![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফিরে দেখা এক জন্ম কথা১২
১৩
আজ সকালে রবীন্দ্রবাবু কিছুক্ষণের জন্য আমিত্তিপুরে গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন মানে তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ডেকেছিলেন বন্ধু সালাউদ্দিন। সেখানে এক নিভৃত স্থানে বসে দুই বন্ধুতে অনেক পরামর্শ হলো। সালাউদ্দিনের বক্তব্য এবার বাড়ি ছাড়। আরত ভরসা পাই না। চারটে লাশ পাওয়ার প্রতিক্রিয়া এখনও শুরু না হলেও অচিরেই যে শুরু হবে বোঝা যাচ্ছে। শুধু একটু জল কমার অপেক্ষা। মধু সাধু বা আর এক বাড়ির একমাত্র বৃদ্ধা বিধবা;সাবিত্রীর মাকে নিয়ে চিন্তা নেই--আমিত্তিপুর করেও না তা--কিন্তু সজ্জন সম্মানীয় রবীন্দ্রবাবু--যার এমনিতেই ইন্ডিয়ার যোগাযোগ আছে--যার চার চারটে ছেলে সেখানে আগেই পার হয়ে গেছে--তারা এখন সেখানকার নাগরিকও বটে--তার পক্ষে রেহাই পাওয়া মুষ্কিল। বন্ধু মধু সাধুর কথায় আর তার ভরসা করা ঠিক হবে না।
বিচক্ষণ সালুর যুক্তির কাছে রবীন্দ্রবাবু আর কথা খুঁজে পেলেন না। একসময় মেনেও নিলেন। কিন্তু একটা ভাবনা তার মাথায় নতুন করে বাসা বাঁধলো যে সালুর কথার সঙ্গে নিয়তি বা সুপ্রভার কথার খুব তফাৎ দেখা যাচ্ছে না। যদিও তা নিয়ে বেশি ভাবার সময় তখন নেই। বাড়ি ফিরে দেখেন বারান্দায় বসা অধীর । সকালের খাওয়ার পর খুব দ্রুতই তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে যায় বড় ঘরে বসে।
দিবাকর বের হওয়ার পরপরই সুপ্রভাও উঠে পড়লেন। রান্না বসাতে হবে। ঘরে অধীর মাঝির কাছ থেকে রবীন্দ্রবাবু জলপথটা সম্পর্কে জেনে নিচ্ছেন। বর্ষা কিছুটা স্তিমিত।তবু জল এখনও সর্বত্র। খাল বিল হাওড় বাওড় নদী নালা ধরে ধরে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত যেতে বাধা নেই। বাধা শুধু রাজাকার আর শান্তি বাহিনির--এই পথে মিলিটারির দেখা পেতে পেতে সেই ময়মনসিং। সেখানে গিয়ে অবস্থা বুঝে কাজ করতে হবে। সেরকম নিরাপদ ঘাট পেলে তবেই তাদের নামিয়ে দিয়ে অধীর ফিরে আসবে। 'পোয়াতি রুগী হাসপাতাল যায়'--এটাই সব জায়গায় বলতে হবে। ময়মনসিং এ নেমে তেমন মনে হলে হাসপাতালে একবার যাবে। ফোলা পা এর জন্য অষুদ নিতে। খুব জটিল কিছু না হলে পোয়াতিদের এখনও হাসপাতালে যাওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়নি। সব খুটিয়ে খুটিয়ে জেনে নেওয়া এবং কিছু পরামর্শ দেওয়া সবই রবীন্দ্রবাবু করলেন। কিন্তু মনের ভেতর স্বস্থি কোথায়! ঈশ্বরে আস্থাবান মানুষও কেমন যেন আস্থা রাখতে পারছেন না। পাঁচ টাকা অগ্রিম নিয়ে অধীর মাঝি চলে গেল। পরিবেশটা বুঝে ফেলার কারণেই বোধ হয় যাওয়ার সময় রবীন্দ্রবাবুকে বলে গেল--দাদা অধীরের উফরে ভরসা রাইখেন--ভাইবেন না--পোয়াতি মায়েরে লইয়া যাইয়াম--এইডা অনেক বড় কথা--অধীরের জান ধরা রইলো। বহুদিনের পুরনো মাঝি। কতদিনের সম্পর্ক এবাড়ির সঙ্গে। বর্ষায় বিপদে আপদে একমাত্র ভরসা। নৌকাই তার মূল জীবিকা । তবে খরার দিনে সে মাছও বিক্রি করে। জল বা জলজীবী মানুষের প্রকৃতি তার জানা। রবীন্দ্র বাবু পুরনো কথা মনে করে নিজের ভেতরে ভরসার জায়গাটা একটু শক্ত করলেন যেন।
সন্ধ্যার আগে আগে দিবাকর বার দুয়েক নৌকাঘাটে গেল এলো। রেখে এলো মালপত্র। রেখে এলো তোলা উনুন,কিছু কিছু চাল ডাল তেল লবন আরো কিছু টুকিটাকি। বড়ছেলেটা যাবে না। দাদু দিদার কাছে থেকে যাবে । এই সময় থেকে যাওয়া মানে ছেলের ভাগ্যও তার দাদু দিদার সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া। পেছনে একটা আবছা পরিকল্পনাও আছে যে অধীর ঠিক মত নিয়তিদের পৌঁছে দিতে পারলে পরের বার অধীরের নৌকাতেই তারাও ভেসে পড়তে পারে। এখানে কি নিয়তি তার মায়ের একটি দৃষ্টান্ত অনুসরন করলো যা ঘটেছিল আরো ক'বছর আগে?
(ক্রমশঃ)
©somewhere in net ltd.