নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Ekhtiak Ebna Ahsan Efat

ভালো মন ছাড়া মানুষ আর স্বাদহীন ইলিশ মাছ একই কথা

ইখতিয়াক ইবনে আহসান ইফাত

আমি আমার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। আমার পরিচিতরা জানতে পারে।

ইখতিয়াক ইবনে আহসান ইফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি এবং আমরাঃ অনুগল্প

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:২৭

আমি গ্যাভ্রেবো। ২ বছর বয়সে আমার মা বাবা আমাকে ডাস্টবিনে ফেলে যায়। সেই থেকে ডাস্টবিনই আমার বাসা। ডাস্টবিনের কুকুরগুলোর সাথে খাবার নিয়ে মারামারি করা আমার রুটিন কাজ গুলোর একটি। আমার একটা পোষা বিড়ালও আছে। নাম মিয়াও। প্রায় প্রতি রাতেই মিয়াও ইদুর মেরে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে ইদুরটার কিছুটা ভাগ আমিও পাই। তবে মিয়াও যে আমাকে খুশি মনে তা দিয়ে দেয় সেটা বলতে পারবো না। দিন রাত ২ বেলায়ই আমার সময় কাটে ঘুরতে ঘুরতে। এক ধনীর দুলালি একবার আমাকে এক স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলো। স্কুলের টাকা পয়সাও সে ই দিয়ে দেয়। আমি মাসে দুই একবার স্কুলে যাই। যাই বললে ভুল বলা হবে। টিচাররা আমাকে পাকড়াও করে নিয়ে যায়। তার পড় চলে পড়াশুনা নামক দানবের অত্যাচার। বর্নমালার সাপ গুলো যেন আমাকে পেঁচিয়ে ধরে। ফাকঁফোকড় খুজি পালানোর। ধনীর দুলালি আমাকে তার বাড়িতেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। আমি যাই নি। আসলে কুকুর গুলোর সাথে মারামারি করে খাবার খাওয়ার লোভকে আমি এড়িয়ে যেতে পারি নি। খাবার নিয়ে মারামারি করলেও, আমারা কিন্তু খুবই ভালোবন্ধু। আমাদের বন্ধুত্বের কোন ভাষা নেই, কিন্তু ভালোবাসারও অভাবও নেই। মিয়াও ও যেতে চায় নি। নীড় ছেড়ে পাখি কি কখনো সোনার খাঁচায় যেতে চায়?



ডাস্টবিনে পঁচা খাবার যেমন ফেলা হয়, ভালো খাবারও তেমনি ফেলা হয়। সেই সময়গুলো আসলে থেমে যায়। আমরা মারামারি কাড়াকাড়ি করে খেতে থাকি। আমরা মানে, আমি আর কুকুরগুলো। মিয়াও ও যোগ দেয় আমাদের সাথে। তবে কি কারনে জানি কুকুরগুলো মিয়াওকে ঠিক দেখতে পারে না। গরগর করে উঠে। মিয়াও তখন আমার পিছে এসে ফেসস করে ভেংচি কাটে। কুকুরগুলো তখন আবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। হয়তো বুঝে যায় মিয়াও আমার বন্ধু। অথবা মিয়াও এর পিছে দৌড়িয়ে খাবারের ভাগটা হারাতে চায় না ওরা। আমি আর মিয়াও ও আবার খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দেই। রাতে মাঝেমাঝে মদের নেশায় বুদ হওয়া পাগল গুলো আসে। ওরা আমাদের দেখলেই ঢিল ছোড়ে। আমরা লুকিয়ে পড়ি অলিতে গলিতে। কুকুরগুলো চাপা গরগর করে দৌড়াতে থাকে এদিক সেদিক। মিয়াও আমার সাথেই থাকে। কুকুড়গুলো ভিতু হলেও, আমি ভয় পাই না। এদিক সেদিক তাকিয়ে দু একটা ঢিল কুড়িয়ে নেই। তারপর ছুড়ে মারি প্রচন্ড আক্রোশে। হয়তো একটা লেগে যায়। চিত্‍কার করে উঠে। কুকুড় গুলো তখন হইহুল্লোর শুরু করে। লাফালাফি করে। মনে হয় আনন্দে যেন একসাথে নেচে উঠে ওরা। ওদিকে মাতাল গুলো আমাকে গালাগালি করে। আমাকে দেখে নেবার হুমকিও দেয়। হয়তো একদিন মেরেও ফেলবে। যেভাবে ঘাউ কে মেরেছিলো। গলায় তার পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। ঘাউ কুকুড়দেরই একজন ছিলো। একটু চটপটে, প্রতিবাদি। মাতালদের ভয়ে কুইকুই করতো না, কামড়ে দিতে যেতো। কামড়াতোও দুই একটা কে। মাতালগুলো তখন চোরের মত পালাত। তাই হয়তো ওকে মারার জিদ চেপেছিল মাতালদের। ঐদিন আর কিছু হলো না। ডাস্টবিনে গিয়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝ রাত্রিতে মাঝেমাঝে ডেকে উঠে কয়েকটা কুকুর। বিরতি দিয়ে দিয়ে ডেকে উঠে। হয়তো ঘড়ির কাটার মত সময় জানিয়ে দেয় কাউকে।



