![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফিরে দেখা---৩৬,৩৭
৩৮
ধান কাটার কাজ শুরু হওয়ার পর মনে হচ্ছিল দেশটা যেন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু না, গতরাত থেকে কেন্দুয়াতে ভীষণ গোলমাল। মানুষজন সেখান থেকে পালাচ্ছে। চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিটারিদের ব্যাপক লড়াই । নেত্রকোণার সঙ্গে কেন্দুয়ার সড়কটা মেরামত করেই তারা মোহনগঞ্জের বদলা নেয়ার জন্য মনে হয় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শ্রীমন্তপুর থেকে অনেকটা দক্ষিণে কেন্দুয়া। এদিক থেকে তাড়া খেয়ে রাজাকারদের দলবল সব ওইদিকেই ঢুকে গেছিল কিনা কে জানে। শোনা যাচ্ছে প্রথম লড়াইটা হচ্ছিল রাজাকারদের সঙ্গেই। পরে খবর পেয়ে মিলিটারিরা নেত্রকোণা থেকে এসে যোগ দেয়। আমিত্তিপুরের যারা পরিবারের লোকজন কিছু ওদিকে পাঠিয়ে ছিল তারা তাদের আজ সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এইসব নিয়ে সালাউদ্দিন চাচা খুব চিন্তিত। চাচা আরো চিন্তিত কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের দলটা উনি সন্দেহ করছেন লতিফের। আমিত্তিপুরের অনেকের বাড়িতেই এখন খেত থেকে কেটে আনা ধানের স্তুপ। কিছু মাড়াই হয়েছে, কিছু এমনি রয়েছে। আগুনটাগুন লাগলে সাঙ্ঘাতিক বিপদ। বছরের খোরাক আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। তাই আজ রাতে আবার রাত-পাহারার দল তৈরি হয়েছে। সেই দলে আজ দিবাকরও আছে। দিবাকর নিজেকে আর আলাদা ভাবতে পারছে না। সেও রাতে খাওয়ার পর ঘর থেকে একটা পুরনো জংধরা বল্লম নিয়ে বেরিয়েছে। দিবাকরের এই রূপ নিয়তির কাছে অচেনা। নিয়তি বাঁধা দেয়নি। বরং যাওয়ার সময় হাত ধরে বলে দিয়েছে যাতে সাবধান সতর্ক থাকে।
মাঝরাতের দিকে শোনা গেছে ব্যাপক গুলিগোলার শব্দ। রাত-পাহারার দলের মতে মনে হয়েছে ওটা মোহনগঞ্জের দিক থেকে আসছে। রাত পাহারার দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে বড় একটা দল রয়েছে দিবাকরদের বাড়ির পরে যে জঙ্গল আছে তার আশ পাশে। অন্য ছোট দলটা আমিত্তিপুরের ঐদিকে সরিষার খালের নৌকা-ঘাটে। নিয়তি রাতে টের পেয়েছে তাদের বাড়ির কাছাকাছি লোকজনের উপস্থিতি। আশ্চর্য,অনেক দিন পর নিয়তি রাতটা খুব নির্ভয়ে কাটালো। কিছুটা ঘুমলোও। অবশ্য সারা গ্রাম প্রায় জেগে জেগেই পার করলো রাত। ভোরবেলা দিবাকর ফিরে এলো। তখনও তার খুব উৎসাহ। যেন যুদ্ধজয় করে ফিরেছে। বললো যে উত্তর দক্ষিণ দুই দিকেই বুঝলা মুক্তিযোদ্ধারা জিততাছে। ছেলেরা সাঙ্ঘাতিক ফাইট দিতাছে । নিয়তি অবাক হয়ে শুনে তার কথা । কোনদিন তার মুখে কোন উজ্জীবিত বাক্য-কথা শুনেছে বলে মনে পড়ে না। শুনে মনে হয় যেন মুক্তিযোদ্ধারা তার খুব চেনাজানা লোকজন।
