নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে দেখা এক জন্ম-কথা।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২৫

ফিরে দেখা এক জন্ম কথা


রবীন্দ্রবাবুর বাড়িতে সকালের ভাত খাওয়া হয়নি। কারণ রান্না হয়নি আজ। যেহেতু তাদের বাড়িটা গ্রামের শেষ বাড়ি, তাই ভোর থেকেই মানুষের আনাগোনা চলছে তাদের বাড়ি ঘেঁষে। বাড়ির পেছন দিকের ক্ষেতে পড়ে থাকা লাশ দেখতে যাওয়া-আসার এটাই সহজ পথ। আজ সকালে যে খাওয়া হয়নি তার পটভূমি গত রাতেই তৈরি হয়েছিল গুলির শব্দ শোনার মধ্য দিয়ে। অভ্যাসমত গুলির শব্দ শোনা মাত্রই তারা ঘরের পেছনে জঙ্গলে আশ্রয় নিতে যায়। কিন্তু গুলির শব্দ থেমে যাওয়ার পর কোন জন-মানুষের আওয়াজ পাওয়া গেলনা অনেকক্ষণ। তারা কি ভুল শুনেছে! একে রাতের বেলা, তায় এত কাছে গুলির শব্দ--তারপরও নিস্তব্ধ গ্রাম--মানুষ-জন কি এতই ঘুম-কাতর যে শুনতে পায়নি--। একসময় ঘরে এসে আবার শোয়ার চেষ্টা। বাচ্চাকটি ঘুমোলেও বড়রা সব নির্ঘুম। কথাহীন শুধু ভারি নিশ্বাসের শব্দ। রাত পার হয় অতি-ধীর গতিতে। কান খাড়া করে জন্তুর মত নিয়তি শুধু মাঝে মাঝে কঁকিয়ে ওঠে। এ ছাড়া সারা রাত আর কোন শব্দ নেই।

খুব সকালে উঠে রবীন্দ্রবাবু ও দিবাকর দুজনেই লাশ দেখে এসেছে। দুজনের কারো মুখেই কথা নেই। এই সংবাদ শোনার পর থেকে বাড়িটা নিস্তব্ধ। তার মধ্যে মধু সাধু একবার এসে ঘুরে গেছেন। রবীন্দ্রবাবুর সঙ্গে কথা বলে গেছেন । কী কথা বলে গেছেন তা অন্য কেউ জানে না। শ্রীমন্তপুর গ্রামে এখন সাকুল্যে তিনটি হিন্দু পরিবার থাকে। সারাদিন শু্নশান থাকে । তাদের চার শরিকের পুকুর ঘাট সারাদিন খা খা করে। একা যেতে ভয় ভয় লাগে। রবীন্দ্রবাবুর বাড়ির কাছাকাছি কেউ নেই। শুধু রাতের দিকে অমৃতপুরের কয়েকজন মুসলমান যুবক তাদের পাশের এক শরিকের বাড়িতে শুতে আসে। এটাও এই হিন্দু পরিবারটিকে রাতে ভরসা দেয়ার জন্য। কিন্তু এভাবে আর কতদিন।

মা সুপ্রভার সঙ্গে মেয়ে নিয়তির সম্পর্কটা এখন তলানীতে এসে ঠেকেছে। মায়ের এই রূপ নিয়তির কাছে অচেনা। দুজন দুই যুগের মা হলেও উভয়েই সন্তান অন্ত প্রাণ। অথচ এখনকার এই চরম বিপদের দিনে মা কেন যে তার দেশছাড়তে না পারার জন্য নিয়তির হঠাৎ উপস্থিতিকেই দায়ী করে বসলো তা নিয়তি ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। এখনে আসার পর থেকে মায়ের এই রূপ নিয়তি ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেছে। বোঝা যাচ্ছে যে মায়ের মনে চলা ঝড়ের কোন বিরাম নেই। সেই ঝড়ে নিয়তি ঠিক কোথায়, কোন অবস্থানে বুঝতে অসুবিধে হলেও মাকে দেখলেই নিয়তির বুক ঠেলে কান্না আসে। মাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে জিজ্ঞেস করতে মা তুমি এমন কেন হয়ে যাচ্ছ। তুমি কি আমার উপর খুব রাগ করেছো। আমিত কতবার বললাম আমি থাকছি বাড়িতে--তোমরা যাও--কপালে আমার যা আছে তাই হবে--ভগবান রক্ষা করলে বেঁচে থাকবো না হলে থাকবো না--এর জন্য তোমরা তোমাদের যাওয়া আটকাও কেন--। সারাদিন মনে মনে এ জাতীয় ভাবনা ভাবতে ভাবতে নিয়তির দিন কাটে।

