![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কোন একটি প্রাইভেট চেম্বারে বসি। বা বলা যায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ডাক্তারের চেম্বার করার জন্য যে কিছু রুম ভাড়া নেয়, তাঁর একটিতে বসি। সাধারণতঃ তারা অনেকগুলো কক্ষ ভাড়া নেয়। যার একটি বা কয়েকটিতে থাকে তাঁদের ল্যাবরেটরী, এক্স রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাম এসব, আর বাকী গুলো থাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বার করার জন্য। চেষ্টা করা হয় আকর্ষণীয় কোন লোকেশানে সেন্টার টা দেয়ার। সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে হলে বেশী ভালো হয়। যেসব শহরে মেডিকেল কলেজ নেই সেখানে সদর হাসপাতালের আশে পাশে এসব সেন্টার স্থাপনের চেষ্টা হয়। সরকারী হাসপাতালে আসা রুগী গুলোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যেন বেশী দূরে যেতে না হয়, তাই চেষ্টা চলে হাসপাতালের যতটা কাছে সম্ভব এসব সেন্টার স্থাপনের। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে বেসরকারী মেডিকেল কলেজের আশে পাশে আবার এমনটা সাধারণতঃ হয় না।
বাস্তবতা হচ্ছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন ডাক্তার তাঁর নিজের জন্য কোন প্রচারণা করতে পারবেন না। অর্থাৎ কাউকে বলতে পারবেন না, ‘অসুখ হলে আমার কাছে আসুন’। এজাতীয় কোন বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্ষেত্রে এখানে একটু ফাঁক আছে। কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার আবার বিজ্ঞাপন দিতে পারবে। অর্থাৎ সে বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে বলতে পারবে, তাঁর এই সেন্টারে কোন কোন ডাক্তার নিয়মিত চেম্বার করেন এবং তাঁরা কোন কোন রোগের বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও তাঁদের থাকে পাবলিক রিলেশান অফিসার। সে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরে। যেখানেই যিনি রুগী দেখেন, তাকেই জানিয়ে আসে, তাঁদের সেন্টারে কোন কোন ডাক্তার বসে এবং সেখানে কি কি পরীক্ষা হয়। তাঁর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোন কোন পরীক্ষায় কি পরিমাণ কমিশন দেয়া হয়।
নিজের বিজ্ঞাপন এবং প্রচারণা ছাড়াও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসার আরও কিছু সুবিধা আছে। বিনা ভাড়ায় বসবার জন্য একটা সুসজ্জিত সুন্দর কক্ষ পাচ্ছে, একটু ভালো জাতের চেম্বার হলে সেখানে এসি ও থাকে এবং বলাই বাহুল্য সেই এসি র বিল সেই ডাক্তার কে দিতে হয় না। একটি অ্যাটেন্ডেন্টও তাকে দেয়া হয়, যে দরজা খুলে দেয়, রুগীকে নির্দিষ্ট স্থানে বসায়, রুগীর সিরিয়াল রাখে। যার বেতনও দেয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক। রুম নিয়মিত ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে রাখা, কখনও কোন সমস্যা হলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেয়া এমন সব কাজই ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ করে থাকে। কাজটা কি দয়া কিংবা উপকার?
