![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একবার এক ফার্মেসী তে গিয়েছিলাম। বেশ জমজমাট ফার্মেসী। ওখানে পালা করে অনেক কয়জন ডাক্তার বসেন। এধরনের জমজমাট ফার্মেসীতে বসার সুবিধা হচ্ছে, প্রথম থেকেই রুগী পাওয়া যায়। আমার ওখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য, ওখানে চেম্বার করার জন্য বসা যায় কি না, তাঁর চেষ্টা করা। ফার্মেসীর মালিক আমার কার্ডে আমার যোগ্যতা পড়লেন। কোথায় চাকরী করি শুনলেন। এরপর সোজাসুজি জানালেন, এখানে কিন্তু আপনাকে নিজেই রুগী আনতে হবে। অর্থাৎ হাসপাতালে যেসব রুগী আমাকে দেখাতে যাবে, তাঁদের বিভিন্ন কায়দায় প্রাইভেট চেম্বারে দেখানোর জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এবং যখন রাজী হবে, তখন নিজের চেম্বারে কার্ড টা দিয়ে দিতে হবে। এরপর সেই রুগী যখন চেম্বারে আসবে তখন সেই রুগী অন্য কাউকে না দেখিয়ে আমাকেই দেয়া হবে।
যেকোনো হাসপাতালের আসে পাশের ফার্মেসীর দোকান কিংবা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই চলটা বেশী দেখা যায়। এখানে প্রথম অধিকার সেই হাসপাতালের ডাক্তার দের। তাঁদের যোগ্যতা খুব জরুরী না। সাধারণতঃ আউট ডোরের ডাক্তারদেরই এখানে কদর বেশী। প্রতিদিন সেই হাসপাতালে যে বিশাল সংখ্যক রুগী ‘আউট ডোরে’ দেখাতে আসে তাঁদের কারণেই আউটডোরের ডাক্তার এই কদর। তাঁদের কাজ হচ্ছে রুগী গুলোকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দেয়া। এরপর রুগীগুলোকে বলে দিতে হয় যেন সে পরীক্ষা করতে নির্দিষ্ট সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যায়। সেখানে তাঁদের রিপোর্ট তৈরি হওয়ার ফাঁকে জানানো হয়, ঐ ডাক্তার আর একটু পরে এখানেই আসবেন। এখানে দেখালে একটু ভালো করে দেখে দিবে। রুগীও ভাবে, এতো কষ্ট করে এতো বড় শহরে আসলাম, একটু ভালো করে দেখিয়ে যাই।
এই ধরা পরা রুগীদের মাঝে আবার কিছু থাকে মৃদু চালাক ধাঁচের। তারা গো ধরে, বড় ডাক্তার দেখাবো। তারও ব্যবস্থা আছে। এইসব ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিছু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বসেন। মৃদু চালাক এই সব রুগীকে তাঁর ইচ্ছে অনুসারে সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে দেয়া হয়।। রুগীও বেজায় খুশী। আর দ্রুত ছাড়াও পেয়ে যায়। কারণ পরীক্ষা করাবার পরে পুনরায় আউটডোরে দেখাতে গেলে পরের দিন ছাড়া উপায় নেই। আর পরের দিন দেখানো মানে একদিন সে শহরে হোটেলে থাকা। তাঁর চেয়ে অনেক কম খরচে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া হল।
যেকোনো হাসপাতালের আউট ডোরে তাই পোস্টিং পেতে ডাক্তারদের চেষ্টা আর তদবিরের বিরাম থাকে না। এখন যেহেতু দলীয় যোগ্যতায় পোস্টিং হয় তাই আউট ডোর গুলো সবসময়ই সরকারী দলের কুক্ষিগত থাকে। কখনও কখনও হয়তো নিলামে ওঠে। দুটো সুবিধা পাওয়া যায় আউট ডোর পোস্টিং এ, ইনভেস্টিগেশান এর কমিশন আর প্রাইভেট রুগী দেখার সুযোগ। আয় নেহাত মন্দ হয় না। সেই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও এই সুযোগ পাওয়ার লোভে আশে পাশের ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসতে রাজী হন।
