নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৩

বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনার প্রতিষ্ঠা কতটুকু হয়েছে কিংবা হচ্ছে তা বুঝতে পারা যায় তার কাছে আসা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ দের সংখ্যা দেখে। আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করা যেতে পারে। বড় সড় বা মাল্টি ন্যাশনাল ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ কেমন আসে। ওরা আসা মানেও বুঝতে হবে, এই ডাক্তার ধর্তব্যের মধ্যে, এখন কাজে না দিলেও পরে দিবে। এর মাঝে আরও অনেক ব্যাপার আছে। ডাক্তারটি কোন অঞ্চলে প্র্যাকটিস করছেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কয় জন,তার অচিরেই রুগী বারবার সম্ভাবনা আছে কি না। কিংবা যে চেম্বারে বসছেন তাঁদের গুড উইলের কারণে অচিরেই তার রুগীর ঢল নামবে কি না। অনেক সময় সেই ডাক্তার আগে যেখানে ছিলেন সেখানে কেমন প্র্যাকটিস হত, এসবও বিবেচ্য বিষয় হয়।

চেম্বারে রুগী নেই, অবধারিতভাবে ধরে নেয়া যায় তাঁর কাছে কোন রিপ্রেজেন্টেটিভও তেমন ভাবে আসবে না। দুএকজন আসবে। তাঁদের বেশীর ভাগই আসবে অন্য কোন ডাক্তারের চেম্বারে ভিজিট করতে পারছে না, তাই সময়টা কাজে লাগানোর জন্য। কেউ আসবে, ভবিষ্যতের ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে, কম প্র্যাকটিসের সময় যারা নিয়মিত দেখা করত, অনেক ডাক্তার তাঁদের মনে রাখে। কেউ আসবে, যাও দু একটা রুগী হয়, সেখানে যেন তাঁর ওষুধ লেখা হয় সে কারণে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে খুব কম প্র্যাকটিস হয় এমন ডাক্তারের কপালে জোটে একটি কলম কিংবা কিছু প্যাড। আর একরাশ লিটারেচার এগিয়ে দিয়ে ওষুধের গুণগান। কিছু ফিজিশিয়ান স্যামপল দেয়া হয়, তবে সেসব ওষুধ বেজায় কম দামের এবং প্রতিদিনের জীবনে প্রায় প্রয়োজন হয়ই না, এমন সব।

কিন্তু যদি প্র্যাকটিস জম জমাট হয়? দারুণ উল্টো এক চিত্র। একটু বেশী রাত হলেও তাঁর চেম্বারের সামনে রিপ্রেজেন্টেটিভ দের ব্যাগের সারি জমে থাকবে। ডাক্তার সাহেব যেন বিরক্ত না হন, তাই দ্রুত ফিজিশিয়ান স্যামপল গুলো আগে দিবে। লিটারেচার গুলো পড়ে শোনানো ঝুঁকি পূর্ণ, ডাক্তার সাহেব রেগে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। দামী গিফট থাকলে সেটা হয়তো আগে দেয়া হয়। কলম দেয়ার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকেন। একটু দামী না হলে ডাক্তার সাহেব অপমানিত বোধ করতে পারেন। প্যাডের ক্ষেত্রেও তাই, ছোট স্লিপ প্যাড না দিয়ে বড় সাইজের স্পাইরাল প্যাড দেয়া হয়।

ডাক্তার সাহেবের যত বেশী রুগী, তাঁকে দেয়া ফিজিশিয়ান স্যাম্পলের মূল্যমানও তত বেশী। দামী অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা নতুন সব দামী ওষুধ। কমদামী ওষুধ বলতে হয়তো গ্যাসের ওষুধ, সেটাও দশটার প্যাকেট দেয়া হয়, এবং সংখ্যায় একাধিক। সেই সঙ্গে থাকবে একটা কাঁচুমাচু ভাব, ডাক্তার সাহেব খুশী হলেন তো?

