নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে দেখা এক জন্ম কথা।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২১

[link|ফিরে দেখা জন্ম কথা ৮



সময় কাটানোর জন্য অনেক সময় দিবাকর অমৃতপুর তথা আমিত্তিপুরের শেষ দিকে আকবর আলী সাহেবের বারান্দায় গিয়ে বসে। বসার জন্য সেখানে দু একটা টুল থাকে। তবে এখন আর বিশেষ কেউ আসে না। প্রায় নির্জন ছায়াঘেরা বাড়িটির বারান্দায় একটি অতিপুরনো ইজিচেয়ারে প্রায় আধশোয়া অবস্থায় মানুষটি ঠিক সকাল সন্ধ্যে বসে থাকে। মানুষটি সৈয়দ আকবর আলী, বি এ, কমলপুর গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। অশীতিপর। ছোট সংসার ছিল তার । স্বামী স্ত্রী এক কন্যা এক পুত্র। কন্যাটি বিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক আগে। বর্তমানে স্বামী সন্তান নিয়ে জাপানে থাকে। পুত্রটি ছোট--সে বর্তমান সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছিল। গত ২৫ শে মার্চের পর থেকে তার কোন খোঁজ নেই। এখন বাড়িতে তারা বৃদ্ধ বৃদ্ধা থাকেন। শিক্ষিত মানুষ হওয়ার কারণে গ্রামে তার সুনাম প্রভাব দুটোই ছিল । ধীরে ধীরে বয়সের সাথে সাথে সে সবে ভাটার টান। রবীন্দ্রবাবুর জামাই হিসেবে দিবাকরকে তিনি স্নেহ করেন। এবার তিনি তার কাছ থেকে মুক্তাগাছার খবরাখবর নিয়েছেন। গল্পত একদিনে শেষ হয়না। তাই দিবাকর আকবর আলীর কাছে তার মেয়ে জামাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া জাপান মেড রেডিওর শোনা খবর শুনতে যায়। নিজের ছেলের বিষয়ে তিনি যেমন কিছু বলেন না তেমনি কেউ বলুক তা চানও না। দিবাকর তাই এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করে না। তবে আকবর আলী মাঝে মাঝে রবীন্দ্রবাবুর বর্ডারের দিকে চলে না যাওয়ার জন্য বলেন এটা একটা সাবাসী কাজ বুজলা। যার চার চাইড্ডা পুলা ইন্ডিয়ায় হে কিনা এই সময়ে দেশে রইয়া গেল। একদিন সন্ধ্যেবেলায় আকবর আলীর বাসা ফেরত দিবাকরকে রাস্তায় ধরে জব্বার।

--এই মিয়া হুনেন। ভিন জায়গার মানুষ আফনে--এইহানের ধরণ ধারন বুঝেন কেমন জানি না--তয় একটা কথা কই ওনার ছ্যাড়া (ছেলে)লতিফ্যা হুনি মুক্তি হইছে। মুক্তির বাড়িত যাওন আওন ভালা ততদিনই যতদিন হে ধরা না পড়ছে। ধরা পড়লে---আফনের ভালার জন্য কই--হিন্দু মানুষ--গেরামের জামাই --না যাওনইত ভালা না হি কন! চোখে না পড়ার মত ছেলেটি রাতারাতি কত এলেমদার হয়ে উঠেছে--দিবাকরকেও সাবধান কইরা দিল। জব্বারের কথার পিঠে কথা না বলাতে জব্বার আর কিছু না বলে বলে খাইন একখান সিরেট খাইন--বলে সে একটা সিগারেট বের করে দিল দিবাকরের হাতে। বিনাবাক্যে দিবাকর সিগারেটও নিল এবং ধরিয়েও নিল। নির্বাক দিবাকরের সামনে জব্বার মুখ বন্ধ না করে কথা বলেই যাচ্ছে।---বুঝলাইন দেশের ভাব গতিক ভালা ঠেহে না। আফনেরার সাহস আছে কই। এহনও আছেন। তয় এদিকটায় হেরার নজর এহনও নেই---কবে অয় আল্লায় মালুম---আরে আমিই খালি কইয়া যাইতাছি--আফনে কিছু কন--কই যেন আফনেরার বাড়ি আছিল--হেইয়ানের খবর কইন--। শুনতে শুনতে দিবাকর সিগারেটটা প্রায় শেষ করে এনেছিল। যাওয়ার আগে শুধু বলল-- ভালা পাইলাম আফনের কথাত--অহন যাই রাইত অইতাছে--বলে দিবাকর আর দাঁড়ায় নাই। দিবাকর জব্বারের গায়ে এমন একটা গন্ধ পেল যা সে মুক্তাগাছায় প্রায়ই পেত। শ্রীমন্তপুরের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ঘুমিয়ে থাকা ষষ্ট ইন্দ্রিয় কটা গা ঝারা দিয়ে জেগে উঠলো এই সন্ধ্যারাতে।

কী আশর্য, দুটোদিনও পার হয়নি, তার মধ্যেই লাশ পড়ে যাওয়ার ঘটনা! খুনোখুনির জন্য বেছে নেয়া স্থল এইখানেই বেছে নিতে হলো!। দিবাকর সারাটা দিন আজ জব্বারের মুখ মনে মনে দেখেছে। সে আদতে ভীতু মানুষ। খুন হওয়া বা খুন দেখা--এ দুটোর থেকে পালাতেইতো সে এতদূর এলো--তবু এসব তার পেছন ছাড়লোনা! তা হলে আর কতদূর যাবে সে! মৃত্যু-ভয়ের সঙ্গে এই ক'মাস ঘর করতে করতে যখন প্রায় যখন গা সওয়া হয়ে যাচ্ছিলো মৃত্যু-ভয় এর সঙ্গে ঠিক তখনই তার দেখা! সাধারণত এই সব অসহায়তা নিয়ে আলোচনা সে একদম ভালবাসেনা। নিজের ভেতরেই সব রেখে দিতে চায়, যাতে অন্য কেউ আবার ভয়ের সংক্রমণে আক্রান্ত না হয়ে পড়ে। কিন্তু আজ তার কেন জানি নিয়তির সঙ্গে একান্তে একটু কথা বলার জন্য ব্যাকুলতা বোধ করছে। সে কি ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়ছে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.