সত্যি সত্যি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আনাগোনা কথাবার্তায় মনে হলো যেন ভাল কিছুই হয়েছে। গত কয়েকমাসে যে মানুষগুলো একটানা মৃত্যুভয়ে চুপসে গিয়েছিলো তারাই এখন চওড়া করে হাসছে—চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে রাইফেল নিয়ে মিলিটারি এলেও তারা তাদের লাঠিপেটা করে সাবার করে দেবে। মুরুব্বীরা কম বয়সীদের কাছে ঘেঁসতে পারছে না। কারণ তারা উত্তেজনায় পাকিস্তানী মিলিটারীদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে যোগ করছে স্থানীয় কুখ্যাত খিস্তিগুলো। শুধু দূর থেকে তারা হাঁক পারছেন—এই তরা অহন বাড়িত যা—ঘুমা গিয়া---রাইতভর জাগন রইছস—
কিছুদিন যাবত এসব অঞ্চলে লবণের অভাব একটু একটু করে বোঝা যাচ্ছিলো। এখন মোটামুটি কেরোসিন আর লবণের আকাল শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাজার আজ বসার কথা। স্নান খাওয়া করে দিবাকর ঘুমোচ্ছে। রোদটা পড়লে ডেকে দিতে হবে বাজারে যাওয়ার জন্য। আর যা কিছু হউক, লবণ ছাড়া খাওয়া ক্যামনে --! এরমধ্যে সাধু জেডা এসে উপস্থিত---কী মাইয়া আছ কেমন---ক’দিন খুজখবর নিতাম পারি নাই---ভাবলাম যাই আজ একবার দেইখ্যা আসি---রবীন্দ্র’দার খবর পাইছ? নিয়তি বললো—হ জেডা মশয়, খবর পাইছি—তেনারা ভালামতে এলংবাজার গিয়া উটছেন। অইডা ইন্ডিয়া। --উত্তরে সাধু—মাথার উপর দু হাত তুলে বললেন জয় রাধা মাধবের জয়—সবই তার ইচ্ছা—কৃপাসিন্ধু তিনি, তিনিই সবাইরে রক্ষা করবেন। বিভিন্ন খবরে মানুষ এতটাই একই সঙ্গে আস্থাবান এবং আস্থাহীন যে এখন কিছুদিন আর মধুসাধু গ্রাম বেঁধে দেয়ার জন্য হাততালি দিয়ে প্রদক্ষিণ আর করেন না। সাধুজেডাকে এগিয়ে দেয়ার সময় নিয়তি বললো—কাইল যোগেশদারে একটু এইহানে আইতে কইবেন। নেত্রকোণার থাইক্যা ফিরনের পর কিছুদিন পা ফোলাডা কম আছিল। অহন আবার বাড়তাছে। দেহি যোগেশদা কী কয়-- ।
সন্ধ্যার পর পর দিবাকর বাজার থেকে ফিরলো। ফিরলো একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে। লবণ কেরোসিন নিয়ে বাজারে গন্ডগোল। বাজারে টহল দেয়া রাজাকার বাহিনি আজ আবার বাজারে আসে। তাদের দাবী লবণ কেরোসিন যতটা তারা কিনতে চাইবে ততটাই দিতে হবে। বাজারের মানুষ রাজি হলোনা। এককথা দুকথায় হাতাহাতি থেকে লাঠালাঠি। রাজাকার লোকদের একজনের হাতে আজও বন্দুক ছিল। সে বন্দুক তাক করে ভয় দেখাতে শুরু করলো। লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। কিন্তু কোথা থেকে তিন জন রাইফেলধারী ছেলে হঠাৎ এসে বাজারে উপস্থিত। তারা এসে বন্দুকওলা রাজাকারকে ধরে প্রচন্ড মার দিল। বাকি ক’জন পালাতে গিয়েও পালাতে পারলোনা । মানুষজন তাদের ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললো। মারমুখী মানুষজনকে রাইফেলধারীরা নির্দেশ দিল কোনরকম গন্ডগোল না করতে। অবশ্য ইতিমধ্যেই তাদেরকে যথেষ্ট মারা হয়ে গেছে। আরো মারতে চাইছে কেউ কেউ। এর জন্য দু একবার জোর ধমকও শোনা গেল।