নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

টোল

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২

(১)

আপনি কে?

জ্বী, চোর।

চোর?

প্লিজ একটু আস্তে, সবাই জেগে যাবে।

সে তো আমি জাগাবোই। আপনি ঢুকলেন কিভাবে?

সব বলছি। ফাস্ট লেট মি এক্সপ্লেইন মাইসেলফ।

ইংরেজী বাক্য ম্যাজিকের মত কাজে দিল। রাগের বদলে এখন আগ্রহ। ‘ব্যাপার কি?’ টাইপ। বোধ হয় ঘুমোতে যাওয়ার আগের প্রস্তুতি নিচ্ছিল মেয়েটা। এমন সময় ঘরে একজন অপরিচিত যুবক দেখে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে নি এই আমার জন্য অনেক। কিন্তু আমারও তো কোন উপায় ছিল না। শুরুর ধাক্কা মনে হয় কাটিয়ে উঠেছেন। এবার আমাকে আমার কাজ সারতে হবে।

দেখুন, আমার এক্সপ্লানেশানটা আপনার কাছে আজগুবি লাগবে, বাট ইটস ট্রু। আমি একজন শিক্ষানবিস চোর। মিন বাকী সব প্রফেশানে যেমন ইন্টার্নশিপ থাকে, অনেকটা সেরকম। হাতে কলমে শিক্ষা আর কি। ব্যাপারটা কি আমি বোঝাতে পারছি?

চেষ্টা করছি, বলে যান। আপনি চাইলে বসতে ও পারেন।

সো নাইস অফ ইউ। এক গ্লাস পানি পাওয়া যাবে?

না। কারণ সেক্ষেত্রে আমাকে ঘর থেকে বেরোতে হবে। আই কান্ট টেক দ্যাট চান্স। আপনি যে কোন জিনিস চুরি করে পালাতে পারেন।

দ্যাটস রাইট।

আপনার গল্প শেষ করুন।

ও হ্যা। যা বলছিলাম। ঢাকায় চুরি শেখানোর অনেক স্কুল আছে। পকেট মারা, ঘরে চুরি কিংবা ছিনতাই। সবগুলোর ওপরই কোর্স আছে। আমি ভর্তি হয়েছি ‘চুরি’ টা তে। মানে ঘরে ঢুকে চুরি। গল্পটা কি অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে?

শেষ করুন, তারপর বলছি।

ওয়েল। তো সেই কোর্সের নিয়ম হচ্ছে, কোর্স শেষে, আমাদের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা দিতে হয়। এই ধরুন কোন বাসায় যেয়ে কিছু চুরি করে আনতে হবে। প্রথম প্রথম সোজা বাসা দেয়া হয়। যেমন বাড়ীতে গ্রিল নেই, কুকুর নেই কিংবা দারোয়ান নেই এমন বাসা। ধীরে ধীরে কঠিন বাসা। আপনি বোধ হয় বিশ্বাস করছেন না।

এখনও না। এবার সত্যি কথাটা বলুন।

পুরোটা শুনুন। আমার এবার সেকেন্ড ইয়ার চলছে। এবারের টাস্ক একটু টাফ। দোতলা বাড়ী, দারোয়ান আছে এমন বাড়ী। আজকে আমার ফাইনাল পরীক্ষা। কিছু চুরি করে নিয়ে যেতে পারলে পাস। থার্ড ইয়ারে উঠবো। এবার আপনি ঠিক করুন কি করবেন।

কি করব মানে?

মানে বাড়ীর লোকজন ডেকে আমাকে ধরিয়ে দিবেন না একটা কিছু চুরি করতে দিয়ে আমাকে হেল্প করবেন।

গল্পটা ইন্টারেস্টিং, তবে আমি এখনও বিশ্বাস করছি না।

দেন, আমার ব্যাপারে কি ডিসিশান?

মেয়েটা হঠাৎ কি যেন চিন্তা শুরু করল। ঠিক করে উঠতে পারছে না কি করবে। বেশ দ্বিধায় আছে। এখন পায়চারী শুরু করেছে। এবার বোধহয় ডিশিসান নিয়ে ফেলেছে।

শুনুন। আমার জন্য একটা চুরি করতে পারবেন? ইউ ক্যান চার্জ ফর ইট।

কাহিনী বেশ জমে উঠেছে। মনে হচ্ছে পার পেয়ে যাচ্ছি। তাঁর চেয়েও মজার হচ্ছে, নতুন একটা কাহিনীর ভেতর ঢুকছি। ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটবে মনে হচ্ছে।

আপত্তি নেই। কোথায় এবং কি চুরি করতে হবে?

