নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘৫ই জানুয়ারী হয়ে ভালোই হয়েছে’

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৭

মনে আছে? ২০০৬ এ, জেদাজেদি যখন তুঙ্গে, তখন বিএনপির তরফ থেকে একটি উদাহরণ দেয়া হত। ‘এবারের নির্বাচন ১৫ই ফেব্রুয়ারীর মত হবে না’। অনেকটা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেয়া, ‘১৫ই ফেব্রুয়ারী খুবই জঘন্য একটা নির্বাচন হয়েছিল’। তবে উদাহরণটা দেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল ‘১৫ই ফেব্রুয়ারী’ তে বিএনপি ছাড়া আর বাকী সব প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ‘নির্বাচনে যাচ্ছে না’, জনিয়েছিল। কিন্তু বিএনপির বক্তব্য ছিল এবার (২০০৬ এ) জামায়াত সহ তাঁদের বাকী সাঙ্গপাঙ্গরা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। অর্থাৎ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এবং ১৫ই ফেব্রুয়ারীর সঙ্গে এটা একটি মূল পার্থক্য। আর সেকারণেই মূল বিরোধী দল নির্বাচনে না এলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে এবং সেই সংসদ নিয়ে ৫ বছর কাটিয়ে দেয়া যাবে। দুর্ভাগ্য দেশবাসীর, সেবার উদাহরণটা তাঁরা সৃষ্টি এবং প্রমাণ কোনটাই করতে পারেন নি। ঘটে যায় ১/১১।

তবে এবার সমস্যা হয় নি। এবার খুব সুন্দর ভাবেই ৫ই জানুয়ারী পার হোল। বিরোধী দলের ভোট বর্জন কিংবা জ্বালাও পোড়াও ভোট বন্ধ করতে পারে নি। যেমনটা ১৫ই ফেব্রুয়ারীও রোধ করা যায় নি। ২০০৬ এ যে উদাহরটি বিএনপি দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নি, আওয়ামী লীগ এবার তা দেশবাসীকে দেখাল। ১/১১ এর কারণে যে ফর্মুলা বিএনপি প্রমাণ করে যেতে পারেনি, এবার তার সুযোগ এসেছে। প্রধান বিরোধী দল অংশ না নিলেও সেই নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হয় কিংবা সেই সংসদ নিয়ে কতদিন কাজ চালানো যায় তা প্রমাণের একটা সুযোগ এবার সরকার পেয়েছে। ৫ই জানুয়ারীকে যেহেতু অনেকেই ‘১৫ই ফেব্রুয়ারী’ বলতে রাজী না। যেহেতু উদাহরণ হিসেবে বাই লাইন মিল নেই, তাই কিছু রাজনৈতিক দল সহ একটি নির্বাচনের উদাহরণ হিসেবে ১৫ই ফেব্রুয়ারী খুব একটা যুতসই হয় না। বরং ২০০৬ এর না হতে পারা নির্বাচনের সঙ্গে বরং অনেকে মিল খুজে পাচ্ছেন। তাই এমন একটি সংসদের কি হয়, প্রধান বিরোধী দল অংশ না নিলে সেই সংসদ কতটা গ্রহণযোগ্য হয় কিংবা সেই সংসদ কতদিন টেকে, তা দেখতে অনেকেই উদ্গ্রীব।

ইতিহাসের মহান শিক্ষা আমাদের সবারই জানা। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। এবারও নেবে এমনটা মনে হয় না কেউ আশা করেছিল। তবে এব্যাপারে, আওয়ামী লীগ কে অন্ততঃ একটি দোষে দোষী করা ঠিক হবে না। আর তা হচ্ছে, ‘ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়ার’ দোষ। ২০০৬ এর নির্বাচনটা যেহেতু হয়নি, তাই কিছু গৃহপালিত বিরোধী দল নিয়ে নির্বাচন হলে, সেই সংসদের পরিণাম কি হয় তা তাঁদের জানার কোন সুযোগ ছিল না। ৮৬কে উদাহরণ বলা যেতে পারে। মূল দুই বিরোধী দলের একটি সেখানে অংশ নিয়েছিল। তবে এবার পরিস্থিতি একেবারে অভিনব। বিরোধী দল অংশ নেয় নি, তবে তাঁদের সাংগঠনিক অবস্থা বেশি সুবিধার না। ফলে আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব না।

৫ই জানুয়ারী যে হতে যাচ্ছে তা অনেকেই বুঝে গিয়েছিল। এর পরবর্তী কথাবার্তা গুলো ও মনে হয় আমাদের জানা। ‘দেশবাসীকে ধন্যবাদ দেয়া’ কিংবা বিদেশিদের কিছু গালমন্দ করা। ‘আমরা কারো মতামতের তোয়াক্কা করি না’। আরও কিছু বক্তব্য হয়তো দেয়া হবে। ২০০৬ এর নির্বাচন হলে, যে কথাগুলো বিএনপি বলতো। ‘কেবল একটি বা দুটি দল নির্বাচনে না এলে নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হয় না’। কথাবার্তা বিরোধী দলও বলবে। ২০০৬ এর নির্বাচন টি হলে আওয়ামী লীগ যেসব কথাবার্তা বলতো, সেসব এখন বিএনপি বলবে। ‘জনগণ এই ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে, ইত্যাদি এবং ইত্যাদি’। আর তাই বিরোধী দল ও যথারীতি তাঁদের আন্দোলন এর কর্মসূচী দিতে থাকবে। হরতাল, অবরোধ এ কিছুদিন জনজীবন অতিস্ট হবে। মাঝে মাঝে ‘আলোচনা’ ‘সমঝোতা’ এজাতীয় কথাবার্তা ও শোনা যাবে। অতঃপর?