তাতে কাজ হলো। তাদের একজন একটা টুলের উপর দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো যে সবাইকে আধা সের করে লবণ আর আধ বোতল করে কেরোসিন বিক্রি করতে হবে। আজ যারা পাবে না কাল আবার তাদের দেয়া হবে। কথা শুনে মানুষজন অবাক। এরা কারা? পরিচয় জানতে চেয়ে কে একজন ফিস ফিস করছিল। তাকে এদের একজন বলেছে একটু পরেই দেখতে পাবেন। সত্যি দেখা গেল। রাজাকারের দলটির চারজনকে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে তারা চলে গেল। বাঁধা দেয়ার কেউ ছিল না। যাওয়ার সময় বলে গেল বাজার রোজ বসবে। তারা একটি নৌকা করে চলে গেল। নৌকাটিতে আরও অন্তত ছয় জন অপরিচিত ছেলে বসেছিল। আগে কেউ তেমন লক্ষ্য করেনি। দলটি চলে যাওয়ার পর বাজার জুড়ে উল্লাস। যেন দেশে আর রাজাকার বা পাকিস্তানী মিলিটারী কেউ নাই। কেরোসিন লবণ দুটোই দিবাকর পেয়েছে। তবে ভিড়ের ধাক্কাধাক্কিতে তার এই দশা। দশা যাই হউক মনে মনে সে খুব খুশি। নিয়তি লক্ষ্য করলো তার চোখে মুখে বেশ উত্তেজনা।
৩৯
থানা লেবেল পর্যন্ত মিলিটারী ক্যাম্প রাখা যাচ্ছে না। তুলে দেয়া হচ্ছে। কারণ পরিকাঠামোর অভাব। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে ফোর্সের সংখ্যা কমাতে হচ্ছে। ফোর্স যাচ্ছে বর্ডারে। সময় বেশি হাতে নেই। ইন্ডিয়া তাদের আর্মিকে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের তিন দিক ঘিরছে বেশ কিছুদিন যাবত। আমাদের মাথামোটা উপরওলারা আছে শুধু পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে। এই অংশে আর্মিরা কী অবস্থায় কাজ করছে তা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। ইন্ডিয়া বঙ্গোপসাগর অবরোধ করে ফৌজ আনার সহজ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। সাধারণ সৈন্যরা না পেলেও অফিসাররা বিপদের গন্ধ পেয়ে গেছেন। ইন্ডিয়া আক্রমণ করছে না। করলে মুষ্কিল হয়ে যাবে। আক্রমণ না করেই যা করছে, ট্রেনিংপ্রাপ্ত সশস্ত্র মুক্তিবাহিনির গেরিলাদের ঠেলা সামলানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। দেশের অভ্যন্তরে এত কঠিন মোকাবেলার কথা ভাবা হয়নি। মিলিটারীদের মহকুমা পর্যায়ে সরিয়ে নিয়ে সংহত করার চেষ্টা হচ্ছে। দেশটার গ্রাম অংশের আপাত নিরীহ মানুষদের প্রতিরোধ ভাঙা প্রায় আসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। ফলে ল এন্ড অর্ডার রেস্টোর করা যাচ্ছে না। পুলিশ ছাড়া থানাগুলোতে বসে সিভিল প্রশাসন চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে মিলিটারী। তার ফল এখন চারদিকে ছোট ছোট মুক্তাঞ্চল, মুক্তিদের নিয়ন্ত্রণে। অল রাবিশ—কথাটা অফিসারদের মদের টেবিলে ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে।
