![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তখন থার্ড ইয়ার কিংবা ফোর্থ ইয়ারে। একদিন হোস্টেলে এসে দেখি বেশ সাজ সাজ রব। স্লোগান ঠিক করা হচ্ছে। মিছিল হবে। সেই মিছিলে একজনের চামড়া তোলার ব্যাপারে কিঞ্চিৎ দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। আমার রুম মেট এর কাছে কারণ জানতে চাইলে সে উত্তর দিলো, ‘হুমায়ূন আহমেদ এর খুব বাড় বেড়েছে’। কিভাবে এই মহৎ তথ্যের সন্ধান পাওয়া গেল জানতে পারলাম একটু পরে। ‘বহুব্রীহি’ নাটকে একজন ডাক্তার কে বোকা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তাও সহ্য করে নিচ্ছিল সবাই। আজ ডাক্তারকে দিয়ে বোকামি করাবার একেবারে সীমা ছাড়িয়েছে। আজকে সেই ডাক্তার বুয়াকে কদম বুসি করেছে আর মিষ্টি গ্লাসে ফেলে দিয়েছে। শুধু তাই না, সেই মিষ্টি আবার চামচ দিয়ে উঠানোর চেষ্টাও করিয়েছে। ডাক্তার সমাজকে এমন ভয়ানক অপমান করার স্পর্ধা পেল কোথা থেকে। আজ হুমায়ুনের একদিন কি আমাদের একদিন।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোরা কি পাগল? এজন্য তোরা মিছিল করবি? দারুণ ক্ষিপ্ত আমার বন্ধুটি বলল, করব না। সব সময় ডাক্তার দের এভাবে বাজে ভাবে প্রেজেন্ট করে। আমি জানতে চাইলাম, মিছিল করলে কি প্রমাণ হবে? ভয়ানক ক্ষিপ্ত বন্ধুটি জানালো, তাই বলে প্রতিবাদ করবো না? এবং প্রতিবাদ হল। হোস্টেলের রুমের সামনের করিডোরে ঘুরে ঘুরে গমগমে মিছিল হল। যথারীতি হুমায়ূন সাহেবের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার হল, চামড়া ছিলা হল, তাঁর কৃষ্ণ বর্ণের হাত ভেঙ্গে ফেলা হল। প্রতিবাদ এবং প্রতিশধের এখানেই সমাপ্তি হল না। পরের সপ্তাহে ডাক্তার সমাজের অপমান দেখতে সবাই সদলবলে আবার হাজির হল ‘কমন রুমে’।
ডাক্তারদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ অনেক লেখাই লিখেছেন। কিছু ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপ করলেও, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো ব্যাঙ্গাত্মক ভাবেই। শুধু উনি না, পৃথিবীর অনেক লেখকই এমন কাজ করেছেন। এবং বিভিন্ন পেশাকে ব্যঙ্গ করেছেন। কেউ রাজনীতিবিদ দের ব্যঙ্গ করেছেন, কেউ সাংবাদিক দের। কেউ বা উকিল দেরকে। ‘হিউমার’ টা সুন্দর হলে সেগুলো অনেক দিন টিকে থেকেছে আর ভালো না হলে সেগুলো হারিয়ে গিয়েছে। আর পাঠক? সে শুধু গল্পটা থেকে হিউমার টা নিয়েছে। গল্পটা পড়ার পর থেকে ডাক্তার, উকিল কিংবা সাংবাদিক কাউকেই গণ হারে বোকা ভাবতে শুরু করেন নি।
ডাক্তারদের নিয়ে কোন ব্যাঙ্গাত্মক লেখা দেখলেই বেশীর ভাগ ডাক্তার ই কেন যেন অতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠেন। ‘ইচ্ছা করে ডাক্তারদের ছোট করার জন্য লিখেছে’। কিংবা ‘এই ব্যাটা আসলে ডাক্তার দের দেখতে পারে না’। কিছু অতি বুদ্ধিমান ডাক্তার আবার কারণটাও আবিস্কার করে ফেলেন, ‘এই ব্যাটা নিজে ডাক্তারি তে চান্স পায় নি তো, সেই রাগ এখন ঝাড়ছে’। এরপরে শুরু হয়ে যায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুণগান। ‘ডাক্তার হওয়া কত কঠিন’, ‘কত কাঠ খড় পোড়াতে হয়’, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেন্স অফ হিউমারের এমন আকাল বোধকরি সার্বজনীন না। আমার তখন পোস্টিং একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আমরা দুইজন ডাক্তার তখন আউট ডোর ডিউটি করছি। দুজন বসেছি একই রুমে, পাশাপাশি দুই টেবিলে। আমার সেই কলিগের কাছে একজন মহিলা রুগী এসেছে। সে জানতে