নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিতর্ক ব্যবসা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫১

গত সপ্তাহটা গেল ‘গুন্ডে’ সপ্তাহ। ফেসবুকে যারা নিয়মিত ঘোরাঘুরি করেন, বিভিন্ন আঁতেল প্রজাতির ফেসবুক সেলিব্রিটি কে ফলো করেন বা তাঁদের বন্ধু তাঁরা এতদিনে বিভিন্ন ভাবে সিনেমাটির চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার সচক্ষে দেখেছেন। গরম গরম কথাবার্তা থেকে শুরু করে ভারতীয় পণ্য বর্জন সবই চলছে এই ভার্চুয়াল জগতে। কেউ আবার টিপ্পনী কাটছেন, ‘বেশি না। শুধু এক মাস ভারতীয় সিরিয়াল না দেখে কাটিয়ে দেখান। তাহলেই প্রমাণ হবে আপনারা কতটা দেশপ্রেমিক।’ কারো দেশপ্রেম নিয়ে কোন সন্দেহ আমি প্রকাশ করছি না। শুধু বলতে চাইছি, কিছু কিছু ঘটনা কেমন যেন গৎবাঁধা রূপ নিচ্ছে।

এই গৎবাঁধা রূপ টা কে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে বিতর্ক সৃষ্টি কারি রা। ‘ইনোসেন্স অফ মুসলিম’ এর ফর্মুলা তো প্রায় মাঠে মারা পড়তে যাচ্ছিল। কারণ পরিচালক মশাই প্রথমে ছবিটি ইউটিউবে দিয়েছিলেন ইংরেজিতে। কোন বিতর্ক নেই দেখে তিনি আবার চেষ্টা নিলেন। এবার ছবিটি ‘ডাব’ করলেন আরবি ভাষায়। ব্যাস, কেল্লা ফতে। বিতর্ক, বিক্ষোভ, লাশ এবং পরিচিতি। ফলাফল? বিশ্ব জুড়ে প্রচার। আমরা কিছুদিন ইউ টিউব বন্ধ রাখলাম। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ আমাদের অভিমান বুঝলো না দেখে আবার ইউটিউব খুলে দিলাম। লাভ যা হওয়ার ‘ইউটিউব’ কর্তৃপক্ষ আর সেই পরিচালকের হল।

যখন দেখা যায় একটু বিতর্ক সৃষ্টি করলেই ব্যবসা সফল হওয়া যায়, তখন এই ফর্মুলার দিকে ঝুঁকে পড়া লোকের সংখ্যার খুব একটা অভাব হয় না। কিছু ক্ষেত্রে পরিচালক কিংবা লেখক সত্যিই একটি মতবাদে বিশ্বাসী হন। সেই বিশ্বাস থেকে লেখেন বা কিছু করেন। কখনও কাজটা তিনি ইচ্ছে করেই করেন। দুটোকে আলাদা করা সেই অর্থে সম্ভব না। কারণ কারো মনের ভেতরে যেয়ে দেখে আসা সম্ভব না, কাজটা তিনি কেন করেছেন। পুরো ‘কনটেন্ট’ এর পরিপ্রেক্ষিতে দর্শক বা পাঠক সিদ্ধান্ত নেন, কাজটা কেন করা হয়েছে। একসময় বিতর্ক গুলো তৈরি করা হতো যৌনাবেদন ময়ী গান বা নাচ দিয়ে। অশ্লীল কথা বার্তা দিয়ে। এরপরের বিতর্ক শুরু হত ‘বাক স্বাধীনতা’ র পথ ধরে। ‘অশ্লীল’ এর সিদ্ধান্ত নেবে কে? শিল্প সাহিত্যে ‘মোরাল পুলিশিং’ উচিৎ কি না। বিতর্ক ভালো মত উস্কে দেয়া গেলে, বাজার মাত।

এসব বিতর্ক এখন অনেকটাই পানসে হয়ে এসেছে। ইন্টারনেট এখন যৌনতার দরজা খুলে দিয়েছে। ছবি, ভিডিও, এমএমএস কি চাই আপনার। সব আছে। নিজে খুঁজে নেয়ার কষ্টটাও করতে হবে না। আপনার মত আরও যারা খুঁজছে তাঁরা এই কষ্টকর কাজটা সেরে রেখেছে। আপনার জন্য ‘লিঙ্ক’ সাজিয়ে রাখা আছে। আপনি শুধু ঠিক করবেন কাকে নগ্ন দেখতে চান। এই ফর্মুলাও এখন অনেকটা পানসে হতে শুরু করেছে। এবার শুরু হচ্ছে ‘ধর্ম’ কিংবা ‘জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে খেলা।

ভারত পাকিস্তানের চিরাচরিত দুশমনি ব্যবহার করে প্রায়ই তাঁরা সিনেমা বানায়। সেখানে দেখানোর চেষ্টা করে একজন আরেকজনের চেয়ে কত শক্তিশালী। যুদ্ধ লাগলে কে জিতবে। কিংবা স্পাই থ্রিলার জাতীয় সিনেমা হলে দেখানো হয়, কিভাবে একজন স্পাই অন্য দেশের তাবৎ ইন্টেলিজেন্স কে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুড়িয়ে নাস্তানাবুদ করছে। অবশেষে একাই সেই শত্রু দেশের চরম ক্ষতি করে অক্ষত ফিরে আসছে। এধরনের ছবি কখনও ব্যবসা সফল হয় কখনও মাঠে মারা যায়। অনেক সময় তাই কাহিনির ওপর ভরসা না থাকা পরিচালক, প্রযোজক সাহায্য নেন ‘বিতর্ক’ ফর্মুলার। ইচ্ছে করেই এমন কিছু ঢোকান যেন কেউ না কেউ আপত্তি জানায়। পত্রিকায় আসে। টিভিতে রিপোর্ট হয়।

