নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘুরতে ভালোবাসি। সময়ের অবসরে নিজের ভাবনাকে অক্ষরে প্রকাশ করার চেষ্টা করি।

ধ্রুব বাদল

বাদল

ধ্রুব বাদল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের ক্রান্তিকাল আর অসম্মানের মাত্রা

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

“রাখাইন মেয়ে প্রিনছা খেঁ। টেকনাফে তার আদিবাস। পাহাড়, পানি, অরণ্য আর সৈকত তার বিহার; নিসর্গে তার বেড়ে ওঠা। আজন্মসখী নিসর্গই নিজের রূপে রূপবতী করেছে প্রিনছাকে। ত্বকে তার ভর করেছে তাজা গোলাপের রঙ। এক জোড়া ক্ষুদ্র গোলাকার চোখ আর চ্যাপ্টা নাকটা ছাড়া যেন তার মোহনীয় রূপ অপূর্ণ থাকতো। অবয়বে লক্ষণীয় বিচিত্রা ছাড়াও প্রিনছা লাবণ্যময়ী এক তরুণী। ঠোঁটে লেপ্টে থাকা হাসিটাও কেড়ে নিতে পারেনি ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস।

প্রিনছার বেশ আর রূপ তন্ময় হয়ে দেখছে স্বাধীনতা শত্রুদের বিনাশ করতে আত্মঘাতি দলের সদস্য সাঈদ। চোখ সরাতে পারছে না কিছুতেই। সেদিনই বিজন ছায়ায় সাঈদ প্রিনছার কাছে হৃদয় সমপর্ণ করল। লাস্যময়ী প্রিনছার হাসি হঠ্যাৎ মিলিয়ে গেল। সাঈদের দিকে আর তার হাতিয়ারের দিকে তাকাল বারকয়েক।

রাখাইন মেয়ে তারপর শান্ত স্বরে বর্ণনা করলো তার প্রেম ও যুদ্ধের দর্শন। বোকা সাঈদ হতবাক হয়ে শুনছে। ‘এখন তুমি যুদ্ধে যাচ্ছো। এই অস্ত্রটির যত্ন নিও। যতদিন যুদ্ধ চলবে ততদিন এই অস্ত্রটিই তোমার প্রেয়সী, এই অস্ত্রটিই তোমার প্রিনছা। আমি তোমার কথা বুঝেছি। যুদ্ধ শেষ হোক , আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।’ সাঈদ কিছুই বললো না। বলারও কিছু ছিলো না। সে শুধু তার মুষ্টিবদ্ধ হাতিয়ারটাকে আরো শক্ত ক’রে চেপে ধরল।

এক পর্যায়ে প্রিনছাকে ভোগের সামগ্রী হিসেবে পেয়ে যায় পাকিস্তানি পশুরা। দীর্ঘদিন থাকার ফলে তাদের বিশ্বস্ত সেবক হয়ে ওঠে প্রিনছা। অন্তঃসত্ত্বা বলে ডাক্তারের কাছে যেয়ে গোপনে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলে নরপশুদের।

হঠাৎ অনেক দিন পরে দেখা হয় সাঈদের সাথে। শক্ত চোয়ালে উচ্চকণ্ঠে স্বগতোক্তি করতে লাগলো। আমি কি কোন খারাপ মেয়ে? আমি কি কোন খারাপ কাজ করেছি? আমিতো যুদ্ধ করেছি, পাকিস্তানি শত্রু মেরেছি। “এখন বলো আমার এ দেহটা সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার নয় শত্রু হননে? এ হাতিয়ার ব্যবহৃত হয়েছে লক্ষ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য, মুক্তিযুদ্ধের জন্য।

জানো, আমার এ দেহ রুপ-লাবণ্য লালিমার জন্য আমি গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধে এমন হাতিয়ার দেখেছো কি? তোমার হাতের ঐ অস্ত্রটি এবং আমার এ দেহ-অস্ত্র কি একই অস্ত্র নয়? এমন এক মুক্তিযুদ্ধ না এলে কী করে জানতাম, আমি একজন প্রিনছা-একটি সুতীক্ষ্ণ আবেগময় হাতিয়ার?

মুক্তিযুদ্ধের কোন বৈষয়িক বিনিময় ছাড়াই স্বামী সন্তানদের নিয়ে সুখে আছে প্রিনছা। এন্তার বিলাসসামগ্রী নিয়ে সুখে নেই শুধু আমরাই। প্রিনছাদের জ্বালানো আকাশপ্রদীপ আমরা চোখ মেলেও দেখছি কেই? হা দেশ!”

-মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা বইতে এমন একটা বর্ণনা আমরা দেখতে পাই। এমন অসংখ্য নাম না জানা নিবেদিত প্রাণের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, জীবন , যৌবন, কলম ছাড়াও ছোট্ট শিশুর ভুল পথ দেখানোর মাধ্যমেই আমরা আমাদের অর্জিত হয়েছে বিজয়। যার ফলশ্রুতে বাংলার আকাশে স্বাধীন দেশের যুদ্ধ বিমান লাল সবুজের রং ছড়িয়ে সামরিক স্যালুট দিয়ে উড়ে যায়।

সময়ের ক্রান্তিকালে আমরা কেন বিতর্কিত করে তুলছি তাদের গৌরব, সম্মান আর বীরত্বকে? অসম্মানেপূর্ণ বাক্য বাণে জর্জরিত করে নিজেদের মগজকে। হয় তাদের যথাযথ সম্মান সমুন্নত রাখার ব্যবস্থা করা হোক, নতুবা এমন ব্যবস্থা করা হোক যাতে তাদের নিয়ে কোন তীর্জক বাক্যর মতো কোনো নেতিবাচক চিন্তা না আসে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:০৬

আবু আফিয়া বলেছেন: বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: জনযুদ্ধের গনযোদ্ধা বইটি পড়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.