নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝালমুড়ি

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৭

খাবারটা কেন এতো মজা লাগে তা নিয়ে অনেক ভেবেছি। অনেক দিনই বাসায় বানানোর চেষ্টা করেছি। কখনোই ওদের মত মোজা হয় নি। অনেক দিন খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। খোঁজার চেষ্টা করেছি, মজাটা কথায় লুকিয়ে থাকে। বিভিন্ন উপাদানের অনুপাতে? নাকি ওর হাতে? নাকি ঐ ক্ষয়ে যাওয়া বাসন গুলোতে, যেগুলোতে মাখায় নাকি সেই ঝাকিতে? সুন্দরভাবে কয়েকবার তালে তালে ঝাঁকি দেয়ার পরে হাতে একটা বাড়ি।

মূলধনের ওপর নির্ভর করে ওরা কত পদের জিনিস নিয়ে ঘুরবে। একটু সামর্থ্য থাকলে কিংবা যখন নতুন শুরু করে তখন তাঁর ছোট্ট দোকানটি দেখতে বেশ সুন্দর থাকে। কখনও ছোট্ট একটা চৌকোনা বাক্সের মত, একদিকে কাঠ থাকলেও বাকী তিনদিকে থাকে কাঁচ, তাঁর ভেতর দিয়ে চানাচুর দেখা যায়। বাক্সটা রাখে দুটি চাকার ওপর। একটু গরীব রা যেটা করে, একটা বড় ঝাঁকি তে অনেকগুলো বৈয়ম নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সঙ্গে থাকে একটা স্ট্যান্ড টাইপ জিনিস। কেউ ডাকলে সেখানে মাথার ঝাকাটা নামায়। মাঝামাঝি একটা গ্রুপ আছে, এদের দোকানটি অবস্থিত একটি ছোট খাট ভ্যানের ওপর।

একরাশ এসব বৈয়মের সবগুলোতেই যে বিভিন্ন পদ থাকে এমনটা না। কিছু কিছু বৈয়মে ডুপ্লিকেশান থাকে। বিশেষ করে প্রধান উপাদান মুড়ি আর চানাচুরের জন্য দুটি বৈয়ম বরাদ্দ থাকে। অবস্থা বুঝে বেশীও রাখতে পারে। বুট বা ছোলা জিনিসটা অনেক অবস্থায় রাখে। শুধু ভেজা ছোলা, সিদ্ধ ছোলা আবার বালুতে ভাজা। আরও ছোট খাট উপাদানের ভেতর চিড়া ভাজা, চাল ভাজা ঠিক কোন নিয়ম নেই।

আমার সবচেয়ে মোজা লাগে এদের মাখানো দেখতে। কিভাবে খুব মাপা হাতে মুড়ি তোলে। অনেক বেশী দিচ্ছে এমন ভাব করে বিশাল এক মুঠ করে মুড়ি টা নেয়। কিন্তু ঠিক যে পরিমাণ দেয়ার কথা ততোটাই দেয়। চানাচুর দেয়ার সময় একটা বেশ মোজা করে। সাধারণতঃ যে পরিমাণ দেয় তা চাইলে একবারেই দিতে পারে, কিন্তু দেয় না। দুইবারে দেয়। বোঝায় অনেকখানি দিল। অথচ প্রতিবার খুব অল্প করেই নেয়। অতি চালাক কিছু খদ্দের আবার বলে দেন ‘চানাচুর একটু বেশী করে দিবি’। এসব মানুষের জন্য সান্তনা পুরস্কার স্বরুপ আরও একটু চানাচুর দেয়, এমন ভাবে মুঠ টা করা থাকে যে পরিমাণটা বুঝতে দেয় না। সেই চালাক মানুষটা আর আপত্তি করে না। ঐ একটু যে বেশী দিল, এতেই সে খুশী।

এরপর একটা প্রশ্ন করতে পারে। ‘ঝাল বেশী?’ যদি সঙ্গে একটি ছানা কিংবা পানা থাকে এবং তাঁর জন্য কেনেন তবে এ প্রশ্ন হবেই। অন্য ক্ষেত্রে নির্ভর করছে আপনাকে সে কতটা ভদ্রলোক ভাবছে তাঁর ওপর। যদি স্যুটেড বুটেড থাকেন তখন অতি সাবধানতা দেখাবে। একটু ‘ছোকরা’ ভাব থাকলেও জিজ্ঞেস করতে পারে, ‘মামা ঝাল?’ বাকীদের জন্য তেমন কোন সাবধানতা দেখাতে হয় না। কখনও যদি ভদ্রলোক আগে থেকে বলেই দেন ‘ঝাল একটু বেশী’ তবে সেটা পালন করা হয়। ঝালের পরিমাণ সে নির্ধারণ করে মরিচ দিয়েই। কুচিকুচি করে কাটা মরিচের টুকরা বড়জোর তিনিটি বেশী দেয়।

পেয়াজ কতটা দিবে তা নির্ভর করে পেয়াজের বাজার দরের ওপর। বেশী হলে দুটো ঘটনা ঘটে। পিয়াজের বদলে মুলা অথবা পিয়াজের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া। আরেকটা ফর্মুলা, যদিও খুব দুর্লভ তবে দেখা যায়, তা হচ্ছে সব কিছুর অনুপাত ঠিক থাকবে

