নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্যায় করবার যুক্তি

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬

চিকিৎসকদের নিয়ে লেখালেখির অন্ত নেই। চিকিৎসক নন এমন কেউ যদি লেখেন তবে ধরে নিতে পারেন, সেই লেখায় থাকবে বিস্তর অভিযোগ। আর কোন চিকিৎসক লিখলে, সেখানে থাকবে পেশাটির প্রচার, আত্মপক্ষ সমর্থন। পাদটীকা হিসেবে থাকবে, কিছু ডাক্তার অবশ্য অনৈতিক কাজ করেন, তাঁদের বিচার হওয়া উচিৎ। পরিনাম? নীতিহীন ডাক্তারদের ব্যাপারেও কোন পদক্ষেপ? কিংবা ডাক্তারদের ঢালাও এবং অহেতুক কলঙ্কিত করা কলামিস্টদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ? কোনটিই হয় না। যা হয় তা হচ্ছে, কিছু মশলাদার আড্ডা। ডাক্তারদের আড্ডায় চলে কলামিস্টদের বদনাম। আর সব আড্ডায় ডাক্তারদের।

সোজা একটি প্রশ্ন যদি করা হয়, ‘ডাক্তার রা অন্যায় করে কি না?’ আমার ব্যক্তিগত উত্তর হবে, ‘হ্যাঁ’। প্রশ্ন এখানেই থামলে মনে হবে ডাক্তারদের শাস্তি হওয়া উচিৎ, এবং বেশীরভাগ কলামিস্ট এই কাজটিই করেন। পুরো অবস্থার বর্ণনা না দিয়ে বেছে বেছে অনৈতিক অংশ গুলো তুলে দেন। আর ডাক্তাররা যে কাজটি করেন, দেশ, সমাজে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন অন্যায়ের দোহাই দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেন, ‘আমরা তো তবু অনেক কম অন্যায় করি’। আসলে আমরা কেউই চাই না, অবস্থার উন্নতি হউক। সবাই চাই টাকা, এবং খুব অল্প সময়ে।

ডাক্তারদের করা উল্লেখযোগ্য অন্যায়ের মধ্যে একটি হচ্ছে, কমিশন। তাঁর কাছে আসা রুগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রায়ই কিছু ইনভেস্টিগেশান করতে হয়। যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই পরীক্ষাগুলো করা হয়, সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সেই ডাক্তারকে কিছু টাকা দেন ইনভেস্টিগেশান পাঠাবার জন্য। বিভিন্ন ইনভেস্টিগেশানের জন্য বিভিন্ন রেট। কোন ইনভেস্টিগেশানের পঞ্চাশ শতাংশ পেয়ে যান সেই ডাক্তার, কোনটির ক্ষেত্রে দশ। এই টাকা বা কমিশন নেয়া ব্যাপারটাকে বলা যেতে পারে মৃদু অন্যায়।

যদি ইনভেস্টিগেশান গুলো সত্যিই প্রয়োজনীয় হয়, তবে তো ডাক্তার সাহেব দিবেনই। প্রশ্ন ওঠে যদি প্রয়োজনীয় না হয়? তখন? তাঁর চেয়েও বড় প্রশ্ন প্রয়োজন ব্যাপারটা নির্ভর করছে ডাক্তার এর রোগ সন্দেহ বা নির্ণয় করার ক্ষমতার ওপর। অভিজ্ঞতার ওপর। ফলে অনভিজ্ঞতার জন্য কেউ বেশী ইনভেস্টিগেশান দিচ্ছে, না কমিশনের লোভে, বোঝার উপায় কি? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এই ব্যাপারটা তদারক করবে কে? এবং কিভাবে? কিংবা তা আদৌ সম্ভব কি না?

একটি উদাহরণ দিই। হৃদরোগ বিভাগে তখন আমার ইন্টার্নশিপ ডিউটি চলছে। একজন রুগীর কাছে এসে প্রফেসার বললেন ব্যাথার অবস্থা কি? রুগী বলল, আছে স্যার।

স্যার তখন বললেন, এক আঙ্গুল দিয়ে দেখাও কোথায় ব্যাথা।

রুগী যথারীতি বুকের বামদিকের এক স্থানে এক আঙ্গুল বসাল। স্যার তখন হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি বুঝলা?

আমি কিছু বুঝিনি জানালাম। স্যার তখন আর কিছু বললেন না। পরে আমাদের নিয়ে বসলেন। ‘শোন যদি রুগী এক আঙ্গুল দিয়ে নিজের ব্যাথা দেখাতে পারে, তবে এই ব্যাথা হার্টের ব্যাথা না।‘ হার্টের ব্যাথার নির্দিষ্ট একটি বর্ণনা আছে। যা আমরা সবাই পড়ে এসেছি মেডিসিন এ। এরপরও এই রুগী যখন ইমারজেন্সীতে আসে তখন সেই ডাক্তার ও কোন ঝুঁকি না নিয়ে হৃদরোগ বিভাগে পাঠায়। আর প্রাইভেট চেম্বারে আসলে, নির্ঘাত ইসিজি করা হবে। রুগী অর্থবান হলে, সিঙ্গাপুরে যাবে এবং সেখানে সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করবে। আর একজন অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট শুধু বর্ণনা শুনে বলে দেবেন, এটা হার্টের ব্যাথা না।

