নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আই লাভ ইউ

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০০

ক্ষুদ্র তনয় টি সেদিন স্কুল থেকে ফিরে বেশ ফিস ফিস করেই বড় জনের ক্লাসের একটি গোপন তথ্য জানাল। ‘আব্বু জানো, ভাইয়ার ক্লাসের এক ছেলে না ওদের ক্লাসের এক মেয়েকে আই লাভ ইউ বলেছে’। তনয়টির বয়স আট। আর যার নামে নালিশ করছে তাঁর বয়স দশ কিংবা এগারো। নালিশের উদ্দেশ্য বুঝলাম না। বড় ভাই এর সম্পর্কে নালিশের অর্থ হচ্ছে, ‘ও বেশ দুষ্টু, তাই ওকে বেশী আদর করার দরকার নাই। আমারই বেশী আদর প্রাপ্য। তবে এই নালিশের অর্থ ঠিক বুঝলাম না। হয়তো আগাম সতর্কতা। ‘তাঁর বড়ভাই এর ক্লাসে এ জাতীয় ঘটনা ঘটে, অতএব তাঁর বড়ভাই টিও যে কোন দিন এই কাজ করতে পারে।

নালিশের ভঙ্গিতে আরও একটা ব্যাপার মনে হল। সম্ভবতঃ ‘আই লাভ ইউ’ মানে এখনও বোঝে না। একজন ছেলে একজন মেয়েকে বলে, এতটুকু জানে। আর ধারণা করছে এই কথাটা বেশ শাস্তিযোগ্য। অন্ততঃ এই বয়সে। টিচার জানতে পারলে ‘নীল ডাউন’ কিংবা ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা জাতীয় শাস্তি হতে পারে। আর খুব বেশী বার করলে বাসায় কমপ্লেইন। আর বাবা মা জানতে পারলে বকা ঝকা এমনকি একটু ‘মার ধর’ ও হতে পারে। পকেট মানি কমে যাওয়া কিংবা আবদার না রাখা, যেকোনো শাস্তিই হতে পারে।

এদের বেড়ে ওঠার সাথে নিজেদের বেড়ে ওঠা মেলানোর চেষ্টা করলাম। কম্পিউটার গেম কিংবা মোবাইল গেম কিছুটা পার্থক্য এনে দিয়েছে। হয়তো টেলিভিশান ও। কিছুটা ঘরকুনো করে দিয়েছে। মাঠের খেলাধুলা কমে এসেছে। মাঠও কমে এসেছে। যতটুকু খেলে, তা এই স্কুলের মাঠে। তবে মাঠের খেলা ধুলা অনেকটা সেরকমই আছে। অন্ততঃ মফঃস্বলে। সেই টেনিস বল না পেয়ে পেয়ারা দিয়ে ‘বোমবাস্টিং’ খেলা কিংবা ফুটবল না পেয়ে কাঁচা ‘বাতাবি লেবু’ কিংবা প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ফুটবল খেলা। সেই স্কুল ছুটির পড়ে দৌড়ে ক্লাস থেকে বের হওয়া। ছুটির সময় স্কুলের গেট পেরুতে পেরুতে গেট ঘিরে থাকা ঝালমুড়ি আর চটপটির ভ্যানটির দিকে করুন চোখে তাকানো। ‘আম্মু কিনে দাও না’ বলে করুন আবদার। আর সেই চিরাচরিত মায়ের সাবধান বাণী, ‘না, ওগুলো ড্রেনের পানি দিয়ে বানায়’। কিংবা ‘পেট খারাপ হবে’।

টেলিভিশান হয়তো কিছুটা ভিন্নতা এনে দিয়েছে। কার্টুনের সঙ্গে যোগ হয়েছে সিনেমা দেখা কিংবা নাটক দেখা। সিরিয়াল গুলোর নায়ক নায়িকার নাম সবই মুখস্থ। প্রায় সব হিন্দি সিনেমার নায়ক আর নায়িকা কেই চেনে। একদিন টেলিভিশানে একাগ্র চিত্তে সিনেমা উপভোগ করা পুত্রটির কাছে জানতে চাইলাম, ‘ছেলেটি কে?’ নায়কের নাম বলল। জানতে চাইলাম ‘আর মেয়েটা কে?’ বিরক্ত উত্তর, ‘ওটাই তো নায়িকা।‘ বলে নামটাও জানাল। কতটা বুঝেছে সে ব্যাপারটা বোঝার জন্য জানতে চাইলাম, ‘কি করে বুঝলি এটা নায়িকা?’ মহা গবেটের সঙ্গে কথা বলছে এমন ভাব করে খুব সোজা সমীকরণটা জানাল, ‘নায়কটা এই মেয়েটাকে ভালবাসে।‘ ‘ভালবাসে মানে কি? জিজ্ঞেস করতে যেয়েও করলাম না। হয়তো আরও ভয়ানক কোন উত্তর দিবে।

এই জেনারেশান কি খুব দ্রুত এগুচ্ছে? হয়তো। আমরা হয়তো বাবা মা কে এতো সহজে সব কিছু বলতাম না। কিংবা একরাশ ভাই বোনের ভিড়ে আলাদা করে কেউ আমাদের দিকে মনোযোগও দিত না। এরাও হয়তো আর কিছুদিন পরে বলবে না। নিজেদের আলাদা ভুবন তৈরি হবে। শুরু হবে সেই লুকোচুরি। সেই বন্ধুবান্ধবদের সাথে ফিসফিস করে কথা বলা। ক্লাসে লুকিয়ে গল্পের বই পড়া। ‘এটা আমাদের সিক্রেট ব্যাপার’। এরপরে একদিন পাড়ার কিংবা স্কুলের কোন অপরূপাকে ‘আই লাভ ইউ’ বলা। কখনও ধরা পড়ে নীল ডাউন হওয়া। কখনও বাড়ীতে নালিশ। আর সিনেমা দেখে নায়ক নায়িকা চেনার সেই একই ফর্মুলা। সব কিছুই বোধ হয় একই থাকবে।

