নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:২৪

লিংক--প দা তি ক/২



মালের ঝুড়ি মাথায় ঊর্মিলা আগে আগে, পেছনে সুবোধ। মাথায় একটা ভার থাকা সত্ত্বেও ঊর্মিলা ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তাটা তার মাথা থেকে দূর পারছে না। তাতে ভার যেন আজ বেশি মনে হচ্ছে। আচ্ছা ফ্যাসাদ হলোতো! কী মতলব বোঝাও যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গেই তো দেখি চলছে। এসব ভাবতে ভাবতে তারা রিক্সা স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালো। ঊর্মিলা মাথার বোঝা নামাতে চাইছে না। একবারে রিক্সায় নামাতে চাইছে। ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বোঝাটা নামানোর জন্য। ঊর্মিলা বারণ করলো। উল্টে জিজ্ঞেস করলো আপনি কী করবেন—যাবেন কোথায়—কিছু ভাবছেন? উত্তরওতো দেখি দ্যায় না। এদিক ওদিক তাকায়—কখনো মাথা নিচু করে কী ভাবে। কী ভাবে কে জানে! উপায়ান্তর না দেখে ঊর্মিলা একটা রিক্সা ডেকে মাথার বোঝা নিজেই রিক্সার ফুটবোর্ডে নামিয়ে রাখলো। এবার কিছুটা বিরক্তও ঊর্মিলা। এতক্ষণ একটা মান্য বাংলায় কথপোকথন চালাচ্ছিল। বিরক্তির কারণে সে কিছুটা আত্মবিস্মৃত হয়ে এবার তার মুখ দিয়ে তার নিজের ভাষা বেরিয়ে এলো।–কিছু কইলে কন, আর দেরি করন যাইতো না। উত্তরে মিন মিন করে ছেলেটি যা জানালো তাতে সে আজ রাতের জন্য আশ্রয় চাইছে। শুনে ঊর্মিলা আরো চাপে পড়ে গেল মনে হলো। কিন্তু এখানে আর কথা বাড়ানো নিরাপদ মনে না হওয়ায় ঊর্মিলা তাকে তার রিক্সাতেই উঠে আসতে বললো। বইতে কষ্ট হইবো, তবু উডেন আর কি করন যাইবো অহন। ছেলেটি উঠে ঊর্মিলার পাশে বসতে বসতেই রিক্সাওলা জানিয়ে দিলো পাঁচটাকা ভাড়া বেশি দেওন লাগবো। ঊর্মিলার কাছে পাঁচ টাকা যথেষ্ট টাকা। কিন্তু রাত বিরেতে তর্ক করা বৃথা।কী উটকো ঝামেলায় পড়া গেল—ভাবতে ভাবতে যখন তারা চলছিল তখনই ছেলেটি এতক্ষণ পরে একটা স্পষ্ট কথা বললো যে তার কাছে কিছু ইন্ডিয়ান টাকা আছে। ভাড়া দিতে অসুবিধে হবে না। কিন্তু ততক্ষণে ঊর্মিলায় মাথায় ভাড়া নিয়ে আর কোন ভাবনা ছিল না। গেলে আরো পাঁচ টাকা না হয় গচ্চা যেতো। ভাবনাটা হলো এই ছেলেকে এখন রাখে কোথায়। তাদের বস্তিও আর এক রেল ইস্টিশন সংলগ্ন। সেই জন্য তার নামই হয়েছে রেলবস্তি। স্টেশনের নাম টাউন স্টেশন। নামেই স্টেশন । ট্রেনের তেমন যাওয়া আসা নেই। এক সময় নাকি ছিল। স্টেশন প্ল্যাটফর্মে রাত কাটানোর জন্য পাঠানো যায় । কিন্তু সেখানে কিছু ভিখারি ছাড়া আর কে থাকে—রাত বিরেতে সেখানে রাতের পুলিশ আর গুন্ডা বদমাইশদের নানা কুকীর্তির কথা প্রায় দিনই শোনা যায়। ছেলেরতো সেখানেও বিপদ হতে পারে। কুটুম পরিচয় দিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে তোলার কথা যে ভাবে নি তা না। একজন মানুষের তার ঘরে থাকার মতো জায়গা আছে ঠিকই। একটা রাত্তিরের ব্যাপার। কিন্তু এইরকম চেহারার একজনকে কীভাবে রাখে।এই চেহারাতো তাদের মতো পোড়খাওয়া নয়। কেমন আলগা আলগা ঠেকে। রাত্তিরটা না হয় কাটানো যায় । কিন্তু সকালে ? যে দেখবে সেইই প্রশ্ন করবে। ঊর্মিলাকে উত্তরও দিতে হবে।

