নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রত্যাশিত একটি রায় এবং পরবর্তী আওয়ামী পদক্ষেপ

১৫ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৬

রায়টা আর কারো কাছে প্রত্যাশিত না হলেও আমার কাছে প্রত্যাশিত ছিল। কিছুদিনে আগে রিজভি এবং রাজ্জাকের মিটিং। তাঁর পরেই রায়ের দিন ঘোষণা কেমন যেন ছকে বাঁধা মনে হয়েছিল। কেবল অপেক্ষা করেছিলাম ‘কারণ’ দেখার জন্য। কি কারণ দেখিয়ে ‘ফাঁসি’ মউকুফ হবে। আরও একটা সম্ভাবনা ভেবে রেখেছিলাম, ফাঁসির রায় দেয়া হবে কিন্তু অসুস্থতার কারণে ফাঁসি দেয়া হবে না—এমন কিছু। জামায়াত সম্ভবতঃ এমন একটা আঁতাতে রাজী হয় নি।

বিএনপি হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। তাঁদের তেমন কোন বিবৃতি না দিলেও চলবে। জামায়াত হয়তো ‘অখুশি’ হওয়ার নাটক করবে। তবে বিক্ষোভ টাইপ কিছু কর্মকাণ্ড চালাবে, হরতাল আর হয়তো ডাকবে না। হেফাজতকেও দরকার পড়বে বলে মনে হয় না। ‘তেতুল’ নিয়ে বেচারা শফি এমনিতেই ঝামেলায় আছেন। আওয়ামী লীগ তাঁদের যুক্তি তৈরি করছে। দারুণ তাত্ত্বিক কোন বক্তব্য দিবে কিংবা আদালতের ঘাড়ে চাপাবে। বাকী থাকল শাহবাগ আর সেনাবাহিনী।

শাহবাগ প্রথমে ভেবেছিল তাঁরা খুব শক্তিশালী। রায়ের দিন জমায়েত হবে আর আর ‘ফাসি’র আদেশ হয়ে যাবে। ভেবেছিল জামায়াত মেরুদণ্ড হীন একটি দল। তাঁরা কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকবে। কিংবা করলেও বড়জোর হরতাল, ভাংচুর আর চন্দ্রাভিযান। ভেবেছিল সাইদীর রায় তাঁদের সাফল্য। সেই ফর্মুলায় গোলাম আজমও ভেসে যাবে। যে কথাটা ভাবে নি তা হচ্ছে, জামায়াতকে কি তাঁরা হারাচ্ছে না জামায়াত ইচ্ছে করে হারছে। গোলাম আজমের কথা ভেবে বাকী রায়গুলোতে ওয়াক ওভার দিচ্ছে। দুর্নীতি তে প্রথম হওয়া এই দেশের সবচেয়ে দুর্নীতি গ্রস্থ প্রতিষ্ঠান ‘রাজনৈতিক দল’ কি এমন পরিস্থিতিতে দুর্নীতি করবে না? আঁতাত হবে না?

শাহবাগের খুব বেশী কিছু করারও ছিল না। প্রথমে, যখন আন্দোলনটায় রাজনীতি ঢোকে নি, তখন দারুণ একটা সততা ছিল। চাওয়া বলতে তখন একটি ব্যাপারই ছিল ‘ফাঁসি’। এরপর যখন শাহবাগের পথ ধরে খ্যাতি আসতে শুরু করল, সেলিব্রিটি হওয়ার সুযোগ এলো তখন শুরু হল কোন্দল। কে কত বড় সেলিব্রিটি, কে কত বড় নেতা এই নিয়ে যেমন কামড়াকামড়ি শুরু হল তেমনি কোন দল নেতৃত্বে থাকবে কোন দলের নেতা কর্মীরা মঞ্চে দাঁড়াবে এই নিয়েও শুরু হল ঠেলাঠেলি। পরিণতি হিসেবে পাওয়া গেল দারুণ দুর্বল এক শাহবাগ কে।

