![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১)
বাড়ী পাল্টানোর পূর্ব প্রস্তুতি চলছে। একদিকে কাপড় চোপড় গোছ গাছ করে বিভিন্ন স্যুটকেস, ব্যাগে ঢোকানো হচ্ছে অন্যদিকে ফার্নিচারগুলো চট দিয়ে মোড়া হচ্ছে। মাকে সাহায্য করছি আর বিরক্ত হচ্ছি। কত কিছু যে সব জমিয়ে রেখেছে? আমার সেই ছেলেবেলার জামা, প্রথম ফিডার, প্রথম বার্থ ডে র মোমবাতি। একমাত্র ছেলে হওয়ার জন্য নাকি এ আমার মায়ের বাতিক বুঝতে পারছি না। যাই হোক না কেন আজ সবকিছু ফেলব।
প্রায় পচিশ বছর পরে এই বাসা ছাড়ছি। আমার শৈশব, কৈশোর যৌবন সব এখানেই। নিজেদের ফ্ল্যাট না হলে হয়তো আরও থাকা হত। বাড়ীওয়ালার সঙ্গে অনেকটা আত্মীয়তার মত হয়ে গিয়েছিল। যদিও পুরাতন বাড়ী, সমস্যাও হত, তারপরও কেন যেন ভাল কোন বাড়ী খোঁজা বা বাসা পাল্টানোর কথা কখনও ভাবা হয় নি। বাবা ডাক্তার হওয়ার জন্য বাড়ীওয়ালা প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশীই ভালো ব্যবহার করত।
মায়ের বেডরুমের খাট টা এবার খুলছে। বহু পুরনো খাট। তবে বেশ ভালো আছে এখনও। তোষক জাজিম এর অবস্থা বেশ করুণ। ওগুলো ফেলে দিতে বললাম। আমার জন্য বোধহয় আরও চমক অপেক্ষা করছিল। খাটের পাটাতন গুলো সরানোর পরে দুটো স্যুটকেস আবিস্কার হল। মাকে জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কি?
--তোর ছোটবেলার সব জিনিষ
--এগুলো যাবে না, সব ফেলব।
--তোকে তো আর ঘাড়ে করে নিতে হচ্ছে না, তোর ছেলে হলে ও খেলবে।
--পৃথিবীতে খেলনা বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে নাকি?
--এগুলো এতদিন জুগিয়ে রেখেছি ফেলে দেয়ার জন্য নাকি?
এখন তর্ক করে লাভ নেই। পরে ধীরে সুস্থে যা করার করতে হবে। একটা ছোট স্কুল স্যুটকেসও বেরোল। জিনিশটা মজার। সে সময় পিঠে নেয়ার স্কুল ব্যাগ চালু হয় নি বোধহয়। চামড়ার স্যুটকেসের মিনি ভারসান। জিনিশটা বেশ পছন্দ হল। ওটা ফেলব না ঠিক করলাম। অবশ্য আদৌ কিছু ফেলতে পারবো কি না কে জানে। কিছু ফেলতে গেলেই মায়ের চোখের পানি নামতে পারে। তখন রণে ভঙ্গ দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য খাওয়ার বিরতি হল। লেবার গুলো খেতে গেল। রান্নাঘর গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। আজকে হোটেল থেকে আনা প্যাকেটেই খাওয়া শেষ হল। লেবার গুলো এখনও আসে নি। মনটা পড়ে আছে সেই স্যুটকেসে। যদিও খুললে ভেতর থেকে ক্লাস ওয়ানের বই বেরোবে, তারপর ও খুলতে ইচ্ছা করছে। মার খাওয়া শেষ হয়নি, ফলে প্যাকেটগুলো ফেলতে যেতে পারছি না। এই ফাঁকে স্যুটকেসটা খুলে দেখে নি।
‘মা, এটা আমার কোন ক্লাসের স্যুটকেস?’ জিনিশটা এই ঘরে নিয়ে এসে বসতে বসতে বললাম।
--ক্লাস টু তে। ক্লাস ওয়ানে যখন ফাস্ট হলি, তোর বাবা তোকে কিনে দিয়েছিল। তুই টানতে পারতি না, তারপরও ওটাই নিয়ে যেতি।
--ভেতরে কি আছে? ক্লাস টু এর বই পত্র নাকি?