তবে ঝালমুড়ি পরিমানে কমে যাবে। মজার ব্যাপার হল, এই সৎ ঝালমুড়ি বিক্রেতা কোন না কোন ভাবে সেকথা জানিয়ে দিবেন। ‘স্যার, কোন মুলা নাই, সব পেয়াজ’। ফলে দশ টাকায় কম পরিমাণ ঝালমুড়ি পেলেও যেন তা নিয়ে কোন আপত্তি না তোলেন।

এরপরে বিভিন্ন জাতের লবন কিংবা বিভিন্ন মসলা সহ লবন বেশ পরিমাণ মত দিবে। কেউ কেউ আবার মাঝারি আকারের একটা হাঁড়ি তে ঝোল জাতীয় কিছু একটা নিয়ে আসে। সেখানে থেকে এক বা দুই চামচ দিবে। এরপরে তেল। একটা বোতলএর মাঝামাঝিতে একটা ফুটো করা থাকে। সেই ফুটো দিয়ে তেল টা ঢালে। ঢালবার সময় বোতলের প্রান্তটা একটু ঘসে দেয়। যেন একফোঁটা তেল ও নষ্ট না হয়। এরপরে ঢাকনা লাগিয়ে শুরু হয় খুবই ‘রিদমিক’ ঝাঁকি। কিছুক্ষণ পড়ে পড়ে হাতে একটা বাড়ি। সাধারণতঃ যখন শেষ করবে তাঁর আগের ঝাঁকিটা একটু জোরে দেয়।

খুব মজার কিছু ব্যাপার আছে। আপনি পাঁচ টাকার কিনেন কিংবা দশ টাকার কিনেন, যতবারই কেনেন প্রতিবারের পরিমাণে এক রতিও এদিক ওদিক হবে না। এরা নিউজপ্রিন্ট কাগজ দিয়ে একটা কোণাকৃতি তৈরি করে ঝালমুড়িটা ঢালে। প্রতিটা ঠোঙ্গা একই আকারের হয়। আর সেটাতে ঢালবার পড়ে প্রতিবার একই জায়গায় এসে ঢালা শেষ হয়। এতো নিখুত মাপ দেখে আমি প্রতিবারই অবাক হয়ে যাই।

কেউ কেউ আছেন, যারা ধরেই নেন, ঝালমুড়ি ওয়ালা চানাচুর কম দিবেই। যতই বেশী করে দিতে বলা হোক। তাই তাঁরা, ‘শুধু চানাচুর মাখাও’ অর্ডার দেন। এদের জন্য আবার আরেক দল আছে। এরা শুধু চানাচুরই কেবল রাখে। মুড়ি রাখেই না। কেউ শুধু চালভাজা কেউ শুধু বুট। বাসে, ট্রেনে ছোট ঝুরিতে করে বিক্রি করে। চলন্ত গাড়ীতে, ব্যালেন্স রেখে খুব সুন্দর করেই এরা মাখানর কাজটা সারে। কখনও কোন সুচিবাই গৃহিণী, নাক সিটকে জিজ্ঞেস করেন ‘হাত পরিষ্কার তো?’ তখন শিশুটি ঝুড়ির সঙ্গে রাখা শত ময়লা মেশানো ছোট গামছার টুকরায় হাতটা মুঝে মাখাতে বসে। এবার গৃহিণী আপত্তি করেন না। সঙ্গে আনা পানির বোতল কিংবা বাসে কেনা মিনারেল ওয়াটারের বোতল থেকে একটু পানি খরচ করে নিজের হাত ধুয়ে খেতে শুরু করেন। অপূর্ব স্বাদের ‘ঝালমুড়ি’।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৯

চারশবিশ বলেছেন: আপনার পর্যবেক্ষন অসাধারন

খুব সুন্দর ও সাবলিল ভাবে বর্ণনা করছেন

২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩০

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ঝালমুড়ি বিষয়টিকে অসাধারণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন। মনে হচ্ছিল একজন ঝালমুড়িওয়ালাকে নতুন করে পর্যবেক্ষণ করছি।

৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: আহহ...... ঝালমুড়ি............
ভাই তো লোভ লাগাইয়া দিলেন............ :P

৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩১

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: ঢাকা ভার্সিটির অপরাজেয় বাংলার পাশে পশ্চিম দিকের গেট দিয়ে মল চত্ত্বরে যাবার সময় গেটের পাশে বসে একজন খাটো করে মামা... শুকনা... ... সেই বেশির ভাগ সময় থাকে... সে না বাড়ি গেলে তার ভাই আশে সেখানে কয়দিনের জন্য...... আসলে খেয়ে যাবেন একবার... ... B-) B-)

আমার ব্রাঞ্চ অইটা...

৫| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩০

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: লেখাটা আজকে ছেপেছে

Click This Link

৬| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪৩

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার পর্যবেক্ষণ। আপনাকে অনুসরণ করলাম।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৪

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আপনি তো দেখি এক দিনে আমার দশটি লেখা পড়ে ফেলেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.