![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের এক সময় পসার জমে। রুগীর সংখ্যা বাড়ে। এই বেড়ে যাওয়া সাধারণতঃ হয় তাঁর হাত যশ এর ওপর। অর্থাৎ চিকিৎসক কত ভালো সে রোগ ধরতে পারেন এবং ঠিক কি ওষুধ দিলে সেই রোগ সারবে তাও তিনি জানেন। চিকিৎসা পেশায় রোগ ধরতে পারা ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশী কষ্টকর এবং চ্যালেঞ্জিং। এই কাজটি করতেই একজন চিকিৎসক কে বেশী শ্রম ও মেধার পরিচয় দিতে হয়। এর পরের কাজটি অপেক্ষাকৃত সহজ। কোন রোগের কি চিকিৎসা তা বই পত্রে লেখাই আছে। তা প্রায় সকল চিকিৎসকের ই মুখস্থ। তারপরও একজন চিকিৎসক কে নিয়মিত চিকিৎসার ‘আপডেট’ জ্ঞান সম্পর্কে খবর রাখতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োজনীয় হয়ে পরে কোন রোগের চিকিৎসায়।
পসার একটু জমে ওঠার পরে আরও একটি প্রলোভন গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে। পসার বাড়া মানে বেশী রুগী হওয়া। আর বেশী রুগী হওয়া মানে তাঁকে অনেকগুলো প্রেস্ক্রিপশান লিখতে হয়। আর সেসব ব্যবস্থাপত্রে লিখতে হয় কিছু ওষুধ। কোন কোম্পানির ওষুধ লিখবেন তা নির্ভর করছে তাঁর ইচ্ছার ওপর। তিনি চাইলে একটি কোম্পানির সবগুলো লিখতে পারেন। চাইলে অনেকগুলো কোম্পানির প্রত্যকের একটি করে লিখতে পারেন। কোন কোম্পানির প্রতি তিনি আনুকুল্য দেখাবেন সে ব্যাপারে তিনি পুরোটাই স্বাধীন।
ওষুধ কোম্পানি গুলো তাঁদের ওষুধের গুনগত মান জানিয়ে চিকিৎসক কে ‘ভিজিট’ করে। কত সুন্দর পদ্ধতিতে তাঁদের কোম্পানিতে ওষুধ তৈরি হয় তা জানায়। ওষুধের মূল উপাদান কোন দেশ থেকে আনা হয়, কত সুন্দর ভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় এসব তথ্য জানান। বিদেশের কোথায় কোথায় তাঁদের কোম্পানির ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে, মান নিয়ন্ত্রণের কোন ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মেনে চলা হচ্ছে এসব শুনিয়ে চিকিৎসককে প্রলুব্ধ করবার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়।
এর মাঝে আরেক ধরনের ওষুধ কোম্পানির লোক আসে। সে জানায় যদি আমার কোম্পানির ওষুধ লেখেন তবে আপনাকে কোম্পানির তরফ থেকে মাসে মাসে কিছু দক্ষিণা দিতে রাজী আছি। এই দক্ষিনার পরিমাণ নির্ভর করে তিনি কোন ধরনের ওষুধ বেশী লেখেন তাঁর ওপর। দামী ওষুধের ক্ষেত্রে দক্ষিনার পরিমাণ বেশী হয়। যেসব চিকিৎসকের রুগী বেশী হয় তাঁদের দক্ষিণাও খুব কম হয় না। ‘কেবল আমার কোম্পানির ওষুধ লিখতে পারবেন’ এই শর্তে রাজী হলে দক্ষিনার পরিমাণ আরও একটু বাড়ে।
এখানে চিকিৎসকের সামনে আছে দুটি যুক্তি। ওষুধ তো লিখতেই হচ্ছে। কোন কোম্পানির ওষুধ লিখলে যদি কিছু এক্সট্রা আয় করা যায় মন্দ কি? প্রতিদিন ওষুধ কোম্পানির লোকেরা ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল’ হিসেবে যে ওষুধগুলো দিয়ে যায় তাঁর অধিকাংশ ই তো কাজে লাগে না। বেশিভাগ ই তো কোন ফার্মেসী তে কম দামে বিক্রি করে দিতে হয়। এই ঝামেলার কাজ করার চেয়ে সোজা টাকা নিয়ে নিলে খারাপ কি?