--ফাস্ট হওয়ার জন্য স্কুল থেকে পুরস্কার পেয়েছিলি, পেন্সিল বক্স, খেলনা, বই।
স্যুটকেসটা খুলে জিনিস পত্র একটা করে বের করছি আর পরিচয় জানছি। একটা গল্পের বই, আমার ফাস্ট প্রাইজ। আমার ক্লাস খাতা, বিচ্ছিরি হাতের লেখা ছিল। একটা অংক খাতা। যোগ বিয়োগ করা। কোনটায় বাবার হাতের লেখা, বোধহয় অংক শেখাচ্ছিল। একটা ইংরেজী খাতা। বোধহয় হাতের লেখা শেখার খাতা। প্যাঁচানো হাতে একই লেখা সারা পাতা জুড়ে। পাতা ওলটাচ্ছি এমন সময় এক পাতায় এসে চোখ আটকে গেল। পাতা উল্টে দেখলাম পর পর আরো কয়েক পাতায় একই জিনিস লেখা। শেষের পাতাটা ছেঁড়া।
--এটা কি মা? এতগুলো পাতা জুড়ে এটা কি লিখেছি?
মা’র খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। শাড়িতে হাত মুছতে মুছতে পাশে এসে বসল। খাতাটা হাতে উঠিয়ে নিল। আদর করে খাতাটার ওপর হাত বোলাল। তারপর হাসি মুখে বলল, ‘এ ছিল তোর শাস্তি।‘
(২)
লিস্টটা এখনই হাতে পেলাম। সচিব, আর অতিরিক্ত সচিব মিলিয়ে মোট পনের জনের নাম সিরাজুল ইসলাম। এদের ভেতর কেউ একজন হয়তো হবেন। নাও হতে পারেন। তারপরও খোঁজা শুরু করব। বোরহানটা আসলেই কাজের। বলেছিল বিকেলের ভেতর পেয়ে যাবি, ঠিক জোগাড় করে নিয়ে এসেছ।
এবার পরবর্তী কাজ। বাড়ী বাড়ী যাওয়া। কিছু একটা উপায় বের করতে হবে। বেশিরভাগই এখানে ফ্ল্যাট বাড়ী। নিচের সিকিউরিটিকে কায়দা করে জিজ্ঞেস করতে পারলেই হবে। কোন কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারী বয় সাজলে খারাপ হয় না। বোরহানকে বললে সেটাও ম্যানেজ হয়ে যাবে। ওর সব জায়গায় পরিচিত আছে।
একটু প্রথম থেকে বলি। মায়ের কাছে পুরো গল্পটা শোনার পর থেকেই মেয়েটাকে শুধু একবারের জন্য দেখতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা দেখতে কেমন? আমাকে মনে আছে? আমার সম্পর্কে কি খুব বাজে ধারণা? ঘটনাটা কি ওর ও মনে আছে? নাহ খুব বেশী ভাবছি। যদিও এমন কিছুই হয়নি সেদিন। ওই বয়সে এমন কাজ অনেক ছেলেই হয়তো করেছে।
আমিও হয়তো এ নিয়ে ভাবতাম না। কিন্তু শাস্তি পাওয়াতে ব্যাপারটা নিয়ে কেমন একটা কৌতূহল হচ্ছে। যার জন্য এই শাস্তি পাওয়া, তাঁকে কেন যেন অন্ততঃ একবার দেখবার জন্য ছটফটে ভাব কাজ করছে কালকে থেকে। অ্যাডভেঞ্চারের নেশা পেয়ে বসেছে। মেয়েটাকে কি মনে মনে পছন্দ করতেও শুরু করেছি? হয়তো। দেখা হলে কি করব এখনও ঠিক করিনি। আপাততঃ বোরহানের কাছে হেল্প চাইলাম, ওর অনেক জানা শোনা।
--জরুরী তলব যে? কি ব্যাপার?
--একটা হেল্প লাগবে।
--অ্যাট ইওর সার্ভিস।
--একজন লোককে খুজতে হবে। নাম সিরাজুল ইসলাম। এখন উনি প্রোবাবলি সচিব বা সম সাময়িক র্যাভঙ্কে।
--আর কোন তথ্য?
