নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। সেই ছোট বেলা থেকে। যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। তবে সেই ছোট কালে যখন বাড়িতে থাকতাম, তখন আমাদের একটা কাঁচের গ্লাস ছিলো। বাড়ি থেকে বের হয়ে তার পর থেকে যতবার পানি খেতে গেছি ততবারই গ্লাসটির কথা মনে পড়েছে অমার। বার বার আমায় বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। সেই গ্লাসের গায়ে লেখো ছিলো.
মা নাই গৃহে যার সংসার অরণ্য তার...
দেখিলে মায়ের মুখ মুছে যায় সব দুখ।
সেই সময় থেকেই যতবার পানি খেতে গেছি ততবার এই লেখাটি দেখেছি। আর সব চেয়ে বেশি অনুভব করেছি যখন বাড়ি থেকে পড়তে গেছি হোস্টেলে। তখন খাবারের সময় সামনে মাকেও পায় নি, আর সেই পানির গ্লাসও পায়নি। তবে প্রতিটা সময় মনে করেছি সেই কথাটি। বেশি বেশি মনে পড়েছে ওই বাণী গুলো। মা থেকেও এই হাহাকার আর সংসারে না থাকলেতো অরণ্য থেকেও বেশি কিছু। এই কথাগুলো লেখার একটা উদ্দেশ্য রয়েছে আমার। আসছে সেই মা দিবস।
এই বিশেষ মা দিবসকে সামনে রেখে ফেসবুকের পাতায় পাতায় মা'কে শুভেচ্ছা জানিয়ে হাজার হাজার স্ট্যাটাস দিবে, ম্যাসেজ শেয়ার করবে সবার মাঝে, পেপার-পত্রিকায় বিশেষ সম্পাদকীয় লিখবে, রেডিও-টিভিতে চলবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
কর্পোরেটদের চোখে পানি নিয়ে আসবে সব বিজ্ঞাপনে, সাথে সাথে কম খরচে কিভাবে জননীর মুখে হাসি ফোটানো যায় সেই টিপসও পাওয়া যাবে। এবং ডান হাত হিসেবে মিডিয়াও প্রচার করবে নানা স্পন্সরের মাধ্যমে। এরকমভাবে মা দিবসের নানা বানিজ্যিক দিক চোখে পড়বে।
আবার ধারাবাহিক ভাবে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে মা দিবস শেষ হয়ে যাবে। এইসব ধার করা স্ট্যাটাসের চোখের পানির মোড়কেঢাকা ম্যাসেজ মুছে যাবে। তথাকথিত মায়ের সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানেরাই পরের দিন তাঁদের মোটা কাঁচের চশমা এঁটে মায়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লিখবে। আর ব্যস্ততার দোহায় দিয়ে কাজের লোক দিয়ে মাকে পাঠিয়ে দিবে বৃদ্ধাশ্রমে।
রেডিও-টিভি আবার অন্য ভালবাসার গল্প শুনাবে। কর্পোটেরা অন্য এক আবেগকে পুঁজি করে অন্য কোন চোখে পানি টেনে আনা বিজ্ঞাপন প্রচারে মিডিয়ার হাত ধরে নেমে পড়বে। আমরাও ভাসতে থাকবো সেই ভালোবাসার বন্যায়। আর ভাসিয়ে দিবে আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল সেই মাকেও।
মানুষ হিসেবে হয়ত আমি সবার মতো আধুনিক বা সভ্য হতে পারিনি। তাই হিন্দি সিনেমা স্টাইলে মাকে জড়িয়ে ধরে কখনো "আই লাভ ইউ মাম" বলা হয়নি, বিজ্ঞাপনের মত আহ্লাদী কন্ঠে "সরি মা" কথাটাও বলিনি কখনো। এমন কি মা দিবস উপলক্ষে তাকে কোন দিন দুই টাকা মুল্যের কার্ডও উপহার দেইনি ।
তবু জানি আমার অকৃতজ্ঞতায় মা কখনো রাগ করবে না। আর প্রতিটা সন্ধ্যায় মাকে,, মা বলে হাক দিলেই বলে,বাবা তুই কেমন আছিস ? তুই ফোন করলে আমার সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
সাথে সাথে শত প্রশ্ন মায়ের। বাবা শরীর কেমন আছে, কি খেয়েছিস এই সব সহস্রবার জানতে চাওয়া প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি হবে। ছেলের কল্পিত কষ্টের কথা ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করবে । মাকে ভালবাসার কথা মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন কতুটকু ? সন্তানের জন্য প্রতিটি সেকেন্ড , প্রতিটি মুহুর্তই যে "মা-ময়" হওয়া উচিত। পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় শান্তির সুশীতল আশ্রয় যে আর কোথাও নেই। পৃথিবীর সব মায়েরা ভালো থাকুক, পৃথিবীর সব মায়েরা সন্তানদের নিয়ে সুখে থাকুক। ছেলে জানে মাও মানে, যে মাকে ভালবাসতে কোন দিবস লাগে না বা লাগার কথা না।
©somewhere in net ltd.