রেডিও পাকিস্তান মারফত জানানো হচ্ছে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা অটুট। ইন্ডিয়ার সন্ত্রাসী এবং গুপ্তচরদের অনুপ্রবেশ বন্ধে সেনাবাহিনী সজাগ রয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত বাহিনি যে কোন আক্রমণের জবাব দিতে প্রস্তুত। ফিল্ড মার্শাল ইন্ডিয়াকে এই বলে সতর্ক করে যাচ্ছেন যে প্রতিবেশী দেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপের ফল মারাত্মক হতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সন্তোষজনক। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী বেসরকারী সংস্থা স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। ---হালার পুতেরা আর কত বানায়া বানায়া মিছা কথা কয়---রাখত তর রেডু পাকিস্তান—ধর জয় বাংলা---হুনি তারা কিতা কয়--। এভাবেই রেডিও শ্রোতার এক আধটা আসর সন্ধ্যার দিকে জমে উঠছে এখন আমিত্তিপুর বা শ্রীমন্তপুরে।
মা বাবা চলে যাওয়ার পর যতটা ভয় সঞ্চারিত হয়েছিল মনে মনে , ততটা এখন আর নেই। সাবিত্রীর মায়ের সাহায্যে নিয়তি সংসার কিছুটা গুছিয়ে নিতে পেরেছে। বড় ব্যাপার, কেন জানি দিবাকর খুব সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নিয়তি তার শরীর নিয়ে খুব সাবধানে চলা ফেরা করে। এখন ন’মাস অতিক্রান্ত। ধান কাটার কাজও প্রায় শেষ। এ নিয়ে সামনে কাজ আছে। নিজেদের ভাগের ধান শুকানো, সিদ্ধ করা, শেষে ঢেঁকিতে কুটা। নিয়তি এর কোনটাই করতে পারবে না। এই সময় কাজের লোক পাওয়া মুষ্কিল। তবু দিবাকর চেষ্টায় আছে। শেষে সালাউদ্দিন চাচার শরণ নিতে হবে বোঝা যাচ্ছে।
একমাস আগের পরিস্থিতিও এখন আর নেই। কেন্দুয়া আর মোহনগঞ্জে পর পর দুটো বড় আঘাত হেনে মুক্তিবাহিনি এই অঞ্চলটাকে কিছুটা স্বাভাবিকতা দিতে পেরেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব থাকলেও স্থানীয় বাজার এখন প্রতিদিনই বসছে। এই সব খবর চাপা থাকে না। বাঘমারাতেও পৌঁছেছে। পরিবারের মহিলা শিশু বৃদ্ধদের না নিয়ে গ্রামের দু একজন কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও গ্রামে ফিরে এসেছে। তাদের কাছে ঐপারের খবরাখবর পাওয়া গেছে। অবশ্য রবীন্দ্রবাবুর খবর পাওয়া যায়নি। হয়তো তারা ক্যাম্পে আর নেই। নিয়তি খুব বেশি চিন্তা করছে না। খবর পেয়ে হয়তো বড়দাদা এসে তাদের নিয়ে গেছে শিলিগুড়িতে।