অনেক ব্যস্ত ডাক্তার আবার সপ্তাহে মাত্র দুইদিন ভিজিট দেন। আর সে দিনগুলোতে শুরু হয় রিপ্রেজেন্টেটিভদের হুড়োহুড়ি। কার আগে কে ঢুকবে। সাধারণতঃ তাঁদের নিজেদের ভেতর আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে। যে আগে পৌছাবে বা যে আগে ব্যাগ রাখবে তাঁর সিরিয়াল আগে পাবে। কেউ বেশী সময় ডাক্তারের চেম্বারে থাকবে না, যেন অপর জনকে বেশী অপেক্ষা করতে না হয়।

একবার এক সিনিয়র ডাক্তার আমাদের জুনিয়রদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘চেম্বার শেষে যখন একটা পাউরুটি কিনে বাসায় ফেরো তখন তোমার ছেলেরা বলে না, আব্বু একটা কোন কোম্পানি দিল?’ একই সঙ্গে লজ্জাও পেলাম আবার হেসেও দিলাম। ওষুধ কোম্পানি গুলো হেন ‘গিফট’ নাই যা তারা চিকিৎসকদের দেয় না। সাবান। শ্যাম্পু থেকে শুরু করে স্যুট পিস কিংবা বিছানার চাদর। কাটলারি সেট থেকে শুরু করে টেবিল ম্যাট। মগ, বাটি, থার্মাল ফ্লাক্স কি থাকে না সেই গিফট আইটেমে। সামনের চিকিৎসক যে বেশ দামী তা বোঝানোর জন্য বলা হয়, এই গিফট মাত্র একটা এসেছিল, আপনার জন্য আমি রেখে দিয়েছিলাম স্যার।‘

গিফটের মাত্রা এখন আকাশ ছুই ছুঁই করছে। ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন কখনও সরাসরি দেয়া হয় কখনও বলা হয়, ‘আমাদের একটা ইন্টারনাল সার্ভে হয়েছিল, বেস্ট প্রেস্ক্রাইবার হিসেবে আপনার নাম এসেছে’। কিংবা একটা লোক দেখানো লটারি কিংবা কুইজ প্রতিযোগিতা। এরপরে পুরস্কার হিসেবে আসবে দামী একটি ট্যাবলেট পিসি। ‘আপনি নিজের পছন্দ মত কিনে নিয়েন’ বলে চেক এগিয়ে দেয়া এখন অনেক নিত্য নৈমিত্যিক ব্যাপার হয়ে গেছে।

খুব কম ডাক্তারের বাড়ী পাওয়া যাবে যেখানে ওষুধ কোম্পানির দেয়া একটা মগ নেই। কিংবা ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে পানি খাওয়ার মগটা পয়সা দিয়ে কেনা। ‘দোস্ত আগের বার যে প্যাড দিয়েছিলি, আমার মেয়েটা খুব পছন্দ করেছে। আজকে একটু তোর চেম্বারে যাব, কয়টা প্যাড দিস।‘ এই কাজ প্রত্যেক ডাক্তারেরই নিত্য দিনের ঘটনা। বন্ধু, আত্মীয় কিংবা পাড়া প্রতিবেশী, বেড়াতে আসবার পরে একটা প্যাড পেলে দারুণ খুশী। সুন্দর একটা কলম পেলে তো কথাই নাই।

আর গৃহকর্ত্রী? তিনি তো আরেক কাঠি সরেস। বাসায় একরাশ মগ, বিয়েতে পাওয়া একঝাক কাপ পিরিচ। তারপরও গিফটে পাওয়া মগটা সোকেসে ঢুসতে ঢুসতে বলবে, ‘থাকুক অনেক, এটা অনেক সুন্দর। ডিজাইনটা আনকমন।’ কখনও একই জিনিস একাধিক পেলে, ‘থাকুক, দুই ভাইয়ের জন্য দুইটা’। চাহিদার এখানেই শেষ না। সেদিন বেশ কিছু কাঁচুমাচু করে, অনেকটা মিনমিন করে অভিনব এক আবদার করল, আচ্ছা ওষুধ কোম্পানি তো তমাদেরকে অনেক কিছু দেয়। একটা বুয়া জোগাড় করে দিতে পারবে না। ভালো বুয়া পাচ্ছি না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৯

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: ভাই ধন্যবাদ অনেক কিছু জানলাম। বাড়ীর পাশের হসপিটালে রিপ্রেজেন্টেটিভদের ছড়াছড়ি দেখে অনেক কিছুই জানার ইচ্ছে ছিল। পোস্ট টা আমার ব্যক্তিগত সাইটে রাখার অনুমতি চাচ্ছি.....

