নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি রাজনৈতিক স্যাটায়ার--'এসো এসো আমার ঘরে’

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২

দেশের অবস্থা এখন সাসপেন্স থ্রিলার সিনেমার মত। প্রতি পরতে পরতে সাসপেন্স। ‘কি হবে?’ এমন এক আশঙ্কায় সবাই। কেউ ব্যাপারটা উপভোগ করছে, কেউ বা আবার টেনশানে প্রেসার বাড়াচ্ছে। মিডিয়া আছে সবচেয়ে সুখে। তাদের তেমন সমস্যা নেই। তাঁদের দরকার খবর। আর খবরের এমন রমরমা অবস্থা বছরে কয়বার আর পাওয়া যায়? এখন শুধু চাই, সবার আগে খবর টা দেয়া। ‘ব্রেকিং নিউজ’ এর স্ক্রলে কে আগে দিতে পারে। ‘ম্যাডাম এর কল করা ফোনে ‘ক্রিং’ করে আওয়াজ হয়েছে।‘

আওয়াজ টা হতে কিঞ্চিৎ দেরী হয়েছে। অবশ্য দেরি হয়েছে কি না তা নিয়েও খান দশেক ‘টক শো’ হয়ে গেছে। খান বিশেক কলাম, আর একরাশ সম্পাদকীয়। বেশ অনেক সম্পাদক কেই দেখলাম, টেলিফোন নিয়ে লম্ফ ঝম্ফ করতে। টেলিফোন সম্পর্কিত এমন কোন ব্যাপার নেই যা নিয়ে আলোচনা হয় নি। ‘লাল রঙের টেলিফোন কেন দেয়া হয়’ ‘কেন নষ্ট ছিল?’ ‘কবে থেকে খারাপ ছিল?’, ‘দোষ কার?’, ‘কোন লাইনম্যান সেই এলাকায় কাজ করে’—এর প্রায় প্রতিটি নিয়েই নিদেন পক্ষে একটি ‘টক শো’ আর নয়তো একটি কলাম তো লেখা হয়েছেই।

এই আলোচনা শেষ হতে না হতেই শুরু হল আরেক আলোচনা। ঠিক আলোচনা না, বলা যায় রীতিমত কোচিং ক্লাস। ‘শিষ্টাচার’ ‘ভদ্রতা’ এসবের ওপর। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সুশীল, কুশিল সবাই। রীতিমত কোচিং ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। অচিরেই হয়তো আসবে ‘বিজ্ঞাপন’। ‘এখানে টেলিফোনিক শিষ্টাচারের ওপর জার্মান পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়া হয়।‘ সেখানে ‘কখন ফোন করা উচিৎ’ ‘ফোন না ধরলে কতক্ষনের ভেতর কলব্যাক করা উচিৎ’ ‘কতক্ষণ অপেক্ষার পরে দ্বিতীয়বার ফোন করা ভদ্রোচিত’ এর ওপর বিস্তারিত তালিম দেয়া হবে। গ্যারান্টি দেয়া হবে, এই কোর্স ঠিকঠাক পাশ করলে আর দ্বিতীয় ফোন নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। প্রশ্ন উঠবে না ‘দ্বিতীয় ফোনটা কখন করা উচিৎ ছিল’ তা নিয়ে।

ভেবেছিলাম বোধ হয় কাহিনী এখানেই থামবে। সে আশার গুড়ে বালি। এখন শুরু হয়েছে আরেক ঝামেলা। ‘কিভাবে দাওয়াত দেয়া উচিৎ’ তা নিয়ে। দাওয়াত দেয়ার আগে কোন শর্ত দেয়া যায় কি না। কিংবা দাওয়াত কবুল এর পূর্বে শর্ত বিধি সম্মত কি না। বলাই বাহুল্য, এ নিয়েও সম্পাদকীয়, টক শো হচ্ছে। ওদের আর দোষ কি? কথা বলাই তো তাঁদের পেশা। আর কলাম তো হবেই, নইলে আমরা কলামিস্টরা করব কি? তবে সারাংশ আগের মতই, এখানেও সবাই বিভক্ত। কেউই একমত হচ্ছেন না, ‘আদর্শ দাওয়াত পদ্ধতি’ কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে।

নতুন আরেক বিতর্ক শুরু হতে যাচ্ছে। ‘দাওয়াত কবুল করেছেন কি না’ এই নিয়ে। কারো মতে কবুল করেছেন। কেউ বলছেন করেন নি। এই নিয়েও সুশীল সমাজ বিভক্ত। রাজনীতিবিদরাও যথারীতি ঝগড়া করছেন। ২৯ তারিখে যাবেন না আবার একটা দাওয়াত দেয়া লাগবে, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এই ফয়সালা কিভাবে হবে তা নিয়েও জাতি চিন্তিত। কারো মতে প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ এ বিষয়ে অচিরেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়া। কেউ ভাবছেন এ বিষয়ে বিরোধী নেত্রীর একটি প্রেস কনফারেন্স ডাকা উচিৎ।

এমন সাসপেন্স মুহূর্তে কিছুটা বিরতি দেয়া হয়েছে। অনেকটা টিভি প্রোগ্রামের ‘বিজ্ঞাপন বিরতি’ আদলে। ‘কোথাও যাবেন না আমরা আবার ফিরছি’। এই ফাঁকে আমাদের উপভোগের জন্য দেয়া হয়েছে হরতাল। যদিও এই মুহূর্তে এই বিরতিতে দেশবাসির কিছুই করার নেই। পপকর্ণ কিনতে যাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। বাসায় কোন ডিব্বাতে পরে থাকা ন্যাতানো চানাচুর টাই শেষ করতে হচ্ছে।

