![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাতাশার মৃতদেহটা দেখে আজ সাইফুলের খুব কষ্ট হচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা কারণ তাকে মেরে ফেলবার আগ পর্যন্ত তার জন্য কোনপ্রকার দয়া উদ্রেক কখনোই হয় নি তার সেই পাষাণ হৃদয়ে।
""কারণ মেয়েটি কালো ""
বিসিএস ক্যাডার সাইফুল চাকরীতে জয়েন করবার ছয় মাস পড়েই যখন তার পাশের বাড়ির মা হারা মেয়েটিকে সে প্রথম দেখে, তখনই কেন জানি এই মেয়েটিকে তার একান্তে পেতে ইচ্ছে করে।
জোর করে ধর্ষণ করবার পর গ্রাম্যসালিশে যখন তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়,তখন সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে, "এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে "।
হুমম,পেরেছে সে তার শেষ পরিণতি দেখতে।
পেরেছে সে তার বিয়ের আগে বোনা ফসলকে নির্মমভাবে হত্যা করতে।
হুমম, পেরেছে সে তার অভিশপ্ত স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করতে।
নাতাশা কালো ছিলো এটা তার প্রথম দোষ।
সে কেন ধর্ষণের পরবর্তীতে বিয়ে করতে রাজী হয়েছিলো এটা ছিলো তার দ্বিতীয় দোষ।
সবশেষ দোষ ছিলো, কেন সে গর্ভের বাচ্চাকে মেরে ফেলেনি।
এতকিছুর পরও সে বাঁচতে চেয়েছিলো।
বাঁচাতে চেয়েছিলো তার গর্ভস্থ সন্তানকে।
কিন্ত এসিড নিক্ষেপে তার শরীরকে ঝলসে দেবার পর তার ভিতরের ছোট্ট জীবনটি আর বেঁচে থাকে কিভাবে?
সাইফুলের মুচকি হাসি কি প্রমাণ করে?
সে কিন্ত পেরেছে আজ নাতাশাকে চূড়ান্ত শাস্তি দিতে।
সে পেরেছে আজ তার উপর প্রতিশোধ নিতে।
মার্ডারের কেস হিসেবে কোনভাবেই যখন একে কেস ফাইল হিসেবে তৈরী করা যাচ্ছিলো না, তখন তার বাবা বুঝেছিলো যে, তার পক্ষের সম্মানিত উকিল কত টাকায় নিজেকে বিক্রি করেছেন।
কেস ডায়েরী করা নিয়ে তো সেই এক বিশাল ঘটনা।
কোনক্রমেই এটা মার্ডার নয় , এটাই বুঝেছিলেন থানার সম্মানিত পুলিশ সাহেব।
শেষমেশ এলাকার রমিজ চাচার অনুরোধে কেস হিসেবে গ্রহণ করেন তারা।
কিন্ত আশ্চর্য, জর্জ সাহেব কোন অদৃশ্য ইঙ্গিত একে সুইসাইডের সেকশনে নিয়ে আসামী জনাব সাইফুলকে বেকসুর খালাসের ব্যবস্থা করে দেন।
আদালতের গেট দিয়ে বের হবার সময় নাতাশার বাবার কানে কানে সাইফুল বলেছিলো যে,
"শ্বশুড় বাবা, আরো বাকী আছে।"
হুমম, সত্যিই তো আরো অনেক কিছুই বাকী ছিলো।
তাকে ভিক্ষার থালা নিয়ে পথে বসাতে আরো যা যা করা দরকার , তার সবটুকুই করেছিলো বিসিএস ক্যাডার জনাব সাইফুল ইসলাম।
... ... ...
আজ এমন হাজারো নাতাশা আমাদের সমাজে এরচেয়েও দুঃসহ পরিণতিকে ভাগ্য হিসেবে বরণ করে নিয়েছে।
কেন?
কেন এসবকে মেনে নিয়ে তাদের বাঁচতে হচ্ছে?
আজ সাইফুলের মতো বহু জনাব অমুক, জনাব তমুক নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবেই দেখে।
তাই তো পর্ণ দেখে দেখে মানুষের রুচি আজ ক্রমেই বিকৃত হয়ে যাচ্ছে।
'বিভিন্ন দেশের মুভি গুলো এক্ষেত্রে একদমই কম ভূমিকা রাখছে না বরং মানুষের মাঝে এখন বিভিন্ন উপায়ে খারাপ শিক্ষা দেবার গুরুত্বপূর্ণ রসদ হিসেবে এগুলোকেও বিবেচিত করা হচ্ছে।
শিক্ষা এদের মনকে কতটুকু জাগ্রত করতে পেরেছে??
তাদের মনুষত্ব্যবোধ কোন স্তরে রয়েছে?
কেন এত্তসব অরাজকতা?
কেন ধর্মীয় অনুশাসন পালনে এত্ত বিতৃষ্ণা, অনাগ্রহ?
কেন আমরা একজন নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখছি না?
হ্যাঁ, এক্ষেত্রে তারাও যথেষ্ঠ দায়ী । কারণ খারাপ বর্জন করবার অধিকার স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জন্ম পরবর্তি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হিসেবেই দিয়েছেন কিন্ত তারা তা নিজেদের অধিকার হিসেবে দেখছে না। ফলশ্রুতিতে তাদেরকে আজ মনে করা হয় ভোগ্যপণ্য।
মানুষ আজ নৈতিকতাকে বিসর্জন দিতে পেরেছে বলেই তো বছরের পর বছর নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করতে পারছে।
না না, শুধু সেই বাবাই এজন্য দায়ী নয় বরং আজ আমরা সকলেই হয়তো কোন না কোনভাবে এজন্য দায়ী কারণ পর্ণ আসক্ত যুবসমাজ আজ সেইসব পর্ণ সাইট থেকে এসবই শিখছে। তাহলে তার প্রায়োগিক রুপ এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক কেন হবে?
যে সমাজে নৈতিকতা শিক্ষার কোন গুরুত্ব নাই বরং কাগুজে সার্টিফিকেটকে পূজনীয় ভাবা হয়, সে সমাজে এসবের চেয়েও আরো জঘণ্য ঘটনা শুনবার জন্য প্রস্তত থাকা সকলের জন্য আবশ্যক।
যে সমাজে ধর্ম পালন বা শিক্ষাকে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে ভাবা হয়, সে সমাজে এর চেয়েও খারাপ কিছু ঘটা একদম আশ্চর্য হবার মতো কোন ঘটনা নয়।
এভাবে আর কতদিন?
মনমানসিকতা বদলান।
সমাজটাই বদলে যাবে।
©somewhere in net ltd.