![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোন বাসায় গেছেন আর সেখানে এক কাপ চা অফার করা হল না, এমনটা খুব কমই হয়। অন্ততঃ আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী পরিবারে। বলা যেতে পারে বাঙ্গালীর সস্তাতম আপ্যায়ন চা। সঙ্গে ‘টা’ থাকবে কি না সে ব্যাপারটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। কতক্ষণ থাকছেন, সম্পর্ক কি এবং সর্বোপরি আপনি কে তাঁর ওপর। একটু আধুনিক হয়ে উঠছে এমন বাড়ীতে ‘চা না কফি?’ এ জাতীয় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। কোল্ড ড্রিঙ্কস এখনও প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে ওঠে নি। বিশেষ ক্ষেত্রে, বিশেষ ধরনের ‘ট্রিটমেন্ট’ দেয়ার জন্য এই তরলের ব্যাবহার হয়।
ইদানীং আবার ‘চা’ এর কিছু ভ্যারাইটি বেড়িয়েছে। ‘চিনি ছাড়া চা’ কিংবা ‘দুধ ছাড়া বা রঙ চা’। চিনি ছাড়া ব্যাপারটা ঠিক সার্বজনীন না। ‘চায়ে চিনি খান তো?’ এমন প্রশ্ন করা হবে আগে। দুই ধরনের লোক এই জাতীয় চা শুরু করেছেন। এক যাদের ডায়াবেটিস হয়ে গেছে। আর এক ধরনের হচ্ছে, ‘অতি সাবধানতা’। পরিবারে কারো হয়তো ডায়াবেটিস আছে কিংবা কখনও ‘ব্লাড সুগার’ করে নরমাল এর ওপর দিকে ছিল। ধারণা চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে, ‘ডায়াবেটিস’ আর হবে না। প্রচণ্ড কষ্ট করে হলেও চিনি ছাড়া বিস্বাদ চা খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। কারো তো আবার ধারণা, চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয়।
দুধে সমস্যা এমন অনেকে আছেন। ‘আই বি এস’ জাতীয় রোগ। তাঁরা বেশ নিয়ম করেই ‘রঙ চা’ কিংবা ‘লেবু চা’ খান এবং অতিথিদেরও সেটা খাওয়াবার একটা চেষ্টা করেন। ‘আমি কিন্তু রঙ চা খাই। আপনি কোনটা খাবেন?’ অর্থাৎ মৃদু ইচ্ছা এজাতীয় চা খেতেই যেন সম্মতি দেন। কারো বাসায় আবার কর্তার দেখাদেখি গিন্নীও শুরু করে দিয়েছেন। ‘প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো, এখন এটাই অভ্যাস হয়ে গেছে।‘ সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা হয় যখন সে বাড়ী থেকে ‘দুধ চা’ এর চল একেবারেই উড়ে যায়। ‘আমরা সবাই রঙ চা খাই তো, বাসায় আসলে দুধ চা এর ব্যবস্থাই নেই’।
তরুণ বয়সে চা ব্যাপারটা বোধ হয় একটু বেশীই চলে। হাতে গোনা কিছু পকেট মানি। তা দিয়ে আবার যদি সিগারেট ও চালাতে হয়, তখন আপ্রাণ চেষ্টা চলে, চা টা অন্য কোন ভাবে ম্যানেজ করা যায় কি না। আর তখন ‘চা’ এর ব্যাপারে অবস্থা আর দশজন কৃপণ বাঙ্গালীর মত হয়ে যায়। কেউ অফার করলে, আর যদি বিল দেয়ার ব্যাপার না থাকে তবে কখনোই ‘না’ বলা হয় না। একটু বেশী চা ভক্ত হলে, কিছুক্ষণ আগে এক কাপ খেয়ে থাকলেও বেশ হাসি মুখেই সম্মতি জানায় ‘দাও’। বিশেষ করে অফার কারী সিনিয়র কেউ হলে কিংবা কারো বাসায় বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই। ‘বিনে পয়সা’র ব্যাপারটা ঘটলে সেই চা এর স্বাদ যেমনই হোক, খাওয়ার সময় একটা ‘নিশ্চিন্ত’ ভাব কাজ করে। খুব শান্তি মনে চা টা খাওয়া হয়।
