![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন ডাক্তারের পসার বাড়া বা রুগী বাড়ার দুটো অর্থ হতে পারে। রুগীগুলো আগে অন্য কাউকে দেখাতো, এখন তাঁর কাছে আসছে। আর দ্বিতীয় অর্থ দেশে উক্ত রোগের রুগী বেড়েছে। প্রথম কারণটা খুব কম ক্ষেত্রেই হয়। কারণ কোন রুগী একবার কোন ডাক্তারের কাছে যেয়ে উপকার পেলে, ডাক্তার পাল্টান না। নতুন ডাক্তার কেমন হবে না হবে এই সন্দেহ তো থাকেই। তাঁর ওপর যোগ হয় ‘আবার নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর খরচ।
যদি দ্বিতীয় কারণটাকে মুখ্য ধরি, তাঁর মানে দাঁড়ায়, দেশে রুগী বাড়ছে। যদি জনসংখ্যার সঙ্গে সমানুপাতিক হয়, তবে আপত্তি নাই। তা না হলে ব্যপারটা দুশ্চিন্তার বটে। এব্যাপারে খুব বেশী গবেষণা করি নি, তবে সাধারণ ধারণা থেকে যা মনে হয়, রুগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারেই বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মানুষের ডাক্তার দেখানোর মানসিকতা। কিছু হলে এখন অনেকেই ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে চায়। কারো আবার সখ পরীক্ষা করানোর, ‘কম্পিউটারে পরীক্ষা করব’।
যখন কেউ বলে ‘আজকে রুগী কেমন হল?’ এর আরেকটা অর্থ দাঁড়ায়, ‘আজকে কতজন মানুষ অসুস্থ হয়েছে?’ যদিও একটা পরিবারের ওপর দিয়ে ঝড় যাচ্ছে কিন্তু ব্যাপারটা আমার জন্য খুশির খবর। সেদিন একজন সিনিয়র কলিগ কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কালকে রুগী কেমন হল?’ উনি হেসে বললেন, ‘সকাল থেকে একজন ও ডাক্তারের সঙ্গে দেখা হল না, সব ব্যবসায়ী’। স্বীকার করলাম, ‘ঠিকই বলেছেন।‘ ভেবে দেখলাম খুব কম দিন ই কাউকে জিজ্ঞেস করেছি, ‘কাল কোন কঠিন রুগী পেয়েছিলেন কি না?’ কিংবা ‘এমন কোন রুগী পেয়েছিলেন কি না যার ডায়াগনসিস করতে পারেন নি’
রুগী কম থাকা কালীন বেশ কিছু উপদেশ শুনতে হয়। ‘আস্তে আস্তে রুগী হবে’ ‘এই বিষয়ে ভালো কোন ডাক্তার তো এতদিন ছিল না, তাই মানুষ এখনও জানে না’। কেউ আবার বলেন, ‘দুই তিন বছর যাক, তখন আর রুগী দেখে শেষ করতে পারবেন না’। শীত আসলে নতুন উপদেশ ‘এখন রুগী বাড়বে, এটাই তো আপনাদের সিজন’। একজন মানুষের ভোগান্তি হবে, এই তথ্যটা কি সুন্দর হেসে হেসে আমাকে দেয়া হয়।
‘স্যার, এর আগে আপনাকে আরও দুইটা রুগী দেখাইসি, দুইজনই আল্লাহ্র রহমতে ভালো আছে।‘ এই তথ্যটা কিন্তু খুবই ভয়ংকর। যখনই রুগীর সঙ্গে আসা পল্লী চিকিৎসক কিংবা দালাল গোছের কেউ এই কথা বলবে, বুঝবেন এর পরেই একটা অনুরোধ আসবে। ‘স্যার, আজকে কিন্তু একটু কম দিব। খুব গরীব রুগী। চিকিৎসা করতে করতে টাকা পয়সা সব শেষ করছে।’ এরপর সে বের করে এতদিন ধরে যত পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে সেসব। সবচেয়ে ওপরে থাকে কিছুক্ষণ আগে তিনি নিজ দায়িত্বে যেসব পরীক্ষা করিয়েছেন সেসব। ‘কিছু পরীক্ষা স্যার করিয়ে রেখেছি, আজকে আবার ফিরতে হবে তো, বাড়ী অনেক দূর’। প্রথম প্রথম প্রশংসা শুনে খুসী হতাম। পরে ভয়ে সিটিয়ে উঠতাম। আর এখন অভ্যেস হয়ে গেছে।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আমাকে একজন আটেনডেন্ট দেয়া হয়েছে। সে মাঝে মাঝেই গজগজ করতে করতে এসে নালিশ দেয়, ‘স্যার, রুগীর কাছে টাকা আছে তো, আমি দেখছি।‘ এভাবেই আমাদের দিন যায়। কখনও পুরাতন রুগী আরেকজনকে সঙ্গে করে আনে, ‘স্যার, আমার মতই সমস্যা’। এরপর রুগীর দিকে তাকিয়ে, ‘খুব ভালো ডাক্তার’। এরপর আমি রুগী দেখা শেষ করলে আমার সেই ভক্ত রুগী নিজের কাগজটা এগিয়ে বলবেন, ‘আমি স্যার ভালই আছি, তাও স্যার একটু দেখে দেন।‘ অর্থাৎ, উনি ভিজিট দিবেন না। একজন রুগী নিয়ে আসবার সুবাদে উনি নিজে ‘ফ্রী’।
