নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আব্বুর বন্ধু ইংরেজি পড়তে পারে না তো

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯

গত কিছুদিন আমার ব্যক্তিগত জীবনের রুটিনে এক বিশাল পরিবর্তন আনতে হয়েছে। পত্রিকায় লেখালেখি প্রায় এক বছর থেকেই করছি। তবে তা লিখতে বড়জোর ঘণ্টা খানেক লাগে। চেম্বারেই সেরে ফেলতে পারি। কখনও বাসায় কিছু সময় ব্যয় করতে হত। ফলে আগে অফিস এবং চেম্বার সেরে আসবার পরের বাকী সময়ের প্রায় পুরোটাই বরাদ্দ থাকতো স্ত্রী এবং দুইপুত্রের জন্য। সেখানে কিছুদিন যাবত ছেদ পড়েছে। কারণটি বেজায় ভয়ংকর। আমি একটি বই এর অনুবাদে হাত দিয়েছি।

এই অনুবাদের কাজটা বেশ হঠাৎ করেই পাওয়া। আমার লেখালেখির শুরুটা যেভাবে হয়েছিল, সেই ফেসবুকের হাত ধরেই। ফেসবুকের স্ক্রিনে যাদের মতামত কিংবা পোস্ট ভেসে ওঠে তাঁদের অনেকেই আমার ফ্রেন্ড। আবার অনেকে আমার ফ্রেন্ড এর ফ্রেন্ড। এদের অনেক কেই চিনি না। আবার অনেক কেই চিনি কিন্তু তারা আমাকে চেনেন না, বা চেনার প্রশ্ন ওঠে না। তারা এতোটাই বিখ্যাত যে তাঁদের ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য হাজার জন লাইন ধরে অপেক্ষা করে আছে। চাইলেও তাঁদের ফ্রেন্ড হওয়ার উপায় নেই।

একদিন আমার এক ফ্রেন্ড এর ফ্রেন্ড, প্রখ্যাত সাহিত্যিক মইনুল আহসান সাবের এর একটি পোস্ট আমার স্ক্রিনে দেখা দিল। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যারল্ড ল্যাম্ব এর লেখা বিখ্যাত বই ‘চেঙ্গিস খান, দ্যা ইম্পেরর অফ অল মেন’ বইটা কারো কাছে আছে কি না। যদি থাকে এবং তাঁকে পাঠানো হয়, তবে খুব উপকৃত হবেন।‘ যেহেতু ইন্টারনেট থেকে বই পত্র আমি প্রায়ই নামাই, তাই এসব ওয়েবসাইট আমার চেয়ান। দ্রুত খোঁজা শুরু করলাম। এবং যথারীতি পেয়েও গেলাম। এরপর তাঁকে মেসেজ দিয়ে জানালাম, বইটা আমার কাছে আছে। চাইলে আমি পাঠাতে পারি।

উত্তরে উনি জানালেন, তিনি এরই মধ্যে বইটি পেয়ে গেছেন। আরও জানালেন বইটি তিনি এই বইমেলায় বইটির অনুবাদ বের করতে চান। তাঁর প্রকশনা থেকে। আরও জানালেন, ‘অনুবাদ করার লোক খুঁজছেন।‘ সুযোগটা আমি নিলাম। জানালাম, ‘আমি কিছুটা করে পাঠাই? পছন্দ হলে পুরো অনুবাদটা আমিই করতে চাই।‘ কিছুটা অনুবাদ করে পাঠালাম। উনি পছন্দ করলেন। এরপরে অনুমতি পেয়ে গেলাম পুরো কাজটা করার। পুরো বই অনুবাদের দ্বায়িত্ব এখন আমার।

অচিরেই বুঝলাম কি ভয়ংকর কাজে হাত দিয়েছি। ১৯২৮ সালে লেখা এই বই। এমন সব ইংরেজি শব্দ রয়েছে, যা সাধারণ ডিকশনারি তে নেই। ফলে আমাকে সারাক্ষণ ইন্টারনেট অন করে রেখে অনলাইনে মানে খুঁজে খুঁজে এগোতে হচ্ছে। ইংরেজিতে যে খুব ভালো জ্ঞান এমনও না। বাংলাতে বেশ কিছুদিন ধরে লেখালেখি করছি, এই যা যোগ্যতা। সব মিলিয়ে কাজ এগুচ্ছে খুব ধীরে। আর বাড়ীতে থাকার পুরো সময়টা যাচ্ছে এর পিছনে।

