নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দারুণ এক্সাইটিং ‘পঁচিশ’এর অপেক্ষায় পুরো দেশ

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০১

বেশ হতাশ দিন কাটছে না? সরকারের শেষ সময়, তারপরও রাজপথ শান্ত। কোন অ্যাকশান নেই। বিরোধী নেতাদের মুখে কেবল ‘হুমকি’ আর ‘হুমকি’। ‘এই করব’ ‘সেই করব’। এগুলো আসলে স্বীকার করে নেয়া, ‘এখন কিছু করবার ক্ষমতা নাই’। থাকলে করেই দেখাতাম। তবে ভবিষ্যতে ক্ষমতা হতে পারে। আর তা দেখাবার জন্য একটু ধৈর্য রাখতে হবে। অর্থাৎ যা করবার তা করব চব্বিশের পরে। কারণ তো জানেনই, চব্বিশ পর্যন্ত পুলিশ আর প্রসাশন তো এই সরকারের কথা মানতে বাধ্য। তাই এই সময় কিছু করব না। করলে পুলিশের ‘প্যাদানি’ খেতে হবে। তা খেতেও আপত্তি ছিল না, যদি ১/১১ এর একটা গ্যারান্টি পাওয়া যেত। কিংবা বিরোধী দল ক্ষমতায় আসছে, এমন কোন নিশ্চয়তা।

চব্বিশের পরে কি হবে তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। কেউই ঝেড়ে কাশছে না। প্রশাসন কার কথা শুনতে বাধ্য, তা নিয়ে কেউই খুব নিশ্চিত না। কিছুটা বিতর্ক আছে। আর বিতর্ক থাকলে যা হয়, সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে বিজ্ঞ সব আইনজীবীরা খেয়ে না খেয়ে ঝাপিয়ে পড়েন, সংবিধানের ব্যাখ্যা দিতে। দিন নেই রাত নেই শুধু ব্যাখ্যা আর ব্যাখ্যা। তারপরও বিতর্ক থাকছে না। কেউই একমত হচ্ছেন না। ‘টক শো’ থেকে শুরু করে সম্পাদকীয় কোথায় নেই ব্যাখ্যা। তারপরও কারো ক্লান্তি নেই ব্যাখ্যা দিতে। ক্লান্ত শুধু আমরা, এঁদের প্যাচাল শুনতে শুনতে।

বিদেশী প্রভুরাও কিছুই বলছেন না। সাধারণতঃ উনারা কখনোই ঝেড়ে কাশেন না। বহুবার শোনা, সবারই জানা, কিছু উপদেশ তাঁদের আছে, সেগুলো অকাতরে বিলি করেন। ‘আলাপ আলোচনা কর’। এবারও তাই করছেন। কহন ‘ফোনে’ কখনও চিঠি লিখে। অবস্থা দেখে তাই মনে মনে সবাই ধরেই নিয়েছে, ‘চব্বিশের আগে তেমন কিছু ঘটবে না’। ‘নেতা কর্মী দের উৎসাহ করা টাইপ কথা’ আর ‘বিপক্ষের জন্য উপদেশ’, ‘এখনো সময় আছে, আমাদের দাবী মেনে নিন। নইলে এরপরে ইত্যাদি, ইত্যাদি হবে।’ এভাবেই নীরস সময় কাটবে মনে হচ্ছিল। ঘটনা বলতে কেবল ‘একটা হৃদরোগ’ আর ‘একটি সিঙ্গাপুর যাত্রা’। কিছু রটনা, ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামক নতুন দল তৈরির জল্পনা। এসব খুচরা ঘটনা নিয়েই দিন কাটছিল। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছিল, বিরোধী দল কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সেই ‘কোণ’ থেকে বেরোতেই শেষ চেষ্টা হিসেবে সিঙ্গাপুর যাত্রা। আর কোন কিছু করবার জন্য পঁচিশ তারিখই ভরসা।