নিজেদের ছোট বেলার অনেক কথাই মনে পড়ল। পাড়ায় ছোট ছোট বন্ধুদের ভেতর খুব বিশ্বস্ত এক বন্ধুকে জানিয়েছিলাম, ‘ওকে না আমার খুব পছন্দ’ কিংবা ‘ওকে খুব লাইক করি’। বন্ধুটি বেশ কিছুদিন কথাটি গোপনও রেখেছিল। এরপর একদিনের ঝগড়ায় সব ওলট পালট। ভয়ানক এক বিট্রে। সে কি লজ্জা। একটু বয়সে বড় রা যারা তথ্যটা জানতে পেরেছে, রাস্তায় দেখা হলে মজার একটা হাসি হেসে জানতে চাইতো, ‘কি রে তুই নাকি...ওকে লাইক করিস?’ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার দশা। কোন একজন আবার দেয়ালে ‘অমুক’ যোগ ‘অমুক’ লিখে ব্যাপারটা আরও জটিল করে দিত। এদেরও হয়তো শুরু হবে কিংবা যার নামে নালিশ করল সেই ছেলেটির জীবনে শুরু হয়েই গেছে।

একদিন আবিস্কার করলাম পুত্রটি ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ এর নামও শুনেছে। এই বয়সে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ ব্যাপারটা আমরা সেভাবে পাই নি। চলটা যখন এদেশে শুরু হল, তখন সম্ভবতঃ স্কুলের শেষ দিকে কিংবা কলেজে। দিনটির মাহাত্য বোঝার বয়স তখন কিছুটা হয়ে গেছে। এরা তথ্যটা একটু আগেই জানলো এই যা। আমার বিচ্ছু তনয়টি একদিন জানতে চাইলো ‘আব্বু ভ্যালেন্টাইনস ডে কি?’ প্রশ্নের ধরণ শুনে মনে হলে শব্দটা শুনেছে তবে মানে জানে না। সময়টা সম্ভবতঃ ১৪ই ফেব্রুয়ারীর আগে কিংবা পরে হবে। হয়তো স্কুলে কারো কাছে শুনেছে। সমস্যায় পড়লাম। কিভাবে বোঝাই।

খুব সহজ করার জন্য বললাম, ‘বাসায় তুমি যাকে সবচেয়ে বেশী পছন্দ কর তাঁকে এই দিনে কিছু গিফট দিতে হয়।‘ শুনে বেশ নিরাশ হল। পিতার মূর্খতায় সে যারপরনাই বিরক্ত। সেই মূর্খ পিতাটিকে শিক্ষিত করার উদ্দেশ্য এবার সে জ্ঞান ডান শুরু করল। ‘তুমি কিছুই জান না। এই দিনে তুমি তোমার গার্ল ফ্রেন্ডকে বলবা আই লাভ ইউ।‘

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯

মদন বলেছেন: :)

২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পিতার মূর্খতায় সে যারপরনাই বিরক্ত। সেই মূর্খ পিতাটিকে শিক্ষিত করার উদ্দেশ্য এবার সে জ্ঞান ডান শুরু করল। ‘তুমি কিছুই জান না। এই দিনে তুমি তোমার গার্ল ফ্রেন্ডকে বলবা আই লাভ ইউ।‘
=p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

এইবার শিক্ষিত হইলেন তো ;) নেক্সট ভি-ডেতে বইলা ফেলেন.... =p~ =p~ =p~

অনেক অনেক এগিয়ে এ জেনারেশন!

ক্লাশ ত্রির এক মেয়ে যেদিন আমাকে বলল-আচ্ছা আংকেল মেয়েদের শরীরের দিকে ছেলেদের এত লোভ কেন!!!!!
আক্কেল গুরুম হয়ে ছিলাম অনেকক্ষন!!!!!

এখন আর হইনা ;) @লিষ্ট মূর্খ থাকাতো ঠিন না নাকি বলেন :)

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: মজা লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা শুনে

৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৪

আন্ধার রাত বলেছেন:
বর্তমান শিশু কিশোরদের সুশাসনে এবং ভালো পথে ধরে রাখা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

এখন তাদের কথা ও আচরনে মজা পেলেও ভবিষ্যতে তা তীব্র তিক্ততায় পরিণত হতে পারে।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: উপায়ও তো নাই। স্কুলে পাঠানো তো বন্ধ করা যাচ্ছে না।

৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

ডুয়েট বলেছেন: তারা ৩জি তো তাই। ;) ;) ;)

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ৩ জি বলেন আর যাই বলেন, ভয় তো লাগেই।

৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৫

আজমান আন্দালিব বলেছেন: বর্তমান যুগের শিশুদের মনস্তত্ত্ব বোঝা দায়...

৭| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪২

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: লেখাটা আজকে ছেপেছে
Click This Link

৮| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫৩

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: আসলেই শঙ্কিত হবার মত ব্যাপার :(

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৬

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.