পরেরদিন সকালে দেখি ডাস্টবিনে কয়েকটা বার্গার পড়ে আছে। কুকুড়গুলো নেই। কোথাও হয়তো গিয়েছে। তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নিলাম। মিয়াওটা ও জেগে উঠেছে। কাতুর নয়নে আমার হাতের বার্গার গুলো দেখছে। একটা ওকে দিলাম। কুকুরগুলোও হাজির গন্ধ শুকে। ওদেরকেও ৪টা দিলাম। বাকি ২টা আমি একাই খেলাম। দুপুড়ে কোথা থেকে জানি কোন এক সংস্তার জিকজিক এসে থামলো। আমাকে একটা শার্ট আর পেন্ট দিয়ে চলে গেলো। দেওয়ার সময় কি দিয়ে জানি কয়েকবার তিব্র আলো ছড়িয়ে দিলো। মনে হয় আমার ছবি তুলেছে। শার্ট পেন্ট গুলো পড়ে সারা শহরটা ঘুরলাম। মিয়াও আর কুকুরগুলোও সাথে ছিলো। শহরের লোক গুলো কেমন ভাবে জানি দেখছিলো। কারো কারো মুখে ঘৃনার ছাপ নৃত্য করছিল। একজন পথ শিশুর এমন উদযাপন তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।



রাতে আবার কাড়াকাড়ি চললো খাবার নিয়ে। তারপরেও সবাই পেট ভরে খেলাম। ডাস্টবিনে না শুয়ে পাশের গলির ফুটপাতে গিয়ে শুলাম। মিয়াওকে আজ দেখছি না। হয়তো কোথাও বেড়াতে গিয়েছে। আকাশে জলজলে তারা গুলো দেখতে দেখতে কোন সময় যে ঘুমিয়ে পড়লাম তা জানি না। জোরে ধাক্কা খেয়ে ঘুম ভাঙল। চিত্‍কার চেচামেচিতে চোখ খুলেই রক্ত শীতল হয়ে গেলো। মাতালগুলো আমাকে ঘিরে রেখেছে। আমাকে কেউ একজন শক্ত করে ধরল। একটা তার নিয়ে আসলে আরেকজন। সাপের মত আমার গলায় পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে দিলো ল্যাম্পপোষ্টে। শুন্যে ঝুলতে লাগলাম আমি। গলায় পেচিয়ে দেওয়া তারটা ফাসে পরিণত হল। কুকুরগুলোও কোথা থেকে জানি হাজির হয়ে গেলো। মিয়াও ও ওদের সাথে আছে। ২ একটা কুকুর এগিয়ে আসল। মাতালদের একজন মদের বোতল নিয়ে তাড়া করল ওদের। শ্বাস নিতে পারছি না। বুকের ধুকপুকানি যন্ত্রটা যেন বাতাসের জন্য হাহাকার করে উঠছে। সব কিছু ঘোলা হয়ে উঠছে। দূরে কুকুরগুলো আর মিয়াও ঝগড়া ভুলে একসাথে তাকিয়ে আছে। হয়তো কাদছে ওরা। পৃথিবীটা দুলে উঠলো। সব কিছু অন্ধকার হয়ে উঠলো। অনুভূতি গুলো সব শূন্য হয়ে গেল। কালো জগতে আমি একা। একেই কি মৃত্যু বলে?



কিছুদিন পর। কুকুরগুলো এখনো খাবার নিয়ে মারামারি করে। রাতের আধারে কাকে যেন খুজে ফিরে ডেকে উঠে করুন স্বরে। মিয়াও নামের বিড়ালটা এখনও প্রতি রাতে ইদুর মেরে নিয়ে আসে। কার অপেক্ষায় যেনো ইদুরটাকে না খেয়ে ফেলে রাখে। ক্ষুধার কাছে অপেক্ষা হার মানে। ইদুরটাকে খেয়ে কিছু অংশ রেখে দেয় মিয়াও, কেউ খাবে বলে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মিয়াওয়ের বোধটুকুও যদি আমাদের কর্পরেটদের মাঝে জেগে উঠত!!!!


++++

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫২

ইখতিয়াক ইবনে আহসান ইফাত বলেছেন: গল্প গল্পই থাকে

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:২৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১২

ইখতিয়াক ইবনে আহসান ইফাত বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৪৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভালো লাগল।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১২

ইখতিয়াক ইবনে আহসান ইফাত বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:১৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:



ভালো লিখেছেন +++

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৩

ইখতিয়াক ইবনে আহসান ইফাত বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৩০

পথহারা সৈকত বলেছেন: :) :) :) :) :)

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১২

ইখতিয়াক ইবনে আহসান ইফাত বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.