![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রিক্সাভাড়া নিয়ে বচসা করেন নি এমন মধ্যবিত্ত খোঁজার চেষ্টা করতে যাওয়া বৃথা। নির্দ্বিধায় বলা যায়, এমন একজন বাঙালি মধ্যবিত্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভাড়া নিয়ে ঝগড়া করে নিজের প্রেসার বাড়ান নি এমন গৃহ কর্তার খোঁজ মেলা ভয়ানক দুস্কর হবে। ভাংতি না থাকার জন্য যখন আট টাকার ভাড়ায় দশ টাকাই দিতে হয়েছে, সেদিন নিজের চুল ছিঁড়তে হয়নি এমন লোকও নেহাত কম নেই।
যদি রিক্সায় ওঠার আগে ভাড়া ঠিক করা বেশ মধ্যবিত্তিয় লক্ষণ বলা হয়। তবে দরদাম ঠিক করে নেয়াটাকে অতি সাবধানতার লক্ষণ বলা যেতে পারে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে রিক্সাওয়ালার সঙ্গে ঝগড়া করার মত বিরক্তিকর ব্যাপার আর দ্বিতীয়টা হতে পারে না। এ ঝগড়ায় জিতলেও এমন কোন জয় পাওয়া হল না আবার হারলেও বিস্বাদ এক অভিজ্ঞতা, ‘আমার ই ভুল হয়েছে, ভাড়া ঠিক না করে ওঠা’ কিংবা পাশের জনের বিরক্তিকর উপদেশ, ‘ভাড়া ঠিক করে উঠবা না, জানোই তো রিক্সাওয়ালারা কি জিনিস’।
রিক্সাভাড়া জিজ্ঞেস করার সময়ও বেশ মজার সব অভিজ্ঞতা হয়। ‘আপনারা যান না? সব সময় যা দেন তাই দিবেন’ বল এখন আমার কোর্টে। এবার আপনি যদি ভাড়াটা বলেন, ‘প্রতিদিন কিন্তু দশ টাকায় যাই’ দুটো ঘটনাই ঘটতে পারে। আপনার সততায় মুগ্ধ হয়ে সমতি জানাতে পারে। আর অন্যটা হচ্ছে খোঁচা দেয়া এক উত্তর ‘কি বলেন স্যার, দশ টাকার ভাড়া কি আর আছে?’ একটু খোঁচা বেশী দেয়ার ইচ্ছে হলে বলবে, ‘ভালোই বলছেন, দেখেন পারেন কি না যাইতে।‘
মাঝে মাঝে অমায়িক কিছু রিক্সাওয়ালা পাওয়া যায়। এরা সাধারণতঃ নতুন এসেছে শহরে। ‘আমি চিনি না স্যার, চিনাইয়া দিয়েন’। এদের চাইলে আপনি ব্যবহার করতে পারেন। বহু পথ ঘুরিয়ে বললেন, ‘এখানকার ভাড়া পনের টাকা। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করে দেখ’। অমায়িক সেই মানুষটি তখন লজ্জায় নত হয়ে বলবে, ‘কি যে বলেন স্যার?’ দিনটা আপনার বেশ ভালোই শুরু হল। এই নভিস এর বোকামি আজ আপনার পাঁচ টাকা বাচিয়ে দিল। হয়তো আজকে একটা সিগারেট বেশী খাওয়া হবে।
কোথায় যাব এই প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সব যাত্রীই একটা চালাকি করেন। একটু গলির ভেতরে বাসা হলেও মূল রাস্তা কিংবা সেই রাস্তায় থাকা কোন খুব পরিচিত বাসা কিংবা অফিসের নাম বলা হয়। উদ্দেশ্য রিক্সা ভাড়া যেন কম চায়। একটু পোড় খাওয়া রিক্সাওয়ালারা চালাকী টা ধরে ফেলে। পরবর্তী প্রশ্ন করে, ‘পানির ট্যাঙ্কির নীচেই নামবেন না গলির ভিতরে যাইবেন?’ এব্যাপারেও কিছুটা ছাড় সাধারণতঃ দেয়া হয়।
‘গলির মুখ’ বলে পার পেতে পারেন। তবে খুব বেশী ভিতরে বাসা হলে কিন্তু বিপদে পড়বেন। কিছুদুর যাওয়ার পরই শুরু হবে জেরা, ‘আর কত দূর?’ যদি আরও চলতে থাকেন তবে কিন্তু এরপরে কিঞ্চিৎ বচসা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। ‘অনেক ভিতরে আসছেন স্যার, আপনি বলছিলেন ট্যাঙ্কির নীচে’। নেহাত ভদ্র আর নিরীহ হলে পার পেয়ে যাবেন। আপনার চেহারা বেশ রুক্ষ সুক্ষ হলেও রিক্স্বা ওয়ালা বেচারা মিনমিন করে মেনে নিতে পারে।
