নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্লগ পাড়া দখলে এখন চলছে ‘গালি গালাজ’ এবং ‘ব্লক’ এর সংস্কৃতি

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

এদেশে ব্লগ কালচারের বয়স খুব বেশী না। ফেসবুক নিয়ে মাতামাতিও বেশ সাম্প্রতিক ঘটনা। প্রথম দিকে প্রেম কিংবা প্রেমের চেষ্টা অথবা বন্ধু তৈরি এসবেই সীমাবদ্ধ ছিল। রাজনীতি একেবারে ছিল না তা না, ছিল। তবে তা ছিল বেশ তাত্ত্বিক পর্যায়ে। মৌলবাদের অপকারিতা কিংবা সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে কি না—এ জাতীয়। শুদ্ধ দলীয় রাজনীতি কিংবা নেত্রীদের প্রশংসা করতে মুখে ফেনা তোলা তখনও শুরু হয় নি। নীতি, তত্ত্ব এসব নিয়ে আলোচনা থেকে প্রথম ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা গেল মিশরে। আমাদের দেশে এমন কিছু হবে কি না এ নিয়ে মৃদু গুঞ্জন হয়তো ছিল। ব্যাপারটা হয়তো ‘মৃদু’ই থাকতো, এ নিয়ে খুব বেশী হৈ চৈ হয়তো হত না। ‘শাহবাগ’ পুরো ব্যাপারটাকে লাইম লাইটে নিয়ে আসে। এরপর ব্লগ আর ফেসবুক নতুন এক মাত্রা পেল। ফেসবুক আর ব্লগ সেলিব্রিটি তৈরি হল। টক শো তে সুশীল দের পাশাপাশি এই নতুন প্রজাতি বেশ কিছুদিন বাজার গরম করে রাখল।

এরপর আসলো ভাঙ্গন। বা খুব সস্তা ভাষায় বললে বলা উচিৎ ‘চর দখলের লড়াই’। বাজারে যেসব ব্লগার আর অনলাইন আক্টিভিস্ট ছিল তাঁরা মুলতঃ দুই ঘরানা থেকে আসা আঁতেল গ্রুপ। ‘লীগ’ আর ‘বাম’ ঘরানার এই দুই প্রজাতির সেলিব্রিটিরা প্রথমটায় একসঙ্গে ছিল। ছোট খাট কোন্দল থাকলেও জোড়া তালি দিয়ে একতা চালু রেখেছিল। ‘কে নেতা’ এই প্রশ্নে প্রথম দিকে কিছু উদারতা, কিছু ত্যাগ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে কাহিনী পাল্টে গেল। এখান থেকে নেতা হয়ে ফিরতে পারলে আখেরে লাভ হতে পারে এমন সম্ভাবনা দেখা দেয়ার পরে সমস্যা আরও বাড়ল। কিছুদিনের মধ্যেই নেতৃত্বে আসবার জন্য নিজেদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। ফলাফল কিছুদিনের ভেতরেই সবাই হাতে পেয়ে গেল। শাহবাগ আন্দোলনে ভাটা পড়ল। সেই ভাটা কিছুদিনের মধ্যে মৃত নদীতে পরিণত হল। ব্যাপারটা এখানে থামলেও হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেত। থামল না। শাহবাগ ফাঁকা হলে কি হবে, ব্লগ আর ফেসবুক তো আছে। এখানে শুরু হল এঁকে অন্যকে ছোট করার মরনপন চেষ্টা। প্রথমে যুক্তি তর্ক এরপর ব্যঙ্গ করা। অবশেষে শুরু হল ‘গালি গালাজ’। নেহাত লাঠি ঘুষি পাঠানোর কোন ডিজিটাইজ সাধন এখনও বেরোয় নি, তাই রক্ষা। সাংসদ দের অনুকরনে না তাঁদের অনুকরণে সাংসদ রা শুরু করেছেন তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। তবে তাঁরা এই মুহূর্তে সাংসদ দের অনেকটাই ছাড়িয়ে গেছেন। যৌন সম্পর্ক স্থাপন কারী গালি গালাজে অনলাইন জগত এখন মুখরিত।

ব্যাপারটা থামবার তেমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং প্রতিদিন নতুন সব মাত্রা যোগ হচ্ছে। প্রথম দিকে যে মাত্রা যোগ হয় তা হচ্ছে তা হচ্ছে ‘ইতিহাস’। একজন অন্যজন কে ঘায়েল করতে সাহায্য নিচ্ছেন মহান সব ‘ঐতিহাসিক ভুল’ এর। এখন সবাই ইতিহাস ঘাটায় ব্যস্ত। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে মোস্তাক সাহেব পেরিয়ে সামরিক শাসন আমলে ‘বাম’ আর ‘লীগ’ কারা কখন কি ধরনের ভুমিকা নিয়েছিল তাঁর অ্যানালাইসিস এ বাজার এখন গরম। মুক্তিযুদ্ধে কিছু চীনাপন্থি যেহেতু বিরোধিতা করেছিল, ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলেছিল তাই পুরো বামেদের গালি দিতে এখন ‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী’ তকমার ব্যবহার বেজায় বেড়ে গেছে। ‘চীনা বাম’ ‘চিনাবাদাম’ এসব বলে কটাক্ষ চলছে। আর বামেরাই বা চুপ থাকবে কেন? ইতিহাস খুঁজে বামেরা কটাক্ষের বিষয় বের করেছে ‘খন্দকার মোশতাক’ এর সরকার। যেহেতু সেই সরকারে বর্তমান অনেক আওয়ামী নেতাই ছিলেন তাই সেই সময়ের আওয়ামী নেতাদের মেরুদণ্ড হীনতা এখন বামেদের কটাক্ষের মূল বিষয়। শিরোনামে থাকছে এই সেই দল যারা নিজ দলের শীর্ষ নেতার হত্যাকারীদের সঙ্গে আঁতাত করে।