আওয়ামী মতিগতিও খুব ভালো বোঝা গেল না। প্রথমটায় সমর্থন, পরে পিছুটান। কখনও মুক্তমনাদের প্রতি সহানুভূতি কখনও হেফাজতের লেজুড়বৃত্তি। অবশেষে চেষ্টা হল দুই জনের কাছ থেকেই সমদূরত্ব। অনেকটা সফলও হোল এবং সে সঙ্গে হারাল সাধারণ মানুষের বিশ্বাসও। তাঁরা মুক্ত চিন্তার পক্ষে, না বিপক্ষে, সে ব্যাপারেও যেমন তাঁরা অস্পষ্ট অবস্থান নিল তেমনি তাঁরা এও স্পষ্ট করতে পারলো না হেফাজতের দাবির ব্যাপারে তাঁদের অবস্থান। চারজন ব্লগারকে গ্রেফতার করে হেফাজতকে সন্তুষ্ট করতে যেয়ে, হেফাজতও হাতছাড়া হোল, মুক্তচিন্তার মানুষরাও মুখ ফিরিয়ে নিল।

জনগণের জন্য প্রধান যে সমস্যা দেখা দিল তা হচ্ছে ‘যাবে কোথায়?’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বজাধারী দলটি বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করছে। ‘মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার কথা’ কেবল ভোট চাওয়ার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকেও তাঁরা ভোট পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ যখন উত্তাল তখন তাঁদেরকে সমর্থন আর যখন হেফাজতদের বিপুল জনসমাবেশ তখন হেফাজত তোষণ। ভোটের রাজনীতির এই মজার খেলায় দুইকুল রক্ষা করতে গিয়ে সবই হারাল। পাঁচ সিটিতে না পেল মুক্তমনাদের সমর্থন না পেল হেফাজতকে।

শাহবাগ আবার জেগে উঠবে কি না কিংবা জাগলেও আগের সেই উৎসাহ ফিরে পাবে কি না, এব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ না। যে অন্তর্কলহের কারণে আগেরবার শাহবাগের অকাল মৃত্যু হয়েছিল সেই কোন্দল আবার মাথা চাঁড়া দিবে কিনা এখনও তা স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগকে আর বিশ্বাস করা যায় কি না, কিংবা আবার আন্দোলন তৈরি হলে আবার সেখানে রাজনীতি প্রবেশ করতে দেয়া হবে কি না, এসবের ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী পরিস্থিতি।

আওয়ামী জামায়াত আঁতাতের ফলশ্রুতিতে আরও কিছু আকর্ষণীয় ঘটনা ঘটবে। আপাততঃ যে ‘কার্ড’ আওয়ামীলীগ হাতে রেখেছে তা হচ্ছে ‘জামায়াত’ নিষিদ্ধ করা। সেটা হয়তো অচিরেই করবে এবং বোঝানোর চেষ্টা করবে ‘কিছু একটা তাঁরা করেছে’। বাকীটা করবে আবার ক্ষমতায় এসে। তখন রায় কার্যকর। আর আদালতে যেহেতু তাঁদের কোন হাত নেই তাই সেখানে কিছু করা সম্ভব না। এই ফর্মুলায় শেষ রক্ষা হবে কি না জানি না তবে জামায়াত তাঁর প্রিপারেশান নিয়ে রেখেছে। যেদিন তাঁদের নিষিদ্ধ করা হবে পরের দিনই তৈরি হয়ে যাবে ‘জামায়াত-২’। ক্যাডার ভিত্তিক এই দলের সব নেতাকর্মীর কাছে নির্দেশ চলে যাবে নতুন দলে যোগদানের। নতুন সাইনবোর্ড কিংবা লেটারহেড হয়তো তৈরি করেই রেখেছে।

যে ফর্মুলায় আওয়ামীলীগ এবার ভোট চাইবে তা হচ্ছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তো বিএনপি বিশ্বাস করেই না, তাঁর ওপর ওদের সঙ্গে জামাতের জোট, এমন দলকে ভোট দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করবেন না আমাদের দেবেন। আপনাদেরকে আরও একটা ব্যাপারে সতর্ক করে দিই এই রায় নিয়ে দেশে যদি বেশী অরাজকতা করেন তবে কিন্তু অন্য একজন ক্ষমতায় চলে আসবে’। সেই একজনের কথা কিন্তু এখনও বলিনি। যদি না চান সেই একজন আসুক তবে এই রায় মেনে নিন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.