![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়তাম। একদিন দুপুরে সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার কোর্ট মসজিদ সংলগ্ন পুকুরে গোসল
শেষে আমার কাছের এক বন্ধুর সাথে প্রতিদিনকার মত গল্প করছিলাম। বন্ধুর নাম ছিল সুজা উদ্দীন। সুজা সেদিন
মাঝে বলে উঠল, জানো- আজ মজার একটা স্বপ্ন দেখেছি। ওর কথা আর কাজগুলো বেশ কৌতুহলোদ্দীপক ছিল।
তাই মজার স্বপ্ন জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলাম। ও বলতে শুরু করল...
আজ কতকদিন ভাবছি কিভাবে বজ্রপাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। জানি এটা বেশ কঠিন কাজ, তবে নবায়নযোগ্য শক্তির
একটা সমূহ সম্ভাবনার উৎস হতে পারে এটি। যদিও প্রাকটিক্যাল জ্ঞান ছাড়া এটার প্রয়োগ সম্ভবপর হবে না। তবে আজ রাতে হঠাৎ
এটার উপরে স্বপ্ন দেখে ভাল লাগছে। দেখলাম- প্রকান্ড একটা জায়গা জুড়ে নানান ধাতব অংশ নিয়ে সংরক্ষিত এলাকা নির্ধারণ
করা হয়েছে, পাওয়ার স্টেশন যেমন হয় আর কি...
ওর কথাগুলো গিলছিলাম যেন। ভাবনাটা সেদিনই আমার মাথায় এসেছিল যে আসলে এভাবে বিদ্যুতের সংস্থান করা যায়। কিন্তু
প্রয়োগের ব্যাপ্তি যে কেমন হতে পারে সেটা তখন ভাবতে পারিনি।
যাহোক, বজ্রপাত কেন হয়, কিভাবে হয় সেটা নিয়ে বিস্তারিত বললে লেখাটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বড় হয়ে যাবে। শুধু সামান্য ব্যাখ্যা দিব এ ব্যাপারে যা এই লেখার সাথে আনুষঙ্গিক। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই তাপমাত্রা কমতে থাকে। বিশাল সমুদ্র হতে উন্থিত জলীয় বাষ্প যখন উপরে উঠতে থাকে তখন এগুলো ঘনীভূত হয়ে জলীয় কণায় পরিণত হয়। নির্দিষ্ট আকারের (৫ মি. মি.)
কণায় রুপান্তরিত হলে কণাগুলো আলাদা হয়ে যায় এবং একসময় এদের মধ্যে ঘর্ষণের ফলে স্থির চার্জ সৃষ্টি হয়। পরিমাণে বেশি
হলে মেঘের কণার বিপরীত চার্জ ভূ-পৃষ্ঠে আবিষ্ট হয় এবং পৃথিবীর আকর্ষণে নেমে আসে। এই ঘটনাকে আমরা সচরাচর বজ্রপাত
বলি। বজ্রপাতের চার্জ ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় ধনাত্মক আধানের বজ্রপাত বেশি মারাত্মক,
ধ্বংসাত্মক।
উৎসঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ।
বজ্রপাত হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে এর প্রয়োগ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা দরকার। সামগ্রিকভাবে বজ্রপাতের সময়ের
ব্যাপ্তি, বজ্রপাতের প্রাপ্যতা, এর থেকে প্রাপ্ত শক্তির ব্যাপকতা, এত বিপুল পরিমাণ শক্তির তাৎক্ষণিক রুপান্তর প্রভৃতি নিয়ে ব্যাপক
গবেষণার প্রয়োজন। আসুন জেনে নিই বজ্রপাতের খুটিনাটি অথচ মজার বিষয়গুলো যা আমরা অনেকেই জানিনা।
১। একটা গড়পড়তা বিদ্যুৎ চমকানোর সময় ০.২ সেকেন্ডের মত। তবে ২০১২ সালে সর্বোচ্চ দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ চমকানোর রেকর্ড
ছিল প্রায় ৭.৭৪ সেকেন্ড। এটা সহজেই অনুমেয় যে, সামান্য সময়ের জন্য বিদ্যুৎ চমকানোর আলো আমাদের চোখে সরাসরি
আসলে চোখ ঝলসে যাবার মত হয় সেখানে ৭.৭৪ সেকেন্ডের বিদ্যুৎ চমকানোর মত লম্বা সময়ে কি অবস্থা হয় সেটা ভাবনার
বিষয়।
২। বজ্রসংঘটিত হবার স্থানের তাপমাত্রা প্রায় ৩০,০০০ কেলভিনের মত যা সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ৫ গুণ।
৩। প্রতি বজ্রপাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন হয় যা প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার লিটার মিথেন গ্যাস পোড়ালে পাওয়া যায়।
৪। সাধারণ বজ্রপাতের ফলে প্রায় ১,০০,০০০ অ্যাম্পিয়ার প্রবাহ পাওয়া যায়।
৫। প্রতি বজ্রপাতে প্রায়শই ১০০ মিলিয়ন ভোল্ট বিভব পাওয়া যায় যা দিয়ে ১টা ৬০ ওয়াটের বাল্ব একটানা ৬ মাস জ্বলতে এবং
ভুল করে দরজা খুলে রাখা একটা ফ্রিজ সারাদিন চালু রাখা সম্ভব।