ঘটনা আরও একটা ঘতল।‘জরিপ’। ‘জরিপ’ বিরোধী দলের পক্ষে গেলে। বিরোধী দলের জন্য ‘আশা ব্যঞ্জক’ একটি ঘটনা। যদিও ‘জরিপ’ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন তারপরও ‘জরিপ’ তাঁর খেল খেলে ফেলেছে। পত্রিকাটির জনপ্রিয়তার কারণেই হোক আর বিতর্কের কারণেই হোক, বেশ কিছুদিন আলোচনার কেন্দ্রে থাকলো। কিন্তু সেই ‘জরিপ’ কে সত্য প্রমাণ করতে হলে তাঁদেরকে ভোটে যোগ দিতে হবে। আর বর্তমান ফর্মুলায় ভোটে যাওয়া বেজায় ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসন সরকারী দলের হাতে থাকলে মহা সমস্যা। কেস খাওয়া নেতা কর্মীরা এলাকায় কাজ করতে পারবে না। মারামারি লাগলে তাঁদের নেতারা জেলে যাবে। ওদিকে সরকারী দল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, নিজের দলের বহু লোককে পুলিশে ঢোকানো হয়েছে। ভোটের সময় তারা ‘খেল’ দেখাবে। সমস্যা হচ্ছে সব কিছুই সরকারী দল করবে আইনের নিয়ম মেনে। নিজেদের দলের নেতাদের ‘কেস’ আগেই উঠিয়ে ফেলেছে। ফলে তারা মহা সমারোহে ঘুরে বেড়াবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।

সমস্যা এখানেই শেষ না। এই ফর্মুলা মেনে ভোটে গেলে ‘প্রেস্টিজ’ বলে আর কিছু থাকবে না। গত তিন সাড়ে তিন বছর ধরে এই একটি কারণেই তো এতো জ্বালাও পোড়াও করেছে। সংসদে যায় নি। কথাটা বোধহয় ভুল হল। গিয়েছে, তবে শুধু দয়া করে বেতন নিতে। আর সংসদীয় ফ্ল্যাটে থাকাটা ছিল দেশবাসীর প্রতি আরেকটি অনুগ্রহ। নব্বই দিনের ঝামেলা না থাকলে হয়তো সংসদ বর্জন ঠিকমত করা যেত। একেবারে পার্মানেন্ট। যাই হোক, আশি থেকে পঁচাশি দিনের আগে তো ওমুখো না হয়ে জনগণের জন্য এক বিশাল ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এখন আবার যদি এই ফর্মুলার অধীনে নির্বাচনে যায়, ‘কেমন দেখায়?’ যদিও রাজনীতিবিদ দের ‘প্রেস্টিজ’ বলে তেমন কিছু নেই তারপরও লোক দেখানো কিছু একটা চাই। কিছু একটা ‘ফেস সেভিং’ ফর্মুলা। টক শো আর নেতা কর্মী দের বলার মত কিছু একটা তো তাঁদের চাই।

মনে হচ্ছিল তেমন কিছু হয়তো আসবে। সরকারী দল কিছুটা নরম হবে। কখনও ‘আলোচনা’ করতে চায়, কখনও ‘সংসদ বসা’র কথা বলে। মনে হচ্ছিল আভাস দিচ্ছে, সংসদ ডেকে আইনে কিছু পরিবর্তন করলেও করতে পারে। ভেতরে ভেতরে কথা চালাচালি হয়তো হচ্ছে। দর কষাকষি তে একটা রফা হলে হয়তো তা প্রকাশ্যে আসবে। ঝগড়া ঝাটি পছন্দ করেন না এমন লোকজন, এমনই কিছুর আশায় অনেক দিন থেকেই বুক বেঁধে আছেন। ‘সরকারী দল আগে মেনে নিলে, দাবীর সংখ্যা বাড়বে, তাই মানছে না’। কিংবা আন্দোলন না করলে ভোট বাড়বে না তাই আন্দোলন করছে। পুরো ব্যাপারটাকে কেমন যেন গতানুগতিক মনে করছিলেন সবাই। আর তাই পুরো ব্যাপারটাকে একটা নীরস নাটক মনে হচ্ছিল।

