নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন আর বাস্তবতা যার মেলেনা সেই মানুষটিই আমি

হাসান বিন নজরুল

আসুন সুন্দরের বীজ বুনি আর আগাছা গুলোকে উপড়ে ফেলি- সুন্দরের চাষ করতে হয় আর আগাছা এমনি জন্মায়।

হাসান বিন নজরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ভোর (ছোট গল্প)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪


এক.

বউয়ের প্রতি ঘেন্না ধরে গেছে রাহাতের। মানলাম তার তিনটে বাচ্চা, যার মাঝে দুটো জমজ। কিন্তু দুই বেড, এক কমন স্পেস, এক কিচেন ও দুই বাথের বাসাটি কি আর একটু পরিপাটি করে রাখা যায় না? অফিসে এসেও আজকাল তার মাথায় এমন ভাবনা খেলে সারাটি দিন।

নাম তার রাহাত মাহমুদ। একটি বেসরকারী ব্যাংকের পটিয়া শাখার ডি.জি.এম। পদের লোভে সরকারী ব্যাংকের আরাম-আয়েস আর শান্তির চাকরি ছেড়ে এসেছিলেন এই ব্যাংকে, কিন্তু এখানে এসে বেসরকারী ব্যাংকের টার্গেট, ক্ল্যায়েন্ট রিলেশন ও অন্যান্য ঝক্কি ঝামেলা দেখে যেন ভিমড়ি খাওয়ার দশা! ব্যাপারটা এমনই যে নতুন করে ব্যাংকিং শিখতে হচ্ছে আর তার চট্রগ্রাম ইউনিভার্সিটির ব্যবসা অনুষদ থেকে দু’টো ফাষ্ট ক্লাস ও তার সাত বছরের সরকারী ব্যাংকের অভিজ্ঞতা যেন ব্যাংকিং জগতে নার্সারী পড়ার জ্ঞানের সমতুল্য! এই প্রাইভেট ব্যাংকে এসেই প্রথমে পোষ্টিং হয় তাদের চকবাজার, চট্রগ্রাম শাখায়। আর আসার পর হতেই ব্যাংক ম্যানেজারের নানামূখী ষড়যন্ত্র মূলক কর্ম ও কাজের চাপে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। অতপর ৪ মাস না যেতেই অফিস পলিটিক্সের শিকার হয়ে পটিয়া, চট্রগ্রাম শাখায় বদলী। তবে এখানে এসে যা লস হলো তা হলো বাসা পাল্টে নতুন ব্রিজের কাছাকাছি যায়গায় যেতে হলো এবং দৈনিক সিটি থেকে পটিয়া শহর জার্নি আর যা লাভ তা হলো কাদের মিয়াজীর মতো একজন বন্ধুভাবাপন্ন ব্যাংক ম্যানেজার কাম বস পাওয়া। যিনি তাকে অনেকটাই হাতে কলমে কাজ শিখিয়ে নিজের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে সহায়ক ভূমিকা রাখছেন।

গত ৭ মাসের মধ্যে রাহাত আজই সজ্জন ব্যাংক ম্যানেজার কাদের সাহেবের বাসার স্ব-পরিবারে দুপুরের খাবার খেতে এসেছেন আর কাদের সাহেবের ছিমছাম সাজানো বড় বাসা যতই দেখছেন মুগ্ধ হচ্ছেন! আর মনে মনে ভাবছেন কাদের সাহেব কত ভাগ্যবান! অনেক ভালো স্ত্রী পেয়েছেন, যে পুরো ঘরকেই স্বপ্নপুরী বানিয়ে রেখেছেন। খাবার আগে তারা উভয়েই পারিবারিক আড্ডায় মিলিত হলেন- যেখানে কাদের সাহেবের স্ত্রীকে দেখা গেল অনেক প্রাণবন্ত ভূমিকায় আর রাহাত নিজের স্ত্রীকে বরাবরই আগের মত নিষ্প্রভ ও উজ্জল্যহীন পেলো।

এরপর থেকে প্রায়ই রাহাত দুপুরের লাঞ্চের জন্য কাদের সাহেবের বাসায় বন্ধু হিসেবেই আসেন এবং তিনজন প্রচুর গল্প করেন। এভাবেই সে জানতে পারে কাদের সাহেবের এক ছেলে, এক মেয়ে এবং তার স্ত্রীর স্যোসাল ওয়ার্ক ও আরো বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়ে। আর আলোচনার ফাঁকে রাহাত এও লক্ষ্য করতে ভুললো না যে মিসেস কাদের তার প্রতি মাঝে মাঝেই সিডাক্টিভ লুক দেন, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দিনে দিনে রাহাতের কাছে নিজের স্ত্রী ক্ষ্যাত, বিরক্তিকর ও ভ্যালুলেস হয়ে আসছে আর মিসেস কাদের হৃদয়ের অন্তপুরের খাস কামরায় জায়গা করে নিচ্ছে।

দুই.

