নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে দেখা এক জন্ম কথা

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪৪

ফিরে দেখা--১০

১১

ভয় নেই--সালাউদ্দিন বলে গেছে। এই খবর ঘরের ভেতর কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করলো বোঝা মুষ্কিল। মনে মনে সকলে আস্বস্থ হলো ঠিকই কিন্তু প্রকাশ পেল না। প্রকাশ করতে গেলে কথা বলতে হয়। কথা সকলেরই সন্ধ্যে থেকে বন্ধ আছে। রবীন্দ্রবাবু ঘরে ঢুকে নিজের জায়গায় শুয়ে এক দুবার ভগবানের নাম নিলেন। দিবাকর এবার আর বাইরে না থেকে সেও গিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই একজায়গায় শুয়ে পড়লো। দিবাকর 'ভয় নেই'--কথাটা মনে মনে দুবার আওড়ে দেখলো কী অসাধারণ তার শক্তি আর ব্যঞ্জনা। অসংখ্য ভয়ের মধ্যে সালাউদ্দিন চাচার কথাটা কেমন গুন গুন করতে করতে ভয় তাড়াচ্ছে। তাড়াচ্ছে সেই গন্ধটা যা সে জব্বারএর শরীর থেকে পেয়েছিল বা কিছু আগে তাদের বারান্দায় বসে বসেও পাচ্ছিলো। এই রাতে আর ঘুম আসবে না। কারণ এত খাড়া কান নিয়ে ঘুম কীভাবে হয়। একটা পতঙ্গ ওড়ার শব্দও যেন ভীষণ জোরে শোনা যায়। কান যেন শব্দ শোনার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে। বিনিদ্র রাত স্বভাবতই দীর্ঘ হয়। যত দীর্ঘই হউক তার শেষ আছে। রাত হলেই এখনকার মানুষ সকালের প্রত্যাশা করে। এখন রাত কেউ ভালবাসে না। দিবাকর আগামী কাল সকালে উঠে কী করবে বা কী করা উচিত ভাবতে লাগলো।

আওয়াজটা প্রচন্ড জোরেই হলো। এত জোরে যে দম বন্ধ হওয়ার মত। একটা হৈচৈও যেন কানে আসছে। কে যেন হেঁড়ে গলায় বলছে --কাট শালার মালাউনের বাচ্চা বেকটিরে কাট---। পাশে বসে নিয়তির বড় ছেলেটা--অ বাবা কী কর কী কর--বলে বাবাকে ধাক্কা দিতে লাগলো। সকাল হয়ে গেছে কিছু আগেই। উঠেও গেছে সকলে। ছেলের ধাক্কায় ধড়ফড় করে উঠে বসলো দিবাকর। সারা গা ঘামে ভেজা। ছেলেটা অবাক চোখে বাবাকে দেখছে। দিবাকর গামছাটা টেনে মুখ মুছতে শুরু করলো। মুছতে মুছতে ছেলেটার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললো--তুই উটছ নাই অহনও--যা ঘাটে গিয়ে মুখ ধুইয়া আয়। ছেলে বিছানা থেকে নড়েনা। গোল গোল চোখ করে বাবাকে আবার বলল--বাবা কী অইছিল তুমার--গো গো করতাছিলা ক্যান। দিবাকর উত্তর না দিয়ে হাসে। বলে--ও কিছুনা স্বপ্ন দেখতাছিলাম। ল যাই মুখ ধুইয়া আসিগা--। বলতে বলতে বাপ ছেলে উঠে পড়লো। রান্নাঘরে গিয়ে কিছুটা ছাই নিয়ে বাপ বেটা দু জনেই দাঁত মাজতে মাজতে পুকুর ঘাটের দিকে হাঁটা দিল। গ্রামের রাত যেমন আগে আগে হয়, সকালও তেমনি আগেই হয়। দিবাকরের উঠতে আজ বেলাই হয়ে গেছে। বেশ সময় নিয়ে আজ বাপ বেটা দাঁত মেজে মুখ ধুয়ে পুকুরঘাট থেকে ফিরে দেখলো বাড়ির বাচ্চারা রান্নাঘরে সারি দিয়ে খেতে বসে গেছে। ফেনা ভাত, যাকে ভাটির দেশে বলে মাওড়া ভাত, সঙ্গে একদলা করে আলু সিদ্ধ মাখা। তা দিয়ে সবাই হাপুস হুপুস করে খাচ্ছে। তাদের বাপ বেটারও খাওয়ার ডাক পড়ে গেল।

বাড়িতে রবীন্দ্রবাবুকে দেখা যাচ্ছেনা। কিন্তু বারান্দায় একটা জলচৌকিতে বসে আছে অধীর মাঝি, নিয়তির অধীর কাকু। কাছাকাছি মাটিতে পিঁড়ি পেতে বসে নিয়তি। ফ্যাকাসে মুখ। কিছু কথা বোধ করি হচ্ছে। ঐদিকের কথায় কান না দিয়ে বাপ বেটা রান্নাঘরের ঢুকে গেল। সুপ্রভা নিঃশব্দে তাদের দুজনকে ভাত বেড়ে দিল। খেতে খেতে দিবাকরের আবার সকাল বেলা ঘুমের ভেতর দেখা স্বপ্নটার কথা মনে পড়লো। মনে পড়লো অধীর মাঝির কাছে আগে একদিন নিয়তি গিয়েছিল। কীসের জন্য সেটা দিবাকর জানে। নিয়তিকে সে যতটুকু চেনে তাতে জানে যে নিয়তি খুব জেদি হলেও মাথাটা খুব পরিষ্কার। ভরসা করা যায়। শরীরের এই অবস্থায় সে নিশ্চই এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার কথা আর ভাবছে না। কিন্তু তার মনে একটা অন্য আশংকাও দেখা যাচ্ছে যে তার অগোচরে তাদের মা মেয়ের মধ্যে কোন কথা হয়ে গেছে কিনা। এসব ব্যাপারে আগাম কিছু জানার মত অবস্থান দিবাকরের তার নিজের বাড়িতেও ছিলনা, এখানেও নেই। কিন্তু মানুষের চিন্তার মধ্যে অনেক অপ্রত্যাশিত বাঁক থাকে। সবসময় হিসাবের বাইরে থাকা দিবাকর খেতে খেতে তেমনই একটা অপ্রত্যাশিত কাজ করে বসলো। শ্বাশুরির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো--মা আফনেরা আর সময় নষ্ট না কইরা এইবার রওনা দিয়া দেন। আমরা আছি বাড়িতে---। কপালে যা আছে সবার তাই হইব । শ্বাশুরি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন--হ বাবা, আমার কথায় কি আর অইব--তুমার শ্বশুররে কও। (ক্রমশঃ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.