![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম যখন খবরটা পেলাম, বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম, না জানি কি বলবেন প্রধানমন্ত্রী। বেশী আগ্রহ ছিল নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কি বলেন তা জানতে। কোন নমনীয়তা দেখাবেন কি না। বক্তব্য শুরু হল নিজের সরকারের গুনগান আর সেই একই বিষয়ে কিংবা কথা প্রসঙ্গে বিরোধী দলের ‘দোষ গান’ দিয়ে। কিছুক্ষণ পরে পরেই ছিল সেই চিরাচরিত ‘অ্যান্টি সমালোচনা’ অবস্থান। রাগ আর অভিমান ‘আপনারা তো খালি সমালোচনা করেন’। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির তথ্যটি মনে রাখবার অব্যর্থ কৌশল হিসেবে তিনি প্রবর্তন করবেন ‘তিন ঘন্টার লোড শেডিং’ প্রোগ্রাম। এই সুসংবাদও জানালেন। ‘এই বিদ্যুৎ আমার, ইচ্ছে হলে দিবো, না হলে দিবো না’। সাংবাদিক সম্মেলনের মূল যে কারণ, পাটের ‘জেনোম সিকোয়েন্সিং’ এর খবরটা সকলকে জানানো, সেটা খবর হয়েও কেন যেন ঠিক ‘মূল খবর’ হতে পারলো না।
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অনেক বেশী সৎ। ভাব ভঙ্গিমায় অনেক বেশী ‘কনফিডেন্ট’। কথা বার্তায় আরও ছিল বেশ কিছু সংবাদ পত্রের প্রতি তাচ্ছিল্য। কিছু সংবাদ পত্রের সাংবাদিকের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করতেও ছাড়লেন না। এবং লুকোবার চেষ্টাও করলেন না তাঁর ‘ডোন্ট কেয়ার’ টাইপ মনোভাব। আলাপ আলোচনার জবাবে আসলো বেশ কিছু পাঞ্চ লাইন। তবে সবচেয়ে আলোড়ন তুলল ‘এক চুলও নড়া হবে না’ লাইনটা। বাংলাদেশের রাজনীতি যুগে যুগে বহু পাঞ্চ লাইনের জন্ম দিয়েছে। অনেকের সেই সব বক্তব্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়েও থেকেছে। এই বক্তব্যও বোধকরি সেই মর্যাদা পেতে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনটা হয়ে একটা কাজ ভালো হয়েছে, এক পক্ষের ‘ফাইনাল’ অবস্থান পাওয়া গেছে। সংবিধানে আর কোন সংশোধন এই পক্ষ করবে না। বিরোধী পক্ষকে আর আশায় রাখা সমীচীন মনে করে নি। যদিও এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কমই ছিল, তারপরও ‘আলোচনা’ শব্দটি মাঝে মাঝেই পত্রিকায় আসছিল। মনে হচ্ছিল, শেষ মুহূর্তে হয়তো কোন ছাড় দিলেও দিতে পারে। বিরোধী পক্ষ কখনও ‘হরতালীয়’ হুমকি কখনও ‘সমঝোতা’র ইচ্ছা ব্যক্ত করছিল। এবার তাঁদের জন্যও সুবিধা হল। এবার তাঁরা স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কবে, কখন বাতাস দিয়ে চুল উড়ানোর পরিকল্পনা নেবে।
নির্বাচনের সময়কালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে নিজের ‘শক্ত’ এবং ‘স্পষ্ট’ অবস্থান জানিয়ে দিলেন। একটি ব্যাপারে এবার তিনি প্রচণ্ড রকমের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আইনি পথে সুশীল সমাজকে কোনভাবেই আর ক্ষমতায় আসবার সুযোগ দিবেন না। এবার খেলা বিএনপির কোর্টে। নির্দলীয় বলে কিছু থাকবে না। এবারের এগার জন কোন না কোন দলেরই হবে। যদিও সংবিধানে বলা নাই কোন দল থেকে কয় জন, তবে সেখানে ভাগ নিতে চাইলে নিতে পারে। আর যদি নেয়, সে নিয়ে আলোচনা করলে, সেখানে দয়া দেখিয়ে ছাড় দিলে দিতেও পারে।
বল কিছুটা সুশীল সমাজের কোর্টেও। এখন তাঁরা ‘তত্ত্বাবধায়ক’ নিয়ে কথা বলবেন, না ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ ফর্মুলাটাকে একটু মাজা ঘষা করে কিভাবে জাতে তোলা যায় সে ব্যাপারে মত দিবেন, সে ব্যাপারটা এখন সুশীল সমাজকে ঠিক করতে হবে। বিএনপির উত্তরে কিছুটা দ্বৈততা আছে। বাতাসে চুল উড়াতেও চায় আবার আপাতত নমনীয় কর্মসূচী দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁদের অবস্থান নড়বড়ে। আন্দোলন করতে হয় তাই করা। মনে হচ্ছে একটু ‘ফেস সেভিং’ বেঁচে যায়। তেমন কিছু দিলে নির্বাচনে আসতে রাজীও হতে পারে। যেমনটা হয়েছিল ফখরুদ্দিন সাহেবের আমলে, দুই দিন পরে নির্বাচনের দিন দেয়ায় সমস্যার সমাধান হয়েছিল।
