নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুয়ার দুই দিনের ছুটি

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫২

খুব সকালে, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তার যদি, সহধর্মিণীর খিটমিটে আচরণে ঘুম ভাঙে তবে যে সম্ভাবনা খুবই প্রবল তা হচ্ছে ‘বুয়া কোন ঝামেলা করেছে’। হয় আজকে ফাঁকি মেরেছে কিংবা কোন বাসন ভেঙ্গেছে। নয়তো ঘর ঠিক মোট ঝাড়ু দেয় নি এবং সেটা আবিস্কার হয়েছে বুয়া চলে যাওয়ার পরে। এরচেয়েও বড় ঝামেলা হতে পারে। যেমন, ‘টাকা পাওয়া যাচ্ছে না’ কিংবা ‘ড্রেসিং টেবিলের ওপরে কখনও অসবাধানে খুলে রাখা কানের দুল এর অন্তর্ধান’। নেহাত বোকা ধাঁচের গিন্নি দের সংসারে ছাড়া সাধারণতঃ এধরনের ঘটনা কম ঘটে। বুয়া র হাতটান স্বভাব আছে টের পাওয়ার সাথে সাথে প্রায় সব গৃহকর্ত্রীই সতর্ক হয়েই থাকেন। চোখে চোখে রাখা ‘ঐ কোনায় অত ঝাড়ু দিলা না, ঐ যে ময়লা’।

‘বিছানা একটু গুছিয়ে রাখলেও তো পারো’। এই বাণী শুনেই কি আপনার আজকে ঘুম ভেঙ্গেছে? আজকে হঠাৎ আপনার এই অকর্মণ্যতা আবিস্কারের কারণ নিয়ে কি আপনি খুবই ভাবিত? খুব বেশী চিন্তা করবেন না। এ ধরনের উক্তির সম্ভাব্য মানে ধরেই নিতে পারেন, ‘বুয়া আজকে আসে নি’। গিন্নির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। সকালে বাচ্চাদের তৈরি করা, নাস্তা বানানো, ঘর ধোঁয়া, মোছা এসব আজকে তাকে একা হাতে সামলাতে হবে। ছুটির দিন থাকলে কিছুটা হয়তো রক্ষা। নইলে আজ সারাদিন ই চলবে প্রলয়ঙ্করী ঝড়।

বুয়ার এই না আসাটা ‘নোটিশ দিয়ে’ না ‘বিনা নোটিশে’ তাঁর ওপর নির্ভর করছে ঝড়ের গতিবেগ। বিনা নোটিশে হয়ে থাকলে সম্ভবতঃ গিন্নি একবার শেষ চেষ্টা করেছেন। আজকাল প্রায় সব বুয়ার ই মোবাইল আছে। বিনা নোটিশে অনুপস্থিতির কারণ জানতে তাই একটা ফোন অন্ততঃ তাকে করা হয়েছে। গিন্নি বুদ্ধিমতি হলে ‘শরীর খারাপ’ শুনেই হয়তো থেমে যাবেন। আর অতি বুদ্ধিমতি হলে জেরা আরেকটু এগোবে এবং বিস্তারিত জানতে চাইবে। অবশেষে ‘জ্বর’ কিংবা ‘মাথা ব্যাথা’ এই ধরনের একটি যুক্তি শুনে রাগে গজরাতে গজরাতে গৃহ কর্ত্রী ফোনটা রাখবেন। ‘মাথা ব্যাথা না ছাই’। যদিও তিনি বিশ্বাস করছেন না, তারপরও তর্ক বাড়ান না। বুয়ার এমনিতেই বেশ আকাল। এই বুয়া একটু কম ফাঁকি দেয়। আগেরটা আরও বেশী ফাকিবাজ ছিল।

একটু অভিজ্ঞ গিন্নি হলে হয়তো ব্যাপারটা খুব দ্রুত হজম করে ফেলবেন। অন্যথায় কিছুটা ঝড় বইবে এবং সমূহ সম্ভাবনা, ঝড়টা যাবে আপনার ওপর দিয়েই। বাড়ীতে আজকে আপনার প্রতিটি কাজের মাঝেই ভুল ধরা পড়বে। কেন এই ছুটির দিনে পরে পরে ঘুমাচ্ছেন তা যে এতদিনেও গিন্নির বোধগম্য হয় নি এই তথ্যটি আজ নতুন জানতে পারবেন। এক কাপ চা চাইবার অপরাধে ‘এতো চায়ের নেশা কেন?’ এই তথ্যের খুব কাতর একটি উত্তর দিতে হবে। ‘খুব অসুবিধা হলে থাক’। সকালের নাস্তা নিয়ে কোন উস্মা প্রকাশ করলে আরও জানতে পারবেন, আপনার স্ত্রী দশ ভুজা নন। যা দেয়া হয়েছে তা চুপচাপ গলধঃকরণ এর কোন ব্যত্যয় করেছেন তো আজকে আপনার নাভিশ্বাস উঠবে।