একবার এক রিক্সা ওয়ালাকে বললাম ‘যাবা? গোরস্থান মোড়?’ রিক্সাওয়ালা যাত্রীর এই চিরাচরিত চালাকিতে ধরা দিল না। জিজ্ঞেস করল, ‘গোরস্থানেই নামবেন তো?’ হেসে ফেললাম। ‘ভাই জিন্দা মানুষ গোরস্থানে নামবো কেন? একটু সামনে যাব’। রিক্সাওয়ালাও মৃদু হাসল। এবার সে হিসাব করে তাঁরা প্রাপ্য ভাড়া বলল। সবচেয়ে কষ্ট লাগে পরিচিত জায়গার কিছুটা আগে নামলে। ছাড় পাওয়া যায় না। ‘মেডিকেলের মোড় আর মেডিকেল মোড়ের বেশ কিছু আগে নামা’ একই ভাড়া। মাঝে মাঝে মনে হয় ‘মোড়ে নেমে আবার হেঁটে ফিরে আসি।‘
বিভিন্ন বাহানায় রিক্সা ভাড়া বাড়ানো তো আছেই। ‘যেই রোদ’ এই কারণটা প্রতি গ্রীষ্ম কালে দেখানো হয়। এবং বেশী ভাড়া দাবী করা হয়। এবং একসময় সেই ভাড়া টাই সাড়া বৎসরেরে স্বাভাবিক ভাড়া হয়ে যায়। ‘রোদ কমলেও’ আর ভাড়া কমে না। তবে ‘যা বৃষ্টি’ কিংবা ‘যেই ঠান্ডা’ এসব বাহানা সাধারণতঃ তাৎক্ষণিক। বৃষ্টি না থাকলে আগের ভাড়াতেই ফেরত চলে যায়।
রাতের বেলা দুটো ঘটনা ঘটতে পারে। রিক্সা পাচ্ছেন না, বাসায় যেতেই হবে, ভয়ংকর রকমের বেশী হলেও রাজী হতে ইচ্ছে করে। কখনও আরেকটু দেখি বলে আরও কয়েকজন রিক্সাওয়ালার সাক্ষাৎ কার নেয়া হয়। আপনি কতটা প্যাচে পড়েছেন, তা আপনার চেহারায় লেখা থাকে। ‘কতটা ক্লান্ত’, ‘রাগে হাঁটা শুরু করবেন কি না’, একটু বুদ্ধিমান রিক্সাওয়ালা খুব ভালোই বুঝতে পারে। নেহাত কপাল ভালো হলে একজন দয়ালু রিক্সাওয়ালা পেতে পারেন, ‘চলেন স্যার, আমার গ্যারেজও ঐদিকে’।
রিক্সাওয়ালারা মাঝে মাঝে আবার বেশ আন্তরিক সাজতে চায়। ‘আপনি কি আর কম দিবেন?’ কিংবা ‘হিসাব কইরা দিয়েন’ বলে একটা অমায়িক হাসি দেয়। কখনও আবার দশ টাকার ভাড়া ইচ্ছা করেই বার টাকা বলে। অপেক্ষা করে থাকে আমার ‘দশ টাকা’ বলার জন্য। এরপর বেশ অনিচ্ছায় রাজী হয়ে যাবে। এটা একটা চালাকী, আমাকে খুশী করার। যেন এই তৃপ্তি নিয়ে রিক্সায় উঠি, ‘দাম দর করে আজকে জিতেছি’।
অনেকে বেশ রসিক হয়। ‘কম দিলে কত আর কম দিবেন? পাঁচ টাকা তো আর দিবেন না।‘ মনে মনে হাসি। তাই তো বচসা যা হওয়ার সেই দুই কিংবা এক টাকা নিয়েই হয়। আবার বেরসিক কিছু রিক্সাওয়ালা থাকে। সেন্স অফ হিউমার বলতেই নেই। একবার এমনই এক রিক্সাওয়ালাকে প্রচণ্ড রাগিয়ে দিয়েছিলাম। বোধহয় রাগের আতিশয্যে বেশ কিছু গালাগালিও দিয়েছিল। অথচ খুব সুন্দর একটি হিউমার করেছিলাম। সেদিন খুব বিনীত স্বরেই গন্তব্য বলে ভাড়া জানতে চেয়েছিলাম। উত্তর দিল। এবার আমার ‘অফার প্রাইস’ জানালাম। শুনে বেশ নাখোশ আর বিরক্ত হয়ে বলল, ‘দশ টাকা তো ঐ মোড় থেকেই দেয়’। হেসে বললাম, ‘ঠিক আছে তুমি মোড়ে যাও। আমি ওখান পর্যন্ত হেঁটে আসছি’।
২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৯
আজমান আন্দালিব বলেছেন: বাস্তবতা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১২
মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: রিক্সা ওয়ালাদের দাবী কি খুব বেশি? বড় জোর তারা ২/৫টাকা বেশি চায়.....।এটা দিতে গিয়েই যত ক্যাচাল