![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘একটু দেখে আসি’
এই কথাটা প্রায় আমাদের সবারই শোনা। হয়তো আপনার স্ত্রী আয়নার সামনে বসে মুখে মেকআপের শেষ প্রলেপ বোলাতে বোলাতে বলেছে কিংবা আপনি নিজেই এই বাহানায় অফিস থেকে আজকে একটু আগে বেড়িয়েছেন। দেখতে যাবেন কোন মৃত্যুপথ যাত্রী আত্মীয়কে। ভদ্রতা। যে কোনদিন টেঁসে যাবে। অসুস্থ জানবার পরও দেখা করতে যাননি তথ্যটা আত্মীয় মহলে আপনাকে বেশ স্বার্থ পরের দলে ফেলে দেবে। ঢি ঢি পড়ে যাবে। দলে দলে প্রায় সব আত্মীয় স্বজনই এখন শেষ দেখা দেখতে যাচ্ছেন। বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে যদি কেউ এখনও শক্ত সমর্থ থাকেন তাঁরাও যাচ্ছেন। এসময়ে আপনি না গেলে কেমন দেখায়?
হাসপাতালে ভর্তি থাকলে দেখতে যাওয়ার একটু তাড়া থাকে। সব সময় মনে হয় অবস্থা বোধহয় ‘এখন-তখন’। ‘আরেকদিন না, আজকেই চল’ অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেও হয়তো পরিত্রাণ পাবেন না। নারীবাদী রা রাগ করতে পারেন। তাই আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি। আপনার সেদিন প্রচণ্ড মাথা ধরেছে, বুয়া আসেনি, সব কাজ আপনিই করেছেন, তারপরও কর্তা আজকে শুধু এই কারণেই ছুটি নিয়ে এসেছেন, ‘বারবার তো আর ছুটি নেয়া যাবে না, প্লিজ চলো।‘
সঙ্গে ফলমূল নেবেন কি না তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। মাসের কয় তারিখ, কতটা কাছের লোক কিংবা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ সবকিছুর কক্টেল দিয়েই হিসেব টা হবে। হরলিক্স কিংবা মালটোভা এর একটা মোটামুটি সাইজের বোতল, আর কিছু ফলমূল। আপেলটা সাধারণতঃ থাকে। বাকী ফলের ভেতর ডালিম আর মাল্টা ইদানীং পুরো বছর জুড়েই পাওয়া যায়। তবে সীজন অনুযায়ী দামের হেরফের হয়। বাজেট এর নির্ভর করে কয় পদের ফল নেয়া হবে। একেবারে শয্যাশায়ী, স্যালাইন চলছে এমনটা হলে অনেকে আবার শক্তিবর্ধক এক ধরনের টিন জাত খাবার বেরিয়েছে, সেগুলো কেনেন।
কাছের আত্মীয় হলে, ‘দেবা-দেবী’ দুজনেরই যাওয়া নিয়ম। নইলে জেচে পরেই ব্যাখ্যা দিতে হয়। ব্যাখ্যাটা আবার খুব লাগসই এবং বিশ্বাস যোগ্য হতে হবে। ‘বাচ্চাদের পরীক্ষা, তাই ওর মা আসতে পারলো না’ এজাতীয় ব্যাখ্যার আজকাল বাজার দর খুব ভালো যাচ্ছে। আর দেবীর জন্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, ‘অফিসের খুব চাপ তো’। মুমূর্ষু র আত্মীয়রা বিশ্বাস করবেন কি না, নির্ভর করছে আপনাদেরকে তারা কতটা অপছন্দ করেন তাঁর ওপর। ‘যত সব ঢং, আমাদের আর ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে না’।
এরপরে কিছু আক্টিং করতে হবে। যদি অসুস্থের বেশ কিছু পরে উপস্থিত হয়ে থাকেন, তবে বলতে হবে, ‘কবে হল? আমি তো কিছুই জানি না।‘ এরপরে যার কাছে তথ্য পেয়েছেন তাঁর নাম বলে জানাবেন, ‘সেদিন কথায় কথায় বললো, তারপরেই না জানতে পারলাম’। দেরীতে উপস্থিত হওয়ার পাপ স্খলন হতেও পারে। নাও হতে পারে, ‘তা খোঁজ রাখবা কেন? আমরা তো আর নিজের কেউ না’। কিংবা ‘তা তো জানবাই না, এখন তো তোমার অনেক টাকা’।
ইন্ট্রোডাকশান পর্বে সবসময়েই যে এমন তিক্ততা থাকে এমন না। কখনও কখনও অতি আপন ভাব ও থাকে। ‘আমাদের কি হয়ে গেল’ বলে বিলাপ শুরু হয়ে যেতে পারে। ‘তুই কোথায় ছিলি রে?’ বলেও কান্নাকাটি পর্বের সুত্রপাত হতে পারে। নির্ভর করছে অবস্থা কতটা গুরুতর কিংবা আপনি কতটা আপন জন। আপনার ওপর কতটা বিশ্বাস, আস্থা আছে। দুটো ‘এক্সট্রিম’ উদাহরণের মাঝামাঝি ভার্সান ও আছে। ‘তুমি এসেছ? বসো’ বলে চেয়ার এগিয়ে দেয়া কিংবা চেয়ারের ফাঁকা স্থান দেখিয়ে দেয়া।