১৫ই ফেব্রুয়ারীর সেই নির্বাচনকে তখন বিএনপি তাঁদের সরকারের কৃতিত্ব বলে দাবী করেছিল। বলা হয়েছিল বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ভুল রিপোর্ট দিয়েছে। আসলে নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু হয়েছে। এবং কিছুদিনের ভেতরই পরিস্থিতি এবং ভাষা দুটোই পাল্টে যায়। এবং পরবর্তী ইতিহাস সবার জানা। ২০০৬ এ ও প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছিল। তবে হয় নি। ফলে তখন যা ঘটত কিংবা যে পরিস্থিতির উদ্ভব হত তা দেখার সুযোগ দেশবাসী পায় নি। এবার পাবে। যেহেতু আমাদের সবার মাথায়ই মাত্রাতিরিক্ত ঘিলু আছে, তাই কি হবে তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সংসদের মেয়াদ কতদিন হতে যাচ্ছে? ৫ বছর না তার চেয়ে কম? বিরোধী দলই বা কি এমন করবে? যা তাঁরা এতদিন করতে পারে নি। প্রায় সবাই এখন একেকজন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ‘প্রফেসার হাওলাদার’।

আগামী কিছুদিন গ্রহণযোগ্যতা কিংবা উপস্থিতি নিয়ে তর্ক হবে। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নিয়েও হয়েছিল। বিদেশি প্রভুদের তুচ্ছ জ্ঞান করা, এটাও শুরু হয়ে গেছে। ভোটার উপস্থিতি কিংবা জাল ভোট নিয়ে আলাপচারিতা হচ্ছে। সেসব আলোচনায় কেউই খুব উৎসাহী না। সবাই উদ্গ্রীব হয় আছে, পরিণাম দেখার জন্য। কিভাবে শেষ হয় এই পরিস্থিতির। বিএনপির মাঠের সক্ষমতা নিয়ে সবাই সন্দিহান। তাঁরা আন্দোলন করে কিছু করতে পারবে, এমনটা ভাবতে কেউই সাহস পাচ্ছেন না। ফলে যদি আদৌ কিছু হয়, তা হবে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে। আর তেমন কোন চাপ দেয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল কতটা ইচ্ছুক কিংবা প্রতিবেশি দেশ সেই চাপ প্রয়োগে কতটা বাঁধা দিতে পারে, এসবের ওপরে নির্ভর করছে এই সংসদের মেয়াদ।

তাই এমন একটি নির্বাচন হলে, সেই সংসদের কি দশা হবে, তা শুধু তাঁদের না, তা দেশবাসীরও অজানা। ৩০০ কোটি টাকা খরচের এই নির্বাচন থেকে এবার সেই তথ্য পাওয়া যাবে। এবং ভবিষ্যতে হয়তো উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত ও হবে। তা থেকে কেউ শিক্ষা নেবে কি না, সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। তবে উদাহরণ এবার সামনে থাকবে। ‘টক শো’ কিংবা ‘কলামিস্ট’ দের জন্য একটি উপাদান যুক্ত হবে। ভবিষ্যতে আবার এমন নির্বাচন কেউ করতে চাইলে, বলা হবে, ‘৫ই জানুয়ারী’ মার্কা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কত টাকাই তো এখানে সেখানে খরচ হয়। এবার না হয়, একটি উদাহরন তৈরির জন্যই খরচ হল। একভাবে চিন্তা করলে মনে হচ্ছে, ‘৫ই জানুয়ারী’ হয়ে ভালোই হয়েছে। একটা উদাহরণ বা নাম পাওয়া গেছে এই ধরনের নির্বাচনের। এবার অপেক্ষা, এই সংসদের পরিনতি দেখার।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩০

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: ভালোই বলছেন ভাই? :| :|

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:২৮

মাথা নষ্ট সিপাহি বলেছেন: হয়নি কারন ,
২০০৬ এর ইসির একটু হলেও শরম ছিল,
হয়নি কারন,
কেএম হাসান এর লজ্জা ছিল,
হয়নি কারন,
নিরবাচন কালিন উপদেষ্টাদের হিতাহিত বুদ্দি ছিল,
হয় নি কারন,
বিএনপির চাটুকারদের একটু হলেও শরমের লেশ ছিল,

আর এবার হয়েছে কারন ,
???????????????

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.