![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুক আর ব্লগে বেশ কিছু মোড়লের আমদানী হয়েছে। যেকোনো ব্যাপারেই এদের কাজ হচ্ছে, সীমারেখা টেনে দেয়া। এই কাজটাকে সমর্থন দেয়া মানে আপনি আজকে থেকে আপনি অমুকের দালাল। ‘আমার এই কথার সমর্থন করেন না?’ তাহলে আজকে থেকে আপনি তমুকের দালাল। এরপরে শুরু হবে আপনার কাজ কর্মের বিশ্লেষণ। কবে কি কথা বলেছেন, কার সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব, আপনি কোন কোন পেজ এ ঘোরেন কিংবা লাইক দিয়েছেন। এসবের বিচার বিশ্লেষণ শেষে তিনি বেশ কিছু উপাত্ত হাজির করবেন। এবং ঘোষণা করবেন, তাঁর নিজের সন্দেহ ‘প্রমাণিত’।
ইদানীং এই মোড়ল বাহিনী উৎপাত শুরু করেছেন ‘পাক-ভারত’ ক্রিকেট খেলা নিয়ে। ভারতের সাপোর্টার হওয়া মানে ভারতের দালাল। ভারতের আগ্রাসি মনোভাব, তাঁদের বড়ভাই সুলভ আচার আচরণ, ক্রিকেট দুনিয়ায় তাঁদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, সব কিছুরই আপনি সমর্থক। উল্টোটাও আছে, কেউ আবার ব্যাপারটাকে ভদ্রভাবেও বলেন। ভারতীয় দলকে সমর্থন করা মানে মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদান কে সম্মান দেয়া, ইত্যাদি। পুরো বিশ্লেষণে যে ব্যাপারটা গরহাজির তা হচ্ছে, খেলা। ভারতীয় ক্রিকেট দলকে কেন সাপোর্ট করে তাঁর ব্যাখ্যা দেয়ার অধিকার সেই ব্যক্তির নেই। তাঁর ওপর কিছু রাজনৈতিক তত্ত্ব চাপিয়ে দেয়া হবে। ফলে খেলায় কোনো দলের সমর্থক হলেও আজকাল অনেকেই সেই দলের জয়ে প্রকাশ্যে আনন্দ জাহির করেন না। বা করতে সাহস পান না।
উল্টো দিকটা তো বেজায় ভয়ংকর। পাকিস্তান দলের সাপোর্টার হয়েছেন তো কাহিনী কোনদিকে গড়াবে তাঁর কোন দিক খুঁজে পাবেন না। একাত্তর থেকে শুরু হয়ে হেফাজতে এসে থামবে। মাঝে কিছুক্ষণ গণজাগরণ এর বন্দনা হবে। এরপরে আপনার জন্ম থেকে শুরু করে ভাতৃত্ব, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কোন কিছুকেই ছাড় দেয়া হবে না। ধরেই নেয়া হবে অচিরেই আপনি দেশ ছেড়ে সেখানে পাড়ি জমাতে যাচ্ছেন। একবারও জানতে চাওয়া হবে না, দলটির খেলা কেন পছন্দ? পাকিস্তান দেশটির বর্তমান প্রধান মন্ত্রীর নাম না জানলেও ধরে নেয়া হবে আপনি পাকিস্তানকেই নিজের দেশ বলে মনে করেন। আবার যদি মুক্তিযুদ্ধ হয়, আপনি নির্ঘাত রাজাকার এ নাম লেখাবেন।
সমস্যাটা যে খুব সার্বজনীন, তা কিন্তু না। এই দুই দেশের বাইরে কোন দেশের সাপোর্টার হলে, আপনার দেশপ্রেম, জন্ম কিংবা গন্তব্য নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। শ্রীলঙ্কা দলকে ভালো লাগে? অকাতরে সেটা বলতে পারেন। কোন উচ্চবাচ্য হবে না। ইংল্যান্ড কে সাপোর্ট করলে কেউ প্রশ্ন তুলবে না দুইশত বছর শাসনের। অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা কিংবা জিম্বাবুয়ে কে সাপোর্ট করলেও কোন সমস্যা নেই। নেহাত আমেরিকা আর চীন ক্রিকেট খেলে না। খেললেও সমস্যা ছিল না। ওদের সাপোর্ট করলেও কেউ প্রশ্ন তুলতো না একাত্তরে তাঁদের কি ভুমিকা ছিল।
ফুটবল এই দিক দিয়ে অনেক বেশি নিরাপদ। ব্রাজিল কে সাপোর্ট করলে বড়জোর ধরে নেবে আপনি পেলে র ভক্ত। আর্জেন্টিনা কে করলে ম্যারাডোনার। উল্টোটাও আছে। আর্জেন্টিনার পরাজয়ে আপনি খুশি, মানে আপনি আসলে ব্রাজিল ভক্ত। আর ব্রাজিলকে দুচোখে দেখতে পারেন না মানে আপনার মনের কোনায় ঘর বেঁধেছে আর্জেন্টিনা। কখনই আপনার দেশপ্রেম নিয়ে কেউ টানাটানি করবে না। ইংল্যান্ড কিংবা জার্মানি। ইটালি কিংবা স্পেন। কখনই প্রশ্ন জাগবে না আপনি সাদা চামড়ার প্রতি দুর্বল কি না।
এখানে অবশ্য একটু কিন্তু আছে। ফুটবলে কোন মুসলিম দেশকে সমর্থন করলে, অনেকে ব্যাপারটায় মৌলবাদের গন্ধ পান। তবে এখানে যে কোন পাকিস্তানের সমর্থক খুঁজে পাওয়া যায় না, সেটা অনায়াসেই এসব মোড়ল ভুলে যান। পাকিস্তানের কাছে ফুটবল কিংবা কাবাডিতে হারলে যে কষ্টে কান্না পায় তা নিয়ে কোন বক্তব্য এসব মোড়লদের মনে জাগে না। গত এশিয়া কাপের ফাইনালে দুই রানের পরাজয়ে যে পুরো দেশে শোক নেমে এসেছিল, একথা এদের মনে থাকে না। খেলায় কোন দেশকে সাপোর্ট করা আর সেই দেশের কার্যকলাপকে সমর্থন করা কি এক ব্যাপার? কিংবা বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের খেলায় অন্য দেশকে সাপোর্ট করা আর দুটি অন্য দেশের খেলায় কোন একটি দেশের সাপোর্টার হওয়া যে এক নিক্তিতে পরিমাপযোগ্য?