এদেশের সব বিতর্কে যেমনটা হয়। এখানেও তাই শুরু হল। কেউ নিজেদের ওপর লাগানো ‘আরোপ’ এর কোন উত্তর দিলো না। সে নিয়ে কোন কথা বলল না। তথ্যে কোন ভুল আছে কি না তা নিয়ে কোন বক্তব্য দেয়ার কোন লক্ষণ কারো মাঝেই দেখা গেল না। ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে চীনা পন্থীরা ভুল করেছিল’ এমন কোন বক্তব্যও যেমন বামেরা দিল না তেমনি লীগ গ্রুপ ও একবারের জন্য মোস্তাক সরকার সৃষ্টির পিছনে যেসব আওয়ামী নেতা জড়িত ছিল তাঁদের ধিক্কার জানাল না। আর নিজেদের এই দুর্বল অংশ গুলো ঢাকতে গালি গালাজের পরিমাণ দিন দিন বাড়তে লাগলো।

থামবার তেমন কোন লক্ষণ নেই। গালির তীব্রতাও যেমন বাড়ছে, আক্রান্তের সংখ্যাও তেমন বাড়ছে। নিত্য নতুন ‘বাম’ আর ‘লীগ’ সেলিব্রিটিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার কিছুটা নিরপেক্ষ কিংবা গুরুজন সেজে থামানোর চেষ্টাও করছেন। এই চেষ্টাকারীরা আবার পুরোপুরি নিরপেক্ষ নন। এরাও আবার দুই প্রজাতির। বাম প্রজাতি এই যুক্তি নিয়ে মাঠে নামছে, এই ঝগড়ায় লীগ ই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অতএব এই ঝগড়া থামলে লীগের ই লাভ বেশী। আর লীগ পন্থীদের যুক্তি এসব করলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা শক্তিশালী হবে। অতএব বিরাম টানা উচিৎ। মজার ব্যাপার হচ্ছে কেউ নিজের দলকে থামতে বলছে না। ফলাফল যা হবার তাই হচ্ছে। কেউ কারো কথায় কান দিচ্ছে না। ঝগড়া তীব্রতর হচ্ছে।

এই গালিগালাজ কে শুভ সুচনা বলার লোকেরও অভাব নেই। বিভিন্ন গনতন্ত্রে এই গালি গালাজের বহু নমুনা ছড়িয়ে আছে। এই যুক্তিতে গালি গালাজ কে গণতান্ত্রিক রীতির একটা অংশ বলার চেষ্টাও হচ্ছে। কোথাও আবার ব্লগে ফাটলও দেখা দিচ্ছে। অনেক ব্লগ ভেঙ্গে বেশ কিছু ব্লগার আলাদা হয়ে নতুন আরেকটা ব্লগ খুলেছেন। কোথাও আলাদা একটা দল তৈরি হয়েছে, এদের কাজ গবেষণা করে নতুন গালি আবিস্কার করা। ঝাঁক বেঁধে গিয়ে একই ব্যক্তিকে সম্মিলিত ভাবে গালি গালাজ করা। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ‘ব্লক’ করা। ফেসবুকে কেউ অশালীন কিছু ‘পোস্ট’ করলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে নালিশ করার যে বিধান আছে, সেই বিধান কি কাজে লাগানো হচ্ছে। অপছন্দের কাউকে ‘ব্লক’ করার জন্য গণহারে রিপোর্ট করা এখন বেশ নিত্য নৈমিত্যিক ব্যাপার। আর এসব গালিগালাজ আর ব্লকের ভয়ে অনেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

গালি গালাজ আদৌ থামবে বলে মনে হচ্ছে না। বাংলা, কিংবা আরও নির্দিষ্ট করে বললে বাংলাদেশী বাংলা ব্লগ জগতে এই মুহূর্তে কে চালকের আসনে থাকবে, বিশেষ করে রাজনীতি সচেতন প্রগতিশীলদের নেতৃত্বে কারা থাকবে, তা নির্ধারনের জন্যই চলছে এই খেলা। আসলে দুই গ্রুপের ই এই মুহূর্তের কামনা নতুন তৈরি হওয়া এই সাম্রাজের অধিপতি হওয়া। দুইজনেই চায় তাঁদেরকে সবচেয়ে বেশী প্রগতিশীল ভাবা হোক। কিংবা মুক্ত চিন্তার একচ্ছত্র ‘ঠিকাদার’ হতে। এক ইঞ্চি জায়গা ছাড় দিতে দুদলই নারাজ। হঠাৎ করে ‘লাইম লাইট’ এর নীচে আসা এইসব সেলিব্রিটিরা যেকোনো মুল্যে তাঁদের এই অবস্থান ধরে রাখতে চান। এতে তাঁদের নিজেদের কতটা ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে কেউই চিন্তিত নন। অপরকে ঘায়েল করে দারুণ এক স্বস্তির ঢেকুর তুলছেন। ‘কেমন বাশ দিলাম’ এই ধরনের আত্ম অহমিকায় ব্যস্ত সবাই।

‘গালি দেয়ার গ্রুপ’, ‘ছাগু উপাধি দেয়া’ ‘ব্লক করা’ এসব কাজগুলো একসময় জামায়াত শিবিরের জন্য শুরু হলেও এখন নিজেদের ভেতরেই আদান প্রদান হচ্ছে। কোথায় শেষ হবে জানি না। আদৌ শেষ হবে কি না তা বলারও উপায় নেই। অপেক্ষায় আছি—দেখি কে জেতে। অথবা আদৌ কেউ জেতে কি না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.