সাম্প্রতিক এমনই কিছু বিতর্ক শুনে বা পড়ে ‘গুন্ডে’ সিনেমাটা দেখলাম। অবশ্যই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে। কেবল এর বদৌলতে সিনেমাটির ‘ট্রেলার’ আগেই দেখেছি। ওদের প্রমোশান করার স্টাইল দেখে মনে হয়েছিল ‘ত্রিভুজ প্রেম’ এর সঙ্গে কিছু ‘অ্যাকশান’ মেশানো একটা কক্টেল হবে। এধরনের সিনেমা এতো হয়েছে যে সাধারণতঃ ‘কাহিনী’ এর ট্রিটমেন্ট বা ‘অ্যাকশান’ সিন এ নতুনত্ব না আনতে পারলে দর্শক টানা কঠিন। ফলে, সিনেমাটা আদৌ দেখতাম কি না জানি না। দেখলাম বোধ হয় বিতর্কের জন্যই। এবং এটাও ঠিক, আমার মত দর্শকের সংখ্যা নেহাত কম না। আর এই ধরনের দর্শক তৈরিতে মূল ভুমিকা পালন করেন, এই বিক্ষোভ কারীরা। এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। এধরনের বিতর্কিত কাজ করলে, ‘প্রতিবাদ করা উচিৎ কি না’ কিংবা ‘প্রতিবাদ করলে কিভাবে করা উচিৎ’ ইত্যাদি। তবে উপকার সবচেয়ে বেশি হয় বিতর্ক সৃষ্টিকারীর।

‘স্যাটানিক ভার্সেস’ থেকে শুরু করে যতগুলো বিতর্কিত সৃষ্টি সাফল্যের মুখ দেখেছে তাঁর পেছনে ছিল এই বিক্ষোভকারীরা। ‘প্রতিবাদ’ যতটা না প্রতিবাদ হয় তাঁর চেয়ে বেশি হয়ে ওঠে সাফল্যের সিঁড়ি। ইদানীং তাই একটা সুচিন্তিত চেষ্টা থাকে, কোন না কোন ভাবে বিতর্ক সৃষ্টির। কখনও লেখক, প্রযোজক ইচ্ছে করেই এমন একটা কাজ করেন যেন বিতর্ক সৃষ্টি হয় আবার কখনও কাউকে দ্বায়িত্বটা দেন যেন কোন একটা কথা কে নিয়ে হাঙ্গামা তৈরি করে। বিতর্ক মানেই বিক্ষোভ। বিক্ষোভ মানেই পাবলিসিটি। আর পাবলিসিটি মানেই জিজ্ঞাসা, ঔৎসুক্য। পরিণাম—পণ্যটি হয়ে ওঠে ব্যাবসা সফল।

এখানে সমস্যা হচ্ছে দুটো। বিক্ষোভ করলে যদি ব্যবসা সফল হয়ে যায় তবে তো বিক্ষোভ করে আমরা প্রযোজক কে সাহায্যই করছি। তবে কি বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ করা উচিৎ না? যুক্তি উল্টো দিকেও আছে। আমাদের দেশ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেবে আর আমরা চুপ করে থাকবো? এই বিতর্কের বোধ করি কোন সাদামাটা সমাধান নেই। বিতর্ক বা টক শো র বিষয় হিসেবে বেশ কিছুদিন চলতে পারে, এই যা। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিষয়টা মাঝে মাঝেই ফিরে আসবে। যদি ছোট্ট একটা বিতর্ক উস্কে দিয়ে নিজের পন্য বিক্রি করা যায়, কম বেশি সব ব্যবসায়ীই সেই কাজটা করবেন। বিশেষ করে নিজের পণ্যের ওপর খুব বেশি ভরসা যদি না থাকে। ফলে, ‘গুন্ডে’ র মত তথ্য বিভ্রান্তি করে আরও কিছু সিনেমা তৈরি হওয়া অসম্ভব মনে করি না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কি আমরা প্রযোজক কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবো কি না, তা আমাদেরকেই ভেবে দেখতে হবে।

ইন্টারনেট ঘেঁটে ততটুকু পেলাম, দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ৭০ কোটির ওপরে ব্যবসা করেছে। পরের সপ্তাহে ‘হাইওয়ে’ সিনেমাটা রিলিজ হওয়ায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে বাংলাদেশে তৈরি বিতর্ক যদি প্রযোজক সাহেব ফলাও করে প্রচার করতে পারেন, মনে হয় আবার দর্শক টানতে পারবেন। অন্ততঃ আমার মত উৎসুক দর্শক। ‘দেখি তো কি এমন বলেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে’। এখন আমাদের ওপর নির্ভর করছে, আমরা কতদিন এই কাহিনীকে ‘হেডলাইন’ বানিয়ে রাখবো।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৭

বেলা শেষে বলেছেন: ....there Business also not running without "Muslims"::::!!!

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০১

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: এ হচ্ছে শাঁখের কড়াৎ , দুইদিকেই কাটে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.