শুধু আউট ডোর আর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাই যে এই সুবিধা পান, এমন টা কিন্তু না। ইমারজেন্সিতে চিকিৎসা দেয়া ডাক্তার রাও এই সুযোগ পান। দুপুরের পরে যেহেতু অফিস সময় শেষ তাই এর পরে আসা রুগী গুলোর দ্বায়িত্ব বর্তায় ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসারের ওপরে। এর মাঝে কিছু রুগী থাকে খুব বেশি খারাপ না। এই রুগী গুলো আসলে পৌছতে দেরি করে ফেলেছে। এদের সেই আগের ফর্মুলায় পাশের ক্লিনিকে পাঠিয়ে টু পাইস ইনকাম করা যায় আবার দেখে দিয়ে বিদেয় ও করা যায়। আর যদি পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আসতে আসতে আউট ডোরের সময় পেরিয়ে গিয়ে থাকে তবে সেই ডাক্তার সাহেবের জন্য দুঃসংবাদ। আর কোন উপায় নেই, দেখে চিকিৎসা দিয়ে দিতে হবে।
আরও একটু উঁচু মার্গের অন্যায় ক্বচিৎ কখনও দেখা যায়। পাশের ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানোর বদলে হাসপাতালে তাঁর নিজস্ব যে রুম সেখানেই অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এতে রুগী আরও বেশী আহ্লাদিত বোধ করে। বড় স্যারকেও দেখানো হল আর তাড়াতাড়িও হয়ে গেল। এ সুযোগ মাঝে মাঝে আউট ডোরেও পাওয়া যায়। ‘স্যার একটু ভালো করে দেখে দেন, আপনাকে খুশী করে দিব’ এমন লোভনীয় প্রস্তাবও অনেক সময় পাওয়া যায়। সুযোগ টা নেয়া নির্ভর করছে ডাক্তার সাহেবের রুচির ওপর।
এছাড়াও ছোট খাট কিছু আয়ের সুযোগ পাওয়া যায়। রুগী ভর্তি করিয়ে দেয়ার দক্ষিণা। এক্ষেত্রে সাধারণতঃ পিয়ন বা দারোয়ান দের সাহায্য নিতে হয়। এই কাজ সাধারণতঃ নিজে করেন না। পিয়নটি রুগী বা রুগীর লোক কে আলাদা করে ডেকে পরামর্শের সুরে জানায়, ‘একটাই সীট ফাঁকা আছে। খুব খারাপ রুগীর জন্য। কিছু খরচ করতে পারবেন। তাহলে স্যারকে বলে দেখি, সীট টা আপনাকে দেয়া যায় কি না।‘ রুগী ভেবে দেখে, বাইরে চিকিৎসা করতে যা খরচ কিংবা আবার কখন সীট ফাঁকা হবে তাঁর চেয়ে কিছু খরচ করে ভর্তি হয়েই যাই।
(চলবে)
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৫
নতুন বলেছেন: Click This Link
please give some advice here..
৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪০
নানাভাই বলেছেন: বড় সত্য কতা লিখছেন।
৫ টনি ট্রাকের "সমগ্র বাংলাদেশ" ধইন্যা দিলাম।
শুভ কামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫১
খাটাস বলেছেন: অসাধারণ সাহসী সিরিজ শুরু করেছেন ডাক্তার সাহেব। সব গুলোই পড়লাম। চিকিৎসা পেশার সাথে সম্পর্কিত নানা অন্যায় আছে জানলে ও এত গোছানো রাজনিতি আছে, ভেবেই অবাক হচ্ছি।
ডাক্তার দের তো চাইলে ও সৎ থাকার কোন উপায় দেখছি না, যদি কিছু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেন। সাথে আছি শেষ পর্যন্ত জানার জন্য।
এসব অন্যায়ের জন্য একজন ডাক্তারের কি করনীয় হতে পারে, সিরিজের শেষে আপনার মন্তব্য দিলে ভাল হয়।
প্লাস সহ বক্সে রাখলাম।
শুভ কামনা। ভাল থাকবেন।