নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে দেখা এক জন্ম-কথা।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৬

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

(৬)



নিয়তির দুই পা'য়ে জল আসছে। গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ে নাকি এমনটা হতে পারে। এই সময় প্রসুতির জন্য অনেক কিছু দরকার। সুস্থ পরিবেশ, ভালো খাওয়াদাওয়া, বিশ্রাম--ইত্যাদি। কিন্তু বঙ্গদেশের নিম্নকোটির মায়েদের কাছে এগুলো বিলাসিতা। তার উপর বর্তমান অবস্থায় এগুলো নিয়ে কেউ ভাবে না। নিয়তিও ভাবেনা। অর্থাৎ ভাবার সময় কোথায়-- নিজের প্রাণ বাঁচলেত গর্ভস্থ সন্তানের প্রাণ নিয়ে ভাববে। কিন্তু শরীর, শরীরের অভ্যন্তরে যে অন্য এক শরীরের সাড়া। তাকে কে অস্বীকার করতে পারে ! সে কি টের পাচ্ছে তার গর্ভধারিনীর অবস্থা--সারা দেশ জুড়ে অসংখ্য মা বাবা ভাইবোনেদের মতো তার মা'ও তাকে পেটে নিয়ে পলায়নপর এক জীবন বেছে নিয়েছে? নিয়তি অস্বস্তি গোপন করেই চলে। মনের ঝড় থেকে শরীরকে আলাদা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা সে চালিয়ে যায়। জানেনা একদিন বা একমুহুর্ত পরের পরিণতি কী হবে। তবু এরমধ্যেই রিনরিন করে বেঁচে থাকার স্বাদটা সে মাঝে মাঝে উপলব্ধি করে। মুক্তাগাছা থেকে খুন অথবা ধর্ষণ এড়িয়ে যে সে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে এটাই কি কম কথা! শোনা যায় সারা দেশজুড়েত এখন শুধু খুন আর নারী ধর্ষণ। এক-দেশ মানুষের বিমূঢ় হাহাকার শুধু বাতাসে।





খুব কম কথার মানুষ বাবাকে একদিন নিয়তি জিজ্ঞেস করে বসলো যে কেন তারা অন্যান্যদের সঙ্গে চলে গেলেন না- মা এত কান্নাকাটি করছে--চলে গেলেইত ভালো হতো। বাবা প্রশ্ন শুনে কিছু বলার জন্য যেন কিছুটা সময় নিলেন।--সবার লগে যাইনাই কথাটা ঠিকই---সবটাত আর আমার ইচ্ছায় হয় না--তাঁর(ঈশ্বর) ইচ্ছা ছাড়া কি কিছু করণ যায়?--তা না হইলে এই সময় তর আওনের কথা না থাকলেওত তর আইতে হইলো--আর এখন তরে এই অবস্থায় কোথায় রাইখ্যা যাই। নাকি যাওয়া সম্ভব। নিয়তি পাল্টা বলার মত বলতেই পারতো--কিন্তু বাবার কথার পিঠে কথা বলার মত স্বভাব তাদের কারোরই নেই। কারণ এইটুকু কথা বলতে বলতে বাবার যে অসহায়তা ধরা পড়লো তাতে আর ইচ্ছাও করলো না। চুপচাপই বাবার সামনে কিছুক্ষণ বসে থাকলো। তবে নিয়তি মনে মনে ভাবতে লাগলো বাবা তাদের না-যাওটাকে আমার হঠাৎ করে চলে আসাটাকে দিয়ে ঢাকতে চাইছেন--এটা যেন অনেকটা খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা। বাবার অসহায়তাটা অনুভব করে মনে মনে নিয়তি ভাবতে লাগলো বাবাকে তাঁর এই অপরাধবোধ থেকে বাঁচাতে কিছু একটা তাকেই করতে হবে।



বর্ষা শেষের দিকে। শরৎএর আবহাওয়া চারদিকে। কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষের মনে নতুন করে আবার যেন বিপদের মেঘ ঘনিয়ে আসছে। শোনা যাচ্ছে চারদিকে খাল বিল হাওরের জলে টান পড়লেই মিলিটারীরা তাদের আক্রমণ আরো ছড়িয়ে দেবে। এখন পর্যন্ত যে-সব জায়গায় যাওয়া হয়নি সে-সব জায়গার হিসেব বুঝে নেবে। বর্ষার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অনেক জায়গাতেই তারা পেরে উঠেনি। সেটা এবার পুষিয়ে নেবে। এতদিন জলই যেন এই অঞ্চলের রক্ষক ছিল। জল সরে গেলেই যেন এখানকার এতদিনের নিরাপত্তায়ও টান পড়বে। নিয়তির দুঃশ্চিন্তার আর শেষ নেই।



অধীর মাঝি অনেক দিনের চেনা মানুষ। এ বাড়ির সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রায় আজন্ম। এই সময় সে অনেককেই বর্ডার পর্যন্ত পার করে দিয়ে এসেছে। এই অঞ্চলের জলপথ তার হাতের তালুর মতো চেনা। ইদানীং আবার মিলিটারী বা তাদের দোসরদের গতিবিধি সম্বন্ধেও তার একটা ধারনা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেই কারণেই হয়তো কোন বড় বিপদ তার হয়নি। মুখে কিছুটা অবিনস্ত দাড়ি রেখে সে তার বেশবাসও কিছু পরিবর্তন করে নিয়েছে। সহকারী হিসেবে নিয়েছে পুত্রসম হানিফকে। তার কাছ থেকেই শুনে শুনে মুখস্ত করে নিয়েছে কলেমার কয়েক লাইন। ফলে এই অঞ্চলে তার মতো নির্ভরযোগ্য মাঝি আর নেই। নিয়তি তার সেই অধীর কাকার সঙ্গে একদিন দেখা করে কিছু কথা বার্তা বলে এলো। ভারি হয়ে আসা পা দুটো নিয়ে তার বেশি হাঁটাও প্রায় অসম্ভব। তবু সে গিয়েছিল অধীর কাকুর বাড়িতে। এই গ্রাম ও তার সন্নিহিত অঞ্চল তার আজন্ম চেনা। তবু আজকাল বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় ভয় লাগে। অধীর কাকু বারণ করে দিয়েছে যে তার এভাবে আর আসার দরকার নেই। এরমধ্যে রাতের দিকে একদিন সে তাদের বাড়িতে গিয়ে সব শুনে বন্দোবস্ত করে আসবে। এই কথা শুনে মুখে কিছু না বললেও নিয়তি মনে মনে প্রমাদ গুনলো । কারণ অধীরকাকু বাড়িতে গেলেই তার পরিকল্পনা প্রকাশ হয়ে পড়বে। কিন্তু কিছু করার নেই। কারোর অলক্ষ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াত আর সম্ভব নয়।

(ক্রমশঃ)



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.