নোটিশ সহ অনুপস্থিত সেই তুলনায় অনেক বেশী সহনীয়। হয়তো সকালে গিন্নি খুব নমনীয় স্বারে বলবে, ‘সামনের হোটেল থেকে কিছু নিয়ে আসো না। বুয়া দুই দিন আসবে না। ওদিকে অনেক কাজ বাকী। নাস্তা বানাতে গেলে দেরি হয়ে যাবে।’ তথ্যটা আগে জেনে আপনি যদি নিজেই এই প্রস্তাব দেন তবে তো স্ত্রী বিনয়ে গলে যাবে। ‘তাই? তাহলে তো বেশ ভালোই হয়। সামনের দোকানটার ডাল টা খুব মজার বানায়, তাই না?’ সঙ্গে বোনাস হিসেবে পেতে পারেন আরেকটি অফার, ‘এই ফাঁকে আমি বিছানাটা গুছিয়ে ফেলি।‘

তবে কদাচিৎ ই এমন সৌভাগ্যের দেখা মিলে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ফাঁকিটা আচমকা হয়। ‘কালকে কয়েকজন লোককে দাওয়াত দিয়েছি’ কিংবা ‘কাল একটু সকাল সকাল এসো, অনেক কাজ আছে’ এমন কিছু বলবার পরের দিনই ‘কামাই’ ব্যাপারটা ঘটে। অন্ততঃ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে। এই ব্যাপারটা যেসব গিন্নি আবিস্কার করে ফেলেছেন, তারা সাধারণতঃ এসব ঘটনা আগে থেকে জানান দেন না। বরং দাওয়াতের আগেই অতিরিক্ত ‘মশলা বাটা’ থেকে শুরু করে ‘ক্রোকারিজ’ গুলো ধুয়ে রাখার কাজ সেরে ফেলেন।

চলাকি যে কেবল গিন্নি ই জানেন এমন না। অপর পক্ষ ও এ ব্যাপারে বেশ সিদ্ধ হস্ত। ‘কালকে আমার ননদের বিয়ে তো, একটু দেশের বাড়ি যাব’ বুয়ার এ ধরনের প্রস্তাবে গিন্নি না বলতে পারবেন না। ছুটি দিতেই হবে। ‘একটু তাড়াতাড়ি এসো’ বলে ছুটি টা মঞ্জুর করবেন। এবং সঙ্গে অতিরিক্ত মসলা বাটা কিংবা বিছানার চাদর যেগুলো আরও দুইদিন পরে ধুলেও চলতো, সেগুলো ও ধুইয়ে ফেলবেন। আর এই অতিরিক্ত কাজগুলো এড়াতে বুয়া, দুটো কাজ করতে পারে। ‘মোবাইল ফোনে ছুটি’ কিংবা ‘বিনা নটিশে কামাই’।

আজকে বিদেশে থাকেন এমন কোন আত্মীয় এসেছে। আর সেই খবর আগাম পেয়ে ‘বুয়ার জ্বরের আগমন’। আর তাই সকাল থেকেই বাড়ীতে এবং আমার ওপর দিয়ে মৃদু ঝড় বইছে। যাই হোক প্রবাসী সেই আত্মীয়, দেশে এসেছেন কিছুদিন হল এবং আসবার পরেই তাঁদের বেশ ‘জামাই আদর’ টাইপ আপ্যায়ন শুরু হয়। আজ এবাড়ীতে দাওয়াত তো কাল সে বাড়ীতে। প্রায় সব আত্মীয়ের জন্যই হয়তো তিনি কিছু না কিছু এনেছেন। দাওয়াতের অছিলায় সেবাড়ীতে ‘গিফট’ গুলো দিয়ে আসেন। ‘একটা আফটার সেভ’ কিংবা একটা ‘খেলনা গাড়ী’। হয়তো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা কোন ‘টি শার্ট’। ‘বিদেশ থেকে নিয়ে আসা গিফট’ বলে কথা। সবাই বেশ আগ্রহ ভরে গিফট টা উল্টে পাল্টে দেখবে। ‘খুবই সুন্দর’ অথবা ‘থ্যাংকস’ যেকোন একটা বললেই হবে। এরপরে শুরু হবে, ওখান কার জীবন যাত্রার ‘লাইফ টেলিকাস্ট’।