৬। এত বিপুল পরিমাণ শক্তি মাত্র ১ মিলি সেকেন্ড অর্থ্যাৎ সেকেন্ডের ১০০০ ভাগের এক ভাগ অথবা ১ মাইক্রো সেকেন্ড অর্থ্যাৎ
সেকেন্ডের ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময়েই মুক্ত হয়।
৭। একটা নিয়মিত বজ্রপাতের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৩-৫ কি, মি, ।
৮। মাত্র ১ মিলি সেকেন্ড অথবা ১ মাইক্রো সেকেন্ড সময়েই বজ্রপাত বালুকে বাষ্পে রুপান্তরিত করতে পারে। এসময়ে বালু
ফালগুরাইট নামক এক প্রকার শিলায় রুপান্তরিত হয়ে পড়ে। Fulgur একটি Latin শব্দ যার অর্থ বজ্রপাত আর এই Fulgur
শব্দ থেকেই Fulgurite শব্দের উৎপত্তি। মোটামুটি ১৬৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বালু গলে যায়। অর্থ্যাৎ অতি অল্প সময়ে
অধিক তাপমাত্রায় বালু গলে গিয়ে একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে এই ফালগুরাইট নামক শিলা তৈরি করে।
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
৯। মোটামুটিভাবে সারাবছর ১.৪ বিলিয়ন বজ্রপাত সংঘটিত হয় কিন্তু এর ২৫% মাত্র ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত হানে।
১০। একটা বড়সড় বজ্রপাতের মোট শক্তি একটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি।
উপরে উল্লিখিত তথ্য থেকে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে এত বিপুল পরিমাণ শক্তিকে খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা ব্যবহার যোগ্য
বিদ্যুতে রুপান্তরিত করতে পারব কি না? আসলেই কি সম্ভব বজ্রপাত হতে আমাদের সচরাচর ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুতের রুপান্তরণ?
আসুন দেখে নিই কাঠামো আর অবকাঠামোগত দিক দিয়ে বজ্রপাতকে বিদ্যুতে রুপান্তরের সম্ভাব্য কৌশল এবং প্রতিবন্ধকতাসমূহ...
১। বজ্রপাতের সময় বিপুল পরিমাণ শক্তি খুব কম সময়ে নির্গত হয় এজন্য একে ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুতে রপান্তর করা বেশ কঠিন।
২। বজ্রপাত অপ্রত্যাশিত এবং এলোমেলোভাবে আঘাত হানে। অর্থ্যাৎ বজ্রপাত কখন কোথায় আঘাত হানবে সেটা বলা কঠিন।
৩। এছাড়া সারাবছর অথবা প্রয়োজনমত বজ্রপাত পাওয়া যায় না। National Oceanic and Atmospheric Administration এর মতে, বজ্রপাত পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতি সেকেন্ডে ৪৪ বার আঘাত করে এবং বেশিরভাগই হ্রদের ক্রান্তীয় এবং দূরবর্তী পাহাড়ীয় অঞ্চলে ঘটে থাকে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রীয়ভাবে অত্যাধুনিক শক্তি রুপান্তর এবং স্টোরেজ সুবিধা নির্মাণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। এমনকি জনবহুল এলাকায় শক্তি বিতরণও বড় বেশি অবজেক্টিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ যোগ করবে।
৪। বজ্রপাত খুব দ্রুতই চার্জ গঠন করে।
৫। অতি ক্ষুদ্র সময়ে প্রকান্ড বিস্ফোরণে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ এই শক্তি নিমিষেই ধারণ করা সহজ নয়।
৬। প্রয়োজনানুযায়ী এই শক্তিকে নিম্ন ভোল্টেজের বিদ্যুতে রুপান্তরিত করে সঞ্চয় করতে হলে অবিশ্বাস্য রকমের প্রকান্ড ব্যাটারি
অথবা ক্যাপাসিটর দরকার যা তাৎক্ষণিকভাবে আঘাত হানা বজ্রপাতকে চার্জ আকারে সঞ্চয় করতে পারবে এবং চাহিদা মত
সঞ্চিত শক্তিকে ধীরেসুস্থে সরবরাহ করতে পারবে।
৭। তাছাড়া একটা বড় ধরণের বজ্রপাতে যেন পুরো সিস্টেম উবে না যায় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
৮। এতসব জটিল অথচ বিপুল পরিমাণ শক্তিকে ধারণ করার মত যন্ত্রপাতি বানানো যেমন বেশ কঠিন তেমনি অপ্রতুল বটে।
৯। একটা খসড়া হিসেবে দেখা গেছে যে, বজ্রপাত থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক খরচ ৯২
ট্রিলিয়ন ইউরোর মত।
১০। সরঞ্জামগুলো একটা নিয়মিত ভিত্তিতে ধ্বংস ও হতে পারে।
১১। এমনকি বজ্রপাতের দিক নির্দেশ করা মারাত্মকভাবে কঠিন। তবে আইফেল টাওয়ারের মত সুউচ্চ ধাতব টাওয়ার তৈরি করে