ব্যাপারটা এমন কিছুই না। খুব সহজ এবং সাধারণ একটি জাগতিক নিয়ম, ‘গিভ এন্ড টেক’। রুগীর প্রয়োজন থাকুক আর নাই থাকুক রোগ নির্ণয়ের নাম করে কিছু ‘ইনভেস্টিগেশান’ দিতে হবে। এসব সেন্টারে বসার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ সাহেবকে সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে এই একটি অলিখিত চুক্তিই করতে হয়। অলিখিত এই জন্য যে সেই চুক্তি না মানলে কোন কোর্ট কাচারী করা হয় না। এই চুক্তির জন্য কে দায়ী, না করলে সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কি এমন ক্ষতি হত কিংবা করে কি এমন অন্যায় করছে, তা নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। কারণ সব পেশার সব অন্যায়কারী তাঁর নিজের অন্যায়ের জন্য দারুণ সুন্দর একটি যুক্তি বের করে রেখেছেন। আর সেই যুক্তি দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের বিবেককে খুন করে নির্দ্বিধায় অন্যায় গুলো করে যাচ্ছেন। কখনও পাপ স্খলনের জন্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মনোযোগী হচ্ছেন কিংবা দান খয়রাত করে পাপ কে শুদ্ধ করে নিচ্ছেন।
যত বড় অন্যায়ই হোক, সেই অলিখিত চুক্তি মানতে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাধ্য। অন্যথায় এই লোভনীয় জায়গার আশা তাকে ছাড়তে হবে। অলিখিত চুক্তিটির ভেতরে আপাত দৃষ্টিতে তেমন কোন অন্যায় নেই। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে আসা রুগী গুলোর রোগ সনাক্ত করতে কিংবা রোগ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতে অনেক সময় কিছু পরীক্ষা বা ইনভেস্টিগেশান করতে দেয়া হয়। সেসব ছাড়া যে রোগ নির্ণয় করা যায় না, এমনটা না। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজন ব্যাপারটা যেহেতু ঠিক করেন চিকিৎসক সাহেব, তাই অন্যায় করছেন কি না, তা তাঁর বিবেক ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না।
এরপর সেই রুগী যখন চেম্বার থেকে বেরোবে, ‘পরীক্ষা গুলো আমাদের এখানেই হয়’ কিংবা ‘স্যার অন্য কোথাও রিপোর্ট করলে রাগ হয়’ বলে রুগীকে প্ররোচিত করা হবে যেন সে পরীক্ষা গুলো সেখানেই করে। নেহাত রুগীর পরিচিত অন্য কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার না থাকলে, রুগীও ভাবে আবার কোথায় পরীক্ষা করতে যাব, এখানেই করে নিই। সে যে খুব ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা কিন্তু না। অন্য কোথাও পরীক্ষা করতে গেলে একই পরিমাণ খরচই হবে। মুলতঃ একটি সেন্টারে বসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেয়া পরীক্ষা গুলো পেতেই প্রথম প্রথম এই সিস্টেম শুরু হয়েছিল।
একজন চিকিৎসক যদি কেবল প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরীক্ষাই দেন, তবে পুরো সিস্টেমটায় তেমন কোন বড় ধরনের অন্যায় নেই বললেই চলে। কেবল যে সকল ইনভেস্টিগেশন রোগ নির্ণয়ের জন্যই দরকার, সেগুলোই দেয়া হচ্ছে। সেন্টারের মালিক ও খুশী। ডাক্তার সাহেবের পিছনে যা খরচ করছেন, ইনভেস্টিগেশনের আয় থেকে তা পুষিয়ে যাচ্ছে। সত্যিই কি তাই ঘটে? কিংবা ঘটতে দেয়া হয়? তা হয় না। এর মাঝে প্রবেশ করে লোভ আর দুর্নীতি। কে শুরু করে? কার দোষ? বলছি।
(চলবে)
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৬
পাকাচুল বলেছেন: আপনার উপর তো ব্লগের ডাক্তারগণ ক্ষেপে যাবে, কাক হয়ে কাকের মাংশ খাওয়া ঠিক নয়।
আপনার সাহসীকতাকে সাধুবাদ জানাই।
৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২০
অযাচিত বলেছেন: অাপনার বলা কথাগুলো নতুন কিছু নয়। সবই ওপেন সিক্রেট!
৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৪
অথৈ সাগর বলেছেন:
বেশ সাহসিক পদক্ষেপ । আপনার দুঃসাহসের এবং লেখার প্রশংসা না করে পারলাম না । যদিও ঘটনা সবার জানা তারপরও একজনের ডাক্তারের জবান বন্দিতে ব্যতিক্রমী ।
৫| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৩
মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: সব পেশার সব অন্যায়কারী তাঁর নিজের অন্যায়ের জন্য দারুণ সুন্দর একটি যুক্তি বের করে রেখেছেন। আর সেই যুক্তি দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের বিবেককে খুন করে নির্দ্বিধায় অন্যায় গুলো করে যাচ্ছেন।
দারুণ বলেছেন -
লেখা চলুক - ফলো করার ইচ্ছা আছে!
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৬
খেয়া ঘাট বলেছেন: দারুন একটা পোস্ট।
কখনও পাপ স্খলনের জন্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মনোযোগী হচ্ছেন কিংবা দান খয়রাত করে পাপ কে শুদ্ধ করে নিচ্ছেন। --