তাঁর আগে কিছু শর্ত আছে। আমি এখন আপনাকে যা বলব, দ্যাট সুড রিমেইন কনফিডেনসিয়াল। আর কেউ জানবে না। এগ্রিড?

এটা তো আমাদের করতেই হয়। বিশেষ করে ‘কন্ট্রাক্ট স্টিলিং’ এর ক্ষেত্রে। এব্যাপারে আমরা কখনই গুড উইল নষ্ট করি না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

বেশ। আই অ্যাম টেকিং দ্যা চান্স। আপনাকে কিছু চিঠি চুরি করতে হবে। ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। চুরি মিনস চুরি। ডাকাতি বা খুন খারাবি এমন কিছু যেন না ঘটে। অ্যান্ড রবিন যেন জানতে না পারে।

যার বাসায় চুরি করব, তাঁর নাম রবিন?

জ্বী। চিঠি গুলোর শেষে দেখবেন লেখা আছে লিপি। চিঠির বাকীটা কিন্তু পরবেন না। বাড়ীর কোথায় চিঠি গুলো আছে জানি না। কিভাবে খুঁজবেন আপনার ব্যাপার, বাট আই ওয়ান্ট দ্যা জব ডান। অ্যাম আই ক্লিয়ার?

ক্লিয়ার।

এনিথিং এলস?

আমার টাইম লিমিট?

ও হ্যা। দ্যাটস মোস্ট ইম্পরট্যান্ট। কাজটা আজকেই করতে হবে। আপনি এখান থেকে বেরিয়েই ওখানে যাবেন। অ্যান্ড হোয়াট অ্যাবাউট ইওর চার্জ?

কাজটা আগে করে নিই। কমপ্লিকেটেড মিশন অনেক সময় আমরা ফ্রি অফ চার্জ ও করি, টু গ্যাদার এক্সপেরিয়েন্স।

অ্যাজ ইউ উইশ। আর কিছু জানবার আছে?

একটু পানি চেয়েছিলাম।

(২)

আই কান্ট বিলিভ ইট।

সারা মুখ জুড়ে ঝলমলে হাসি। মেয়েটা দেখতে আসলেই সুন্দরী। গালে সুন্দর টোল পরে। আরও কিছুক্ষণ গল্প চালাতে ইচ্ছে করছে।

ইস ইট অ্যা কমপ্লিমেন্ট?

সত্যিই বলছি। আমি যে কি চিন্তায় ছিলাম। আপনি জানেন আমার দুইদিন পরে বিয়ে?

তাই ? কংগ্র্যাচুলেশান। দাওয়াত দিবেন না?

সিওর। কার্ডও পাবেন। আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না আপনি আমার কতটা উপকার করলেন। দ্যাট স্কাউন্ড্রেল! পেলেন কোথায়? খুজতে কোন অসুবিধা হয় নি?

টেবিলের ওপর ই ছিল। বোধ হয় ভাবতে পারেনি আপনি চুরি করার প্ল্যান করবেন।

প্ল্যানটা করতাম ও না। হয়তো যা টাকা চেয়েছিল দিয়েই দিতাম। আপনি আসাতে হঠাৎ আইডিয়া টা মাথায় খেলল।

এখন?

ও সিওর। ইয়োর পেমেন্ট। আমি কিন্তু চেকে দিব। আপত্তি নেই তো?

আমি তো টাকা চাই না।

দেন।

আপনার কাছে একটা প্রমিজ চাই।

হোয়াট? কি প্রমিজ?

আজকের পুরো ঘটনাটা ভুলে যাবেন।

মানে?

মানে আজকে যা ঘটলো, আমি তো ভুলে যাবোই, আপনিও ভুলে যাবেন। প্লিজ।

এই রিকোয়েস্ট তো আমার করার কথা।

এই খামে কি আছে?

আমার হবু বরের ছবি।

এখনও দেখেন নি, তাই না?

মিন?

আপনার হবু বরকে আপনি এখনও দেখেন নি, অ্যাম আই রাইট?

ইয়েস, রাইট। আসলে খুব টেনশানে ছিলাম জানেন। আমাদের অনেক আগেই ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ এই সময়ে, এভাবে ব্ল্যাক মেইল করবে...। বাট, স্যুড ইট বি ইওর কনসারন?