আমরা কিছুটা বজ্রপাতকে আকৃষ্ট করতে পারি। সেজন্য প্রতি ২ কোটি বর্গ মি. এলাকা জুড়ে এমন একটা সুউচ্চ ধাতব টাওয়ার
প্রয়োজন হবে।
১২। একটি বজ্রপাতে নিহিত শক্তি ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত হানার সময় ছিটকে পড়ে। সুতরাং বজ্রের খুব সামান্য অংশ আমরা ধারণ
করতে পারব।
১৩। বজ্রপাতকে শক্তির উৎস হিসেবে ধরা এবং সঞ্চয় করে রাখার ফিজিক্সটা আসলেই বেশ জটিল। অন্ততপক্ষে এই মূহুর্তে পুরো
আইডিয়াটা সম্ভবপর করা নাও হতে পারে।
১৪। ২০০৯ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায় পৃথিবীতে সেই বছর ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ২০,২৭৯,৬৪০,০০০,০০০
কিলোওয়াট যা পৃথিবীতে আঘাত হানা সব বজ্রপাত হতে আহরিত বিদ্যুতের ৪০ গুণ। অর্থ্যাৎ সারাবছর যে পরিমাণ বিদ্যুত আমরা
বজ্রপাত হতে পেতে পারি তা দিয়ে সারাবিশ্বে মাত্র ৯ দিন ব্যবহার করা যাবে।
Alternative Energy Holdings নামে একটি কোম্পানি ২০০৭ সালে এই প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। এই কোম্পানির
সিইওর ভাষ্য মতে- ’’স্পষ্টত এটাকে আমরা এই মূহুর্তে কাজে পরিণত করতে পারছি না, এটা কোন কালো জাদু নয় তবে এটা
সত্য যে এটাই গণিত এবং বিজ্ঞান, সুতরাং এটা একসময় সম্ভব হতে পারে।’’
যেহেতু দিনকেদিন অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এবং বিজ্ঞানীগণ নতুন নতুন অথচ নবায়নযোগ্য শক্তির
সন্ধান অবিরতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সেহেতু অদূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে বজ্রপাতের বিপুল শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরের
কৌশল আবিষ্কার হওয়াটা বিস্ময়ের কারণ থাকবে না। আমরা তো বিস্ময়কর সব আবিষ্কারের সুফল ভোগ করে চলেছি তাই
বজ্রপাত হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চৌকস সব ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানীদের দ্বারা অভূতপূর্ব আবিষ্কার আমরা একদিন নিশ্চয়ই দেখব।
সূত্রঃ ১। Click This Link
২| Click This Link
৩| Click This Link
৪| Click This Link
৫| Click This Link
৬| Click This Link
৭| https://en.wikipedia.org/wiki/Fulgurite
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০২
দুখোমিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ ভাই। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০০
কালীদাস বলেছেন: এখনও কেউ করেনি, টেকনোলজি আরও এডভান্স হলে হয়ত পারা যাবে। শুধু রাজশাহী বিভাগে পড়া ঠাডা থেকেই পুরা এশিয়ার বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়া সম্ভব
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০৫
দুখোমিয়া বলেছেন: হ্যা প্রযুক্তির অগ্রগতি যেভাবে হচ্ছে তাতে একদিন সম্ভব হতে পারে। ধন্যবাদ দাদা। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: প্রিয় তালিকায়
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০৬
দুখোমিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: প্রিয় তালিকায়
৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: চেষ্টা করলে সব সম্ভব।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০৭
দুখোমিয়া বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ নুর ভাই।
৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১২
রিফাত হোসেন বলেছেন: কৃত্তিম বজ্রপাত যদি তৈরী সম্ভব হয় তাহলে একটু সুযোগ হলেও হতে পারে।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০৯
দুখোমিয়া বলেছেন: হুম। সেটাই দেখার অপেক্ষায়। ধন্যবাদ রিফাত ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫৩
আহমেদ জী এস বলেছেন: দুখোমিয়া ,
ভালো পোস্ট ।
যারা জানতে আগ্রহী তারা উপকৃত হবেন ।