বিকেলের দিকে লাশ নিয়ে চলে যাওয়ার পর রাস্তাঘাটের ভিড়ও কমে। এই সুযোগে কোনমতে পুকুরে একটা ডুব দিয়ে এসে সুপ্রভা উনুন ধরিয়ে চাল ডালে একসঙ্গে বসিয়ে দেয়। সারাদিন না খাওয়া বাচ্চাগুলোকে কিছুটা খাইয়ে বাকিটা শোয়ার ঘরে নিয়ে চলে যায়। সন্ধ্যে পার হতে না হতেই আশপাশ একেবারে শুনশান। রবীন্দ্র বাবু দিবাকরও ঘরে এসে গেলেন। অবেলায় খেয়ে বাচ্চাগুলো এরমধ্যেই ঘুমে কাদা। নির্ঘুম জেগে থাকার মধ্যে শুধু শ্বশুর জামাই সুপ্রভা আর নিয়তি। তাদের ঘুম ইচ্ছের বিরুদ্ধে অজান্তে কখনও আসলে আসতে পারে। একসময় নিঃশব্দে চারজন খেয়ে নিল কিছুটা। নিভিয়ে দিল বাতিও। ঘরদোরে রাত্তিরে বাতি রাখা এখন অশুভ অমঙ্গল প্রাণঘাতি। জীবনের ব্যাকরণের এই নিঃশব্দ বদল সকলেই নিঃশব্দে মেনে নেয়।

দমবদ্ধ ঘরের গুমোটে কিছুক্ষণ কাটিয়ে দিবাকর বাইরে বারান্দায় আসে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেত বাইরে আসতেই হয়। কিন্তু দিবাকর ইচ্ছে করেই আজ আসে। শ্বশুরের সামনে বিড়ি খাওয়া যায় না বলে সকলেই ধরে নেয় সে বাইরে বিড়ি খেতেই গেছে। বাইরে আজ রাতের প্রহর যেন অন্যরকম। আজ রাতের অন্ধকারও অন্যরকম। আজ বাস্তবে এক রকম মৃত্যুকে দেখা গেছে। আমাদের জন্য হয়তো অপেক্ষা অন্য রকম। বিড়িটা জ্বালিয়ে হাতের মুঠোয় নিয়ে টানছে দিবাকর। সামান্য আলোর ফুলকি যেন কারোর চোখে না পরে। সাহসী সে কোনকালেই ছিল না। এখন সাহস ভীতি এগুলো তার কাছে অর্থহীন হয়ে গেছে। শরীর খুব দুর্বল হলেও তার অনুমান শক্তি এখন আরো প্রখর। বিগত এক মাসের শ্রীমন্তপুর বসবাসে এদিকওদিক ঘোরাঘুরিতে সে বুঝে গেছে জায়গাটা আপাত নিরাপদ মনে হলেও বিপদ একটা আসতে পারে । উঠোনের এককোনে একবার পেচ্ছাব করে দিবাকর আবার উঠে আসে বারান্দায়। বারান্দার একদিকে ঢেঁকিঘর, সে তার মধ্যে ঢুকে পড়ে দ্বিতীয় বিড়িটা ধরায়। ভাবনায় রয়ে গেছে সেই বিপদের কথাটা। সৈয়দ আকবর আলী হতে পারে সেই বিপদের কারণ। আর সেটা ঘটতে পারে জব্বারের জন্য। (ক্রমশঃ)ফিরে দেখা এক জন্ম কথা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.