ নিয়ে প্রচুর বাকবিতন্ডা হয়। তিনি দাবী করেন তিনি এই জীবাণুর আবিষ্কর্তা। তাঁর স্বপক্ষে তাঁর প্রকাশিত গবেষণাপত্র দেখান। অবশেষে এই আবিস্কারের কৃতিত্ব তাঁকে দেয়া হয়। এখনও লিপ্রোসীর জীবাণুকে বলা হয় ‘হ্যানসেনস ব্যাসিলাই’ আর অসুখটিকে বলা হয় ‘হ্যানসেনস ডিজিজ’। এর এক বহরের ভেতরই তিনি তাঁর দ্বিতীয় বিতর্কের জন্ম দেন। কারো মতে তা ছিল তাঁর কুকীর্তি, কারো মত বোকামি। কারো মতে অন্যায়।
১৮৮০ সাল। লেপ্রসি জীবাণুর গবেষণা নিয়ে তখন তিনি মরিয়া। জীবাণুটির চরিত্র বোঝার জন্য তিনি উঠে পরে লেগেছেন। এজন্য চাই জীবাণুকে অন্যত্র বংশ বিস্তার করানো। যেখানে পারছেন সেখানে চেষ্টা করছেন। কোথাও সফল হচ্ছেন না। যত জিব জন্তু পারছেন সবার দেহেই চেষ্টা চালালেন জীবাণু প্রবেশ করিয়ে অসুখ তৈরির। শেষে নিজের শরীরে তিনি জীবাণু প্রবেশ করালেন,লেপ্রোসি রুগীর শরীর থেকে বের করা জীবাণু মিশ্রিত রস। রোগ তৈরি করতে সক্ষম হলেন না। তাঁর শ্বশুর ড্যানিলসন এর শরীরেও চেষ্টা হল। এরপর একে একে চেষ্টা চলল হাসপাতালের কর্মচারী, রুগী অনেকের ওপর।
এরপর একদিন এক রুগীনির চোখে জীবাণু ছোয়াতে যেয়ে ধরা পরে যান। রুগিনির বড় কোন ক্ষতি না হওয়ায় আর তাঁর সুনামের কারণে তাঁকে মৃদু শাস্তি দেয়া হয়। হাসপাতালের পদ তিনি হারান। তবে তাঁকে কেবল জীব জন্তুর ওপর গবেষণার অনুমুতি দেয়া হয়। তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজ অবশেষে শেষ হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর অনেক বছর পরে। মহান এই গবেষক ১৯১২ সালে মৃত্যু বরন করেন। তখন পর্যন্ত এই জীবাণু কোন জীব-জন্তু কিংবা কৃত্রিম উপাদানে জন্মানো সম্ভব হয় নি। আজও কেবল ইদুর আর আর্মাডিলো এর পায়ের পাতায় এই জীবাণু জন্মানো সম্ভব হয়েছে, কিন্তু কোন কৃত্রিম মাধ্যমে এই জীবাণু কে এখনও জন্মানো সম্ভব হয় নি। কে জানে আদৌ কোনদিন সম্ভব হবে কি না।
১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১৪
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: তা তো আমি বলিনি। স্টেইন করতে পারছিলেন না। জেতা নিসার করেন। তবে আবিস্কার বা প্রথম সন্দেহ হ্যান সেন ই করেন। আমি আমার লেখায় ও তাই বলেছি
২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২৬
সেফানুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ।
১৫ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আপনাকে ও
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০৯
সেফানুয়েল বলেছেন: আমি লেপ্রসী মিশনে চাকুরী করি । মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রী নামক এক ধরনের ব্যাকটিরিয়ার আক্রমনে কুষ্ঠ রোগ হয়। এবং আমরা যেটা জানি হ্যানসনই হচ্ছেন এর আবিস্কারক। আপনার কথা যদি সঠিকও হয় তাহলেও অ্যালবার্ট নিসার যে নডিউল বের করেছেন তা তিনি নিজে পরীক্ষা করে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নি। পারেন নি বলেই বাধ্য হয়েই হ্যানসনের কাছে এসেছেন। পক্ষান্তরে হ্যানসন এর আগেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে কুষ্ঠ রোগ ব্যাকটিরিয়ার আক্রমনে হয়। হয়তো তার কাছে প্রমান ছিল না কিন্তু তার সন্দেহটা শুরু থেকেই সঠিক ছিলো। এবং তিনি গবেষনার সঠিক ট্র্যাকে ছিলেন। বিষয়টা এমন নয় যে অ্যালবার্ট নিসার নডিউল না আনলে তিনি আবিস্কার করতে পারতেন না।