--প্রবলেম হচ্ছে, উনি সচিব কি না তাও জানি না। বিশ বছর আগে সচিবালয়ে পোস্টেড ছিলেন, অ্যাজ অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারী। এখন কোথায় থাকেন, কি পোস্ট কিছুই জানি না। উনার মেয়ের নাম রেনেসাঁ ইসলাম।
--রেনেসাঁ নামটা ভেরী আনকমন। এই লাইনে খোঁজা যায় না? কোথায় পড়ে?
--তা জানি না। আদৌ এদেশে পড়াশুনা করছে কি না, তাও জানি না।
--তোর কাকে দরকার?
--দরকার মেয়েটাকে, তবে ফাদারের থ্রু দিয়ে খোঁজা ইজি হবে মনে হয়।
--ওকে দেন। সিরাজুল ইসলাম নামের যত সেক্রেটারী আর অ্যাডিশানাল সেক্রেটারী আছেন তাঁর লিস্ট জোগাড় করতে হবে।
--কিভাবে?
--সচিবালয়ের কাজ করে দেয়ার জন্য অনেক দালাল পাওয়া যায়, ওদের কাউকে ধরলেই হবে, সেটা সমস্যা না। বাট আসল জনকে খুজবি কিভাবে?
--যার মেয়ের নাম রেনেসাঁ।
--সেটা তো আর দালাল বলতে পারবে না।
--ইন দ্যাট কেস, ডোর টু ডোর।
--তাহলে তো বিশাল প্রজেক্ট।
--হলেও করব। তবে মে নট বি দ্যাট টাফ। দেখা যাবে হয়তো এই নামে মাত্র তিনজন আছে।
--হলে তো ভালোই। বিকেলের ভেতর পেয়ে যাবি।
পেয়ে গেছি। এখন ঠিক করতে হবে কোন দিক থেকে শুরু করব। ঠিকানা গুলো দেখে একটা প্ল্যান চক আউট করা দরকার। নজর বুলাতে লাগলাম। বেশীর ভাগই গুলশান এলাকার। দুইজন থাকেন কোয়ার্টারে। দুইজন ধানমন্ডি। একজন শান্তিনগর। আরেকজন মোহাম্মদপুর। এটাই আগে সারি। বাসার পাশে হবে। এবার নজর দিলাম রোডের নামের দিকে। বাহ ভালোই তো। বাড়ীর নম্বরের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম, হোয়াট অ্যা কিউট সারপ্রাইজ!
(৩)
--বসুন।
--ধন্যবাদ।
--এতো দেরী করলেন?
কিছুক্ষণ আগেই এই বাসায় এসেছি। কি বলে নিজেকে ইন্ট্রোডিউস করব তাঁর জন্য অনেক ধরনের প্ল্যানিং করে রেখেছিলাম। প্রাথমিক পরিচয়ের পরেই সুযোগ বুঝে বলতে হবে ‘আপনার হয়তো অদ্ভুত লাগবে’ কিংবা ‘আমাকে একটু পুরো ব্যাপারটা এক্সপ্লেইন করতে দিন’। তেমন কোন সুযোগই পেলাম না। বেল চাপবার পর তেমন কোন ইন্টারোগেশান ছাড়াই দরজা খুলে গেল। একটা মেয়ে দরজা খুলল। বয়স পচিশের মত হবে। এই কি সেই মেয়ে? হতে পারে। বিশ বছর আগে যখন পাঁচ বছর ছিল, তখন এখন তো পঁচিশই হওয়ার কথা। ফ্ল্যাটে সিকিউরিটি থাকবার কারণে বোধহয় ধরেই নিয়েছে উটকো কোন লোক নয়।
এখন শুধু জানতে হবে এরই নাম রেনেসাঁ ইসলাম কি না। এখনই হয়তো জেনে যাব। দরজায় দাঁড়িয়ে সরাসরি তো আর নাম জিজ্ঞেস করা যায় না। নিজের পরিচয় দিয়ে আগমেনের কারণ বলবো, তারপরে। প্ল্যান মাফিক শুরু করতে যাচ্ছিলাম।
--কাকে চাই?
--দেখুন, আমি আপনাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকি।থাকি বলা ঠিক হচ্ছে না, মানে ওটা আমরা কিনেছি। আগামীকাল উঠব।
--আপনার বাবার প্রফেসার ইমতিয়াজ আহমেদ তো?
