![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজনীতিবিদদের দেখে মায়াই লাগছে। ভীতু প্রেমিকদের মত অবস্থা। অফিসের এক অপরূপা কলিগের প্রেমে পড়েছে। ‘কি ভাববে?’ কিংবা ‘যদি না বলে দেয়’ এই ভয়ে কথাটা আর বলা হয় না। কথাবার্তা ‘কেমন আছেন’ লেভেলেই থাকে অনেক দিন। এরপর যেদিন খুব সাহস গজায় সেদিন মুখ ফুটে বেরোয় ‘আজকে আপনাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।‘ বলে ভাবে ‘ইঙ্গিতে বুঝিয়েছি’। ভেবে প্রেমিক সাহেব বেশ কিছুদিন খুশীতে উরুউরু দিন কাটান। এরপরে যেদিন বোঝেন এসব ‘ইঙ্গিত’ কোন কাজে দেয় নি তখন শুরু হয় ফিসফিস করে শুধু অন্যান্য বিশ্বস্ত কলিগকে জানানো। একসময় দেখা যায় যে শুধু সেই মেয়েটিকে ছাড়া সে অফিসের সবাইকে জানিয়েছে। এরপরের পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। একরাশ উপদেশ, টিপ্পনী, বক্র চাহনি আর সবশেষে অপরূপার বিয়ের কার্ড সহ নিমন্ত্রণ।
মনের কথা বলতে না পারার কষ্ট ভুক্তভোগীই জানে। দেশের সব রাজনৈতিক দলের অবস্থা এখন সেই ভীতু প্রেমিকের মত। মনে দারুণ কষ্ট। জা বলতে চাইছে, বটে পারছে না। ‘ইঙ্গিতে’ এমন সব কথা বলছে যার কোন মানে নেই। কিংবা যাকে বলতে চাইছে সে এর মানে বুঝেও বুঝছে না। তবে তাঁদের মনের অবস্থা সবাই জানে। সবাই তাঁদের অবস্থা দেখে ফিসফিস করে হাসছেও। সুশীল সমাজের সব বড় বড় বিজ্ঞরা সারাক্ষণ তাঁদের জ্ঞান দান করছেন।একটা কথাও কেউ শুনছে না, তারপরও প্রতিদিনই তারা উদার হস্তে জ্ঞান বিতরন করছেন তো করছেনই। আর পরিস্থিতিও বেশ মজার। সবাই সবকিছু জানে অথচ সবাই ভাব দেখায় অপরজন কিছুই জানে না।
এই মুহূর্তে সেই সমস্যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ‘বিরোধী দল’। একটা করে রায় হচ্ছে আর সাংবাদিক রা ছেঁকে ধরছে। ‘আপনাদের মন্তব্য কি?’ সত্যিকারের মনের কথা ‘দুঃখ পেয়েছি’ বলা যাচ্ছে না। ‘আনন্দিত’ বলারও তো প্রশ্নই ওঠে না। এতোদিন তবু কিছুটা রক্ষা ছিল। সবগুলোই ছিল অন্য দলের লোকদের বিচারের রায়। এবার তো নিজের দলের লোক। ‘আপিল করব’, ‘রায় ফাঁস’ এসব বলে আপাতত সাংবাদিক বিদেয় করা যাচ্ছে তবে মনের কথা না বলার কষ্ট তো যাচ্ছে না। বলা যাচ্ছে না ‘আমরা বিচার চাই না’ কিংবা ‘বিচার চাইলে জোট ভেঙ্গে যাবে। আর জোট ভাঙলে আমাদের আর ক্ষমতায় যাওয়া হবে না।‘
তারচেয়েও বড় কথা বিরোধী দল ভাবছে, জনগণ জানে না তাঁদের মনের কথা। শুরুর দিকের অবস্থান ছিল, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই তবে...’ বলে বিশাল এক ফর্দ হাজির করছে। একই কথা বেশিবার বলা হচ্ছে আর তাতে কাজ হচ্ছে না দেখে বচন পাল্টালো, ‘ক্ষমতায় গেলে আমরাও যুদ্ধাপরাধীর বিচার করব’। আসলে মনের যে কথাটা তারা বলতে পারছে না তা হচ্ছে, ‘আওয়ামী আমলে আওয়ামীলীগের নিয়োগ দেয়া বিচারক রা আওয়ামী কথা মত রায় দিবে বলে তাঁদের সন্দেহ। তাই আমরা আমাদের সময় আমাদের নিয়োগ দেয়া বিচারক দের দিয়ে এই বিচার করাতে চাই। কারণ তো বুঝতেই পারছেন।‘
আওয়ামী লীগ প্রথমটায় কিছু দ্বিধায় ছিল। এই বিচার শুরু করা মানেই জামায়াতের সঙ্গে ‘সম্মুখ যুদ্ধে’ নামা। একে তো ক্যাডার ভিত্তিক দল, তার ওপর মিডিল ইস্ট আছে পেছনে। আমেরিকার মতি গতি ঠিক নেই। কখনও কোন দিকে হেলে পড়ে। ফলে বিচার করার পরে যদি ক্ষমতা হারাতে হয়, তবে ভয়ংকর সমস্যায় পড়তে হবে। এদিকে নির্বাচনী ইশতেহারে এই ব্যাপারটা ঢুকিয়ে ফেলেছে। আগেরবার বিচার না করার যাও একটা বাহানা দেয়া যায় এবার তো তাও দেয়া যাবে না। এবার তো তিন চতুর্থাংশ আসন আছে। মাঝামাঝি যে ফর্মুলা বের করল, ‘বিচার করব, তবে রায় গুলো আসবে একেবারে শেষ সময়ে’। কোনটাই পালন করার সময় থাকবে না।
