নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিগারেট নামা

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭

রুগীদের বেশ কিছু প্রশ্ন করতে হয় আমাদের। রোগের কারণ নির্ণয়ের স্বার্থে। কখনও গল্পের ছলে কখনও স্পষ্ট করে। সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রশ্ন হচ্ছে যৌন জীবন আর নেশা। এদেশে নেশা বলতে যেসব দ্রব্য বোঝানো হয় তাঁর মধ্যে অনেকেই সিগারেটকে ফেলেন না। কিংবা বলা যায় সিগারেট কে নেশা মনে করলেও অপরাধ জাতের নেশা মনে করেন না। ফলে ‘সিগারেট খান কি না?’ এই প্রশ্নটা কে এখনও প্রায় সবাই বেশ নির্বিষ প্রশ্ন হিসেবেই দেখেন।

নেশা ঘটিত প্রশ্নে আমি বেশ নিরাপদে আছি। বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ হওয়ায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আমার জানবার বিষয় হয় ‘সিগারেট’। প্রশ্নটা আমাকে প্রায়ই করতে হয়। এক্ষেত্রে আমাকে খুব বেশী ভয়ংকর অবস্থায় পড়তে হয় না। কিছুটা ঝামেলা হয় মহিলা রুগীকে জিজ্ঞেস করার ক্ষেত্রে। ‘ছি ছি বাবা কি বল?’ কিংবা ‘নাহ, সিগারেট খাব কেন?’ এমন উত্তর পেলে বোঝা যায় রুগীনি মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। পুরুষ রুগীদের কাছ থেকে এমন উস্মা খুব কম পাই। তাঁরাও এই প্রশ্নে খুব বেশী আপত্তি করেন না। বরং যারা খান না তারা ব্যাপারটাকে বেশ গর্বের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেন, ‘জীবনে একটা টানও দিই নি’ ‘অনেকে তো শখের বশেও খায়, আমি তাও করিনি কখনও’। কেউ আবার পুরো বংশ নিয়ে আসেন, ‘আমাদের বংশে কেউ সিগারেট খায় না’।

তবে খেয়েও অস্বীকার করার প্রবণতা নেহাত কম না। আমাদের সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয় যখন রুগীর সমস্যার সঙ্গে সিগারেট খাওয়া সম্পর্কিত তথ্যের অমিল হয়। এক্স রে বলছে এই রুগী বেশ ভালো রকমের ধূমপান করত। অথচ রুগী বলছে করে না। এক্ষেত্রে বুঝে যাই রুগী মিথ্যে বলছে। ‘মিথ্যে’ কথাটা একটু কঠিন হয়ে যায়। বলা যায় লুকাচ্ছেন। ‘সিগারেট খাওয়ার কথা শুনে ডাক্তার যদি রাগ করে?’ এই ভয়েই লুকোনো। আর এই কাজটা সবচেয়ে বেশী করেন বয়স্ক রুগীরা।

এমন পরিস্থিতিতে রুগীকে উল্টো অফার দিই। বোঝানোর চেষ্টা করি ‘সিগারেট খাওয়ার তথ্যে আমি রাগ করব না। ‘কেন চাচা? সিগারেট খান নি কেন?’ কেউ কেউ টোপ টা গিলে। এবারের উত্তরে কিছু পরিবর্তন আসে। ‘এখন খাই না। জোয়ান কালে কিছু খাইতাম’। একবার এক রুগীকে বললাম, ‘হতেই পারে না। এই কাশি সিগারেট না খাইলে হতেই পারে না’ তখন উত্তর পেলাম, ‘সে তো আজ দশ বছর ধরে খাই না’। অর্থাৎ আপনি কিছুই জানেন না। সিগারেটের জন্য কাশি হলে দোষ বছর আগেই হত। আর এই দশ বছর ধরে না খাওয়া কি কম কিছু? এতো সিগারেট না খাওয়ার মতই ঘটনা।

সন্দেহ বেশী থাকলে এই তথ্যটা বিভিন্ন উপায়ে বের করার চেষ্টা করতে থাকি। ‘এখন তো খান না, আগে তো খাইতেন’ এই কথায় অনেকে সিগারেটের কথা স্বীকার করে নেন। মৃদু লজ্জা মেশানো কণ্ঠে উত্তর আসে ‘সে বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে কিছুদিন খাইছিলাম’। তবে যারা এখন আর সিগারেট খান না, তারা সিগারেট ঘটিত কথার শেষে কোন না কোন ভাবে সেই তথ্যটা জানান দিবেনই, ‘এখন তো আর খাই না’। এই রোগ সিগারেটের কারণে হয়েছে বললেও বেশ বেজার হন। ‘কি যে বলেন ডাক্তার সাব?’ অর্থাৎ সিগারেট এতো দুষ্টু হতেই পারে না। অন্য কোন কারণে এই অসুখ হয়েছে। আপনি আসলে জানেন না। সিগারেটকে দোষ না দিয়ে বরং ভালমত পড়াশোনা করে দেখেন, আসল কারণ অন্য।