রাহাত আজকাল মিসেস কাদেরের সাথে ফোনে প্রায়ই দীর্ঘ আলোচনায় থাকে, এ আলোচনা আগে ছোটখাট হাই-হ্যালো জাতীয় হলেও এখন তা গভীর ফোনসেক্সে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে দিন দিন মিসেস কাদেরের মত সৌখিন নারীকে একান্ত করে পাবার আশায় রাহাত মশগুল হয়ে গেছে (যদিও সৌন্দর্যের বিচারে তার স্ত্রী অনেক বেশী সুন্দরী)। দু’জনের মিলনের কাংখিত সেই বিশেষ ক্ষণের জন্য তাকে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি; কাদের সাহেব ব্যাংকের বিশেষ কাজে রাহাতকে ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার করে এক মাসের জন্য সিঙ্গাপুর যেতেই চলে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। এভাবে দিনে দিনে তাদের সম্পর্ক হয় আরো গভীর ও মজবুত। এরই মাঝে মিসেস কাদের তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

কাদের সাহেব সিঙ্গাপুর থেকে ফেরৎ এসেছেন আর রাহাত বয়ে বেড়াচ্ছেন মিসেস কাদেরের প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবের চিন্তা। অনেক ভেবে এক দুপুরে রাহাত মিসেস কাদেরকে বিয়ের ব্যাপারে নিজ অপারগতার কথা জানালো। এতে মিসেস কাদের রাহাতের সাথে ধারণাতীত দূর্ব্যবহার করলো। এই দূর্ব্যবহার তার মনে খুব বড় চাপ ফেললো; সে ভেবে পাচ্ছিলো না এটা তার ভুল, নাকি শুদ্ধ সিদ্ধান্ত (অপরদিকে রাহাত নিজ বন্ধুদের কাছ থেকেও সাহায্য নিতে চাইছেনা নিজ গোমর ফাঁসের ভয়ে, কারণ সে ছোট বেলা থেকেই অতিমাত্রায় ইগো প্রবণ) ফলে সে এই ব্যক্তিগত চাপ একা একা সামলাতে অনেক কষ্টে দশ দিনের ছুটি নিলো আর মিসেস কাদেরের সাথে যথাসম্ভব যোগাযোগ কমিয়ে আনলো। যদিও সে নিজের স্ত্রী-সন্তানদের বেশী সময় দিয়ে ঐ নারীকে ভুলতে চাইলো, কিন্তু কিছুতেই সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ মিসেস কাদের প্রেম কলা অনেক বেশী জানে, যা তাকে ভুলতে দিচ্ছিল না এবং রাহাতের স্ত্রী সে তুলনায় অনেক অনুজ্জল।

তিন.

আজ রাহাতের মন খুব ভালো কারণ সে প্রায় ১৩ দিন পর অফিসে আসছে এবং মিসেস কাদেরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অনেকটাই পাকাপাকি করে ফেলেছে। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিসেস কাদেরের বিয়ের টোপে পড়বে না আর প্রয়োজনে আন্তঃ ব্যাংক ট্রান্সফার নিতে চেষ্টা চালাবে। না, তাকে ট্রান্সফার নিতে হলো না, অফিসে আসতেই কাদের সাহেবের রুম থেকে রাহাতের ডাক পড়লো।