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব মোড়ল বাহিনীর অনেকেই ক্রিকেট সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান রাখেন না। এদের কাছে সিম্পল ফর্মুলা হচ্ছে, সম্ভাব্য কারন। এরা ভারতের আইপিএল যতটা মনোযোগ দিয়ে দেখেন ততোটা খবর রাখেন না অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ সম্পর্কে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাপোর্টার হওয়ার মুখ্য কারণ ধরে নেন, ‘বাঙ্গালী সত্তা’ কিংবা সাকিব কে দলে রাখা। আবার রেগে ওঠেন, সাকিব কে দলে না নেয়ার কারণে। শুরু হয়ে যায় গালি গালাজ। দলটি মাঠে কেমন খেলছে তা কখনই এদের বিবেচ্য না।
আবেগ থাকবেই। আর সেই আবেগ যে কোন নিয়েম মেনে তৈরি হয় না এই সত্যটা মানতে আমরা অনেকেই নারাজ। সৌরভ গাঙ্গুলি আর রাহুল দ্রাবিড়ের একই সঙ্গে টেস্টে অভিষেক হয়। দুজনের খেলাও দুর্দান্ত। এরপরও এনেকেই রাহুল ভক্ত, অনেকে সৌরভের। পশ্চিম বাঙলা কিংবা কর্ণাটকের মানুষ এলাকার কারণে ভক্ত হবে, স্বাভাবিক। তবে তা কি বাধ্যতামূলক? কর্ণাটকের কেউ যদি সৌরভের ভক্ত হয় তবে কি সে ‘বিশ্বাসঘাতক’? বাঁহাতি ব্যটসম্যান আর ডানহাতি ব্যটসম্যানের খেলায় দুরকমের সৌন্দর্য। একজন ক্রিকেট প্রেমী দুজনেরই ভক্ত হতে পারেন। আর এলাকার কথা যদি বাদ দিই তবে? বাকিরা? বাকীদের কে, কেনো কার ভক্ত হবেন তা কি নিয়মে বাঁধা যাবে? বাধ্য করা যাবে? না কাজটা করা উচিৎ হবে?
সাপোর্ট ব্যাপারটা স্বাভাবিক একটা প্রতিক্রিয়া। কার খেলা, কখন ভালো লাগবে তা কোনভাবেই কেউ বলতে পারবে না। উল্টোটাও ঠিক। কার খেলা অপছন্দ হবে, তা বলবারও কোন উপায় নেই। এসব ব্যাপার কোন নিয়মে ফেলা সম্ভব না। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের সময় ‘জিম্বাবুয়ে সমর্থক গোষ্ঠী’ এই নামে একদল যুবক জিম্বাবুয়ের পতাকা উড়িয়ে ছিল। তাঁর মানে কি তাঁরা নিজেদেরকে জিম্বাবুয়ের নাগরিক মনে করছিল না এদেশকে জিম্বাবুয়ে বানানোর ষড়যন্ত্র করছিল? কারণ আমরা সবাই অনুমান করতে পারছি। জিম্বাবুয়ে ছিল সেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে দুর্বল দল। দুর্বলের প্রতি একটা মমতা বোধ থেকেই এই সমর্থন। আর সমর্থন ছিল দলটির প্রতি, সেই দেশ কিংবা সেই দেশের সরকারের প্রতি না। এভাবেই প্রত্যেকের ভেতরই কিছু না কিছু ব্যাপার কাজ করে, কোন দলকে পছন্দ করার পেছনে। কখনও তা হয় ক্রিকেট কখনও হয় আবেগ। শুধু শুধু এর ভেতরে রাজনীতি, দেশপ্রীতি কিংবা মুক্তিযুদ্ধ টেনে আনা কতটা ঠিক? আর এসব আলোচনা করে ক্রিকেটকেই বা আমরা কতটা উপকৃত করছি?
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০১
নবীউল করিম বলেছেন: খুব সুন্দর বিশ্লেষণ।
আমার মেয়ে পাকিস্তানের পাঁড় ভক্ত! কিন্তু বাংলাদেশ হেরে যাওয়াতে কেঁদেই দিল!বস্তুত এই রকম সবাই।
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: কমবেশি সব দলের সাপোর্টার একই রকম। দেশের প্রশ্নে সবাই বাংলাদেশের পক্ষে, ভালো খারাপ যেমন ই খেলুক।
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: লেখাটি আজকে প্রকাশিত হয়েছে
Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
এম এ কাশেম বলেছেন: খেলার সাথে রাজনীতি জড়ানো উচিৎ না।
যে কোনো দলকে যে কারো সমর্থন করার অধিকার আছে।