নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জলদস্যুর দস্যিপণা

স্মৃতিচারণ ও এলোমেলো ভাবনা। বেশিরভাগই জগাখিচুড়ি।

জলদস্যু

আটপৌরে বাংলাদেশি।
নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসি।
চিন্তা-ভাবনায় থাকে বাংলাদেশ
পছন্দ করি রিকশায় চড়তে, আড্ডা দিতে, ঢাকার জীবনে অভ্যস্ত
অস্বস্তিতে থাকি সবসময়, অপছন্দ ভিনদেশী কালচার।
মাঝে মাঝে নিজেকে মনে হয় জীবনযুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক
অর্থহীন এই ক্ষুদ্র জীবনে তাই হারিয়ে খুঁজি নিজেকে........

জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ধর্মবেলা-৩ (আমার দেখা তাবলিগ)

১৭ ই মে, ২০০৭ ভোর ৫:২৬

লেখায় সাময়িক বিরতির জন্য দুঃখিত। পেটের ধান্ধায় মাঝে মাঝে ছেদ পড়ে যায়। কিছু করার থাকে না।

"হুজুরের পাল্লায় পড়ে তবলিগে গিয়েছি"- এ কথা যদি ঘুনাক্ষরে আমার অভিভাবকগণ জানতে পারতেন, তাহলে অভিযুক্ত হুজুর আসমান-জমিন কোথাও পলায়ন করতে পারবেন না। আমার পিতা-মাতা তাকে বেহেশত-দোযখ অবধি বন্দুক হাতে তাড়া করে হুজুরের মাথার টুপি গুলি করে উড়িয়ে দিতেন। উল্লেখ্য আমার জনৈক ঘনিষ্ঠ বন্ধু হঠাৎ মৌলভী হয়ে যাওয়ায় আমার অভিভাবকগণ তার সাথে মেলামেশা করার ব্যাপারে কিছু নিয়ম-নীতিমালা পেশ করেছিলেন। তবে তা ধোপে টিকে নি।



যাই হোক বাসায় জানালাম হোস্টেলে থাকব আর হোস্টেলের ছেলেপিলেকে জানালাম তবলিগে যাব। তাদের আরও বলে দিলাম আমার তবলিগ ডিউরেশন হবে একদিন। যদি পালাতে না পারি আর ২ দিন পরও আমার খোঁজ-খবর না মিলে তবে আমাকে যেন যেকোন মূল্যে তবলিগ নামক হাজতখানা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। এর পিছনে একটা মূল্যবান কারণ ছিল। আমার টার্গেট ছিল একরাত থাকা, কিন্তু হুজুরকে যতবার বলি হুজুর ততবার বলেন তিনরাত না থাকলে নাকি হয় না। আমাকে উনি খালি বলেন "আসেন ভাই আমরা তিনদিনের নিয়্যাত করি"। আর আমিও নিষ্ঠার সাথে বলি "না ভাই, আপাতত ১দিন করি, বাকি ২ দিন বেঁচে থাকলে করা যাবে"।



নির্ধারিত দিনে বাদ মাগরিব রওনা হবার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত বাদ এশা রওনা হতে হলো। এখানে প্রথম মূল্যবান শিক্ষা পেলাম, তা হলো তাবলিগেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে। মজার ব্যাপার হলো মসজিদ থেকে রওনা দেয়ার পর সবাই দেখি এক লাইনে হাঁটে। আমি যত পাশে পাশে হাঁটার চেষ্টা করি, সবাই তত জোরে জোরে হেঁটে আমাকে পিছনে ফেলে দেয়। বাসে উঠার পর দেখি বাসের কন্ডাকটররাও মধুর ব্যবহার করা শুরু করল। ভাড়া নিয়ে কচলা-কচলি করল না। এরকম অনেক মজার অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন গন্তব্যে পৌঁছালাম, তখন দেখি মসজিদে আমাদের বাকি "সাথী"রা (এই টার্মটা তাবলিগীরা ব্যবহার করেন, কোন এক অজানা কারনে আমার খুব মজা লাগে) ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ২/১ জন উঠে আমাদের খানাপিনার ব্যবস্হা করলেন। একটা জিনিস স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, তাবলিগীদের রান্নার হাতটা চমৎকার। একথা শুধু আমি নই, যতজন ইরেগুলার মানুষ তাবলীগ করেছেন, তারা সবাই একবাক্যে ব্যাপারটা স্বীকার করেছেন।