চাইলো, সমস্যা কি? রুগী উত্তর দিল, গ্যাস। আমার সেই কলিগ খুব গম্ভীর হয়ে উত্তর দিল, দেখোতো, দেশে কত গ্যাস। আর সরকার বলে কি না গ্যাস রপ্তানি করবে না। মহিলা হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তাঁর শারীরিক সমস্যা যে একটি জাতীয় সমস্যা এই তথ্য জানতে পেরে সে তখন বেশ বিভ্রান্ত। আমি জানি, আমার এই গল্প শুনে অনেকে মন্তব্য করবেন, ‘রুগীর সঙ্গে ফাজলামি? ডাক্তারদের মধ্যে মানবতা বলে কিছু নাই। কত কষ্টে পরে একজন মানুষ ডাক্তারের কাছে আসে, আর তখন যদি একজন ডাক্তার এসব ফাজলামি করে, কেমন লাগে?’
একটি পেশার একজন মানুষ সম্পর্কে কোন গল্প বলা মানে কি সেই পেশাটিকে কটাক্ষ করা? কখনও কখনও হয়তো। ‘সব পুলিশ ঘুষ খোর’। কিংবা ‘সব পলিটিশিয়ানই করাপ্ট’। অহরহই এসব কথা বলে আমরা পুরো পেশাটিকেই হেয় করি। ডাক্তারদের কপালে জোটে ‘কসাই’ উপাধি। কিছুদিন আগেই একজন মানবাধিকার কর্মী এই উপাধি দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পুরো চিকিৎসক সমাজ গর্জে উঠেছিল। কারণ আর কিছুই না, তিনি তাঁর বক্তব্যে ‘সব ডাক্তার’ বলেছিলেন। আর এসব উপাধি নিয়ে আলোচনা হলে যে যুক্তি হাজির করা হয় তা হল, ‘কিছু কিছু আছে এরকম, সবাই না। বেশীর ভাগই’ এই বলে শুরু হবে সেই পেশার গুণগান।
কোন পেশায় সৎ কিংবা অসৎ ব্যক্তি থাকবে কি না, তা আমার আলোচনার মুখ্য বিষয় না। মূল হচ্ছে, কোন পেশাকে নিয়ে হিউমার করতে সমস্যা কি? হিউমার করার সঙ্গে সঙ্গেই কি পেশাটি নর্দমায় নেমে যাবে? বা কেউ গুণগান করলেই একটি পেশা শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত হয়ে যাবে? তাঁর চেয়েও বড় কথা, হিউমারের ভেতরে সত্য খুঁজতে যাচ্ছি কেন?
একটা ধাঁধা ধরি। বলুন তো ডাক্তার রা খুব বিচ্ছিরী হস্তাক্ষরে তাঁদের প্রেস্ক্রিপশানে কি লেখে যা ফার্মেসীর দোকানদার ছাড়া আর কেউ বোঝে না? পারলেন না তো? উত্তর হচ্ছে, সে লেখে, এই রুগীকে আমি যতটা পারি লুটপাট করে নিয়েছি, এবার তোর পালা। এই গল্পটা শুনে কি মন হচ্ছে এই গল্পের আবিষ্কর্তা ডাক্তারদের হস্তাক্ষরকে কটাক্ষ করেছেন? না ডাক্তারদের কে ডাকাত বলতে চেয়েছেন? জানি না। একজন ডাক্তারের বিচ্ছিরী হস্তাক্ষরকে এতো সুন্দর হিউমার মিশিয়ে উপস্থাপন করা এই গল্পটা যেদিন প্রথম শুনেছিলাম সেদিন খুব হেসেছিলাম।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আর এভাবেই তৈরি হয় 'ইজম'। শুরু হয় নিজ পেশাকে ডিফেন্ড করা।
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার লাগলো লেখাটা। বহুব্রিহীর সময়টা মনে আছে। এত সামান্য ব্যাপার নিয়ে রিএ্যাক্ট করাটা দুঃখজনক।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দুঃখজনক না বোকামি? মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১
কালোপরী বলেছেন:
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯
ভুল্কিস বলেছেন: বেশীর ভাগ ডাক্তার স্যারদের লেখা খারাপ হলেও আপনার হাতের লেখা বেশ ভালো
পোষ্টে প্লাস
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৪
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:০৪
শফিক১৯৪৮ বলেছেন: লেখাটি ভাল লেগেছে।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৫
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: জেনে আমারও ভালো লাগলো
৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:০৫
আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম....................