‘আব্বু, কি করছো?’ বলে পুত্র দ্বয় প্রায়ই আসছে। ‘কাজ করছি’ বলে দুজনকে প্রায় সব সময় তাড়িয়ে দিতে হচ্ছে। এরপর ওরা নতুন ফন্দি আঁটল। পড়াশোনা নিয়ে আসতে লাগলো। ‘আব্বু, লোমি সয়েল টা বুঝতে পারছি না’ কিংবা ‘পুরুষ কি?’ ‘বচনটা একটু বুঝিয়ে দাও’। এতে কাজ হচ্ছে। ল্যাপটপ সরিয়ে ওদের কিছুক্ষণ পড়া বোঝালাম। একসময় ওরা ক্ষান্ত দিল। এভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গেলে শুধু শুধু পড়াশোনা করতে হচ্ছে। নতুন উপায়ের খোঁজ শুরু করল। এবং এবার শুরু হল আরেক ধরনের উৎপাত।

চুপচুপ করে এসে ল্যাপটপের পিছনে দাঁড়িয়ে লেখাটা পড়ল। ‘চেঙ্গিস খান’ । ‘আব্বু চেঙ্গিস খান কে?’ ‘এখন কাজ করছি, ডিস্টার্ব করো না।‘ এই বলে কিছুদিন চলল। এরপর একদিন আসলো করুন অনুরোধ, ‘শুধু এটুকু বলো যে চেঙ্গিস খান কে? তাহলে চলে যাব’ বোঝালাম। ‘একজন রাজা ছিল। পুরো পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক দখল করে ফেলেছিল’। ‘কিভাবে?’ বললাম, ‘সেটাই লিখছি। এখন যাও। লিখতে দাও।‘

আরও কিছুদিন পার হল। আবার ঘুরঘুর শুরু হল। ‘কিন্তু কেন লিখছো?’ খুব সহজ প্রশ্ন। তাই তো কেন লিখছি। একটু লেখক হওয়ার শখ হয়েছে। কিংবা ছাপার অক্ষরে নিজের একটি বই বের করতে চাই। এই শখ মেটাতেই এই গলদঘর্ম পরিশ্রম। এইসব কথা বোঝানো যাবে না। সহজ ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করলাম। বললাম, ‘এই বইটা ইংরেজিতে লেখা। ফেসবুকে আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে বলেছেন এই বইটা বাংলায় লিখে দিতে। তাই লিখছি।‘ আবার প্রশ্ন, ‘কেন তোমার বন্ধু ইংরেজি পড়তে পারে না?’

এদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মত ভয়ংকর কাজ আর পৃথিবীতে নাই। উত্তর দিলেই আবার আরেকটা প্রশ্ন হাজির হবে। উত্তর দেয়া বন্ধ করে বললাম, লেখা শেষ করে নিই। তারপরে সব বুঝিয়ে বলব। ওকে?’ খুব খুশী না হলেও মেনে নিল। কিংবা হয়তো বুঝলো আমি রেগে যাচ্ছি। আর তাই এখন চুপ করে থাকা বাঞ্ছনীয়। আর প্রশ্ন করল না। এমন সময় গুটি গুটি পায়ে আসলো ছোট জন।

সেই পুরনো প্রশ্ন। ‘আব্বু কি করছো?’ এবার বড় জনের দিকে তাকালাম। বললাম, ‘ওকে বুঝিয়ে বল, কি করছি।‘ বড় পুত্র এবার খুব সুন্দর করে বলতে শুরু করল। ‘আব্বুর একটা ফ্রেন্ড আছে। উনি একটা বই পড়তে চায়। বইটা ইংরেজিতে লেখা। আর আব্বুর বন্ধু ইংরেজি পড়তে পারে না তো। তাই আব্বুকে বলেছে বইটা বাংলাতে লিখে দিতে। তাই না আব্বু?’

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯

রাহুল বলেছেন: মজা পাইলাম।আপনার দুই ছেলেন নাম বলেন।ওদের জন্য শুভকামনা।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৮

পথহারা সৈকত বলেছেন: রাহুল বলেছেন: মজা পাইলাম।আপনার দুই ছেলেন নাম বলেন।ওদের জন্য শুভকামনা।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে

৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৩

শান্তির দেবদূত বলেছেন: আমি তো কোন গল্প মনে করে পড়ছিলাম, শেষে এসে দেখি জীবন থেকে নেয়া। :) ভাল লাগল। আপনি অনেক ভাল লিখেন, চালিয়ে জান, শুভেচ্ছা রইল।

৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৪

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১০

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: বাচ্চা ভয়ংকর !! কাচ্চা ভয়ংকর !!


যাই হোক আশা করি আপনার অনুবাদ শেষ হলে আমরা একটা চমৎকার বই পড়তে পারব।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৯

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কি হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.