বিএনপির দোদুল্যমানতার আরও একটি কারণ হতে পারে। বিশেষ করে পাঁচ সিটি কর্পোরেশান নির্বাচনের পরে ‘নির্বাচনে’ জয়ের যে আশা তাঁদের জেগেছে তা মনে হয় না তাঁরা হাতছাড়া করতে চাইবে। যদি সত্যিই নির্বাচনে কারচুপি না করে বা প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন তা যদি সত্যিই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়াতে কোন বাঁধা না দেন, তবে তাঁদের নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়ে যাবে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য। বিদেশী প্রভুদের ইচ্ছাও একটা ফ্যাক্টর। আগামী কিছুদিনের কথাবার্তায় পরিষ্কার হয়ে যাবে বাতাস কোন দিকে।
একসময় আসলো মধ্যরাতের গলাকাটার হাতিয়ার ‘টক শো’ প্রসঙ্গ। বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বেশ ‘বেজার’ মনে হল। পত্র পত্রিকা কিংবা টিভিতে তাঁর সরকারের ‘সমালোচনা’ করাটাকেও ‘কটাক্ষ’ করতে ছাড়লেন না। একচোট কথা শোনালেন, আর এও জানিয়ে দিলেন ‘এসব সমালোচনাতে তাঁর কিছু যায় আসে না’। এক সুযোগে এই তথ্যও জানালেন যে তাঁর আমলে ‘এত্ত’ গুলো পত্রিকা আর টিভি চ্যানেল এর লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। আকারে ইঙ্গিতে যেন বুঝিয়েও দিলেন, এসব লাইসেন্স দেয়ার পেছনে তাঁর একটি সুপ্ত ইচ্ছে ছিল। ভেবেছিলেন এরা লাইসেন্স পেয়েই তাঁদের উচিৎ ছিল কৃতজ্ঞতার কারণে হলেও তাঁর সরকারের ‘চাটুকারিতা’ না হলেও ‘গুণকীর্তন’ করবে। তা না করে ‘সমালোচনা’ করা এদের খুবই অনুচিত হয়েছ।
‘চাটুকারিতা’ কি খুব উপকারী কিছু? বিটিভি তো করছেই। আর তা এখন থেকে তো না, সেই জন্মলগ্ন থেকেই। আর তাঁর ফলাফলও তো পরিষ্কার। যখন আর কোন উপায় ছিল না, তখন মানুষ দেখেছে। আর আজ, এতো সব চ্যানেলের ভিড়ে, নেহাত মাথায় বন্দুক না ঠেকালে কোন সুস্থ মানুষ ‘বিটিভি’ দেখে না। ওখানে করা নিজ সরকারের গুণগান, সরকারের নিজের লোকেরাও শোনে কি না সন্দেহ। যা শোনে তা হচ্ছে এইসব বেসরকারী টিভি চ্যানেলের টক টক ‘টক শো’। তাঁর কারণ মানুষ সত্য কথাটা জানতে চায়। ‘বিটিভি’ কে সত্য কথা বলতে শেখালে অনেকেই আবার হয়তো(??) সরকারী ‘টিভি’ দেখবে। এতো টক স্বাদের ‘টক শো’ আর দেখতে চাইবে না।
‘গুণগান’ আর ‘সমালোচনা’ দুটোই গনতন্ত্রে অংশ। গুনগান যেমন কাজের স্পৃহা বাড়ায়, সমালোচনা তেমনি ভুল শুধরে দেয়। যে কোন কাজেরই কিছু ‘ভালো দিক’ কিছু ‘মন্দ দিক’ থাকে। ‘সমালোচনা’ সেই ‘মন্দ’ দিকে দৃষ্টি ফেরাতে সাহায্য করে। কোন ভুল থাকলে তা পরিমার্জনের সুযোগ করে দেয়। সমালোচনা করার মানে এই নয় যে সবাই সেই কথা মেনে নিচ্ছে। যুক্তি দিয়ে সেই সমালোচনা মোকাবেলা করলে, কিংবা সঠিক যুক্তি তুলে ধরলে মানুষ তা মেনে নেয়। আর এমনটা করলে এই টক স্বাদের ‘টক শো’ খুবই সুস্বাদু হয়ে উঠতে পারে। ভিন্ন মতকে শুনে, সমালোচককে বন্ধু ভেবে, তাঁর যুক্তি, দৃষ্টিকোণ বোঝার চেষ্টার নামই তো গনতন্ত্র।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: নিজের সরকারের গুনগান আর সেই একই বিষয়ে কিংবা কথা প্রসঙ্গে বিরোধী দলের ‘দোষ গান’ দিয়ে। কিছুক্ষণ পরে পরেই ছিল সেই চিরাচরিত ‘অ্যান্টি সমালোচনা’ অবস্থান। রাগ আর অভিমান ‘আপনারা তো খালি সমালোচনা করেন’। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির তথ্যটি মনে রাখবার অব্যর্থ কৌশল হিসেবে তিনি প্রবর্তন করবেন ‘তিন ঘন্টার লোড শেডিং’ প্রোগ্রাম। এই সুসংবাদও জানালেন। ‘এই বিদ্যুৎ আমার, ইচ্ছে হলে দিবো, না হলে দিবো না’। --
এই ইগো যে জনগণ পছন্দ করে না- ৫-০পরও উনি কি বোঝেন না?
নাকি বুঝেও বুঝতে চাননা?
দম্ভ, অহংকার সবসময়ই খারাপ ফল বয়ে আনে।
বিএনপির এইরকম তথাকথিত কৌশল-তাদের ব্যর্থতাকেই ফুটিয়ে তুলছে!
আত্ম তৃপ্তি পেতে তারা হয়তো বলবে- আমরা ভিন্ন ধারার রাজনীতির সূচনা করছি।
জ্বালা পোড়াও আমাদের নীতি নয়। তাই আমরা নরম শরম আন্দোলন দিয়েই সময় পার করছি!!
কিন্তু তাদের নেতার সেই সাহসী ঘোষনার সময় যদি তিনি নরম শরম ভাবতেন -তবে কি স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস অন্য রকম হতো না?
তাই কখনো কখনো দৃঢ়তাই কাম্য।।