নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুরন্তব্লগ

দুরন্ত বিপ্লবের সামাজিক যোগাযোগ উপায়

দুরন্ত বিপ্লব

I do not need to pretend that i am anyone other than myself.

দুরন্ত বিপ্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষি-১০: ঢেঁড়স চাষাবাদ

০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:১৬





ঢেঁড়স বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান গ্রীষ্মকালীন সবজি। দেশের সব অঞ্চলের লোকের কাছেই এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমাদের দেশে ঢেঁড়স মূলত ভাজি, ভর্তা ও তরকারির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।



ঢেঁড়সে প্রতি ১০০ গ্রামে ভক্ষণযোগ্য অংশে আমিষ (১.৮ গ্রাম) ভিটামিন-সি (১৮ মিলিগ্রাম) খনিজ পদার্থ বিশেষ করে ক্যালশিয়াম (৯০ মিলিগ্রাম), লোহা (১ মিলিগ্রাম) ও আয়োডিন রয়েছে।



জলবায়ু ও মাটি

ঢেঁড়সের জন্য অপেক্ষাকৃত উচ্চতাপমাত্রা প্রয়োজন। শুষ্ক ও আর্দ্র উভয় অবস্থায় ঢেঁড়স জন্মানো যায়। সাধারণত খরিফ মৌসুমেই এর চাষ হয়ে থাকে। দো-আঁশ মাটি ঢেঁড়সের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। প্রচুর জৈবসার প্রয়োগ করতে পারলে বেলে ধরনের মাটিতেও এর চাষ করা যায়। মাটি সুনিষ্কাশিত হওয়া প্রয়োজন।



জাত ও বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ১৯৯৬ সনে হলুদ শিরা রোগ প্রতিরোধী বারি ঢেঁড়স -১ অবমুক্ত করে। বারি ঢেঁড়স-১ এর গাছ অবিরত, খাড়া, প্রধান কাণ্ড থেকে ২-৩টি শাখা বের হয়। ফল সবুজ, প্রস্থচ্ছেদে পাঁচকোণী, দৈর্ঘ্য ১৪-১৮ সেমি.। জাতটি বাংলাদেশের বাইরেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।



বীজ বপনের সময় ও পরিমাণ

বাংলাদেশে সাধারত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ঢেঁড়স লাগানো হয়। তবে বছরের অন্যান্য সময়ও সীমিতভাবে এর চাষ হয়ে থাকে। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ৪-৫ কেজি (১২-২০ গ্রাম/শতাংশ) বীজের প্রয়োজন হয়।



জমি নির্বাচন ও তৈরি

সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ উঁচু জমি নির্বাচন করে ৫-৬ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। এরপর মাঠে সরাসরি বীজ বপনের জন্য এক মিটার প্রস্থ মিড়ি বা বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুটি মিড়ির মাঝখানে ৩০ সেমি. প্রস্থ পিলি বা নালা রাখতে হবে। মিড়ি সাধারণত ১৫-২০ সেমি. উঁচু হবে।



বীজ বপনের পদ্ধতি ও দূরত্ব

আগাম ফসলের জন্য বীজ ঘন করে বপন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারি ৪৫ সেমি. এবং সারিতে ৩০ সেমি. পর পর লাইনে ৩০ সেমি. অন্তর বীজ বপন করা হয়। সঠিক মৌসুম ফসলের জন্য অর্থাৎ বৈশাখ মাস থেকে (১৫ এপ্রিলের পর) এক মিটার প্রস্থ বেডে ৬০ী৪০ সেমি. দূরত্বে দুই সারিতে বীজ বপন করতে হবে। বীজ মাটির ২-৩ সেমি. গভীরে বুনতে হয়। এক সাথে ২টি বীজ বপন করা ভালো। বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। বপনের পর প্রয়োজনীয় পানি সেচ আবশ্যক। চারা গজানোর ৭ দিন পর সুস্থ সবল একটি গাছ যথাস্থানে রেখে অতিরিক্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে।



সেচ ও পানি নিষ্কাশন অন্যান্য পরিচর্যা

সময়মতো নিড়ি দিয়ে আগাছা সব সময় পরিষ্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে।



পোকা ও রোগবালাই দমন



ঢেঁড়সের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা



লক্ষণ : ডিম থেকে বাদামি রঙের কীড়া বের হয়ে ডগা বা কচি ফলে আক্রমণ করে। কীড়া ডগা ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে ভেতরের নরম অংশ কুরে কুরে খায়। আক্রান্ত ডগা নেতিয়ে পড়ে ও শুকিয়ে যায় ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।



প্রতিকার

১. সপ্তাহে অন্তত একবার মরা বা নেতিয়ে পড়া ডগা, আক্রান্ত ফুল ও ফল সংগ্রহ করে কমপক্ষে এক হাত গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।

২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করে পোকার কীড়া বা পুত্তলি ধ্বংস করা।

৩. বিকল্প পোষক গাছ যেমন তুলার আবাদ ঢেঁড়সের জমির কাছাকাছি না করা।

৪. আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে অন্তঃবাহী বিষক্রিয়াসম্পন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে বিষ প্রয়োগের দুই সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার জন্য কোনো ফল সংগ্রহ করা যাবে না।



সাদা মাছি পোকা

লক্ষণ : ১. ঢেঁড়সের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকারক পোকা সাদা মাছি পোকা। এ পোকার আক্রমণে ঢেঁড়সের ফলন কমে যেতে পারে।

২. এরা পাতার রস চুষে খায় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়। এদের আক্রমণে পাতার মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট সাদা বা হলদে দাগ দেখা যায়। পরে অনেক দাগ একত্রে মিশে সবুজ শিরাসহ পাতা হলুদ হয়ে যায়।



