![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙ্গালীর সস্তাতম আপ্যায়ন চা। আর সেই ‘চা’ এর ব্যাপারে আমার অবস্থা আর দশজন কৃপণ বাঙ্গালীর মতই। কেউ অফার করলে, আর যদি বিল দেয়ার ব্যাপার না থাকে তবে কখনোই ‘না’ বলি না। কিছুক্ষণ আগে এক কাপ খেয়ে থাকলেও বেশ হাসি মুখেই সম্মতি জানাই ‘দাও’। বিশেষ করে অফার কারী সিনিয়র কেউ হলে কিংবা কারো বাসায় বেড়াতে গেলে। তখন অবধারিতভাবে ‘বিনে পয়সা’ ঘটনাটা বেশী ঘটে। আর সেই চা এর স্বাদ যেমনই হোক, খাওয়ার সময় একটা নিশ্চিন্ত ভাব কাজ করে।
ভয়ঙ্কর রকমের ‘মেন্টাল স্ট্রেস’ যায় ‘আয় চা খাই’ জাতীয় অফারে। প্রথমে হিসেব করে নিই, বিলটা আমাকে দিতে হবে কি না। দিতে হলে কিংবা না দিয়ে পার পাওয়ার উপায় নেই দেখলে আপ্রাণ চেষ্টায় একটা হাসি ঠোঁটে এনে বলতে হয় ‘চল খাই’। বিলও দিব আবার নিজেও খাব না, মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে যায়। উত্তরে ‘আজকে আর খাব না’ বলব কি না নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর। কার পকেট কাটা পড়বে তার ওপর। যদি নিজে না খেলে বিল দেয়ার সম্ভাবনা কমে যায় তবে এই উত্তরটা চলনসই। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে ‘খাব না’ বলার পরও যদি পার পাওয়া না যায়। চাও খেলাম না আবার বিলও আমাকে দিতে হল, এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কিছু নেই। তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার পরে এক ভোটে হারবার চেয়েও বেশী কষ্ট।
বিল আমাকেই দিতে হতে পারে এমন অবস্থা আঁচ করতে না পারলে, অনেক সময় চায়ে সম্মতি দিই ‘খাওয়ার খুব ইচ্ছা নাই’ বলে ‘চা’ টা খেয়ে নিই। বেশ বিমর্ষ চিত্তে। এতে একটা সুবিধা, অফারকারী হয়তো ভাবতে পারে, বেচারা অনিচ্ছায় খাচ্ছে, ওকে আবার বিল দিতে বলব? এই মিনমিনে ‘হ্যাঁ’ ফর্মুলা মাঝে মাঝে কাজে দেয়। তখন যে মনটা কি রকম ভালো হয়ে যায়, কি বলব। মাঝে মাঝে আনালাইসিস ভুলও প্রমাণিত হয়। তবে ‘আমি দিচ্ছি’ বলার পরেও বিল দিতে দেয়া হবে না, এমন ঘটবার প্রবল সম্ভাবনা থাকলে তো কথাই নেই। বেশ হৃষ্ট চিত্তে উত্তর দিই ‘বলছিস? তাহলে খাই এক কাপ’।
সিগারেট খাওয়া কারো সঙ্গে ঘুরতে বেরোলে, সবচেয়ে বেশী ভয়ে থাকি। এরা চায়ের সঙ্গে একটা সিগারেট খাবেই। ফলে সঙ্গীরও চা খাওয়ার পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যখন দেখে আমি সিগারেট খাই না। ওর সিগারেট খাওয়ার সময়টা আমাকে যেন ভ্যাবলার মত বসে থাকতে না হয়, তাই একটা চায়ের স্টলে বসে, ‘মামা দুই কাপ চা দাও’ বলে। কিছুক্ষণের জন্য হার্ট বিট কিছুটা বেড়ে যায়। বিল কে দেবে? যদিও সমূহ সম্ভাবনা সিগারেট খাওয়া বন্ধুটা দেবে। তারপরও অনেক ঘটনা ঘটতে পারে। ‘পাঁচশ টাকার নোট’ বের করে যদি করুন চোখে আমার দিকে তাকায়? ‘মামার কাছে তো খুচরা নেই।‘