আসলে এই হরতাল নিয়ে খুব বেশী উৎকণ্ঠিত কেউই না। রুটিন মাফিক কিছু লাশ পড়বে। কিছু বাস জ্বলবে। কক্টেল না ফাটালে ঠিক জমে না, তাই ওসবও কিছু থাকবে। আরও থাকবে রাজনীতিবিদ দের হুমকি ধামকি। ‘পান্তা’, ‘বাসী’, ‘টাটকা’ বিভিন্ন সব উদাহরণ। হাজির হবেন সুশীল রাও। বিদেশী প্রভুদের উপদেশ বাণী। ‘আলোচনা করুন’। ইদানীং শুরু করেছেন দৌড়াদৌড়ি। সদলবলে ‘ভারত’ ভ্রমণ। সবাই এখন তাকিয়ে আছে দাওয়াতের মেনুর দিকে। ‘ম্যডামের কি কি খাবার পছন্দ।‘ ‘কোন রাধুনির রান্না তেমন কোন বিতর্ক নেই।‘ ‘কোন কোম্পানির মিনারেল ওয়াটার দিলে কোন বিতর্ক হবে না’ ‘খাওয়া শেষে ড্রিংকস কোনটা, কোক, পেপসি না জুস? বিতর্কের বিষয় আরও আছে। কমপক্ষে কতজনকে নিয়ে দাওয়াত এ যাওয়া উচিৎ। সহযোগী দল গুলোকে সঙ্গে নেয়া উচিৎ কি না। নিলে কয়জন। এখানে শুধুই খাওয়া হবে না আলোচনাও করা যাবে। করলে তাঁর বিষয় কি হবে?

ভাবছেন কাহিনী এখানেই শেষ হবে? হতে পারে। বিদেশী প্রভুরা যদি এর মাঝেই ঠিক করে ফেলেন কাকে গদিতে বসাবেন তবে হয়তো এযাত্রা রক্ষা নইলে আরও কিছুদিন বিতর্ক চলবে। এবারের বিষয় হতে পারে ‘রান্না মান নিয়ে’ কিংবা ‘রাইস এর ডিস টা প্রধানমন্ত্রীর থালার এতো কাছে কেন রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে’। কিংবা ‘বিরোধী দলের অনুরোধ সত্ত্বেও তাঁর পছন্দের ‘মিনারেল ওয়াটার’ দেয়া হয় নি।‘ আবার হয়তো দেখা যাবে এমন কিছুই ঘটলো না। হয়তো দেখা যাবে সব কিছুই ঠিকঠাক হয়েছে। বিরোধী নেত্রী বাসায় ফিরে বললেন, ‘রান্নাটা ভালোই হয়েছে, কি বলেন?’ হয়তো টেলিফোন তুলে পাল্টা দাওয়াত পর্ব শুরু করবেন, বলবেন, ‘এসো এসো আমার ঘরে’।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কি দূর্ভাগ্য আমাদের!!!

স্বাভাবিক সুস্ঠু আচরণও আশা করতে ভুলে গেছি!

রাজনীতির মিনিমাম ভদ্রতাটুকু হাওয়অয় মিশে গেছে বলেই আজ দুই যুগ পর একে অন্যকে কল করলে আমরা আমোদিত হই!!!!
কত ভীষণ দূর্ভাগা!!!

প্রত্যাহিক কর্মকে উন্নয়ন বলে জানতে হয়

স্বাভাবিক অধিকারের জন্য উৎকোচ দিতে হয়

সরকারের রুটিন ওয়ার্ক হয়ে যায় নির্বাচণী বিজ্ঞাপন।

তারা শুধু কথা বলবে! তারা নৈশভোজ করবে এ সবইতো স্বাভাবিক ভাবেই হবার কথা- আমরা হতভাগা বলেই এটাও ঘটা করে ভাবতে হয়- রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয় বাদ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যানেলর পর চ্যানেল এই নিয়া শত শত ঘন্টা ভ্যায় করে, অর্থ সম্পদ মেধা কেন্দ্রীভূত হয় পক্ষ আর বিপক্ষে!!!!!


প্রকৃত উন্নয়ন ভাবনা পরে রয় আতুর ঘরে নয় ছিনতাই হয় কোন প্রতারকের হাতে।
শিক্ষা নিয়ে কি দুর্দশা - কই একটা টিভি চ্যেনেলও দেখলামনা কয়েক ঘন্টা ব্যায় করেছে এই ইস্যুতে---

অথচ কোমলমতি শিশুদের কি ভয়ানক অবস্থা!

প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিটা পদে তারা আফিম নেশায় বুদ করে রেখেছে জনতাকে! বিভক্ত করে রেখেছে
ভাবনাকে স্থবির করে রেখেছে

আর তাইতো সামনে বোধকরি হিরক রাজার দেশের মতো-
রাজা হাসলে বুঝি আমরা হাসব

রাজা কাঁদলে আমরা কাঁদব

রাজা বেজার হলে পুরা রাজ্য বেজার হয়ে বসে থাকবে

রাজার ঘুম না এলে সব সুশীলরা টকশোতে জেগে থাকবে!


ব্লা ব্লা ব্লা................

মুক্তিপেতে চাই একটা বিপ্লব চাই।

পরিপূর্ণ, সফল, দেশপ্রেমপূর্ণ

একজন মাহাথির। আর স্বপ্নদেখা সহযোগী দেশবাসী।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.