--জ্বী, আপনি জানেন?
--আর আপনি ইলিয়াস আহমেদ।
এবার জোড় ধাক্কা খেলাম। প্ল্যানিং সব এলোমেলো হয়ে গেল। কি বলতে এসেছিলাম এখন আর কিছু মনে আসছে না। ধাক্কা আরো বাকী ছিল।
--ভেতরে আসুন।
মাথা কাজ করছে না। হতভম্ভ অবস্থা যাকে বলে। কি করব এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। চুপচাপ অনুসরন করে ড্রইংরুমে প্রবেশ করলাম। সোফার একটা সিটের দিকে দেখিয়ে বসতে বলা হল। বসে পড়লাম। খুব স্বাভাবিক লজিক ধরে এগোনোর চেষ্টা করলাম। এই বাড়ীর কোন ফ্ল্যাট কে কিনেছেন তা হয়তো কোনভাবে জেনেছেন। আর বাবাকে যেহেতু উনারা আগে থেকে চেনেন, তাই বাসায় এই নিয়ে গল্প হয়েছে। সেখান থেকে আমার নাম জেনেছে। তবে আমার জন্য ধাক্কা আরও বাকী ছিল। এরপরেই আসলো দেরী করার প্রশ্ন।
--দেরী করলাম?
--ইয়া। অলমোস্ট টুয়েন্টি ইয়ার্স।
দারুণ ভুল হচ্ছে কোথাও। উনি আমাকে অন্য কেউ ভাবছেন। ব্যাপারটা উনাকে ক্লিয়ার করে বোঝানো দরকার। আমার পাগলামীর ব্যাপারটা যতটা সম্ভব ভদ্র ভাবে বোঝাতে হবে। এই আসাটা নিছক কৌতূহল এটা বোঝাতে হবে। হতভম্ভ ভাব এখন অনেক খানি কেটে গেছে। কিছুটা গম্ভীর মুখ করে শুরু করলাম।
--দেখুন, আমি একজন রেনেসাঁ ইসলাম কে খুঁজছি।
--আই নো। অ্যান্ড ইওর সার্চ জাস্ট এন্ডেড। আই অ্যাম রেনেসাঁ। বলে ফেলুন।
মেয়েটাকে এবার ভালো মত দেখলাম। এতো সহজে সব কিছু হচ্ছে, কেমন স্বপ্ন লাগছে সব কিছু। মেয়েটা আবার কিছু ভেবে বসতে পারে, পুরো এক্সপ্লানেশান টা দেয়া দরকার। যতটা সম্ভব সরল সরল গলায় শুরু করলাম,
--দেখুন, খুব ছোট বেলায়, আপনারা আমাদের পাশের বাসায় থাকতেন।
--জ্বী।
--আপনার মনে আছে?
--আমারটা পরে বলছি। আপনারটা আগে শেষ হোক।
--আপনার হয়তো খুব অবাক লাগছে, আমি আপনাকে খুঁজতে এসেছি দেখে।
--আমার ব্যাপারে পরে কথা হবে। ফার্স্ট থিং ফার্স্ট। তারপর?
--তারপর?
--আমাদের পাশের বাসায় ছিলেন। তারপর।
‘ও, হ্যাঁ’। মেয়েটার সাবলীলতা দেখে রীতিমত মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। একজন অপরিচিত ছেলের সঙ্গে প্রথমবার কথা বলছে, কোন জড়তা নেই। সবচেয়ে ভালো লাগছে ওর স্মার্টনেস। বলতে শুরু করলাম, ‘তখন একবার একটা খুব বাজে কাজ করেছিলাম’।
--তাঁর জন্য এখনও লজ্জা পাচ্ছেন?
লজ্জা পাচ্ছি? তা একটু পাচ্ছি। খুব ভালো কাজ তো আর করিনি। তাঁর ওপর আবার আজকের এই পাগলামি। তবে লজ্জা যদি পাই তবে আজকের জন্যই বোধহয় পাচ্ছি। কি উত্তর দিবো ভাবছিলাম এমন সময় আবার প্রশ্ন,
--খোঁজ পেলেন কি করে? মেয়েটা মিটিমিটি হাসছে।
আমার ঘোর তখনও কাটেনি। যন্ত্র চালিতের মত বললাম,
--কার খোঁজ?