নট রিয়েলি, তারপরও আমার রিকোয়েস্ট ছবিটা একবার দেখুন, দ্যাট উইল বি মাই পেমেন্ট।

আমি ওয়েট করে আছি। আরেকবার টোল টা দেখবো।

(৩)

এইমাত্র বাসায় ফিরলাম। বাড়ীর অবস্থা বেজায় থমথমে রেখে গিয়েছিলাম। এবং কারণটা আমি। আজকে হঠাৎ করে আমি জানান দিই, মেয়ের সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই। চাওয়া টা অন্যায় না। তবে বিয়ের মাত্র দুইদিন আগে, এখানেই সমস্যা বেধেছে। আমার দাবী এখানেই থামে নি, মেয়ে অপছন্দ হলে বিয়েতে আমি অমতও করতে পারি।

ঘটনাটা একটু পরিস্কার করে বলি। সম্বন্ধ করেই বিয়ে ব্যাপারটা এগোচ্ছিল। আমার ও অমত ছিল না। মেয়ে কেমন হবে, এ নিয়েও আমার কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। কারণ সিলেকশান কমিটিতে যারা আছেন, সব কজনই পারফেকশানিস্ট। খুব সম্ভব মেয়েকে হাটিয়েও দেখে এসেছে। গায়ের রঙ জানবার জন্য হয়তো একদিন আচমকা মেয়ের বাসায় সকালে যেয়ে হাজির হয়েছিল, যেন পার্লারে যাওয়ার সময় না পায়। আহামরি রূপসী আমার নিজেরও দরকার নাই।

শুধু একটাই চাওয়া। এটা এমন একটা চাওয়া, কাউকে বললে হাসবে। সিলেকশান কমিটি কেও বলিনি। মেয়ের ছবি আমাকে আগেও দেখিয়েছে। বেশ সুন্দরী। কিন্তু ছবি দেখে ব্যাপারটা বোঝার উপায় নেই। প্রথমে ব্যাপারটাকে আমলে নিই নি। মেয়ে দেখতে যাওয়ার দিনও আমাকে অফার দেয়া হয়েছিল। যাই নি। এখন সবকিছু ঠিক হওয়ার পরে, মেয়ে দেখতে চাওয়া, কেউই বুঝতে পারছে না।

ব্যাপারটা যে এতো ভয়ংকর রূপ নেবে, আমি নিজেও বুঝিনি। গত দুদিন আমি মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখেছি। ভয়াল দাঁত, বিচ্ছিরি হাসি। ছবিটায় মেয়েটা মুখ বন্ধ করে ছিল। সেজন্য হতে পারে। ব্যাপারটা অবশ্যই হাস্যকর লাগছে। কিন্তু আমার অবস্থা নিতান্তই করুণ। যে কোন সময় মানসিক রুগী হয়ে যাব, কিংবা এখনই হয়ে গেছি বোধ হয়। অবশেষে বুকে অনেক সাহস নিয়ে বাড়ীতে জানালাম, আমি মেয়েকে একবার দেখতে চাই।

ব্যাপারটা খুব সমস্যার হত না। সমস্যা অন্য কারণে। এখন রাত বার টা। কাল মেয়ের গায়ে হলুদ। সবাইকে দাওয়াত দেয়া শেষ। এখন যদি আমি মেয়ে দেখে না বলি, তখন কি হবে? দুই পরিবারের ই মান সম্মান নিয়ে টানাটানি।

আমাকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সম্ভব না। মেয়ের সঙ্গে কথা বলা হয়তো কালকে অ্যারেঞ্জ করা যেতে পারে, তবে বিয়েতে ‘না’ বলার কোন দাবী মেনে নেয়া হবে না। এরপর বেশী বাড়াবাড়ি করলে ইমশানাল লাইনে এগুবে সবাই। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। এ ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে আমি সচরাচর যা করি, ‘নিরুদ্দেশ হাঁটা’ দিই। বাড়ীর পেছনের দরজা দিয়ে চুপিচুপি বেরিয়ে গিয়েছিলাম। যে করেই হোক জানতে হবে মেয়েটাকে হাসলে সুন্দর দেখায় কি না। স্পেসালি অ্যান্ড মোস্ট ইম্পরট্যান্ট, যার জন্য এতো তুলকালাম কান্ড, মেয়েটা হাসলে গালে টোল পরে কি না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭

চারশবিশ বলেছেন: সুন্দর সিম্পল গল্প

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪২

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৮

লিংকন১১৫ বলেছেন: হুম সুন্দর গল্প

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.