ভয়ের ব্যাপার আরও থাকে। সঙ্গে যদি সঙ্গে সিগারেটের প্যাকেট থাকে, আর সেখান থেকেই ধরায় তবে, চায়ের বিলটা দুজনের যে কারো ভাগ্যেই জুটতে পারে। ‘আমি দিচ্ছি’ বলে হয়তো দুজনই শুরু করবে। এরপরের ঘটনা নির্ভর করবে কে বেশী খেলোয়াড়। এবং ভালো খেলা না জানলে সেখানে ধরা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
তবে সিগারেট টাও সেই ‘মামা’ র কাছ থেকে নিয়ে থাকলে, অব্যহতি পাওয়ার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা থাকে। ‘কত হোল’ বলার পরে সিগারেট সহই যেহেতু দাম বলা হবে সেক্ষেত্রে আমার বিল দেয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। আমি তো সিগারেট খাই নি। তবে ‘থাক আমি দিই’ টাইপ একটা ডায়ালগ দিলেও দেয়া যেতে পারে। নির্ভর করে বন্ধুটি কতটা চালাক তাঁর ওপর। ‘দিবি? আচ্ছা দে।‘ এই টাইপ বন্ধুদের ক্ষেত্রে অফার দেয়ার চাল চালাটা একটু রিস্কি।
তবে বন্ধু বান্ধবদের অফিসে যেয়ে চা খাওয়াটায় ঝুঁকি প্রায় নেই বললেই চলে। এটা অবধারিতভাবে বন্ধুর ওপর দিয়েই যাবে। অনেক অফিসে আবার চায়ের ব্যবস্থা থাকে। এবং তা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তা ‘রঙ চা’। দুধের ব্যবস্থা রাখার সমস্যার কারণে হয়তো। আবার বাজেট ঘটিত কারনেও হতে পারে। বিশেষ করে সাধারণ মানের অফিসে পানি গরমের একটি ব্যবস্থা এবং চা পাতা থাকে। নামী দামী কারো জন্য কিছু টি ব্যাগ হয়তো রাখা থাকে।
ইদানীং চা না খাওয়ার নতুন একটা বাহানা বাজারে এসেছে। ‘ব্লাড সুগার বেশী’। কিংবা ‘একটু সুগার ধরা পড়েছে’। আর এই বাহানাতে চা খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। সেদিন এক অফিসে গেলাম। ‘আমাদের চা দাও’ বলার পরে বেশ হৃষ্ট চিত্তে অপেক্ষা করে আছি। ‘রঙ চা’ আসবার সম্ভাবনাই বেশী। অফিসের যা ছিরি তাতে ‘টি ব্যাগ’ এর সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তারপরও ‘বিনে পয়সা’র চা বলে কথা। কিছুক্ষণ পরে চা এলো।
‘আমার সুগার তো’। একথা নিয়ে মাথা ঘামালাম না। এক্ষেত্রে যা হয়, ‘সুগার ওয়ালা’ র চা পরিবেশক আলাদা করে বলে দেয়। ‘স্যার এটা আপনার’। আমাদের সেই পরিবেশক তেমন কিছু বলল না। কারণটা চায়ে চুমুক দিয়েই টের পেলাম। কারো চায়েই চিনি নেই। বেজায় বিস্বাদ চা টা পুরোটাই খেলাম। অফিসে আরও কিছুক্ষণ থাকতে হল। আরও দুইবার ‘আমাদের চা দাও’ পর্ব হল। বলতে যদিও লজ্জা লাগছে, কোনবারই ‘না’ বললাম না। আসলে ফ্রি পেলে যে কোন জাতের বিস্বাদ চাও বোধহয় অমৃত লাগে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬
কক্ষ পথের শেষ ইলেকট্রন বলেছেন: চা আমি খাইনা বললেই চলে, ভালো লাগলো লিখা টা।