মনের কথাটা আওয়ামী লীগও বলতে পারছে না। ‘আমরা ইচ্ছে করেই বিচারটা দেরি করিয়েছি। যেন ব্যাপারটা কে নির্বাচনী ইস্যু বানানো যায়।‘ তখন জনগণের সামনে এখন দুটো ‘চয়েস’ দিব। ‘শেয়ার বাজার’ আর ‘ছাত্রলীগ’ ভুলে যাওয়া’ আর ‘এই বিচারের রায় পালন’। যে কোন একটি। আমাদেরকে হারিয়েছ কি এই রায় কার্যকর হবে না। যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকো তবে আমাদের সব অন্যায় ভুলে যাও। যদি বিএনপি আসে তবে কিন্তু সবাই আইনের কোন না কোন ফাঁক গলে ছাড়া পেয়ে যাবে।
আর ভালো কাজ যে একেবারে করি নি তা তো না। এতগুলো ফ্লাই ওভার, এতো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য। পাটের জিন আবিস্কার।
জামায়াতের অবস্থা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ। আবার নতুন ভাবে শুরু করবে না আন্দোলন করবে। নতুন ভাবে শুরু করলে একটা সুবিধা, যুদ্ধাপরাধী দের দল, এই তকমা আর থাকবে না। তবে সেক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে, আগে দলে ‘এসব কালিমা’ ছিল। সেটাও করা যাচ্ছে না। বলা যায় তারা এখন ‘সন্ধিক্ষণে’ আছে। নিজেদের উদ্দ্যম জাগিয়ে রাখতে ‘আখেরাতে আসল বিচার’ এ জাতীয় তত্ত্ব দিয়ে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে তাঁদের এখন সত্যিকারের মনের কথা দুটো। ‘যদি ক্ষমতায় আসি, তোদের খবর আছে।‘ আরেকটি ধারা গজিয়ে উঠছে ‘এগুলোর পাপের ভার আমরা বইবো না নতুন করে শুরু করব? কোন দিকে যাই?’
বাদ থাকলো শুধু বাম দল। ‘দুধভাত’। যত না কর্মী তার চেয়ে বেশী নেতা। আর সব নেতাই মহা জ্ঞানী। ফলে ভাঙতে ভাঙতে দলটির অনু পরমাণু তে পরিণত হওয়ার দশা। লেজুড় হওয়া ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার আশা নেই। তাই কয়েকজন লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে লেজ হয়েছেন। কয়েকজনের আবার লেজুড় হতেও আপত্তি। এই আপত্তি গ্রুপের মনে মজার একটা আশার সঞ্চার হয়েছে। যারা আওয়ামী ‘পারফর্মেন্সে’ অখুশি অথচ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, তাদের আশ্রয়স্থল হওয়ার। যদি তারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে, জনগণকে যদি বোঝাতে পারে, আমরা একটি শক্তি হতে যাচ্ছি, তবে ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে পারে।
যদিও কোন সমাধান তাঁদের কাছে নেই তারপরও তাঁদের কাজ বিভিন্ন ইস্যুতে লাফালাফি করা। ‘গণজাগরণ মঞ্চে’ দারুণ সফল ভাবে নিজেদের কিছুটা গুছিয়েছিল। এরপর সরকারী দলের সঙ্গে শুরু হল বিশাল এক টানাপোড়ন। ফলাফল হিসেবে এখন একে ওপরের কাপড় খোলায় এই দুই দল পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করেছে। ‘ফেসবুক’ আর ব্লগে তারা প্রতিনিয়ত গালাগালির কোচিং চালাচ্ছেন। সম্প্রতি রামপাল নিয়ে ‘লং মার্চ’ খারাপ হয় নি। তবে রাম্পালের বদলে কোথায় করলে ভালো হবে কিংবা কোন প্রকল্পে পরিবেশ, জনগণ কারো ক্ষতি ছাড়া বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব এমন কোন ‘আইডিয়া’ নিয়ে তারা এগিয়ে আসছেন না। এই মুহূর্তে তাঁদের মনের একটাই কথা, ‘চেষ্টা করলে হয়তো আবার আগের দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কমরেড...’ আবার একরাশ তত্ত্বকথা। এবং কিছুদিন পরে আবার ভাঙ্গন।
আমি নিজেই বা বাদ যাই কেন? আমাদের মত ‘আবোল তাবোল’ কলামিস্টের কাজ সবাইকে মৃদু গালমন্দ করা। সমালোচনার সবচেয়ে বড় মোজা হচ্ছে এতে একটা সুশীল সুশীল ভাব আসে। লোকে নিরপেক্ষ ভাবে। শুধু ভয় একটাই কাজ করে, ‘সম্পাদক ছাপবে তো?’ আসলে আমাদের মনের কথা একটাই, ‘যেভাবে হোক একটু লাইম লাইটে থাকতে চাই।‘
©somewhere in net ltd.