এধরনের অফার পায় সাধারণতঃ দুই ধরনের চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ এবং বেশ অনেক রুগী আর বিভিন্ন হাসপাতালের আউট ডোর এ কর্মরত চিকিৎসক। আউট ডোরে কর্মরত চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে সুবিধা একটু বেশী। এখানে কর্মরত বেশিভাগ চিকিৎসকের ই উচ্চতর ডিগ্রী থাকে না বা বলা উচিৎ উচ্চতর ডিগ্রী ধারীরা সাধারণতঃ প্রমোশান পেয়ে যান তাই আর মেডিকেল অফিসার পোস্টে থাকেন না। আর উচ্চতর ডিগ্রী না থাকায় এদের অতিরিক্ত আয়ের সম্ভাবনাও কম। তাই বাড়তি যা পাওয়া যায় তাতেই তারা খুশী হয়ে যান। কেউ মাসিক নেন, কেউ বাৎসরিক নেন।
এই ধরনের উৎকোচের কিছু ভদ্রলোকী ‘ভার্সান’ আছে। এক্ষেত্রে ‘হার্ড ক্যাশ’ এর বদলে দেয়া হয় ‘গিফট’। দামী কিছু গিফট। ল্যাপটপ থেকে শুরু করে আইপিএস। দামী মোবাইল কিংবা গাড়ী। কখনও বিদেশ ভ্রমণের টিকিট। বিদেশী কোন সেমিনারে যাওয়ার খরচ। সব কিছুই নির্ভর করছে সেই চিকিৎসকের কাছে কি পরিমাণ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ব্যাপারটায় আরও কিছু দুর্নীতি যোগ হয় ধীরে ধীরে। ‘কেবল প্রয়োজনীয় ওষুধ কিন্তু একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির’ এই ফর্মুলা থেকে সরে এসে শুরু হয় ‘অপ্রয়োজনীয় ওষুধ এবং একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির’ এই ফর্মুলায়। এই অপ্রয়োজনীয় ওষুধ গুলো বেশীর ভাগই থাকে ভিটামিন কিংবা খনিজ কিছু উপাদান। আমাদের প্রতিদিনের খাবারে সব ধরনের ভিটামিন আর খনিজ উপাদান সঠিক পরিমানে থাকে না, ফলে এগুলো পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় না। খাবারের ঘাটতি মিটাবেয়, ফলে কিছু উপকার হলেও হতে পারে। এই যুক্তিতে অনেকেই এই নতুন জাতের প্রলোভনে সম্মতি দেন। চিকিৎসকদের ভেতর এই প্রলোভনে সম্মতি দিন দিন বাড়ছে।
আর এই বাড়ার কারণে অনেক কোম্পানি বাধ্য হচ্ছে চিকিৎসকদের উৎকোচ দিতে। আবার চিকিৎসকরাও ভাবছেন, আমার লেখা প্রেস্ক্রিপশান থেকেই তো কোম্পানি এতো লাভ করছে তবে আমি এর ভাগ পাব না কেন? আর উৎকোচ দিয়ে যেহেতু ডাক্তারকে দিয়ে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখানো যাচ্ছে তাই ভিটামিন আর খনিজ উপাদানের আমদানিকারক মার্কা কোম্পানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এক্ষেত্রে লাভের ফর্মুলা খুব সোজা, একজন পসার হওয়া ডাক্তারকে পয়সা দাও, সে ওষুধ লিখবে, ওষুধের বিক্রি বাড়বে, বাড়লে লাভ হবে আর লাভের অংশ থেকে কিছু আবার সেই ডাক্তার কে দাও—চলতে থাকবে এই চক্র।
আসলে দুর্নীতি করার জন্য প্রতিটি পেশাজীবীই কোন না কোন যুক্তি দাঁড় করিয়ে নিয়েছেন। ‘রুগী খাক না কিছুদিন ভিটামিন’ ‘রুগীর ক্ষতি তো হচ্ছে না’ এমন হাজারো যুক্তি দিয়ে নিজেকে প্রবোধ দেয়া হচ্ছে। কখনও বিবেক বেশী নড়াচড়া করলে তাঁর জন্য আছে ‘সবাইতো দুর্নীতি করছে, আর আমি করলেই দোষ?’ নিজের কোন আত্মীয়কে লেখা অন্য কোন চিকিৎসকের লেখা প্রেসক্রিপশান দেখে যখন বলি, এই ওষুধগুলো ছাড়া বাকী গুলো খেতে হবে না। তখন প্রশ্ন শুনতে হয়, তাহলে ডাক্তার লিখল কেন? উত্তরে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৭
আমিনুর রহমান বলেছেন:
পূর্ববর্তী পর্বগুলোর লিঙ্কগুলো পোষ্টের নিচে দিয়ে দিলে মনে হয় ভালো হত।
সুন্দর লিখেছেন।
৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
সায়েম মুন বলেছেন: আপনার পোস্টটা ভাল লাগলো। চিকিৎসাক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত বাস্তবতা সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।
কিছুদিন আগের একটা ঘটনা শেয়ার করি....