সিগারেট খাওয়ার কথা যারা প্রথমেই স্বীকার করে নেন তাঁদের ভেতর মজার আরেকটি ব্যাপার পাওয়া যায়। তা হচ্ছে ‘কারণ দর্শানো নোটিশ’। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ‘সিগারেট খাই বা খাইতাম’ কথাটা বলেন না। উত্তর যেটা দেন সেখানে থাকে সিগারেট খাওয়ার কারণ জানানোর প্রবণতা। মজার সব কারণ। ‘বাবা ক্ষেত কাজ করতাম তো’ কিংবা ‘দিন মজুর করতাম তো’ অর্থাৎ সিগারেট ছাড়া ক্ষেতে কিংবা দিন মজুর কাজ করা যায় না। সিগারেট না খাওয়া লোকদের দিনমজুরে ডাকা হয় না। অনেকটা বাধ্যতামূলক একটা ব্যাপার।

মহিলাদের ভেতর উত্তর দেয়ার একটা নিজস্ব ভঙ্গিমা আছে। জিজ্ঞেস করলে ফিক করে একটা হাসি। ‘এখন আর খাই না, এখন পান খাই’। কখনও রুগীর লোক জানিয়ে দেয়। ‘জ্বী স্যার, খুব বিড়ি খাইতো।‘ একবার এক বিড়ি ফ্যাক্টরি তে কাজ করা মহিলা রুগীকে সিগারেট এর কথা জিজ্ঞেস করায় প্রথমে অস্বীকার করল। বললাম, ‘বিড়ি ফ্যাক্টরি তে কাজ করেন আর বিড়ি খান না? একটা টানও দেন নি?’ এবার দেখা পেলাম সেই ফিক করে হাসির। সেই হাসিতে সম্মতি।

যারা সিগারেট এখনও ছাড়েন নি তাঁদের উত্তরে বেশ কিছু মারপ্যাঁচ থাকে। ‘এখন অনেক কমিয়ে দিয়েছি’ অর্থাৎ আগে অনেক বেশী খেতাম এখন কম। আর এই তথ্যটা জানানোর উদ্দেশ্য, সিগারেট ছাড়ার ব্যাপারে উপদেশ দিবেন না। আমি নিজেই ছাড়ার চেষ্টায় আছি। আরেক ধরনের উত্তর হয়, ‘মাঝে মাঝে দু একটা খাই’ কিংবা ‘সবসময় না’। এর মানে হচ্ছে আমার পক্ষে যেকোনো সময় ছেড়ে দেয়া সম্ভব। আলাদা করে উপদেশ দেয়ার দরকার নাই। আর ‘অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি’ এই উত্তরের মানে, উপদেশ দিয়ে লাভ নাই। ছাড়বো না।

আরেকটা ব্যাপার খুব মজার লাগে। সিগারেট ছেড়ে দেয়া রুগীরা তাঁদের ছাড়ার সময়টা বেশ জোর গলায় বলেন। ‘পঁচাত্তর সালের পরে আর সিগারেট খাইনি’ কিংবা ‘গত তিন মাস ধরে খাই না’। কেউ আবার কোন ঘটনা উল্লেখ করে জানান, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আর খাই না’। কারো বলার ভঙ্গিতে থাকে নিজের দৃঢ় চেতা স্বভাবের পরিচয়, ‘সেই দিন থেকে যে সিগারেট ছাড়ছি, আর একটাও টান দিই নি।‘

সেদিন আসলেন হাঁসফাঁস করতে করতে আসা এক বয়স্ক রুগী। সিগারেট এর কারণে হওয়া শ্বাসকষ্ট জনিত একটি রোগ হয়েছে তাঁর। শ্বাসকষ্টের জন্য খুব ভালো ভাবে কথাও বলতে পারছেন না। বেশ কিছু চিকিৎসা তৎক্ষণাৎ দেয়ায় কিছুটা আরাম পেলেন। এখন কথা বলতে পারছেন। কথা বলতে পেরেই তাঁর প্রথম প্রশ্ন, ‘সিগারেট কি ছাড়তেই হবে?’