--বারে, এখানে যার খোঁজে এসেছেন।
‘ও’। আমার তালগোল পাকানো তখনও থামে নি। মেয়েটা কি জানতো আমি আসবো? কিংবা আমি ওর খোঁজ করছি। সব কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। মুখ কাচুমাচু করে বললাম, ‘ঠিক খোঁজ পাইনি, সচিব সিরাজুল ইসলাম নামে খোঁজ শুরু করেছিলাম’।
--আর এটাই প্রথম বাড়ী?
--এডজ্যাক্টলি।
--ভেরী লাকী দেন।
আমি এখন অনেকটাই সাহস ফিরে পেয়েছি। পুরো ব্যাখ্যাটা দেয়া দরকার। নইলে মেয়েটা অন্য কিছু ভেবে বসতে পারে। একটু ভুমিকা নিয়ে শুরু করা বোধহয় ঠিক হবে।
--দেখুন, আপনার হয়তো ব্যাপারটা খুব আনইউজুয়াল লাগছে, বাট আমাকে কি একটু বুঝিয়ে বলার সুযোগ দেয়া যায়?
--যদিও আমি জানি, তারপরও আপনার ভারসান টা শুনি।
জানে? কিভাবে সম্ভব? ব্যাপারটা কি খুব জানাজানি হয়ছিল? কেমন যেন সব গোলমেলে লাগছে।
--দেখুন, খুব ছোটবেলায়, আমরা যখন পাশাপাশি বাড়ীতে থাকতাম তখন একদিন আমি, মানে, আপনাকে...
--‘আই লাভ ইউ’ বলেছিলেন।
--আপনি জানেন? আই মিন আপনার মনে আছে?
মেয়েটা মিষ্টি করে হাসল। বেশ সুন্দরী। এতক্ষণ টেনশানে ব্যাপারটা ভালো লক্ষ্য করিনি।
--পসিবল? ওই ছোট বয়সের কথা তো মনে রাখা?
--তাহলে?
--বলছি, আপনার ভারসান শেষ হোক।
--আপনি তখন আমার মা কে নালিশ দেন। আর সেই ‘আই লাভ ইউ’ বলার অপরাধে মা আমাকে একশ বার ‘আই লাভ ইউ’ লিখতে দিয়েছিল। আমার শাস্তি। কাল পুরনো জিনিসপত্রের ভেতর থেকে সেই খাতা আবিস্কার হয়। মার কাছে পুরো গল্পটা শোনার পর কেমন যেন পাগলামি চেপেছিল, একবারের জন্য আপনাকে দেখার।
কথা গুলো বলতে পেরে খুব নির্ভার লাগছে। মনে হয় বিশ্বাস ও করাতে পেরেছি। গল্পটা একটু আনউজুয়াল হলেও একেবারে অসম্ভব না। তবে মেয়েটা এই ঘটনার সবই জানে। কিন্তু কিভাবে? আর এ নিয়ে ওর রিয়াকশান কি? মনে তো হচ্ছে ছেলেমানুষি দুষ্টামি হিসেবেই নিয়েছে। আর আজকের এই আসা টাকে? নিছক পাগলামি হিসেবে? নাকি অন্য কিছু ভাবছে? এইসব সাত পাঁচ ভাবছি, এমন সময় প্রশ্নটা আসলো
--ব্যাস?
--মানে?
--মানে এরপরের গল্প।
--এরপরও কিছু হয়েছিল নাকি?
--ইয়া, গল্পটা তারপরও চলেছিল।
--মানে?
--মানে আপনি তারপরও শুধরান নি। সেই একশ বার লেখা থেকে একটা পেজ ছিঁড়ে পরদিন আবার আমাকে দিয়েছিলেন। ইংরেজি খাতার একটা পাতা যেটাতে ‘আই লাভ ইউ’ কথাটা দশবার লেখা ছিল। তবে পরের বার আমি আর নালিশ করিনি। সেজন্য আপনার শাস্তিও এক্সটেন্ড করে নি।
--আই সি, সেজন্য ঐ খাতার একটা পাতা ছেঁড়া। এনিওয়ে, নালিশ না করার জন্য থ্যাংকস।
-- কেন করিনি জানতে চাইলেন না?