সবাই তাই ‘পুজা’, ‘ঈদ’, ‘গরুর দাম’ আর ‘পিয়াজের দাম’ নিয়েই আলাপ করছিল। ব্যক্তিগত জীবনে চলছিল সহনীয় দামে ‘কসাই জোগাড়ে’র আপ্রাণ চেষ্টা। শুধু কসাই জোগাড় করলেই হবে না, কসাইকে সকাল সকাল আনতে হবে। এরপরের জন্য বরাদ্দ ছিল ‘ঈদ কেমন গেল’ তাঁর গপ্প। মোটামুটি ছকে বাঁধা এসব ঘটনার ভেতরে ‘নীরস’ আর ‘একঘেয়ে’ সংবিধান ঘটিত ক্যাচক্যাচ কেউই শুনতে চাইছিল না। তাই আলোচনার মোড় ঘোড়াতে, আকর্ষণীয় বক্তব্যের খোঁজে সাবেক মেয়র সাহেব তাঁর বক্তব্যের ভাষায় কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনলেন। একটু উগ্রতা আনলে পাবলিক খায় ভালো। ‘লগি বৈঠা’ র আদলে এবার তিনি ‘দা কোদাল’ নিয়ে আসলেন।

টনিকের মত কাজ করল। এক্সাইটমেন্ট ফিরে আসলো। ব্যাপারটা এখনও ঠিক ফিল করা যাচ্ছে না। ব্যাপারটাকে খুব বেশী কাভারেজ দেয়ার উপায় নেই। কারণ পরবর্তী কিছুদিন তো ‘ঈদ অনুষ্ঠান’ নিয়ে চ্যানেল ব্যস্ত। পত্রিকাও বন্ধ। ফলে আলাপ আলোচনা ঠিক নির্ধারিত পথে এগোলো না। ‘পদাতিক’ ‘গোলন্দাজ’ এসব কিছু শব্দ যোগ হল। এখনো গুজব ফর্মুলা চলছে। ‘আর্মি’ ‘১/১১’ আরও সব রটনা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘কোথায় কি শোনা গেল’ কিংবা ‘অমুকে বলল’। ব্যাপারটায় ‘উগ্রতা’ কিংবা ‘দেশদ্রোহী’ ব্যাপার থাকলেও, মনে মনে অনেকেই কিন্তু এটাই চাইছিল। ‘লাগুক’ দুই দলের মধ্যে।‘একটু অ্যাকশান হোক’। দেখা যাক কার কত ক্যাডার। কে কত অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামতে পারে। কাজটা মনে হয় হতে যাচ্ছে। ‘এক্সাইটিং’ কিছু।

কি হবে যদিও বোঝা যাচ্ছে না। ‘কিছু হবে’ এই আশায় সবাই বুক বেঁধেছে। উৎসাহ সবার মাঝে। জনগণ আবার নতুন উৎসাহে ‘টক শো’ দেখবে। আর অপেক্ষা করে থাকবে ‘পঁচিশ’ এর জন্য। কি হচ্ছে জানবার জন্য তো দেশবাসীর একটাই উপায়, মিডিয়া। টিভি চ্যানেল আর পত্রিকা। ফলে তারা তো দারুণ এক্সাইটেড। ব্যবসা বাড়বেই। বাঙালি এখন খবর খাবে। ফলে বক্তব্যটি পুরো মিডিয়াকে ‘নতুন’ একটি ব্যবসার সুযোগ এনে দিয়েছে। খবর তো পাওয়া গেছেই। এবার তাঁদের কাজ খবরে কিছু মশলা মেশানো। সম্ভব হলে কিছু আগাম খবর। কিছু গোপন পরিকল্পনা। ভেতরের খবর।

