নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবার কেন ‘আই সি টি’ আইনের সমালোচনা করছি?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪২

আমি খুব নামী দামী কেউ না। টুকটাক লেখালেখি করি। আর তা করতে যেয়ে যখন কোন টপিক নিয়ে চিন্তা করি তখন চেষ্টা করি এর কারণ নিয়ে ভাবতে। ‘জ্বর’ নিয়ে প্রথম যে চিন্তাটা মাথায় আসে তা হচ্ছে ‘জ্বর কেন হল’। জ্বর কিভাবে থামানো যায় সে চিন্তাও মাথায় আসে, তবে একটু পরে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে এই নিয়মের হেরফের হয়। কখনও জ্বরের মাত্রা এতোটাই থাকে যে, যেকোনো উপায়ে এই মুহূর্তে জ্বর না কমালে রুগীর আরও বড় ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিন্তার ধরণ পাল্টে যায়।

‘কারন’ খুঁজতে বেশী মনোযোগী হওয়ার কারণেই হয়তো, বেশ কিছু ব্যাপারে আমার অবস্থান, মূল স্রোতের বিপক্ষে ছিল। একজন লেখক, একজন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আর একজন মানবাধিকার কর্মীর ব্যাপারে নেয়া সরকারী পদক্ষেপ এর ব্যাপারে আমার ভিন্নমত ছিল। দেশের প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকায়, স্বনামধন্য একজন সাহিত্যিক, শাহবাগে হওয়া একটি আন্দোলনের পটভূমিকায় এবং সেখানে স্লোগান দেয়া একজন স্লোগান কন্যা কে নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলেন। দারুণ বিতর্কিত হয়েছিল গল্পটি। এবং সেটি পরে সরিয়েও ফেলা হয়। সাহিত্যিক সাহেব মৃদু ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। পুরো ব্যাপারটায় যখন সবাই সাহিত্যিকের বিপক্ষে ছিলেন, আমি তাঁকে সমর্থন করেছিলাম, গল্প লেখার ব্যাপারে তাঁর স্বাধীনতার ব্যাপারে।

একজন লেখক একটি ঘটনাকে কিভাবে দেখবেন, তা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। আর একটি গল্প কখনই বাস্তব কোন ঘটনার ‘ফটোকপি’ হয় না। তাঁর সঙ্গে অনেক আনুষঙ্গিক ব্যাপার যোগ হয়। কিছু লেখকের নিজস্ব চিন্তা, কিছু তাঁর পর্যবেক্ষণ। একটি গল্প মানে এই না যে তাঁর প্রতিটি অংশই কোন একটি ঘটনার হুবহু বর্ণনা। লেখকের এই স্বাধীনতায় দুটো ঘটনা ঘটতে পারে। একটি ঘটনার ভুল একটা ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেন আবার একটি সঠিক পর্যবেক্ষণও তিনি দিতে পারেন। বাক স্বাধীনতায় যদি বিশ্বাস করি তবে লেখকের এই ভুল ব্যাখ্যা দেয়ার অধিকার ও মেনে নিতে হবে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বিদগ্ধ মানুষ পছন্দ করলে তাঁর লেখা তারা পড়বেন, না করলে পড়বেন না। আর তাঁর লেখা মানুষের অপছন্দ হওয়াই হবে তাঁর শাস্তি। তাঁকে লিখতে বাঁধা দেয়া কিংবা তাঁর লেখা সরিয়ে ফেলাটা না। এবং তা আমার যতই অপছন্দ হোক। প্রতিবাদ করতে পারি, সমালোচনা করতে পারি। তবে নিষেধাজ্ঞা না। কারণ নিষেধাজ্ঞা মানেই আমার ইচ্ছা আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেয়া।

অপর রাস্তা হচ্ছে, নির্দেশনা দেয়া। ভুল করলেও, ‘এতটুকু’ করতে পারবা। এর বেশী করলে, শাস্তি। এখানেই মূল বিতর্ক। নির্দেশনা দেয়া উচিৎ কি না। অতি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী দের বক্তব্য, ‘উচিৎ না’। আর কট্টর পন্থী দের বক্তব্য ‘উচিৎ’। আরেকটি পন্থা আছে, মাঝামাঝি। এদের বক্তব্য নির্দেশনা থাকবে তবে তা নিজস্ব। একজন লেখক নিজেই ঠিক করে নেবেন, তাঁর কি বলা উচিৎ আর উচিৎ না। এই বিবেচনা যদি ভালো না হয়, অচিরেই তিনি পাঠক হারাবেন। আর পাঠক হারানো মানে একজন লেখকের মৃত্যু। সেটাই একজন লেখকের সবচেয়ে বড় শাস্তি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমার কথা যদি কাউকে মানসিক ভাবে আঘাত করে তবে করণীয় কি? এক পক্ষের বক্তব্য, এতো কোন শারীরিক আঘাত না। কে কতটা আঘাত পেল তা পরিমাপ করাও সম্ভব না। ফলে এর কোন শাস্তি হওয়া উচিৎ না। আরেক পক্ষের বক্তব্য, এর শাস্তি না হলে যে যা খুশী তাই বলবে, লিখবে। আর মাঝামাঝি দলের বক্তব্য, তদারক করা উচিৎ তবে তা হবে সেই সংগঠনের নিজস্ব লোক নিয়ে। সাংবাদিকদের ভুল ভ্রান্তি দেখবে, সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত একটি ‘বডি’। কোনমতেই সরকার কিংবা অন্য কেউ নয়।