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:০৮
অশান্ত পৃথিবী বলেছেন: লেখাটা ভালো হয়েছে । আশাকরি সবাই এর মর্মবানীটা বুঝতে পারবে
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: সেই আশাতেই লেখা।
৮| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৪০
অচিনপাখি বলেছেন: ভুল্কিস বলেছেন: বেশীর ভাগ ডাক্তার স্যারদের লেখা খারাপ হলেও আপনার হাতের লেখা বেশ ভাল।
পোষ্টে প্লাস
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
৯| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০৪
তোমোদাচি বলেছেন: ভাল লেগেছে লেখাটা
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
১০| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০১
এম আর ইকবাল বলেছেন:
ডাক্তাদের সর্ম্পকে ভাল খারাপ দুটোই অভিঙ্গতা আছে আমার ।
ডাক্তারের কাছে তো কেউ শখ করে যায় না ।
যখন সে যায় সে সেই বিযয়টি নিয়ে চরম উদ্বিন্ধ থাকে । সে আশা করে
ডাক্তার তার সাথে বিযয়টি ভাল ভাবে কথা বলুক ।
চরম বাস্তব কথা হচ্ছে রোগীর সাথে সময় দেওয়ার সময় তার নেই ।
যত বেশি রোগী তত বেশি আয় ।
শুধু তাদের জন্য নয়, সব পেশায় একই অবস্হা ।
মানুষগুলো সব টাকার জন্য হাহাকার করছে ।
যার আছে সেও,
যার নেই সেও ।
বরং যার আছে সে আরো বেশী ।
ডাক্তারের সাথে সব জনগণের সর্ম্পক আছে ।
সবাইকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হয়ই ।
ডাক্তাররা ভাল থাকলে আমরাও ভাল থাকবো ।
আবার সবাই যদি ভাল থাকি আপনারা ভাল থাকবেন কিভাবে ।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আজকের লেখার বিষয় সেটা না। প্রত্যেক পেশায় যেমন ভালো খারাপ আছে, এই পেশাতেও আছে।
১১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৭
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভালো লাগলো লেখাটি। দিন দিন দেশ থেকে হিউমার উঠে যাচ্ছে
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫২
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
১২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
দুর্বৃত্ত বলেছেন: যারা ডাক্তার হতে পারে নাই তারা হিংসা করে "কসাই",খুনী আরো অনেক কিছুই তো বলে . . .
তবে হিউমারের ব্যাপারটা অনেক ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম বলে অনেকেই ধরতে পারে না !
পোস্ট ভাল লেগেছে ,বেশ ভাল লেগেছে !
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৩
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: কসাই কিংবা খুনি হিউমার থেকে বলে না, প্রত্যাশা না পুরনের জন্য বলে। সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। আজকের প্রসঙ্গ কেবল রসিকতা নিয়ে। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
১৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৬
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: হাসলাম আমিও।
ডাক্তারদের সেন্স অভ্ হিউমার থাকলে, তা রোগীর জন্য অতিরিক্ত পাওয়া।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯
দুষ্টু ছেলেটি বলেছেন: এই জিনিসটাই মানুষকে বোঝানো যায়না যে আসলে সবাই খারাপ না, কিছু কিছু খারাপ মানুষের জন্য গণহারে সবাইকে খারাপ বলা যায়না