যারা বিদেশে যাচ্ছেন চিকিৎসা করাতে, তাঁদের চিকিৎসা পত্র কি কখনও দেখেছেন? কি পরিমাণ ইনভেস্টিগেশান করানো হয়? নতুন কি চিকিৎসা দেয়া হয়? কিংবা যা ডায়াগনোসিস হয়েছে তা পূর্বেই এদেশে ডায়াগনোসিস হয়েছে কি না? এধরনের উপাত্ত কখনই কোন কলামিস্ট দেন না। এবং সেই বিদেশে দেখানো রুগীটি এদেশে থাকাকালীন সময়ে কোন সমস্যা হলে এদেশের ডাক্তারকেই যে দেখান এই তথ্যও দেয়া হয় না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশ যাত্রা হয় একবার বা দুইবার। এরপর অর্থের কারনেই হোক আর যাওয়া আসার ঝামেলার কারনেই হোক, তিনি ক্ষান্ত দেন।

তাঁর মানে কি এই যে আমরা কোন অন্যায় করছি না? কিংবা কমিশন খাওয়া খুব অন্যায় কিছু না? আমি এমন কিছু বলছি না। বলতে চাইছি, কমিশন ব্যাপারটা এভাবে থামানো যাবে না। আমাদের বিবেক যতদিন না আমাদের বাঁধা দিচ্ছে, কোন আইনেই আটকান যাবে না এই ইনভেস্টিগেশান দেয়া। বুকের ব্যাথা নিয়ে আসা রুগীর অ্যানজিওগ্রাম লাগবে কি না, তা যতদিন না আপনার বিবেক ঠিক করে দিবে, ততদিন এই সমস্যা থামবে না।

বিবেক কি আমাদের আদৌ জাগবে? আমার মনে হয় না। কারণ বিবেক মারবার নতুন নতুন নিয়ম আমরা প্রতিনিয়ত আবিস্কার করছি। ‘হল মার্ক চার হাজার কোটি টাকা মারলে দোষ হয় না আর আমরা কমিশন খেলেই দোষ?’ কিংবা ‘কোন অফিসে কোন কাজে গেলে আমাদের তো ঠিকই ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয়, আমরাই বা ছাড়বো কেন?’ ফলে আমাদের বিবেক এখন ঘুমাচ্ছে। তাঁর চেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, যাদের এখনও জেগে আছে, তাঁরাও সংখ্যায় কমে যাচ্ছে।

আমার এক বন্ধুর একটা কথা খুব মনে পড়ছে, ‘একটা সমাজ যখন পচে, তখন এর পুরোটাই পচে, এর কেবল একটি অংশ পচে না’। সমাজের সর্বত্র যেখানে অন্যায় আর দুর্নীতির ছড়াছড়ি, সেখানে ডাক্তারদের সমাজের বাইরে কেন চিন্তা করা হচ্ছে? তাঁরাও তো সেই পচে যাওয়া সমাজেরই অংশ। তাঁরাও তো পঁচবেই। কেউ আজ পচেছে, কেউ কয়দিন পরে পচবে। কেউ বেশী, কেউ কম। উদ্ধার পেতে চাইলে, পুরো সমাজ পাল্টাতে হবে। আর সমাজ যেহেতু পাল্টাবে না, তাই অন্যায় করা যেতেই পারে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: একটা সমাজ যখন পচে, তখন এর পুরোটাই পচে, এর কেবল একটি অংশ পচে না....আপনার অকপট লেখাটি ভাল লাগল।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

নিরব বাংলাদেশী বলেছেন: একে বারে পার্ফেক্ট পলিটিশিয়ানদের মত বলেছেন? সমাজ পচছে পচবে তাহলে আর এই পোষ্ট দিলেন কেন? স্বজাতিকে বাচাতে? স্বজাতিতো বেচেই আছে লোকের বদদোয়ায় কোন ডাক্তারকি আজ পর্যন্ত মারা গেছে? এইজন্যই কি পোষ্ট দিলেন যেন ডাক্তারদের আমরা খারাপ না বলি? যেমনটা পুলিশদের ক্ষেত্রে বলি? নাকি এজন্য দিলেন যেন খারাপ কে খারাপ না বলে চুপ থেকে মেনে নেই? শুধু ডাস্টবিনের ই বর্ননা দিলেন কিন্তু একে পরিষ্কার করার উপায় বললেন না? অনেক লেখাপড়া করতে হয় অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হয় একজন ডাক্তারকে তবেই নামের আগে সে এ বি সি ডি লাগাতে পারে। কিন্তু এত জ্ঞান ও যদি সমাজ পরিবর্তনের উপায় না বাতলে দেয় তাহলে কে বদলাবে সমাজকে?

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: এম বি বি এস এর কোর্সে সমাজ বদলাবার ওপর কিছু পড়ানো হয় না। তাই সমাজ বদলাবার কোন উপায় বাতলাতে পারছি না। একজন লেখকের কাজ সমস্যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো। আমি তাই করলাম। আপনি যেমন ডাক্তারকে গালি দিয়ে নিজের করা অন্যায় সম্পর্কে ভুলে থাকেন, ডাক্তার ও তেমনি পুলিশের করা অন্যায় কে গালি দিয়ে নিজেরটা ভুলে থাকে। আর এভাবেই আমরা সবাই অন্যায় করছি এবং সেটাকে মেনে নিচ্ছি। এটাই বলতে চেয়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.