কাদের সাহেব কাঁদছেন...
রাহাত ভয় পেলো সে ভাবলো কাদের সাহেব বুঝি তার ও মিসেস কাদেরের ব্যাপারটা জানতে পেরেছেন! রাহাতকে দেখতেই কাদের সাহেব সিট ছেড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ কান্না জুড়ে দিলেন... কাদের সাহেবের কান্না অনেক কষ্টে থামিয়ে পরবর্তী আলোচনায় সে জানতে পারলো- কিছুদিন আগে বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে মিসেস কাদের, আর আজ ভোর না হতেই বাবার বাড়ী থেকে একজন বড় শিল্পপতির সাথে (সন্তানদের রেখেই) সে পালিয়ে গেছে। আজকে কাদের সাহেবের অনেক আক্ষেপের মাঝে তার নিজের জন্য অনেক উত্তর পেলো সে এবং আরো জানতে পারলো কাদের সাহেবই ঐ বাড়িটি পরিপাটি রাখার মূল কারিগর এবং স্ত্রীর অনেক অন্যায় মেনে সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে দীর্ঘদিন নিজ ভঙ্গুর সংসারের ঘানি টেনে চলেছেন। এমনকি তাকে নাকি প্রায়ই অফিস থেকে ফিরে বাসার সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে হতো!

এতে রাহাত নিজের অনেক ভুল বুঝতে পারলো। সাথে আরো বুঝলো তার নিষ্প্রভ অনুজ্জল স্ত্রী’ই ভালো। ফলে সে উপলব্ধি করতে পারলো তার স্ত্রী হলো ঘর আলো করে রাখা বাতি আর সাবেক মিসেস কাদের বা বর্তমান মিসেস আইনুল হলো হঠাৎ অতি আলো দেয়া আতশবাজি যা মুহুর্তেই অনেক বেশী আলো দেয় কিন্তু পরক্ষণেই অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়ে তার প্রতি ভরসা করা সবাইকে ঘোর অন্ধকারে পতিত করে।

চার.

বাসায় এসে রাহাত দেখলো তার স্ত্রী নেই এবং তার স্ত্রীর একটি চিঠি, যে চিঠির প্রতি পরতে পরতে লিখা আছে বঞ্চনার গল্প সেখানে আরও আছে মিস কাদেরের প্রসঙ্গও, মিস কাদের নাকি কল করে আজই সব জানিয়েছে তাকে! হায় কি লজ্জার গল্প! রাহাত কিছু বুঝতে না পেরে সারাদিন অফিসের পর ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে সাত-পাঁচ মেলাতে লাগলো। সে বুঝলো আসলেই রাহাত তার বিশ্বস্ত ও গুণী স্ত্রী টিকে দীর্ঘদিন স্বপ্নে দেখা আতশবাজির আশায় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অনেক বঞ্চনা দিয়েছে, যা মেনে নেবার মতই না। আজ স্বপ্ন ঘোর ভাঙ্গার পর তার অনুশোচনা হচ্ছে। কিন্তু এই অনুশোচনাবোধ কি কাজে দেবে? তার সাজানো সংসারের আঘাত প্রাপ্ত সাথীটি কি আর ফিরবে? সে যে বড় অভিমানী! (যারা সৎ ও নিষ্ঠাবান হয় তাদের অভিমানও বেশীই থাকে)।

রাতে ভাবনার অন্তজালে পড়ে কবে যে ঘুম চলে এসেছে, রাহাতের মনে নেই। সকালে পিতার কলে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন সে দেখতে পেলো ঘড়িতে ৯ টা বেজে ১০ মিনিট অতিক্রান্ত! তার মানে আজ আর অফিসে যাওয়া হচ্ছে না। অফিসের ভাবনা বেশী জেঁকে বসার আগেই ও প্রান্ত থেকে বাবার ধমকে ঘুমের ঘোর পুরোই কেটে গেলো তার।

বাবা- তোর নাকি ভীমরতি ধরেছে? বউমা কোথায়?
রাহাত- আমতা আমতা করে... বাবা ও তো কাল বিকেলে বাবার বাড়ি গেছে।
বাবা- গেছে নাকি যেতে বাধ্য হয়েছে?
রাহাত- না বাবা ও রাগ করেছে।
বাবা- শোন... নাটক কম করে আসল কথা শোন, আমাকে তোর কিছু শেখাতে হবে না, বেয়াই আমাকে সব বলেছে। তুই এত নিচে নেমে গেছিস!?
রাহাত- বাবা আসলে... (ও প্রান্ত থেকে লাইন কেটে গেলো কথা শেষ করার আগেই)।

পাচ.