হেসে ফেললাম। এই অবস্থায়ও তাঁর সিগারেট খাওয়ার অটুট ইচ্ছে দেখে। এখনও মনে প্রবল আশা, চিকিৎসক যদি বই পত্র ঘেঁটে এমন কোন নথি পান, যেখানে বলা থাকবে এই অবস্থায়ও সিগারেট খাওয়া যাবে। মনে হচ্ছে সিগারেট খাওয়ার অনুমতি দিলে আমাকে তিনি যথা কিঞ্চিৎ উৎকোচেরও প্রস্তাব দিতে পারেন। এরপর সেই প্রস্তাবটা আসলো, ‘দেখেন না ডাক্তার সাহেব কিছু করা যায় কি না। তাহলে এরপর থেকে সব সময় আমি আপনাকেই দেখাবো।‘

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১২

গরম কফি বলেছেন: মজার একটা জিনিস । যতবার যত দিন ভাবি ছেরে দিবো সে দিন থেকে একটা করে বেশি খাই । এজন্য এখন পেকেটের বদলে খুচরা দশটা পাচটা করে কিনি এটা মোটা মুটি কাজে দেয় তবে রাতবিরাতে বিপদে ফেলে ....

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৭

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: লিখে ফেলেন আপনার অভিজ্ঞতা। মতামতের জন্য ধন্যবাদ

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৭

মেহেদী_বিএনসিসি বলেছেন: :( :( :( কি আর কমু.....আফনে ডাক্তার মানুষ........তাই মিছা কতাও কইবার পারিনা। গত ১৪-১৫ বছর বা তারো বেশি সময় ধইরা সিগারেট খাই (মাঝখানে বোনাস হিসাবে অন্য কিছুও পাশাপাশি চালাইছিলাম)। সব সময় নিজের কাছেই নিজে ভাব নিয়া থাকতাম...আমি যেন চাইলেই এইটা ধুম কইরা ছেড়ে দিতে পারি......তাই ছাড়ছিনা।

এর মধ্যে দুবছর আগে সিগারেট পুরা ১০ মাসের মতো না খায়া ছিলাম.......পরে আবার কিসের পাল্লায় পইড়া আবার কামব্যাক করছি........ :( :( :(
আবার মাঝখানে ৪-৫ দিনের জন্যও বন্ধ কইরা ক্যানো যেন আবার ধরছি.......অখন মাঝে মাঝে সন্দেহ জাগে........আদৌ কি আমি এইটা ছাড়তে পারবো.......। জানি সবাই বলবেন.....আমি চাইলেই পারবো..........সেটা আমিও জানি......কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাকে নিয়েই......কেন যেন আমার মধ্যের শয়তানটা সিগারেটে বেশ আসক্ত হয়ে গেছে.....কিছুতেই ছাড়তে চাইছেনা......বা ছাড়লেও ভুলায়া ভালায়া আমাকে আবার ওই ট্রাকে নিয়া আসে :( :( :(

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩১

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: সুন্দর গল্প। জানানোর জন্য ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩১

খাটাস বলেছেন: পোস্ট টা পড়ে কেন যেন বেশি মজা পেলাম। বক্ষ বিশেষজ্ঞ হউয়ায় আপনার কাছে একটা ব্যাপার জানতে চাই, আমি টানা ৮ বছর সিগারেট খাওয়ার পর গত ছয় মাস আগে থেকে ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমান বয়স ২৩। আমার কি কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন আছে এখন?
সম্ভব হলে উত্তর টা জানাবেন।
ভাল থাকবেন, শুভ কামনা।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৫

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: না

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৬

মেহেদী_বিএনসিসি বলেছেন: ডাক্তার সাব........আমিতো গল্প কইনাই.........আমি সমস্যার কথা কইছি.......। অখন কন ক্যমতে ছাড়মু এইডারে.......। ওতো আমারে ছাড়তে চায়না :( :(

@খাটাস ভাই........আপ্নে যদি আমার মতো খাটাস হইয়া থাকেন....তয় কনফার্ম হন........আবার ধরবেন ওইটারে.......। আর যদি না ধরেন তয়তো বাচছেন।
১০ বছর পরেও শখের বশে কখোনে এক টান দিছেন তো মরছেন।

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৬

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: উইল পাওয়ার মেইন। কিছু ওষুধ আছে, খেলে সিগারেট বিস্বাদ লাগে, সেগুলোও চেষ্টা করতে পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.