নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:১২


লিংকপ দা তি ক]


এই ভিড়ের রহস্য আর প্রকৃতি জানে সুবোধ। সুবোধ মাকাল ফল। বস্তির অনেকে তাকে আড়ালে তাই ডাকে।কারণ বস্তির অনেকের চোখে সে দেখতে সুন্দর,কিন্তু কোনো কাজ করে না।বসে বসে ঊর্মিলার রোজগার খায় । ঊর্মিলার চারটে ছানাপোনা মানুষ করে।
সন্ধ্যেবেলা এই মজা ড্রেনের ধারে বস্তির গা-লাগা একটা চালার তলায় কুপি, উনু্‌ন,কড়াই আর তেলেভাজার সাজ সরঞ্জাম সাজাতে দেখলে মনে হতে পারে যেন সুবোধ নিজেই বসবে একটু পরে। কিন্তু না, সব রেডি হওয়ার পর বস্তির আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে ঊর্মিলা। শুরু হয় তার দোকান। কেনা বেচা। সুবোধ আনাড়ি। সাহায্য বলতে এটুকুই পারে সে।
সুবোধের সঙ্গে ঊর্মিলার আলাপ বছরখানেকের। হলদিবাড়ির লোকাল ট্রেনে।সবজি লোকাল। হাটের শেষে ফেরার সময়।সেই কোন সকালে লোকাল ধরে হলদিবাড়ি যাওয়া। আবার এই রাতের লোকালে শিলিগুড়ি ফেরা।সবজি আনতে এই ট্রেনে মেয়েরাই বেশি যায়। ফেরার সময় যেহেতু রাত হয়ে যায় তাই যেন সব একসাথে এক কামরায় পাশাপাশি। বয়সের বিভিন্নতার কারণে ফেরার সময় তাই হুল্লোড় আর গল্পগাছাও বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।
যেদিন সুবোধের সঙ্গে ঊর্মিলার আলাপ সেদিন একটা ব্যতিক্রমই ঘটেছিল তাদের কামরায়।হঠাৎ মোটগাঁট ছাড়া এই সোন্দরপানা ছেলেটা তাদের মধ্যে কেন? কামরাটাত সবজিওলাদের। বাকিগুলোতে বাবুরা সব । ওরতো ওগুলোতেই বসার কথা। আঃ মরণ!
মুখচোখে কেমন একটা অচেনা দেখার বিহ্বল-ভাব। কিছুটা হতচকিতও। কামরার মেঝে ভর্তি মোটগাঁটএর মধ্যে কোন ক্রমে দাঁড়ানো। একসময় ঊর্মিলার চোখ পড়াতে ঠেলে ঠুলে সে-ই ছেলেটাকে বসতে দিল নিজের পাশে। আলাপে বুঝতে পারলো জিনিস ওপারের। হুজুর সাহেবের মেলার সুযোগে গলে গেছে এপারে। কোন ঝামেলা হয়নি। সদ্য পার হয়ে আসা ভাষা আর চেহারার পালিশে সামনের সিটে বসা উঠতি ছুঁড়িগুলানের কী মষ্করা! ছেলেটি পরিষ্কার বুঝতে পারছে কিনা কে জানে—তবু এই সব লক্ষ্য করে ঊর্মিলা ওদের মৃদু ধমকায়।

বগির সব ছেলে মেয়ে বুড়োবুড়ির অলিখিত নেত্রী ঊর্মিলা। গলায় ও গতরে তার বল আছে। এই লাইনের বদ-মতলবী লোকজন তাকে ভয় পায়। কিন্তু এখন তার ধমকে ছুঁড়িগুলান যেন দমেও দমে না। ফেরার পথে আজ আর কেউ ঝিমুচ্ছে না। গুজগুজ ফুসফুস চলছেই। ঊর্মিলা বুঝতে পারে এসবের কারণ এই ছেলেটি। এরমধ্যেই কেউ আবার ইশারা করে অন্যরকম।ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখালে পাওয়া যাবে নগদ টাকা। কিন্তু মাল যে খোদ ঊর্মিলার। সাহস হয় না। বেইমানি হয়ে যাবে। ভয়ও আছে। জিনিশ যেহেতু ঊর্মিলার, ঊর্মিলা না চাইলেত আর হয় না। এই লাইনে এ নিয়ম নেই। ইস্টিশন কাছাকাছি হতেই যে যার নিয়ম মত হৈ চৈ শুরু করে দিল। সারা দিনের ধকলের পর এই সময় কারোর আর তর সয় না। বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে সবার। আর সেই তাড়ায় সবাই যেন অচেনা ছেলেটিকে ভুলেও যায়। প্ল্যাটফর্ম আসতেই যে যার মত বাড়ির দিকে দে ছুট। পারলো না শুধু ঊর্মিলা। এতক্ষণ আলাপের পর ছেলেটিকে কিছু না বলে যেন ঊর্মিলা নড়তে পারলো না।

