নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের ব্যস্ততা

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:০৬

মাহবুব তার স্ত্রী লিজার জন্য ২৫টা গোলাপ ফুলের একটি তোড়া কিনে নিয়ে এলো। তার বউটা আসলে খুব সরল আর পাগলা। পাগলা মানে কাজ পাগলা। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খুব উচ্চাভিলাষী লিজা। কিছুদিন হলো, ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় পোস্টিং হয়েছে লিজার। প্রমোশন পেয়ে এখন প্রতিষ্ঠানের প্রধান । আর যত বড় পদ, তত বেশি দায়িত্ব, তত বেশি কাজ আর টেনশন। নিজের কাজের ব্যাপারে খুব নিবেদিত লিজা। পান থেকে চুনও খসা যাবে না। এটা ঠিক, স্বামী যদি উদার না হয়, হেল্পফুল না হয়, তবে একটি মেয়ের পক্ষে এতদূর আসা সম্ভব নয়। মাহবুব নিজেই এতদিন ছেলে মেয়ে দুটোর দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু মায়ের সহচার্যও ওদের এই সময়টায় দরকার। অফিসের কাজ নিয়ে লিজা এত ব্যস্ত থাকে যে ছেলে মেয়েকে সময় দেওয়া দূরে থাক, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিই নজর দিতে পারে না। মাহবুবকে তাই কিছু কথা বলতেই হয়। অফিসের কাজগুলো নিয়ে এত খাটাখাটুনি না করে কিভাবে কৌশলে সব কিছু সহজে ম্যানেজ করা যায় এসব এখনো লিজা রপ্ত করে উঠে নি। তাই মাহবুব স্ত্রীকে প্রায় সময়ই দরকার মত সাহায্য করে থাকে, পরামর্শ দিয়ে থাকে। ফুলগুলো এবার লিজার হাতে দিয়ে বলল, ‘’তোমাকে অনেক অভিনন্দন। অনেক দিন থেকেই বলছিলাম তোমাকে, তোমার ফার্স্ট হবার দরকার নেই, এবার ছেলে মেয়েগুলোর দিকে একটু তাকাও। তুমি শোন নি। সব কিছুতেই তুমি ফার্স্ট হতে চাও। এবার তো তুমি ফার্স্ট হলে, এবার ছেলে মেয়েদের কথাও একটু ভাব। নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভাব।‘’ ইদানিং মাহবুব একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে, সে ব্যাপারেও লিজাকে সাবধান করে দিতে চাইলো। বলল, ‘’তোমার অধীনস্থ জাভেদ সাহেবকে যতটা পারো এড়িয়ে চলার চেষ্টা কোর।‘’ ব্যাস! চেঁচিয়ে উঠল লিজা, ‘’ছি, ছি, তোমার মন এত ছোট? তুমি তাকে নিয়ে আমাকে সন্দেহ করো?’’



--‘’না। আমি সন্দেহ করার কথা বলছি না। লোকটা তোমাকে তোষামোদ করে নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে এসব তোমার একটু বোঝা উচিত, এটাই বলতে চাইছিলাম।‘’

--‘’আমার অফিসের ব্যাপারেও আমার স্বামী আমাকে ডমিনেট করুক এটা আমি চাই না। আমার অফিস কিভাবে চালাতে হবে, আমিই সেটা ভাল বুঝবো। করো তো একটা কেরানীর চাকরি। একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের কী কাজ সেটার তুমি কী বুঝবে?’’



মাহবুবের ফুলগুলো আর ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখা হলো না। টেবিলের উপরে শুকিয়ে পঁচল।

মাহবুব ও লিজার নামদুটোর জায়গা অদল বদল করে দিলে কেমন হবে ঘটনাটা, চলুন তো ভেবে দেখি!