পরদিন কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামায পড়লাম। নামাযের পর গাস্তে যাওয়া হয়। জনৈক মুসল্লি এসে বললেন যে তার গুনধর ছেলে নামায-কালাম কম করে, তাকে যেন আমরা একটু সবক দেই। এই "সবক দেয়া"র তাবলীগি টার্ম হলো "গাস্তে যাওয়া"। ফজরের নামাযের পর ভদ্রলোকের বাসায় আমরা রওনা হলাম। আমার সাথী আমার আরেক সহপাঠী। এই ব্যাটার কোডনেম ছিল "ডিস্কো হুজুর"। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ডিস্কো তাবলিগে নাম লিখালেও ওর অনেক সমস্যা ছিল। আমি নিজে হলের নেটওয়ার্কে শেয়ার দেয়া নগ্ন ও স্বল্পবসনা হলিউড সেলিব্রিটিদের ছবি ও মুভিক্লিপ দেখা অবস্হায় ব্যাটাকে হাতেনাতে ধরেছিলাম। যাই হোক আমি ও ডিস্কো গিয়ে ভদ্রলোকের উঠতিবয়সী ছেলেটাকে বেশ কিছুক্ষন মগজ ধোলাই দিলাম। আমরা না বলে ডিস্কো বলা সমুচিত হবে কারন আমি মোটামুটি দর্শকের ভূমিকা পালনা করে হাই তুলছিলাম। আর ডিস্কোর থিওরিটিক্যাল প্যাঁচাল আমার ঘুমের টনিক হিসাবে ভালোই কাজ করছিল।



"সবক দেয়া" শেষে মসজিদে এসে দেখলাম সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি বেলা ১০টায় ঘুমানোর হেতু বুঝতে পারলাম না। তারা আমাকে জানালো যোহরের নামাযের পরে নাকি খুব ব্যস্ত শিডিউল, তাই এখন বিশ্রাম করাটাই শ্রেয়। দেখলাম ১০ মিনিটের মধ্যে মসজিদে আমি ছাড়া একটা প্রাণীও জেগে নেই। আস্তে করে ব্যাগ গুছিয়ে ঐ মুহুর্তে ভেগে আসার সিদ্ধান্ত নিই।



(পরের পর্ব---জীবন চিল্লা)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০০৭ ভোর ৫:৪২

অলৌকিক হাসান বলেছেন: বন্ধুদের মুখে শুনে আমি কখনো তাবলিগে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। এলাকায় মাঝে মাঝে পাঞ্জাবিওয়ালা কিছু লোকজন সবক অর্থাত গাস্তে দিতে আসত। দেখেই ছুটে পালাতাম। আর কোনোদিন যদি মজা করার ইচ্ছা থাকত তাহলে শার্টের সবগুলো বোতাম খুলে দাঁড়িয়ে থাকতাম। ওদের অভ্যাস ছিল গাস্তে দিতে দিতে বোতাম আটকে দিত। আমরাও বোতাম আটকানো শেষ হলে গুডবাই বলে চলে আসতাম। ভেরি ফানি।

২| ১৭ ই মে, ২০০৭ সকাল ৭:৪৭

কেমিকেল আলী বলেছেন: হাসান ভাই জটিল একটা পয়েন্ট ধরেছেন।

৩| ১৭ ই মে, ২০০৭ সকাল ৮:১৭

অনুভূতি শূন্য কেউ একজন বলেছেন: হাসতেছি @ অলৌকিক হাসান..

৪| ১৭ ই মে, ২০০৭ সকাল ৯:০৮

দ্রোহী বলেছেন: বোতাম ঘাঁটাঘাটি করা তাবলীগের পোলাপাইনের ইউনিভার্সাল স্বভাব।

ইউনিভার্সিটিতে আমাদের এক সিনিয়র ভাই ছিলেন- নাম রাসেল। একদিন শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে তাকে তার পরিচিত সহপাঠী কিছু তাবলীগের পোলাপাইন পাকড়াও করলো।

তারপর হাত চেপে ধরে পিষতে লাগলো আর তাকে বুঝাতে লাগলো, "মনের জমি চাষ না করলে জমিতে আগাছা জন্মে। জমি অনুর্বর হয়ে যায়- টাইপ কথাবার্তা"


রাসেল ভাই কিছুক্ষন পর বললেন, "হুজুর হাত ডইলেন না। সেক্স উঠে যায়।"
*********

৫| ১৭ ই মে, ২০০৭ সকাল ১০:৪৪

জলদস্যু বলেছেন: দ্রোহী,
কঠিন বলেছিলেন রাসেল ভাই। উনাকে আমার সালাম।

৬| ১৭ ই মে, ২০০৭ সকাল ১১:৪৪

রবিনহুড বলেছেন: হুমম... খুবই ছোট ছোট ব্যাপার গুলো বড় করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে...

"কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামায পড়লাম।" বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন? ফজরের নামাজ কি বেলা ১০টায় পড়তে চান? একজন মুসলমান হিসাবে আপনি তো জানেন কখন নামাজের ওয়াক্ত হয়। এখন আপনি কি আপনার সুবিধা মত ওয়াক্ত তৈরি করতে চান? একটা কথা মনে রাখবেন যে ধর্মের মাঝে আপনি বসবাস করেন তেকে আবজ্ঞা করে কথা বলার কোন মানে নাই। এটা এক ধরনের নিজেকেই অস্বীকার করার মত ব্যাপার। ভাল না লাগলে তো ধর্ম ত্যাগ করার সুযোগ আছে, তাই না? ভাল লাগেনা ভাব নিয়ে নানা রকম অবজ্ঞাপূর্ণ কথা বলবেন আবার নিজেকে সেই ধর্মের অনুসারী বলে পরিচয় দিবেন এটা তো ঠিক না। দ্বৈত সত্বার দরকার কি? দ্বৈত সত্বা তো ভাল মানুষের পরিচয় বহন করে না।

ভাই ক্যডেট কলেজের হোষ্টেল গুলাতে কি রকম ব্যাবহার করা হয় তার সাথে কি তুলনা করে দেখেছেন?

আশাকরি আগামীতে সেই রকম কিছু নিয়ে লিখবেন.... কারন আপনি তো আসঙ্গতি পূর্ন কিছু দেখতে পেয়েছেন বলই পোষ্টটা দিলেন... দেখি আপনার চেখে রঙ্গীন চশমা আছে কি, নাই?

৭| ১৭ ই মে, ২০০৭ সকাল ১১:৫৪

কৌশিক বলেছেন: কলেমা
নামাজ
এলেম ও জিকির
একরামুল মুসলেমিন
ছহি নিয়ত
তাবলীগ

৮| ১৭ ই মে, ২০০৭ দুপুর ১:২৮

জলদস্যু বলেছেন: রবিনহুড,
কোন কিছুকে দেখার জন্য বড় বড় জিনিসগুলো দেখার প্রয়োজন নেই। ছোট জিনিসগুলোই মূলত: একটা ব্যক্তি বা বস্তুর বৈশিষ্ট্য নিরুপণে সাহায্য করে।

"কাকডাকা ভোরে উঠলাম"- একথা বলে আমি নামাযের সময় বদলের কথা বলিনি। আপনি খামাখা বিষয়টি অন্যদিকে নিয়ে গেছেন। অনেকটা গরু রচনা পড়ে এসে নদী রচনা লেখার মত।আর আমি কত বেলায় ঘুম থেকে উঠি তা আমার রুমমেট ও পরিবার ভাল জানে।

আর ধর্মের অনেক কিছুই আমার ভালো লাগে না। তাতে ধর্ম ছাড়ার কোন প্রশ্ন আসে না। ভালো লাগে না বলে ছেড়ে দেয়ার মত ফালতু মানসিকতা নিয়ে আমি বাস করি না। আমার মনে হয় ধর্মের যেসব জিনিস আমাদের ভালো লাগে না সেসব নিয়েই বেশি ভাবা উচিত। তাহলে ধর্মের উপর ভক্তি আসলেও আসতে পারেন।

আর যে দ্বৈতসত্ত্বার কথা বললেন তাতে আমার আর কিছু বলার নেই। জলদস্যু বা রবিনহুড কি আমাদের দ্বৈতসত্তার পরিচয় বহন করে না?

ক্যাডেট কলেজে কি হয় তা আমি জানি না। আমি নিজে কোনদিন ক্যাডেটে পড়িনি। তাই কখনও আগ্রহ জন্মে নি ঐ জীবন সম্পর্কে জানতে।

কে আমার লেখা পড়ল কি না পড়ল, হিট বাড়ল কি কমলো তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। ব্লগিং এর মূল কনসেপ্ট এসেছে ওয়েব ও লগ থেকে। এটা আমার ডায়েরির মত। নিজের চিন্তা-ভাবনা টুকে রাখি।অসংগতি আপেক্ষিক। তাই ওটা নিয়েও আমি মাথা ঘামাই না।

বলে রাখা ভালো রঙিন চশমা দিয়ে চারপাশ দেখার মত প্যাথেটিক মানুষ আমি নই। নিজের চোখে যা দেখি ও নিজের কানে যা শুনি তা বিশ্বাস করার চেষ্টা করি।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এখানে আমি কারও এক্সপেক্টেশন মাথায় রেখে লিখি না।

৯| ১৭ ই মে, ২০০৭ দুপুর ১:৩৫

আরিফ জেবতিক বলেছেন: রবিন হুডের কমেন্ট পড়ার পরে চিন্তা করে দেখলাম এই দেশে রম্য সাহিত্যের আকাল যারা বলে তারা আসলেই বিরাট ছাগল।

১০| ২১ শে মে, ২০০৭ সকাল ১০:২২

সুমন চৌধুরী বলেছেন: এইরকম একটা সিরিজ বন্ধ করবেন!

১১| ২১ শে মে, ২০০৭ সকাল ১০:৩২

জলদস্যু বলেছেন: সুমন চৌধুরী,
উপায় নেই। দুঃখিত।

১২| ০১ লা এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১১:০০

কানা বাবা বলেছেন:
কয়টাস্ ইন্টারাপ্টাস্...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.