ইতিমধ্যে ছেলেটার মুখ থেকে যা টুকটাক কথা শোনা গিয়েছিল তাতে বোঝা গিয়েছিল যে তার যাওয়ার সেরকম কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই। তবে কলকাতার কাছাকাছি কোথায় যেন তার মানুষজন থাকে। সবই ভাসা ভাসা কথা। তার আগে রাতটা সে ইস্টিশনেই কাটাতে চায়। কিন্তু ঊর্মিলা জানে যে এই ইস্টিশন চত্বরটা ভাল নয়। কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা ছাড়া এখানে রাতে থাকতে গেলে পুলিশের ঝামেলা আছে। কোথায়ই বা যাবে । এক যেতে পারে শহরের কোন হোটেলে।

কিছু সময়ের আলাপ পরিচয় ঊর্মিলার এখন বেশ ভারি ঠেকছে। মালপত্র প্ল্যাটফর্মে রেখে সে দাঁড়িয়ে আছে। পারছে না অন্যদের মত বিনা ভূমিকায় চলে যেতে। ছেলেটাও কোনদিকে যাচ্ছে না। তার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে শুধু এদিক ওদিক দেখছে। কতই বা বয়স। পঁচিশ ছাব্বিশ, না আরো কম। সঙ্গে ব্যাগপত্তর নেই কিছু। চোখ মুখে উৎকন্ঠা, ধকলের ছাপ। খারাপ লোকের পাল্লায় পড়লে বিপদে পড়বে। ঊর্মিলার এত সময় থাকে না ট্রেন থেকে নামার পর। এখান থেকে আবার রিক্সা নিয়ে তার যেতে হয় কিছুটা পথ। এদিকে সারাদিন ঘরে ছানাপোনাগুলো একলা আছে প্রায়। এই সময় তার মায়ের মন খুব ছটফট করে উঠে। নীরবতা ভেঙ্গে ঊর্মিলাই জিজ্ঞেস করে বসলো—আপনি কোন দিকে যাবেন—রাত ত অনেক হলো। কলকাতা যাওয়ার গাড়ি আজ আর নেই। আবার কাল সন্ধ্যেবেলা। যদি হোটেলে যেতে চান তা হলে এখান থেকে রিক্সা করে যেতে হবে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে। আমিও রিক্সা নিয়ে যাব—কিন্তু আমার রিক্সায় জায়গা হবে না— মালপত্র অনেক। এতগুলো কথার পর ছেলেটি শুধু বললো—হোটেলে যাওয়ার অসুবিধা আছে। কী মুষ্কিল, মাথা নিচু করে কথাটা বলে ঊর্মিলাকে যেন আরো বিপদে ফেলে দিল। এদিকে প্ল্যাটফর্মও জনশূন্য হতে শুরু হয়েছে। ঊর্মিলা আর কিছু না ভেবে বললো—ধরেনত মালটা মাথায় তুলে দেন। মাথায় একটা বিড়া লাগিয়ে ঊর্মিলা মালের ঝুড়িতে হাত লাগাতে দেখা গেল ছেলেটিও হাত লাগিয়েছে। ঝুড়িটা মাথায় তুলে দিয়ে বাকি দুটো ব্যাগ আর ঊর্মিলার হাতে না দিয়ে ছেলেটি নিজের দু’হাতে নিয়ে নিল। বিনা বাক্যে তারা হাঁটতে শুরু করলো স্টেশনের বাইরে যাওয়ার জন্য । (ক্রমশ:)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.