রাহাত এখন একা খুবই একা...
এর মাঝে কেটে কেছে তিনটি মাস যদিও তার কাছে তিন যুগের সমতুল্য। তার বাবা-মা তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে বাড়িতে যাওয়া নিষিদ্ধ আর ভাই বোনেরাও তাকে দোষারোপ করছে। আসলে তাদের ভদ্র পরিবারে এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনা আর ঘটেনি। তাদের পরিবার নিরেট উচ্চ মধ্যবিত্ত ভদ্র পরিবার, এমন দোষ তাদের পরিবারে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। তবুও পরিবারে প্রবেশে তার বাবা ও বড় ভাই একটি শর্ত দিয়েছে তা হলো স্ত্রীকে নিয়েই ফিরতে হবে, স্ত্রী যদি ক্ষমা করে তবে পরিবার থেকেও সে ক্ষমা পাবে।

এই তিন মাসেও নওরিন রাহাতকে ক্ষমা করেনি আর নওরিনের পরিবার ডিভোর্সের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে সে নিয়তই নিজ কৃতকর্মের ফলে সৃষ্ট কেউটের দংশনে নীল হচ্ছে। নওরিনের বাড়িতে সে অনেকবার গিয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু তার শশুর একটু দেখাও করতে দেয়নি। অথচ সন্তানের জন্য মন কাঁদে, আহত পাখিটির জন্য মন কাঁদে, এটা কেউ বোঝেনা! এরই মাঝে রাহাতের ট্রান্সফার হয়ে যায় ব্যাংকের হেড অফিসে। এমন কঠিন সময়ে তার এই ট্রান্সফার যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া সমতুল্য, যদিও বেতন বেড়েছে বিশ পার্সেন্ট সাথে অনেক সুবিধাও বেড়েছে।

হেড অফিসে যোগ দিয়েই রাহাতের চোখ ছানাবড়া! ব্যক্তিগত এত সমস্যার বেড়াজালে থেকেও সে জানতো ব্যাংক হাত বদল হয়েছে, নতুন ভাবে এ. এইচ. গ্রুপ অব কোম্পানিজ ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে ম্যানেজমেন্ট সাজাচ্ছে। কিন্তু সে জানতো না এই নতুন কোম্পানির সত্তরোর্ধ চেয়ারম্যান আইনুল হক, যিনি মিসেস আইরিন তথা সাবেক মিসেস কাদেরের নতুন স্বামী! আর স্ত্রী হবার সুবাদে ব্যাংকের নতুন এম.ডি. হিসেবে শীঘ্রই নিয়োগ পাচ্ছেন মিসেস আইরিন! এত এত চমক রাহাতের অন্তপুরের জ্বলনকে আরো উস্কে দিলো এবং অজানা শংকা তাকে ঘিরে ধরলো।

রাহাত শীঘ্রই অন্য ব্যাংকে নতুন চাকরির সন্ধানে মত্ত হলো, কারণ সে বুঝে গেছে; কেন তাকে প্রমোশন দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। মিসেস আইরিন প্রতিশোধ চান নিশ্চয়? না, তাকে এত সময় দেয়া হলো না, হেড অফিসে যোগদানের তিন সপ্তাহের মাঝেই তার কাছে শোকজ লেটার এলো যেখানে পটিয়া ব্রাঞ্চের ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা তসরুফের কথা লিখা আছে এবং এটার একক দায় দেয়া হয়েছে রাহাতকে।

ছয়.

আজ আঠার দিন হলো সাড়ে তিন মাসের আইনী খেলা শেষে ব্যাংকের তহবিল তসরুফের মামলায় রাহাতের আড়াই বছরের জেল ও পঞ্চাশ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে এবং অনাদায়ে আরো দেড় বছরের জেল খাটতে হবে। রাহাতের জীবন এক রঙ্গীন ঘোরের জালে পড়ে ঐ মায়াজালের প্রথম প্রভাতেই শেষ হয়ে গেল। যদিও রাহাতের কাছে জেল ছাড়াও অপশন ছিল মিসেস আইরিনের আজীবন অনুগত থাকার টোপ! কিন্তু সে তার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। যার সবই নওরিন রাহাতের উকিলের কাছ থেকে জানতে পেরেছিল। তাই আজ সে হন্যে হয়ে রাহাতের কাছে ছুটে এসেছে... কারা প্রহরীর ডাক এলো রাহাত মাহমুদ, কয়েদী নং ৪১৮৫/এ আপনার সাথে আপনার স্ত্রী দেখা করতে এসেছে।

