নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ।পরিচয় দেয়ার মতো এর চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করি নি।

দুর্জয় বিশ্বাস

বাউন্ডুলে

দুর্জয় বিশ্বাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরীক্ষা যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যম হতে পারে,মেধা যাচাইয়ের নয়

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫৩

সে আমার সম্পত্তি নয়,সে আমার সম্পদ-- হৈমন্তী প্রসঙ্গে অপুর চমৎকার একটি কথা। হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সম্পত্তি’ ও ‘সম্পদ’ একই অর্থ বহন করলেও এখানে ‘সম্পত্তি’ বলতে বোঝানো হচ্ছে স্থাবর বা অস্থাবর কোনোকিছুকে, যা অর্থের অঙ্কে বিচারযোগ্য।আর ‘সম্পদ’ বলতে এমন কিছুকে বোঝানো হচ্ছে যা মানুষের গৌরব বাড়ায় ,কিন্তু ‘সম্পত্তি’র মতো অর্থের অঙ্কে বিচারযোগ্য নয়।

অপু হৈমন্তীকে অনেক ভালবাসতেন বলেই হয়ত এই কথা বলেছেন। যা হোক,আমি আর সেদিকে যাচ্ছি না।লেখার শুরুতে ‘সম্পত্তি’ ও ‘সম্পদ’ এর মধ্যে তফাৎ খোঁজার কারণটাই বরং উদ্ধার করা যাক--

আমাদের সমাজে এমন লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়,যারা পরীক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করে।বাস্তবে পরীক্ষা কী-- এই ব্যাপারটা তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠে না।তজ্জন্য, পরীক্ষাকেই তারা মনে একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাধ্যম!

প্রমথ চৌধুরীর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধ যারা পড়েছেন, তারা নিশ্চয়ই উপলদ্ধি করতে পারবেন-- আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হল পরীক্ষার আগে নোট নামক গুরুদত্ত গলাধঃকরণ করে পরীক্ষালয়ে উদগীগরণ করা।বাস্তবে প্রমথ চৌধুরীর কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য নয় কি?

আপনি কি বলতে পারবেন, যে ছেলেটা আজ পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করেছে,সে নিজের অনিচ্ছাসত্ত্বেও কোনোকিছু মুখস্থ(প্রমথ চৌধুরীর ভাষায় গলাধঃকরণ) করে নি?সে নোট নামক গুরুদত্ত পাওয়ার জন্য কোনো কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট টিউটরের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখে নি?বলতে পারবেন?

না,পারবেন না।গুটি কয়েক পাঠ্যবই এবং নোট নামক গুরুদত্ত গলাধঃকরণ ও উদগীগরণের করার মধ্যেই পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন নিহিত থাকে।এই কথাটি আমরা অধিকাংশই বুঝতে পারি না।আমরা মনে করি,পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করে মেধাবীরাই।

আপনি আপনার স্কুল কিংবা কলেজ জীবনের বন্ধুর দিকে তাকালে ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন।আপনার স্কুল জীবনের যে বন্ধু কিনা সবসময় ফার্স্ট হত,সে কি কলেজ জীবনে এসে ভাল করেছে?আপনার যে বন্ধুকে স্কুল জীবনে আপনি গাধার দলে অন্তর্ভুক্ত করতেন,সে-ও কি পড়ালেখায় ভাল কিছু করছে না?আপনার যে বন্ধুকে দেখে এসেছেন এসএসসি এইচএসসি'তে জিপিএ ৫ পেতে,সে কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স নিশ্চিত করতে পেরেছে?