-- দয়া করে? ‘বেচারা ছেলেটাকে’ আর শাস্তি দিতে চান নি?
-- ঠিক তা না। আই ডিড আগ্রি টু ইওর প্রপোজাল।
-- মানে,
--আপনার প্রস্তাবে আমি রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। এরপরে আপনারা অন্য জায়গায় চলে যান অ্যান্ড আওয়ার লাভ স্টোরি এন্ডেড। আমার জীবনের লেখা প্রথম লাভ লেটার টাও তাঁর প্রাপক কে দেয়া হয়নি।
বুকটা ধ্বক করে উঠলো। এতো সব কিছু ঘটেছিল? এই মেয়ে আমাকে প্রেম পত্র লিখেছিল? বাসা পরিবর্তন না হলে এই অপরূপার সঙ্গে আমার প্রেম হয়ে যেত? আফসোস করবো না পুনরায় চেষ্টা করবো ভাবছি। বোধহয় আমার চিন্তাটা বুঝতে পারলো।
--দ্যা অপশান ইস নট স্টিল ওপেন।
--মানে?
--মানে আপনি যা চিন্তা করছেন, তা পসিবল না। আই অ্যাম এনগেজড। তবে চাইলে আপনার সেই লাভ লেটার টা ফেরত নিতে পারেন। আমার উত্তর টাও নিতে পারেন, দো ইউজলেস।
-- হোক ইউজলেস, ওটা আমার জন্য লেখা, আমার জীবনের প্রথম প্রেম পত্র, আমাকে দিয়ে দিন।
--ফিলিং রোমান্টিক?
--সর্ট অফ।
--বসুন দিচ্ছি।
আর কিছুক্ষণ পরেই আমার জীবনের প্রথম প্রেম পত্র টি পাব। অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করছে। দারুণ এক রোমান্টিক ফিলিং।
২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩
িটউব লাইট বলেছেন: ওয়াউ। দারুন
৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হেয়াট আ সুইত রিভেঞ্জ!!!!!!!!!!!!!!
আবার ছুতুবেলায় ফিরতে ইচ্চে করচে
৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪০
অপু তানভীর বলেছেন: হোয়ায় নট??
এমুন মাইয়া কই পামু কন দেখি ??
৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৪৫
আমিনুর রহমান বলেছেন:
সাবলীল ও গোছনো লিখা। ভালো লাগা রইল।
৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮
সবুজ সাথী বলেছেন: ভাল হয়েছে।
৭| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: বাহ সুন্দর রিভেঞ্জ তো !
পুরনো জিনিস জমানো খুব মজার, অনেক পরে সেসব দেখে এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। গল্পটা ভালো লাগলো। সুটকেস থেকে আরও কিছু আবিষ্কার হলে, আরও কয়েকটা ঘটনা আসলে কেমন হতো ভাবছি !
ভালো লাগলো গল্পটা, একটা রিলাক্স যেন। শুভকামনা রইলো
৮| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
৯| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৩১
শান্তির দেবদূত বলেছেন: বাহ! কি রোমান্টিক ! খুব ভাল লেগেছে।
১০| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১
অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: অনেক অনেক অনেক সুন্দর। মারাত্মক ভাললাগা। শুধু নতুন ফ্লাটের পাশেই তাদের ফ্লাট, এটা ভাল লাগে নি। অন্তত কয়েকটা ঠিকানায় খোঁজা উচিত ছিল। কিংবা একদম শেষ পর্যন্ত খোঁজা এবং বিভিন্ন বাসায় গিয়ে খোঁজার বিড়ম্বনাগুলো তুলে ধরে শেষ পর্যন্ত সাসপেন্সটা ধরে রাখতে পারলে জোশ হত।
১১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯
এক্সপেরিয়া বলেছেন: খুবই ভাল লাগল.......
১২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
১৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:০৭
তানিয়া হাসান খান বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।
১৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩৩
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার প্লটে লেখা সুন্দর একটা গল্প। আপনি সত্যি অনেক ভালো লেখেন।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৩
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩২
মাক্স বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। শেষ পর্যন্ত একটুও একঘেয়ে মনে হয়নি।