কারাগারের সাক্ষাৎ রুমের অমানবিক দশা তার পরিবারের ছয় জন এখানে দেখা করতে অনুমুতি পেয়েছে। কিন্তু এই দিন তেমন কোন কথাই বলা গেলো না, শুধু সবাইকে দেখা হলো আর রাহাতকে সবাই দেখলো এই যা।

পাঁচ দিন পর রাহাতের ডাক পড়লো চট্রগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার কক্ষে। জাতীয় একটি দৈনিকের ক্রাইম রিপোর্টারের আবেদনে ক্রাইম রিপোর্টার, রাহাতের স্ত্রী, বাবা ও শ্বশুর তার সাথে দেখা করার অনুমুতি পেল। স্ত্রী ও আপনদের দেখেই রাহাতের ধৈর্যের বাধ বালির বাঁধের মতই ভেঙ্গে পড়লো। সে শিশুর মতই কাঁদতে শুরু করলো এবং সবাই অনেক অনেক কেঁদেছে... (জেলারের রুমে এক প্রকার শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে)। যা হোক সেই মিটিং-এ রাহাত জানতে পারলো মিসেস আইরিনের সাথে রাহাতের অন্তরঙ্গ আলাপের অনেক অডিও রেকর্ডই নওরিনের কাছে আছে, যার ফলে ঐ মহিলার ফোন পাওয়ার পর সে এত বেশী রিএ্যাক্ট করেছিল। ক্রাইম রিপোর্টার জানালো এই অডিও রেকর্ড ও কল লিস্ট দিয়েই রাহাতের আশু মুক্তির পথের দিশা পাওয়া যাবে এখন শুধু দরকার তার অনুমুতি; রাহাত অনুমুতি দিল।

সাত.

ক্রাইম রিপোর্টার ও আপনজনদের মাত্র দেড় মাসের অক্লান্ত চেষ্টায় রাহাত নিজ ভুলের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেল আর ব্যাংক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে পেলো বড় অংকের আর্থিক ক্ষতিপূরণ। রাহাত এটা জেনে অবাক হলো যে, আইরিনের নতুন স্বামী সব জানে এবং তার যোগসাজসেই আইরিন রাহাতের উপর এত ঘৃণ্য প্রতিশোধ নিতে পেরেছিল! হয়ত আইনুল সাহেব সত্তরোর্ধ বয়সে পাওয়া ইয়ং স্ত্রী’র সঙ্গ হাতছাড়া করতে চাননি বলেই...

রাহাত এখন নিয়মিত নামাজ পড়ে, যা নওরিন আগে কখনই তাকে দিয়ে করাতে পারেনি। অন্যদিকে রাহাতের স্ত্রীও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং দীর্ঘ দিনের বিরহের সময়ে নিজেকে অনেকটাই বদলে নিয়েছে এবং আরো যোগ্য স্ত্রী হয়ে উঠেছে। তবে অবশ্যই আইরিনের মত নয়, নওরিনের মত করেই।

(সত্যিকার অর্থে নওরিনেরাই আমাদের চিরাচরিত মুসলিম বাংলার যোগ্য বধু যারা আমাদের সমাজের পারিবারিক প্রথাকে হাজার বছর ধরে দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। আর আইরিনদের মত তথাকথিত স্যোসাল ওয়ার্কাররা সমাজের কীট, যাদের কারণে আমাদের সমাজে বেড়ে চলা অবক্ষয় শক্ত ভীত পাচ্ছে। আমাদের সবাইকে সময় থাকতে নিয়ত আলো দেয়া বাতি ও পটকার মত অতি উজ্জল অথচ ক্ষনিকের দ্যূতি ছড়ানো বস্তুর পার্থক্য করতে শিখতে হবে, তবেই আমরা মানব সমাজে বর্ধ্মান ক্ষয় নিরোধে সমর্থ হবো)

০২/০১/২০১৬

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৬

বিপরীত বাক বলেছেন: ওইসব নওরীন দের জন্যে আবার রায়হান রা আছে। বহুৎ দেখেছি।

ভালমত খোজ নেন।

সিনেমা হল গুলো এক এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সবখানেই।
তাই বুঝি আজকাল ব্লগেই বাংলা ছিঃনেমার প্রদর্শনী চালু হয়েছে।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৩

হাসান বিন নজরুল বলেছেন: হতে পারে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.