ভয়ঙ্কর রকমের ‘মেন্টাল স্ট্রেস’ যায় ‘আয় চা খাই’ জাতীয় অফারে। প্রথমে হিসেব করে নিতে হয়, বিলটা কাকে দিতে হবে। যদি দিতেই হয় কিংবা না দিয়ে পার পাওয়ার উপায় নেই এমন পরিস্থিতি হলে আপ্রাণ চেষ্টায় একটা হাসি ঠোঁটে এনে বলতে হয় ‘চল খাই’। বিলও দিব আবার নিজেও খাব না, ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ পরিস্থিতি। তখন বেজার মন নিয়ে হলেও ‘চা’ টা খেতে হয়।
চা এর অফারের উত্তরে ‘আজকে আর খাব না’ বলব কি না নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর। কার পকেট কাটা পড়বে তার ওপর। যদি নিজে না খেলে বিল দেয়ার সম্ভাবনা কমে যায় তবে এই উত্তরটা চলনসই। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে ‘খাব না’ বলার পরও যদি পার পাওয়া না যায়। ‘চা’ও খাওয়া হল না আবার বিলও দিতে হল, এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কিছু নেই। তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার পরে এক ভোটে হারবার চেয়েও বেশী কষ্ট।
বিল দিতে হবে কি না এমন অবস্থা আঁচ করতে না পারলে, অনেক সময় ‘চা’য়ে খুব মিনমিনে একটা সম্মতি দেওয়া ‘খাওয়ার খুব ইচ্ছা নাই’। বলে ‘চা’ টা খেয়ে নেওয়া হয়। এরপরে কিছু অভিনয় করতে হয়। বেশ বিমর্ষ চিত্তে কিছুক্ষণ থাকতে হয়। এতে একটা সুবিধা, অফারকারী হয়তো ভাবতে পারে, বেচারা অনিচ্ছায় খাচ্ছে, ওকে আবার বিল দিতে বলব? এই মিনমিনে ‘হ্যাঁ’ ফর্মুলা মাঝে মাঝে কাজে দেয়। তখন যে মনটা কি রকম যেন ভালো হয়ে যায়।
কিছু পরিস্থিতি থাকে যেখানে বিল দেয়ার সম্ভাবনা নাই বললেও চলে। প্রায় নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ‘আমি দিচ্ছি’ বলে পকেটে হাত দেয়ার পরেও থামিয়ে দেয়া হবে। এমন ঘটবার প্রবল সম্ভাবনা থাকলে অ্যাক্টিং টা প্রায়ই করা হয়। বেশ হৃষ্ট চিত্তে উত্তর দেয়াটা মনে মনে প্র্যাকটিস চলে। ‘দিতে দিবি না? এর পরের দিন কিন্তু আমার, ওকে?’ তবে মাঝে মাঝে অ্যানালাইসিস ভুলও প্রমাণিত হয়। ‘তুই তো আবার নাছোড়বান্দা। আচ্ছা দে’।
‘বস, চা খা।‘ কিংবা ‘মামা দুই কাপ চা দাও’। ছোট চায়ের দোকানে যখন বন্ধুটি অর্ডার দিল তখন হয়তো আপনি নিঃসন্দেহ, বিল দিতে হচ্ছে না। ভাবছেন নিশ্চিন্ত মনেই ‘চা’ টা খাওয়া যায়। বয়সে বড় কিংবা অনেক দিন পরে দেখা হওয়া বন্ধু। বন্ধুরই চা খাওয়ার বেশী শখ কিংবা আপ্যায়নের কথা বন্ধুর ই। এমন পরিস্থিতির আইনসিদ্ধ প্রথা হচ্ছে, যে চা খেতে বলছে, সেই বিল দিবে। খুব নিশ্চিন্তেই চা খাওয়া শুরু করেছেন। এতো নিশ্চিন্ত থাকাটা কি ঠিক হচ্ছে? কোন অঘটন কি ঘটতে পারে না? পারে। তারপরও অনেক ঘটনা ঘটতে পারে। বন্ধুটি বিল দিতে ব্যর্থ হয়ে ফেরত এসে ‘পাঁচশ টাকার নোট’ বের করে যদি করুন চোখে তাকিয়ে একটি অনুনয় করতে পারে ‘মামার কাছে তো খুচরা নেই।‘
©somewhere in net ltd.