স্কুলের উপস্থিত বক্তৃতায় লটারিতে অর্থির বিষয় উঠল ‘’আমার বাবা’’। অন্য সবার মত সেও ২ মিনিট ভেবে ৩ মিনিট কথা বলার সুযোগ পেল। নিজের বাবা সম্পর্কে অর্থি বলল, ‘’আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী। আমার বাবা রোজগার করে থাকেন। ইত্যাদি ইত্যাদি’’। অনেক চেষ্টা করেও অর্থি বাবা সম্পর্কে দেড় মিনিটের বেশি বলতে পারলো না। না, পুরষ্কারের জন্য ও মনোনিত হয় নি। কিন্তু সেজন্য নয়, অর্থির মন খারাপ হলো টিচার যখন ওকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘’কী? বাবা বুঝি শুধু রোজগারই করেন, আর কিছু করেন না?’’ বাসায় ফিরেও এই প্রশ্নটা ওর মনের মাঝে ঘুরপাক খেতে থাকে। সত্যিই তো, বাবা আসলে আর কী করেন? সকালে অর্থি ঘুম থেকে উঠে বাবাকে পায় না। আর রাতে বাবা কখন ফেরেন তাও সে জানে না। ছুটির দিনগুলোতেও বাবার কাটে ভীষণ ব্যস্ততায়। বাবাকে ব্যবসার চিন্তা করা ছাড়া আর কিছু করতে তো দেখেনি ও। বাবা আসলে রোজগার করা ছাড়া আর কিছু কী করেন? সত্যিই নিজের বাবা সম্পর্কে দুটো কথা বলা কত কঠিন! লটারিতে কেন যে এই বিষয়টাই উঠল!



সবাই এখন অনেক ব্যস্ত। শীর্ষবিন্দুটিকে সবাই স্পর্শ করতে চায়। অতি মানবের মত কাজ করতে করতে জীবনটাকে আমরা নিজেরাই যান্ত্রিকতায় ডুবিয়ে দিচ্ছি। ক্যারিয়ার, খ্যাতি, টাকা সব কিছুর পেছনে উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে জীবনকে জটিল করে তুলছি। জীবনের ছোটছোট মুহূর্তের সৌন্দর্যগুলো উপভোগ করতে ভুলতে বসেছি।



যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, নিজের পরিবারকে সময় দেবার ইচ্ছে যদি থাকে তবে সেটা করা সম্ভব। অফিসের কাজ আর ব্যক্তিগত জীবন একসাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। তাই চেষ্টা করবেন, কাজ জমিয়ে না রেখে অফিসের কাজ অফিসেই সেরে ফেলার। কখনো কখনো কাজের চাপ বেশি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কাজগুলো কত রকম ভাবে সম্পাদন করা যায় তা ভাবুন। এরপরে কোন পদ্ধতিতে কাজ করলে সবচেয়ে কম পরিশ্রম ও কম সময়ে অপেক্ষাকৃত নির্ভুলভাবে কাজটি শেষ করতে পারবেন তা ঠিক করুন। মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদিও আমাদের জীবন থেকে অনেকটা সময় নিয়ে নেয়। কতক্ষন ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন ঠিক করে নিন। যখন তখন আপনাকে ফোন করে যেন আপনার পরিবারের কাছ থেকে সময়টুকু কেউ নিয়ে নিতে না পারে, সেজন্য কাউকে ফোন নম্বর দেবার সময়ে আপনার সুবিধা মত নির্দিষ্ট একটি সময় বেঁধে দেবেন। খুব জরুরি না হলে ঐ সময়ের বাইরে আসা ফোন কল রিসিভ করবেন না। ব্যস্ত সময়ের মাঝেও কিছু সময় রাখুন নিজের পরিবারের জন্য।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:২৩

এম ই জাভেদ বলেছেন: আমার বস তো নারী নয় :D :D । ভাল লেগেছে আপনার কথা গুলো।
আমরা সবাই যান্ত্রিক জীবনে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। জীবন মানে তো অর্থ উপার্জন আর প্রভাব প্রতিপত্তির পেছনে ছোটা নয়।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৩০

এইযেদুনিয়া বলেছেন: আরে, এখানে দেখি জাভেদ সাহেব এসে হাজির! :-B

এই কথাইটাই তো আমরা বুঝি নারে ভাই।

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

মুর্তজা হাসান খালিদ বলেছেন: পড়ি নাই, পরে পরমু মাস্টার আপা :)

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:০২

এইযেদুনিয়া বলেছেন: ok

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.