ডাক্তারকে ভিজিট কম দেয়ার ভেতর কোথায় যেন একটা আনন্দ আছে। দাম দর করে কিছু কমানোর ভেতর যে জয়ের আনন্দ আছে সেরকম। একটা গল্প বলেছিলেন আমার এক সিনিয়র কলিগ। একদিন এক রুগী ভিজিট দেয়ার সময় নালিশ করলো, ‘এটা তো আমার থার্ড টাইম। কিছু কম রাখবেন না?’ উনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আপনার তো মাত্র থার্ড টাইম, অথচ দেখেন আমি যে প্রতিদিন বাসে করে আসি, কন্ট্রাকটার তাও আমার কাছে কেন জানি প্রতিদিন একই ভাড়া রাখে।‘
কিছু কিছু এলাকায় আবার ‘পিসি দেয়া’ সিস্টেম আছে। মানে যে পল্লী চিকিৎসক বা দালাল রুগীটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে, তাঁকে কিছু বখসিশ দেয়া। এই ব্যাপারটা আগে কখনও পাই নি। সাধারনতঃ যে রুগী নিয়ে আসে, তাঁর আসল আয় হচ্ছে সেই রুগীর জন্য যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে তাঁর কমিশন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অনেক কয়জন নিয়ে আসে, ফলে একই খাটনিতে আয় বেশী হয়। চেষ্টা থাকে সেই সব ডাক্তারদের দেখানো, যারা বেশী পরীক্ষা নিরীক্ষা দেয়। আগে এই আয়েই তাঁদের হয়ে যেত। ইদানীং লোভ বেড়েছে। ডাক্তারদের ভিজিট থেকেও যদি কিছু পাওয়া যায়।
মেডিসিনের ডাক্তার রা তো তাও অনেক আরামে আছেন। ৩০০ বা ৪০০ টাকা ভিজিট থেকে মাত্র ১০০ টাকা দিলেই ওরা খুশী। কষ্টে আছেন সার্জারির ডাক্তাররা। বিশেষ করে উঠতি বা কেবল ট্র্যান্সফার হয়ে নতুন জায়গায় এসেছেন এমন সার্জনরা। সার্জনকে তাঁর ৪০০০ টাকা বিলের ২০০০ বা ১২০০ ই দিতে হয় এসব পল্লী চিকিৎসকদের। আরও করুন অবস্থা হয় যদি এই পল্লী চিকিৎসক রুগী নিয়ে সোজা ক্লিনিকে যায়। ক্লিনিক তখন ডাক্তারকে দেয় ১২০০ আর দালাল পায় ২০০০। একজন সার্জন রাজী না হলে আরেকজন।
কোন একসময় রুগী যেন আমার কাছে আসে, পথ চেনানোর জন্য এইসব দালাল আমরাই তৈরি করেছিলাম। আজ তাঁরা ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন।
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৬
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: আমার বাসা মেডিকেল কলেজের পাশে হওয়ায় এরকম অভিজ্ঞতা শুনেছিলাম অনেক। একবার তো এও শুনেছিলাম যে এক ডাক্তার ভক্ত রোগীকে অন্য ডাক্তারের কাছে নেয়ার জন্য দালাল নাকি বলেছিল "আপনের পুরান ডাক্তার তো মইরা গেছে" !!
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: 'মইরা গেছে' তো খুব কমন। প্রায় ই আমরা মরি। আমি এতদিনে কতবার যে মরেছি, কে জানে। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৭
স্বপনচারিণী বলেছেন: আপনার কাছ থেকে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে পাই। কত কিছু যে অজানা রয়েছে!
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৫
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: সঙ্গে থাকবার জন্য ধন্যবাদ
৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৪
গৃহ বন্দিনী বলেছেন: একজনের ভিজিট দিয়ে দুই জন ডাক্তার দেখানোটা খুবই লজ্জা্র ব্যাপার।
তবে এটাও ডাক্তারদের অন্যায় যে , সামান্য চেক আপ কিংবা রিপোর্ট দেখানোর জন্য আগের মতই পুরা ভিজিট নেয়া ।
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৫
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: রবীন্দ্র নাথ ও খুব সামান্য একটা কাজ করতেন, বাংলা কিছু শব্দ সাজিয়ে কবিতা লিখতেন। পারবেন কাজটা করতে?
৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫
মদন বলেছেন: +++++++++++++++++
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৫
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৬
এম এম ইসলাম বলেছেন: আমার অভিজ্ঞতা