‘সোশ্যাল সিকিউরিটি’ ‘রাস্তা ঘাট’ ‘স্কুল’ ‘পড়াশোনা’ জীবন যাত্রার প্রায় প্রতিটি ব্যাপারেই তিনি বেশ বিস্তারিত জানাবেন। শ্রোতা রাও অবাক নয়নে সেসব শুনবে ভাববে ‘কি আরামে আছে ওরা?’ নিজদের জীবনের সঙ্গে তুলনা করবে আর বলবে ‘আর এখানে?’ শুরু হবে নালিশের ফিরিস্তি। ‘লাইফের কোন সিকিউরিটি নাই’, ‘চিকিৎসা বলে কি কিছু আছে?’ ‘করাপশানে দেশ টা একেবারে শেষ হয়ে গেল’। প্রায় প্রীতিটি বাড়ীতেই এই ঘটনা ঘটবে। ‘ওখানে চাকরীর কি অবস্থা?’ এধরনের প্রশ্নকারী সম্ভবতঃ মনে ইচ্ছা রেখেছেন, একদিন যাবেন। কিংবা ইমিগ্রেশানের চেষ্টায় আছেন।

এরপর আসবে সেই ট্র্যাজিক মোমেন্ট। এখানকার আত্মীয় স্বজনদের কাছে বিদায় নেয়ার পালা। ‘দেখি আবার কবে আসতে পারি’ ‘প্লেনের ভাড়া যা বেড়েছে?’ অশ্রু সজল চোখে বিদায় নেয়ার পালা। বাবা মা বেঁচে আছে এবং এদেশে আছে, এমন হলে কদম বুসি এবং এরপরে আরেক পশলা কান্না কাটি। ‘ভালো ভাবে থাকিস’। ঘরের এক কোণে দেখি সেই প্রবাসী গিন্নিটি মন খারাপ করে বসে আছেন। এগিয়ে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মন খারাপ?

ম্লান হেসে বললেন, হ্যাঁ। আবার শুরু হবে পুরনো জীবন।

মানে?

মানে, কাল থেকে আবার থালা বাসন মাজতে হবে, আবার সেই ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়া। এরপরে সেই কাপড় আয়রন করা। রান্না বান্না তো আছেই। কালকে থেকে আমার ছুটি শেষ।‘

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৯

টিভি পাগলা বলেছেন: আজকে বাসার বুয়ার সাথে ঘ্যাচাং করতে হয়েছে। রোজার ঈদের পর থেকে বাসায় একজন বুয়া কাজ করছে। প্রতি মাসেই ৩-৪ দিন বিনা নোটিশে গায়েব। এই বুয়ার কোন মোবাইল নাই, আগামও জানায় না। তাই এইবার ঠিক করলাম, হিসাব রাখবো। এবং একটু টাইট দিবো।

গতমাসের প্রথম সপ্তাহেই ৩দিন বুয়া আসে নাই, আমরা ঈদের ছুটিতে বাড়ী গেলাম, ৬ দিন ছিলাম না, কিন্তু বুয়া সেই সময় বাড়ী যায় নাই, বুয়া নাকি বাড়ী গেছে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর। ফলস্বরূপ আমরা ঈদের ছুটির পর ঢাকায় ফেরৎ আসার পর আরো ৮ দিন পর বুয়া কাজে যোগ দিলো।

সবমিলিয়ে হিসাব করে দখলাম, গতমাসে বুয়া আসলো মাত্র ১৪ দিন। ১৬ দিন আসে নাই। আমি হিসাব করে ৫ দিনের বেতন কেটে রাখলাম। টাকাটা হয়ত দিয়ে দিতে পারতাম, কিন্তু আমি চাচ্ছি বুয়ার বিনা নোটিশে না আসাটা যে নিয়মে পরিণত হচ্ছিলো, সেটা বলার জন্যই এই ব্যবস্হা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.