এসব প্রশ্ন আপনি যদি নিজেকে করে থাকেন,তাহলে উত্তর আসবে কখনো 'হ্যাঁ',কখনো 'না'।আপনি পরীক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করলে উত্তর 'হ্যাঁ' আসাটা খুবই স্বাভাবিক।'না' আসার পিছনে কারণ হচ্ছে,আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হল অনেকটা বাংলা সিনেমার মতো।বাংলা সিনেমার জসীমের মতো প্রচন্ড আক্ষেপে ট্যাস্কি চালিয়ে কোটিপতি হওয়া না যাক,এক পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হলে প্রচন্ড আক্ষেপে গলাধঃকরণ এবং উদ্গীকরণের কাজটি ভালভাবে সম্পন্ন করে অন্য পরীক্ষায় ভাল করা যায়।তাই কেউ এসএসসি'তে ফলাফল তুলনামূলকভাবে খারাপ করলে এইচএসসি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করছে।আবার,যে স্কুল জীবনে সবসময় ফলাফল ভাল করত,সে কলেজ জীবনে এসে হারিয়ে যাচ্ছে।এক কথায়,মেধা যাচাইয়ের কোনোকিছু আমাদের দেশের পরীক্ষাপদ্ধতির মধ্যে নেই।যদি থাকত, তাহলে দেখা যেত-- যে স্কুল জীবনে সবসময় ফলাফল ভাল করেছে এবং যাকে আপনি মেধাবী বলে ভাবতেন,সে পরবর্তীতেও ফলাফল ভাল করত এবং আপনার কাছে মেধাবী বলে বিবেচ্য হত।

গুটি কয়েক পাঠ্যবই গিলে পরীক্ষায় ভাল করাকে তুলনা করা যায় সম্পত্তির সাথে,যা অর্থের অঙ্কে বিচারযোগ্য অর্থাৎ যার উদ্দেশ্য থাকে সার্টিফিকেট এবং ভাল বেতনে চাকরি।অন্যদিকে,নিজের মনমতো বই পড়ে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠাকে তুলনা করা যায় সম্পদের সাথে,যা মানুষের গৌরব বাড়ায়,কিন্তু সম্পত্তির মতো অর্থের অঙ্কে বিচারযোগ্য নয় অর্থাৎ যা দিয়ে সার্টিফিকেট বা ভাল বেতনে চাকরি-- কোনোটাই পাওয়ার উদ্দেশ্য থাকে না।এক কথায়,যার কোনো নগদ বাজার দর নেই।

বাজার দর না থাকলেও না থাকতে পারে।কিন্তু প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠার সুফল সম্বন্ধে প্রমথ চৌধুরী বলেছেন,যে জাতির জ্ঞানের ভান্ডার শূন্য,সে জাতি ধনের ভাঁড়েও ভবানী।

তাহলেও কেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী সম্পদ অর্জনের চেয়ে সম্পত্তি অর্জনের দিকে ছুটে বেশি ,এই প্রশ্ন আমাদের মধ্যে রয়ে যায়।

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা স্মরণ করতে পারি ড. হুমায়ুন আজাদের একটি প্রবচন--
রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিলো না;কিন্তু দরকার ছিলো বাঙলা সাহিত্যের।পুরস্কার না পেলে হিন্দুরা বুঝতো না যে রবীন্দ্রনাথ বড়ো কবি; আর মুসলমানেরা রহিম করিমকে দাবি করতো বাঙলার শ্রেষ্ঠ কবি হিশেবে।

হুমায়ুন আজাদের কথাগুলো ব্যঙ্গধর্মী এবং আক্রমণাত্মক হলেও অক্ষরে অক্ষরে সত্য।একজন মানুষ যত জ্ঞানীগুণী বা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হোক না কেন,পুরস্কার সম্মাননা যোগ্যতা ছাড়া কেউ কাউকে মূল্যায়ন করতে চায় না।এমনকি সে ব্যক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেও না।

বর্তমানে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জনই হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জনের একমাত্র উপায়।ফলাফল ভাল করলে কোচিং সেন্টার প্রসপেক্টাসে ছবি ছাপাবে,বাবা-মা গর্বের সাথে বলবে 'আমার সন্তান',সমাজ মনে করবে 'মেধাবী ছাত্র'! এতোসব ভাল দিক উপেক্ষা করে কে চাইবে পাঠ্যবই না গিলে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৪

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: বর্তমানে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জনই হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জনের একমাত্র উপায়।ফলাফল ভাল করলে কোচিং সেন্টার প্রসপেক্টাসে ছবি ছাপাবে,বাবা-মা গর্বের সাথে বলবে 'আমার সন্তান',সমাজ মনে করবে 'মেধাবী ছাত্র'! এতোসব ভাল দিক উপেক্ষা করে কে চাইবে পাঠ্যবই না গিলে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে? একশ ভাগ সঠিক কথা।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২১

দুর্জয় বিশ্বাস বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.