এরপরের অংশ দুভাবে এগোতে পারে। ‘ইতিহাস’ কিংবা ‘ভবিষ্যৎ’। দুটোরই বাজার দর সমান। ‘কিভাবে হল?’ বলে শুরু করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিশাল এক ইতিহাস শুনতে হতে পারে। ‘বাথরুমে যাওয়ার পরে...’ কিংবা ‘একদম ভালো মানুষ, হঠাৎ করে যে কি হোল...’। এই দুই ধরনই বেশী দেখা যায়। এছাড়াও ‘ছেলের সঙ্গে ঝগড়ার পরে’ কিংবা ‘ব্যবসায়ে লস খাওয়ার পরে’ এসবেরও বাজার নেহাত খারাপ না। ‘বাড়ী ডেভেলাপার কে দিবে না নিজেরা কিছু করবে’ এই জাতীয় ঝগড়া অনেক কমে আসলেও, মাঝে মাঝে হয়।
ছেলেরা আলাদা হয়ে গেছে, মেয়েরা মাঝে মাঝে দেখতে আসে এধরনের ফরম্যাট সংখ্যায় নেহাত কম না। সাধারণতঃ অশীতিপর সেই বৃদ্ধের একমাত্র সঙ্গিনী সেই কিছুটা সুস্থ স্ত্রীই একমাত্র সাক্ষী পুরো ঘটনার। প্রথম দু একদিন তিনিই বিস্তারিত বর্ণনা দেন। কি হয়েছিল। এরপরে দ্বায়িত্বটা মেয়ে কিংবা ছেলের বউরা নেয়। তবে মেয়ের সম্ভাবনাই বেশী। এবং সেই বর্ণনায় কোন না কোন অছিলায় ভাতৃবধুর কিঞ্চিৎ গুণগান (?) করবেন। ‘এখন সবার নিজের সংসার হয়েছে’।
‘ভবিষ্যৎ’ পর্বের শুরু হবে ‘সাধারণ জ্ঞান’ আহরণের মধ্য দিয়ে ‘ডাক্তার কি বলছে?’ এর মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে কিছু জ্ঞান আহরণ হবে। খুব সাধারণ অসুখ যেহেতু সবারই জানা, তাই রোগের নাম বলেই দ্বায়িত্ব শেষ। ‘স্ট্রোক’ কিংবা ‘হার্ট অ্যাটাক’। কেউ আবার একটু বিস্তারিতও বলেন, ‘মেজর স্ট্রোক’। এর দুটো মানে হতে পারে ফেরত আসলে বেশ বিশ্বয়ের ব্যাপার হবে আর ওপরটা হচ্ছে ‘আমরা দুঃসংবাদের জন্য তৈরি’।
প্রশ্নটায় একটু পরিবর্তন হলে কিন্তু অর্থ পাল্টে যাবে। যদি প্রশ্ন করেন ‘ডাক্তাররা কি বলছে?’ এর অর্থ দাঁড়ায় এযাত্রা টিকবে না টেঁসে যাবে? যদি ডাক্তার জবাব দিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে খুব করুণ চেহারা করে রুগীর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হবে। ‘আমাকে খুব ভালবাসতেন’ কিংবা ‘আমার জন্য উনি অনেক করেছেন’ জাতীয় কথা বলতে পারেন। অন্য কোথায় শিফট করতে চান? বলে বড় দুএকটি হাসপাতালের নাম বলা যেতে পারে। তবে নির্ভর করছে সামর্থ্যের ওপর। কিছুক্ষণ এই হাসপাতালের ডাক্তার দের বদনাম করা যেতে পারে, ‘দুই বেলা আসে, প্রেসার মেপে দিয়ে যায়, এইতো এদের চিকিৎসা।’
বিদায় নেবেন? রাত হয়ে গেছে? বাসায় ছেলেমেয়েরা একলা আছে? কিংবা বেশী দেরি করলে রিক্সা পেতে সমস্যা হবে? নিতেই পারেন। যতক্ষণ থাকবার পরে বিদায় নিলে ‘ভদ্র’ দেখায় ততটা সময় তো থেকেছেন। আসলে তো আপনার মূল দ্বায়িত্ব ছিল কেউ যেন অপবাদ না দিতে পারে, ‘অসুস্থ জেনেও দেখতে যায় নি’ সেটা ঘুচিয়ে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে আপনার আর তেমন কোন কাজ নেই। কিছুদিন পড়ে আরেকটি কাজ করতে হতে পারে, বা অনেকটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় আপনি কাজটা করবেন। ব্যক্তিটির মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে যতগুলো আলোচনা হবে সব জায়গায় বেশ উচ্চ কণ্ঠেই ঘোষণা করতে পারেবেন ‘অসুস্থ শুনেই সঙ্গে সঙ্গে দেখতে গিয়েছিলাম’। সঙ্গে আরও কিছু যোগ করতে চান? করতে পারেন, ‘কি মানুষ কি হয়ে গেছে। মুখটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। আমি তখনই বুঝেছিলাম, আর ফিরবে না।’
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: ডাঃ সাহেবকে তো খুব অভিজ্ঞ মনে হচ্ছে...!!!