অল্প অল্প শীত পড়ে গেছে। মানুষের ঘরে এখন অন্তত চালটা মজুত আছে। এইসব সময় উৎসব পার্বণের সময়। কিন্তু সে-সব কথা এখন কেউ ভাবে না। এর মধ্যে আবার নতুন উপসর্গ তৈরি হয়েছে মাঝে মাঝে আকাশে খুব দ্রুত গতির এরোপ্লেনের ওড়াওড়ি। কেউ কেউ বলে এসব ফাইটার বিমান। বোমা ফেলে মানুষ মারে। কান ফাটানো আওয়াজ শুনে মাঝে মাঝে বুক কাঁপে। কিন্তু এখনও বোমা ফেলেনি। প্লেনের শব্দ শুনলেই বাচ্চাকাচ্চারা ভীষণ দৌড়াদৌড়ি করে। বারণ করলেও শোনে না। হাতের কাছে পেলে দু ঘা পিঠে বসানো যায়।কিন্তু নিয়তি এখন অনেকটাই শ্লথ হয়ে পড়েছে। অনেকসময় আবার ভালোও লাগে যে বাচ্চাদের কলরবে অন্তত প্রাণের স্পন্দনটাতো শোনা যায়।
দিবাকর একদিন সন্ধ্যেবেলায় হাতে একটা রেডিও নিয়ে বাড়িতে আসে। নিয়তি অবাক। কার কাছ থেকে আনলো বা পয়সা কোথায় পেল, কিছুই বলছে না। পাশের বাড়ির করিমকে নিয়ে একমনে কানে দিয়ে সে বারান্দায় বসে খবর শুনছে আর মাঝে মাঝে খুশি উপচে পড়ছে তাদের কথাবার্তায়। কীসের খুশি সেটা জানা গেল রাতে খেতে বসে । ইণ্ডিয়া পাকিস্তানের যুদ্ধ লেগে গেছে। এইবার ব্যাডারা বুঝব কত ধানে কত চাল। যুদ্ধটা আমাদের এই দিকে লাগেনি। লেগেছে পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে। নিয়তি একমনে দিবাকরের উচ্ছ্বাস পূর্ণ কথা শুনে যাচ্ছিল। হঠাৎ মাঝ খানে জিজ্ঞেস করে বসলো--রেডিয়ো কই পাইলা?
১৯৬৫ সনেও একবার যুদ্ধ লেগেছিল। সেবারও যুদ্ধের খবর শোনার জন্য রেডিওর খুব প্রচলন হয়েছিল। পাশের বাড়ির কাকাদের এক রেডিওতে সারা গ্রামের মানুষ খবর শুনতে আসতো। কিন্তু ঐ যুদ্ধটা এই দিকে হয়ই নাই। বল বিক্রম প্রদর্শনের জন্য সামান্য গোলাগুলিও শোনা যায়নি । কোথায় কোন মুল্লুক পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে ঐসব হয়েছে। কিন্তু এবারের বিষয়টা আলাদা। খবরাখবর শুনে দিবাকর নিশ্চিত হয়েছে যে এবার এদিকেই আসল যুদ্ধটা হবে। কেননা একটা যুদ্ধত দেশের ভেতরে চলছেই। সেইটা আরো জোর কদমে শুরু হবে এবার। এসব নিয়ে দিবাকরের এত কথা,এত চিন্তা দেখে নিয়তি ভাবে লোকটার হলোটা কী। আজকাল বাড়িতেও খুব কমই থাকে। এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি , নানা জনের সঙ্গে কথাবার্তা, তাতেই তার সময় ব্যয় হয়। এইসব করে অবশ্য সে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছে । এই কারণে নিয়তি মনে মনে আশ্বস্থও বোধ করে। রেডিওর ব্যাপারে আরো দু একবার জিজ্ঞেস করার পর সে জানালো যে পশ্চিমপাড়ার দোলনের কাছ থেকে রেডিয়ো কিনেছে। ধানের বিনিময়ে। দোলন বাঘমারা থেকে ফিরে এসেছে। আসার সময় সে দুটো রেডিও এনেছিল। একটা সালাউদ্দিন চাচা নিলো আর একটা সে। সালাউদ্দিন চাচাই বললেন যে—লইয়া লও মন চাইলে—কামে লাগব। ধান উঠার সময় গ্রামের মানুষের একটুআধটু বিলাসিতার সখ হয়। নিয়তি দিবাকরের কথা শুনে মনে মনে হাসে। ভাবে যে এখনও কত ছেলেমানুষ রয়ে গেছে।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.