![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তসলিমা পেলেন মাত্র ২ মাসের ট্যুরিষ্ট ভিসা। তারপর? সত্যিইতো তারপর! এই'তারপর'এর গোলক-ধাঁধাঁ অনধিক ২ দশক যাবৎ তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। ভারত সরকার এতদিন রেসিডেন্ট ভিসা দিতে পারল আর এখন পারছেনা কেন? তসলিমা কি এখন ভারত সরকারের জন্য বিপজ্জনক? এত বড় একটা দেশ--কত জাতের, কত ভাষার মানুষ এখানে বসবাস করে---কত ধরণের আচার-বিচার-বিশ্বাস--ধর্ম তাদের--আর এমন না যে সব বিভিন্নতার মধ্যে ভয়ানক মিল---বরং যত মিল তত পার্থক্য--আর এই নিয়েই তো ভারত। এটা গর্বের কথা নয়--এটা ঘটনা--এটা সেই অবিভক্ত ভারতবর্ষের উত্তরাধিকার যা এখনও ভারত বহন করে । আগামীতেও করার কথা। এই উত্তরাধিকারে কি ভারত এখন অনাস্থা দেখাবে?
হ্যাঁ রাষ্ট্র রাজনীতি-নিরপেক্ষ হয় না। আমাদের রাজনীতি দলীয় রাজনীতি। এর বাইরে আমাদের ভাবনার ক্ষমতা খুব বেশি নেই। ভারত-রাষ্ট্রের একটা দল-নিরপেক্ষ রাজনীতি আছে নিশ্চই। আর তা নিশ্চিত যেখানে প্রতিফলিত হয় সেটা আমাদের সংবিধান। যেখানে রাষ্ট্রের অস্তিত্ত্বের পক্ষে বিপজ্জনক না হলে প্রাণসংশয়এ শঙ্কিত কোন বিদেশি নাগরিককে রাষ্ট্র তার আশ্রয় থেকে বঞ্চিত করেনা। প্রশ্নটা মানবাধিকারেরও ।
বর্তমানে তসলিমার ভিসা সংক্রান্ত খবরে পশ্চিমবঙ্গে লেখককুলের কেউ কেউ বেশ খুশি হয়েছেন। ভারত সরকারকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। তসলিমা ভারতে থাকলে তাদের একদানা শস্যেরও ঘাটতি হবেনা। তথাপি তারা খুশি এজন্যই যে এতে তার উচিত শিক্ষা হবে। কারণ তসলিমা গুরুকুল শিরোমণি টাইপের পুরুষদের যৌনাকাঙ্খা বা যৌনাচারের কথা বলে ফেলেছেন। যা তারা বিশ্বাস করতে পারেননা। তারা বিশ্বাস করতে পারেন না যে তাদের এইসব বোধ টোধ মাঝে মাঝে জাগে। আবার এটাও মানতে পারেননা যে যদি করেই থাকেন তবে এসব প্রকাশ্যে বলা কেন? এতদিন এসব প্রকাশ্যে বলা বা বলবো বলে হুমকি দিয়ে আরো 'মোর সুবিধা' আদায়ের অধিকারী ছিল পুরুষরাই। সেখানে কিনা মেয়ে মানুষ হয়ে এত বড় স্পর্ধা! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। এক যশস্বী সাহিত্যিক তো তসলিমাকে সোনাগাছির 'নন্দরাণী'র সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন যে কই তখনকার দিনের অনেক মান্যগন্য ব্যক্তিগনওত নন্দরাণীর কাছে যেতেন--কই নন্দরাণীত সে কথা পাঁচ কান করেননি । বাবুদের সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করেননি।
'লজ্জা' নামক একটি উপন্যাস লিখে বাংলাদেশে মানে নিজ দেশে তিনি বিপদে পড়েছিলেন। এমন না যে 'লজ্জা'ই তার কাল হলো। আসলে লেখালেখিতে তার অবস্থান দৃষ্টিভঙ্গী এগুলো দিয়ে একটা বৈরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েই ছিল আর সেই সময়কার বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা 'লজ্জা' তাতে ঘৃতাহুতি দিল। পূর্বকালের মত হিন্দু ক্লিঞ্জিংটা নীরবে সারা গেলনা । তা নিয়ে আবার বই লেখা! মৌলবাদীদের হাতে 'লজ্জা' একটা অস্ত্র হয়ে গেল। সন্ত্রাস ফেটে পড়ার নিয়ম মোটামুটি এইরকমই।
তো দেখা যাচ্ছে একদিকের 'লজ্জা' আর অন্যদিকের বাবুদের সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা--এই দ্বিবিধ কান্ডের জেরে এই লেখিকার আজকের এই অবস্থা। গণতন্ত্র-বাকস্বাধীনতা-লিখনীর স্বাধীনতা--মানবাধিকার--জন্মভূমির অধিকার--বেঁচে থাকার অধিকার--আশ্রয়ের অধিকার--এগুলো নিয়ে যাঁরা ভাবেন বা সময়ে সময়ে ভাবিত হন তারা নিশ্চই মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর সঙ্গে এইসব মত প্রকাশ,-এমনকি বিরুদ্ধ মত প্রকাশের তথাকথিত অপরাধগুলো গুলিয়ে ফেলবেন না । নিজ দেশে থেকে অপরাধের বিচার পাওয়ার অধিকার অপরাধীরও থাকে। এই লেখিকা সেই রকম অপরাধী--শোনা যায় যে তিনি স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চান। তার এই পরবাসের অবসান করতে পারে একমাত্র তার দেশ।
©somewhere in net ltd.