উন্নত বিশ্বে বাক স্বাধীনতার যে ধরনটা আছে, তা অনেকটা ‘সেলফ সেন্সর’ ধাঁচের। নিজেই ঠিক করে নেবেন আপনি কি লিখবেন। আপনার নিজের জ্ঞান আর বিবেক দ্বারা পরিচালিত হবেন। আপনি যা খুশী বলুন, লিখুন। কোন সমস্যা নেই। শুধু খেয়াল রাখবেন কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে, তা প্রমাণ করতে হবে। নইলে মানহানির দায়ে পড়তে হবে। ‘ফলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ’ এজাতীয় কিছু ব্যাপার ছাড়া, বাকী যা কিছু আপনি লিখতে চান, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, আপনি লিখতে পারেন। সমালোচনা, কটূক্তি কিংবা তিরস্কার ও করতে পারেন। আর যখন কটূক্তি, তিরস্কার করায় তেমন কোন বাঁধা নেই, তখন এই কাজ গুলো প্রায়ই সবাই করে থাকে। প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ধর্ম কিংবা ধর্ম গুরু কাউকেই কটূক্তি করতে কেউ ছাড়ে না।

এর পরে কি হয়? কে পড়ে এইসব? আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট কে ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলেন আর ‘শুয়োরের বাচ্চা’ ই বলেন, তা আপনিই বলবেন আর আপনিই শুনবেন। কিংবা বড়জোর আপনার চারপাশের কিছু অনুসরণকারী সেটা শুনে হাততালি দিবে। এর বাইরের কাউকে আপনার লেখা পড়াতে হলে আপনার লেখায় কিছু একটা থাকতে হবে। আর সেই ‘কিছু একটা’ হতে পারে ‘যুক্তি’, ‘লেখার মান’, ‘বক্তব্য’ কিংবা ‘বলার ভঙ্গী’। আপনার লেখার পাঠক আপনাকেই তৈরি করতে হবে। আপনার বলা কথার স্রোতা আপনাকেই তৈরি করতে হবে। ফলে ‘বাক স্বাধীনতা’ মানে যা খুশী তাই বলা হতে পারে, তবে তা দিয়ে সবাইকে ‘যা খুশী তাই’ কিন্তু পড়ানো কিংবা শোনানো যায় না।

ভারপ্রাপ্ত সেই সম্পাদক তাঁর মিথ্যা ছবি ছাপিয়ে সেই পত্রিকার বিক্রি হয়তো বাড়িয়েছিলেন তবে তাঁর পত্রিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছিলেন। এখন সেই পত্রিকায় কোন খবর ছাপা হলে একজন সাধারণ পাঠক প্রথমে ভাববে, ‘তথ্যটা ঠিক তো?’ সেই মানবাধিকার কর্মী ‘তালিকা আছে’ বলে হয়তো হুলস্থূল ফেলে দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই তালিকায় ভুল বের হওয়ায় তাঁর নিজের বিশ্বাসযোগ্যতায় নিজেই প্রশ্ন চিহ্ন লাগিয়ে দিয়েছেন। এর পড়ে তাঁদের দেয়া তথ্যের ব্যাপারেও মানুষ দ্বিতীয়বার ভাববে, ‘কথাটা কি ঠিক?’ তাঁদের কৃতকর্মের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হচ্ছে সেটাই।

একবার আমি আমার এক লেখায় আমার এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিলাম। দেখে বেশ অনেকেই বলেছিল, বিভিন্ন ছলা কলায় আমি এইসব বিতর্কিত ব্যক্তির পক্ষ অবলম্বন করছি। এদের সঙ্গে যে ব্যবহার হয়েছে, তা ঠিকই হয়েছে। সেই ‘অনেকে’র জন্য সরকার নতুন একটি আইন উপহার দিয়েছেন ‘আই সি টি অ্যাক্ট’। সেই ‘অনেকে’র যে সুন্দর যুক্তিটি, অর্থাৎ আমিই ঠিক করব, কি বলতে পারবা আর কি পারবা না, সরকারের পছন্দ হয়েছে। এখন সেই ফর্মুলা আইন আকারে নিয়ে এসেছেন সরকার নিজে। এখন সেই ‘আমি’ র ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন সরকার। এবার সরকার ঠিক করে দেবেন কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক না। এবার কেন মানছি না? এবার ‘আই সি টি’ আইনের সমালোচনা করছি?

যখন আমি নিজেই এই কাজটা করেছিলাম, যখন আমার অপছন্দের লোকের বাক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, তখন তো বলেছিলাম, ‘সরকার ঠিকই করছে’। আর যখন আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হল, আমাকেই যখন পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হল, আমারও বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হল, তখন পুরো ব্যাপারটা হয়ে গেল ‘অন্যায়’?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.