![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[link|[link|http://www.somewhereinblog.net/blog/ekaeka007/30059712||ফিরে দেখা এক জন্ম কথা ৯
১০
ঢেঁকি ঘরে বসে আজও দিবাকর সেদিনের মত সামান্য হলেও যেন গন্ধটা পাচ্ছে। ভুলে যাওয়া গন্ধটা কেন এভাবে ফিরে ফিরে আসছে বুঝেও বুঝতে পারছেনা দিবাকর । সন্ধ্যেরাতের গাঢ় অন্ধকার এখন কি একটু ফিকে হয়ে আসছে। ঢেঁকিঘরের দরজা দিয়ে পূবের অনেকটা অংশই এখন দেখা যাচ্ছে। নিয়তিদের এই বাড়িটাই এই গ্রামের শেষ বাড়ি। তারপর দুচারটে সবজি ক্ষেত আর তারপরই শুরু হলো জঙ্গল। খুব গভীর জঙ্গল। অথচ আশ্চর্য রাতের স্বাভাবিক শিয়ালের ডাক পর্যন্ত এখন আর শোনা যায় না। কুকুরও কি নেই! দিনে একটা দুটো দেখা গেলেও রাতে সেই কবে থেকেই নেই এদিকে। তৃতীয় বিড়িটা ধরানোর আগে হঠাৎ দিবাকর কান খাড়া করে শুনতে পেল মানুষের গলা। কিছুটা ভয় পেলেও বিড়িটা আড়াল করে ধরিয়ে নিল। ভাবলো পাশের বাড়িতে আমিত্তিপুরের কটা ছেলে শুতে আসে--বোধ হয় ওরা আসছে। কিন্তু ওরাত এতজন থাকেনা। এত দেখি বেশ কজন। ইতিমধ্যে তারা উঠোনেও ঢুকে পড়েছে। আবছা অন্ধকারে ভিড়টা কিছুটা কাছে আসতেই দেখা গেল আমিত্তিপুরের সালাউদ্দিন চাচা। সঙ্গে আরো কয়েকজন। দেখে বুক থেকে একটা পাথর নেমে যাওয়ার অনুভূতি টের পেল দিবাকর। যেখানে আজ অন্তত রাজাকার বা শান্তি বাহিনির দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল অনেকটাই।
সালাউদ্দিন চাচা এখন এই দুই গ্রামের সকলের চাচা। আসলে তিনি রবীন্দ্রবাবুর বাল্যবন্ধু। একসঙ্গে গ্রামের স্কুলে পড়েছেন একসময়। চাচা এখন এই বাল্যবন্ধুকে নিয়েই পড়েছেন বিপদে। গ্রামের সবাই যখন আমিত্তিপুরের মুরুব্বীদের পরামর্শ শুনে নৌকা ভাসালো বর্ডারের দিকে তখন তিনি নড়লেন না। এখনত শুনি শ্বশুর বাড়ি থেকে বাচ্চাকাচ্চাসহ তার মেয়ে জামাইও এসে গেছে। এখন তার দেখাশোনার একটা দায়িত্ব তিনি আর কীকরে ভুলতে পারেন। আজ সারাদিন নানা উপদ্রবের মধ্যে কাটলেও সন্ধ্যেবেলা মনে হলো যে যাই দেখে আসি কেমন আছে। উঠোনে দাঁড়িয়েই তিনি হাঁক দিলেন--কই রবীন্দ্র ঘুমায়া পড়ছ নাহি। আমি সালু। সালাউদ্দিনের ডাকের মধ্যেই ঢেঁকি ঘর থেকে আবছা অন্ধকারে বেরিয়ে আসলো দিবাকর।-কেডা? শোনার আগেই দিবাকর বলে উঠল চাচা আমি দিবাকর। দিবাকর নামটা চাচার মনে না থাকলেও আন্দাজ করে নিলেন যে জামাইই হবে। --অ তা তুমি আন্ধারে ভিত্রে খারোয়া আছো ক্যান?
এরমধ্যেই দরজার একটা কপাট ফাঁকা করে রবীন্দ্রবাবু দেখে নিলেন বন্ধুকে। বল্লেন--অ আওনের সময় পাইলা! আইও বও। কিন্তু সালাউদ্দিন বসার জন্য আসেনি। বললো--রাইত হইতাছে অহন বসতামনা--কাইল বিয়ানে আসবাম--আর হুনো এই কয়ডা ছেড়া পাশেই মদনের ঘরে থাকবো--ভয় পাইলে হাকডাক কইরো। রাইতে ভয়ের কিছু নাই। খোঁজ খবর লইছি-বুজছো। অন্ধকারে দুই বন্ধু হাত ধরে একটু দূরে গিয়ে কিছু পরামর্শ করলো। তারপর সালাউদ্দিন চলে গেল। পাশের বাড়ির দিকে ছেলেরাও হাঁটা দিল। হঠাৎ দম আটকানো নিস্তব্ধতা ঘেরা এই প্রান্তিক বাড়ির উঠোনে যেন প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল। সবাই চলে যাওয়ার পর অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালা থেকে সেই নিস্তব্ধতা আবার লাফ দিয়ে নেমে এল উঠোনে। দিবাকরের এরপর আরো কিছুক্ষণ ঢেঁকিঘরে সময় কাটানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু নিজের মন আর সাড়া দিল না।(ক্রমশঃ)
©somewhere in net ltd.