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৭

অরিন্দম বোস বলেছেন:

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১১

দাম বলেছেন: ভাই সরাসরি ঘুস নেওয়ার কাথাটা লিখলেন না???

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৪

মামুন রশিদ বলেছেন: আচ্ছা ওষুধ কোম্পানি তো তমাদেরকে অনেক কিছু দেয়। একটা বুয়া জোগাড় করে দিতে পারবে না। ভালো বুয়া পাচ্ছি না।

ডাক্তার পত্নীর কথাটা বেশ মনে ধরেছে । আমরাতো শুনি উনারা নাকি ডাক্তারদের বাসার বাজারও করে দেয় । দুদিন পরে হয়ত আপনাদের বাচ্চাকাচ্চার হাগুও পরিষ্কার করে দিবে ।

মার্কেটিংয়ের ভাষায় যেটা বুঝি, মেডিসিনের যেহেতু পাবলিক এ্যাড দেয়া যায় না তাই কোম্পানীরা পার্সোনাল মার্কেটিং করে । পার্সোনাল মার্কেটিংয়ে কাস্টমারদের (এখানে ডাক্তার) পার্সোনালি ট্রিট করতে হয় । এখানে কাস্টমারকে ইমপ্রেস করার জন্য সেলসম্যানরা ভদ্র-বিনীত ভাবে তাদের প্রোডাক্ট প্রমোট করে । প্রডাক্টের ফিচার সম্বলিত সেম্পল-গিফট দেবার রীতি সারা দুনিয়ায়ই আছে । আর এখানকার কাস্টমাররা যেহেতু সমাজের অগ্রসর-শিক্ষিত শ্রেনীর, তাই সেলসম্যানের ব্যক্তিগত যোগ্যতাও সেরকম হতে হয় । আমি যেকয়জনকে চিচি তারা সবাই ইউনিভার্সিটির সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারি ।

আমার চাচা মেডিসিনের রিটায়ার্ড অধ্যাপক । এক সময় দিনে শতাধিক পেশেন্ট দেখলেও এখন চল্লিশটার বেশি দেখেন না । খুব স্বাভাবিকভাবে উনার চেম্বারে দুর-দুরান্ত থেকে আসা রোগীদের ভীড় থাকে এবং একটা সিরিয়াল পাবার জন্য হাহাকার শুরু হয় । এত ব্যস্ততার মাঝে চাচা প্রতিদিন নিয়ম করে ঔষধ কোম্পানীকে সময় দেন । রোগীরা এটা নিয়ে প্রায়ই চেঁচামেচি করে । তিনি তখন চেম্বার থেকে বেরিয়ে এসে রোগীদের শান্ত করেন এই বলে, "ঔষধ কোম্পানী আমার প্রয়োজনেই এখানে আসে, তাদের কাছ থেকে ইনফরমেশন না পেলে আমি প্রেশক্রিপশন লিখতে পারব না । আপনাদের ভাল চিকিৎসার প্রয়োজনেই তাদের কথা শুনা দরকার ।"

উল্লেখ্য চাচা কোম্পানীর কাছ থেকে কোন সেম্পল বা গিফট গ্রহন করেন না । ইনফরমেশনের শুধু জন্য লিটারেচার নেন ।

একজন ডাক্তারের কাছ থেকেই জেনেছি এই পেশার লোকজন কতটা সম্মানিত, কতটা শ্রদ্ধার । আবার আজকে একজন ডাক্তারের কাছেই জানলাম একটা পেশাকে কত ছোট কত হাস্যকর করে দেখতে হয় ।

ব্যাপারটা যখন পারষ্পরিক লেনদেনের (আক্ষরিক অর্থেই স্যাম্পল-গিফট-টাকা লেনদেন হয়) সেখানে শুধু দেনেওয়ালারাই হাস্যকর থাকলেন, লেনেওয়ালারা মহান !

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

ঈশ ! কেন যে ডাক্তার হলাম না :( :( :(

৬| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮

আম্মানসুরা বলেছেন: আচ্ছা ওষুধ কোম্পানি তো তমাদেরকে অনেক কিছু দেয়। একটা বুয়া জোগাড় করে দিতে পারবে না। ভালো বুয়া পাচ্ছি না।



হা হা হা ভালোই বলেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.