হয়তো অচিরেই টিভি চ্যানেল গুলো পঁচিশ তারিখের ‘অ্যাড’ জন্য আলাদা একটি রেট ঠিক করবে। বিশেষ করে সকাল দশটার পর থেকে। প্রতি মিনিটের জন্য তিনগুন চার্জ করলেও অ্যাড পাবে। নীচে স্ক্রলের ও রেট বাড়াতে পারে। সবাই সেদিন চোখ বড় বড় করে টিভির সামনে বসে থাকবে, সন্দেহ নেই। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। ‘লগির বারি’ খেয়ে মৃত্যু তো সবাই দেখেছে। খুব খারাপ লাগে নি। তারপরও একই ব্যাপারের রিপিট ‘টেলিকাস্ট’ কখনোই এক্সাইটিং হয় না। সেদিল দিয়ে ‘দা কুড়ালের’ কোপ। ‘ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোনো’ ‘ছটফট করা’। নিঃসন্দেহে আরও আকর্ষণীয় হবে।

অনলাইন পত্রিকা তো আর ‘লাইভ’ দেখাতে পারবে না। তাই ঘন্টায় ঘন্টায় আপডেট দিবে। প্রিন্টেড পত্রিকাও হয়তো সেদিন দুটো কিংবা তিনটে সংস্করণ বের করতে পারে। দুপুরে একটা আর সন্ধ্যায় একটা। অফিসে লাঞ্চ আওয়ারে একটা পরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে ফিরতে বাসে পরের টা সেরে ফেলা যাবে। কাটতি খারাপ হবে না। অফিসে টিভি নেই এমন লোকেদের সংখ্যা নেহাত কম না। তাঁদেরও তো খায়েস জাগে, টাটকা খবর জানবার। কয়জন মরল, কিভাবে মরল। অফিসে টিভি না থাকলে তো বাসায় এসে রেকর্ডেড টাই দেখতে হবে। টাটকা ‘আহা উহু’ করার মজাই আলাদা।

সবাই আসলে দারুণ ‘এক্সাইটিং’ একটা পচিশের জন্য অপেক্ষায় আছি। তাই না?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৫

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ভান্ডার লুটের দিন আবার ফিরে আসছে জেনে উল্লশিত বন্য পশুরা!

ঈদ শেষ হল, বন্য পশুদের ঈদ এখনো শুরু হয়নি। পশু কোরবানি দেয়া রক্তাক্ত অস্ত্রগুলো দিয়ে বন্য কুকুরগুলো ২৫ অক্টোবর মানুষ কোরবানি দেওয়ার আয়োজন করছে!
বর্বর পশুরা পশুই থাকবে। মানুষ হতে পারবে না।

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৪০

ভাইটামিন বদি বলেছেন: ............."সবাই আসলে দারুণ ‘এক্সাইটিং’ একটা পচিশের জন্য অপেক্ষায় আছি। তাই না?" -----সবচাইতে এক্সাইটিং হবে সেই ফ্যামিলি'র জন্য যাদের বাবা/ভাই/স্বামী বা ছেলেটা সেই এক্সাইটমেন্ট এর বলি হবে.....কি বলেন?
আসুন সবাই মিলেই জেনে-শুনে সেই এক্সাইটমেন্ট এর অপেক্ষায় থাকি!
শ্লার রাজনীতি!!!!

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০০

নীল সুমন বলেছেন: ----সবচাইতে এক্সাইটিং হবে সেই ফ্যামিলি'র জন্য যাদের বাবা/ভাই/স্বামী বা ছেলেটা সেই এক্সাইটমেন্ট এর বলি হবে.....কি বলেন
আর যারা পল্টন এলাকায় অফিস করেন তাদের জন্য আরো এক্সাইটিং!!

৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩২

জগ বলেছেন: ওয়েট এন্ড সি, দিন কখনো সমান যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.