বিভিন্ন হাসপাতালের আউট ডোর এ কর্মরত চিকিৎসকদের কথা না বলি আমাদের সবার পরিচিত এবং রাজধানীর অন্যতম সেরা সরকারী মেডিকেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কথা বলি! পারতপক্ষে আমি বেসরকারী মেডিকেল বা ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে যাওয়ার চেষ্ঠা করি। ফ্রিতে এখন কোন সেবা পাওয়া দুস্কর বলে! তারপরও এক ডাক্তারের রেফারেন্সে ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে গিয়ে উপস্থিত হই। সকাল দশটার মত বাজে। টিকেট কেটে ডাক্তারের রুমের কাছে গেলে জানতে পারি ডাক্তার আরও ঘন্টাখানেক পরে উপস্থিত হবে। বসে থাকলাম। এগারোটার দিকে ডাক্তার আসলো। এক জন রোগী ঢোকার পর দেখা যায় ১৫-২০ মিনিট দরজা খোলে না। এদিকে রোগীর সংখ্যা গোটা চল্লিশেক। কখন রোগী দেখা শেষ হবে আল্লায় জানে। দুপুর একটা বেজে গেল। ততক্ষণে ১০-১৫ জন রোগী দেখা হয়েছে। একটু ঘুরাফিরা করে জানা গেল কাহিনী ভিন্ন রকম। ডাক্তারের রুমে পিছন দিকে একটা দরজা আছে। আমরা যারা আমজনতা বসে আছি তারা এখানকার রীতি সম্পর্কে কমজান্তা বলে বসে আছি। ওদিকে পিছন দরজা দিয়ে বকশিসের বিনিময়ে আমাদের পরে আসা রোগীরাও লাইন ধরে আসছে আর আমাদের আগে কাজ সেরে বের হয়ে যাচ্ছে। এই কাজে সহযোগীতা করতেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী এবং তাদের দোসরেরা। আমরা তা জানতেও পারছি না। এসব আউটডোরে যেসব ডাক্তার বসে তারা বেশীর ভাগই চাকুরীতে নতুন। এরা এই বয়সে যদি এরকম দুর্নীতি শুরু করে ভবিষ্যত দিনগুলির জন্য আরও ভয় হয়।
৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৭
শ্রাবণধারা বলেছেন: খুব ভাল লাগল আপনার লেখা সানী ভাই। এমন করে ভাবতে আজকাল আর কাউকে তেমন দেখা যায় না। লেখা থেকেই বোঝা যাচ্ছে ডাক্তার হিসেবেও আপনি অনেক বড় মাপের, যেটা আমাদের খুবই দরকার।
৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১১
ল্যাটিচুড বলেছেন: আপনার লিখা পড়ে অভিভূত হলাম। এর থেকে পরিত্রানের উপাই কি নাই ?
৬| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৬
দাম বলেছেন: কি বলব রে ভাই, ৫০০ টাকা দিলে ডায়াবেটিক ফুড ইনফেকসনে মেরোপেনাম লেখে এমন হারমজাদা ও আছে।
প্রফেশনাল লাইফে আসার পর আপনাদের উপর থেকে সম্মান, শ্রদ্ধা কিছু্ই আর থাকতেছে না।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৪
সবুজ মহান বলেছেন: ভাল লিখেছেন, ইথিকস ব্যাপারটা প্রায় উঠেই যাচ্ছে বলা চলে। আরও বয়াবহ গিফটও অনেক ডাক্তার পান।
একটা ঘটনা বলি। রোগী নিয়ে গেলাম এক বিশেষজ্ঞের কাছে। সে অন্যান্য ওষুধের সাথে সকালে প্রেস্ক্রাইব করল এক কোম্পানির omeprazole, রাতে আরেক কোম্পানির omeprazole আর দুপুরে আরেক কোম্পানির রেনিটিডিন । বুঝুন অবস্থা !!!!