প্রতিকার

১. ৫০ গ্রাম সাবান/সাবানের গুঁড়া ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচে সপ্তাহে ২-৩ বার ভালো করে সেপ্র করতে হবে।

২. ফসলের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করা

৩. ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি, পরিমাণ) অথবা এডমায়ার ২০০ এমএল (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি. পরিমাণ) মিশিয়ে সেপ্র করা।



হলুদ শিরা বা মোজাইক ভাইরাস রোগ

লক্ষণ : ১. পাতায় হালকা হলুদ দাগ পড়ে। দাগগুলো ক্রমশ বড় হয়ে মোজাইকের মতো দেখায়।

২. পাতা কুঁকড়ে যায় ও গাছ খাটো হয়।



দমন ব্যবস্থাপনা

১. বাহক পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি. ম্যালাথিয়ন/সুমিথিয়ন মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর সেপ্র করতে হবে।

২. গাছ আক্রান্ত হওয়া মাত্র তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।



অন্যান্য পরিচর্যা

সময়মতো নিড়ি দিয়ে আগাছা সব সময় পরিষ্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে।



ফসল সংগ্রহ

ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে বীজ বপন করলে ৪০-৪৫ দিনে এবং এরপর বপন করলে ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। তবে জাতভেদে কোনো কোনো সময় একটু দেরি হতে পারে। ঢেঁড়সের ফল সংগ্রহের সময় নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফুল ফোটার ৫-৬ দিন পর থেকেই ফল সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত ফলের পরাগায়নের ৭-৮ দিন পর ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়। ফলের বয়স ১০ দিনের বেশি হলে ফল আঁশময় এবং পুষ্টিমানের দিক দিয়ে নিকৃষ্ট হতে শুরু করে। ফল যত পাড়া যায় গাছ তত বেশি ফল উৎপাদন করে। এক দিন পর পর প্রতিদিনই ঢেঁড়েসের (৩০ পৃষ্ঠায় দেখুন)

ক্ষেত থেকে ফল সংগ্রহ করা উচিত। কচি ফল সংগ্রহ করলে ফলন সামান্য কমে কিন্তু ফলের স্বাদ ও পুষ্টিমান অনেক বেড়ে যায়।



ফলন

উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে ঢেঁড়সের ফলন হেক্টরপ্রতি ১৪-১৬ টন (৫৫-৬৫ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।



বীজ ফসলের জন্য বিশেষ করণীয়গুলো

পরাগায়নের ধরন ও পৃথকীকরণ

ঢেঁড়স সাধারণত স্বপরাগায়িত ফসল। তবে জাতভেদে ৩০-৪০% পরাগায়ন ঘটে থাকে। জাতের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য বীজ ফসলের ২০০ মিটারের মধ্যে অন্য কোনো জাতের ঢেঁড়স চাষ পরিহার করতে হবে। ফুল ফোটা তথা পরাগায়ন দুপুরের আগেই সম্পন্ন হয়।



রোগিং

গাছের বৃদ্ধির ধরন, পাতা ও ফলের আকৃতি, রঙ এবং অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে অনাকাঙিক্ষত গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত কোনো গাছ জমিতে রাখা চলবে না।



বীজ সংগ্রহ শুকানো ও সংরক্ষণ

ফল পাকার পর ফেটে যাওয়ার আগে তুলে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে কোনো ফল সংগ্রহ করা যাবে না। এতে বীজবাহিত ভাইরাস দ্বারা পরবর্তী ফসল আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। ভালো ফলন এবং উন্নত গুণসম্পন্ন বীজের জন্য ৩য় বা ৪র্থ নোড (গিঁট) থেকে ফল সংগ্রহ শুরু করা উত্তম। ফুল ফোটার ৩৫ দিন পর সংগৃহীত ফলে বীজের ফলন ও গুণাগুণ সবচেয়ে ভালো থাকে। তাই পরিপক্ব ফল সংগ্রহের পর এক সপ্তাহ পরিষ্কার মেঝেতে ছড়িয়ে রাখা হয়। অতপর মাড়াই এবং পরিষ্কার করে শুকাতে হবে এবং শুকনা ও ঠাণ্ডা জায়গায় গুদামজাত করতে হয়। সাধারণত ৭-৮% আর্দ্রতায় গুদামজাত করলে মোটামুটি ২ বছরে বীজের সতেজতা হারায় না।



বীজের ফলন

সঠিক পরিচর্যা গ্রহণ করলে বারি ঢেঁড়স-১ থেকে হেক্টরপ্রতি ১.৫-২.০ টন (শতকে ৭-৮ কেজি) বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।



***

তথ্যসূত্র: ড. মো. জসীম উদ্দীন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০১।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৪০

কেরিয়ারমাস্টার বলেছেন: ধন্যবাদ, গুরুত্বপূর্ণ লেখা--

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৪২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: যারা চাষ করেন তাদের কাজে লাগবে । ধন্যবাদ

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৪৩

রাজামশাই বলেছেন: মারহাবা মারহাবা - অতি উত্তম

এই নে স্বর্ণমুদ্রা - তোর উপহার

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৪৫

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: ভাইডি কানাডায় আইয়াও ঢেরস আবাদ করছি। কিন্তু এই দেশে বিশ পামু কেমনে??


পোষ্টে পিলাচ

৫| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২১

বৃষ্টি ভেজা সকাল ১১ বলেছেন: ববার সাথে করেছিলাম একসময়,

৬| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৩

আমি হনুমান বলেছেন: টবে কেমতে করমু তাই কন। একদফা লাগাইছিলাম পিপড়া হারামি উতপাতে কাইটা হালাইছি। এখন আবার লাগামু

পিপড়া মারার জন্য কি করুম কন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.