বাস্তব অভিজ্ঞতা আর ঊর্মিলা তেমন পৃথক কিছু নয়। প্রতিমুহুর্তে তার টান টান জীবন। সংসার ছেড়ে অনাদির সেই চলে যাওয়ার পর থেকে ঘরে চার চারটে বাচ্চা নিয়ে তার দম ফেলার সময় কোথায়। ভাবলে এতদিন পরেও ঘেন্নায় রাগে দুঃখে মুখে থুতু আসে তার। কীভাবে শিকারী বেড়ালের মতো মাগীটা অনাদির ঘাড় কামড়ে নিয়ে চলে গেলো। মাগী বলতে পড়োশি মালতী। নিজের ঘর পুড়িয়ে অন্যের ঘরে আগুন লাগিয়ে চলে গেল। চলে গেল বলতে হাওয়া হয়ে গেল। আর পুরুষ অনাদি ঊর্মিলার বুকে সারা জীবন ধরে পোড়ার মত আগুন রেখে গেল। এসব আজকাল আর ভাবে না। কখনো ভাবলে ঊর্মিলার সারারাত জাগতে হয়। শুধু জ্বালা ছাড়া এই যন্ত্রণার আর কোন মাত্রা থাকেনা তখন। একমাত্র ছানাপোনাগুলোর দিকে তাকিয়ে এই সব আগুন তার ধীরে ধীরে গা-সওয়া হয়ে গেছে । কিন্তু আজ এই রাত্রির প্রথম প্রহরে সমাজ সংসারে এত যুদ্ধ করা ঊর্মিলা বেশ মুষড়েই পড়লো। বস্তির সামনে এসে রিক্সা থামলো। দুজনে নেমে ধরাধরি করে মালও নামালো। ভাড়া দেয়ার সময় ছেলেটি উর্মিলাকে ভাড়া দিতে বাঁধা দিয়ে নিজেই সম্পূর্ণ ভাড়াটা মিটিয়ে দিল। রাত হয়ে গেছে। আধা অন্ধকার জায়গাতে তারা আবার ধরাধরি করে মাল নিয়ে তুললো ঊর্মিলার ঘরে। ঊর্মিলা ঘরে ঢোকার পর স্বাভাবিক ভাবে তার ছানাপোনারা তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো। এটাই হয়। সারাদিন পর শুধু মায়ের দেখা পেয়ে তারা তৃপ্ত হয় না । মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের গায়ের গন্ধ নিয়ে যেন তারা একটা আশ্বাস পায়। তাদের মুখে কথা ফোটে। তারা খানিক লাফালাফি করে । তাদের জন্য আনা লেবেঞ্চুসের প্যাকেটটা নিয়ে একসময় তারা শান্ত হয়ে কচরমচর করে তা খেতে শুরু করে। ওদের হাত থেকে নিস্তার পেতে আজ তাই ঊর্মিলা প্যাকেটটা তাড়তাড়িই বাড়িয়ে দেয়। দরজায় দাঁড়িয়ে মন্ত্র মুগ্ধের মতো এতক্ষণ সুবোধ গোটা ঘটনাক্রম দেখে যাচ্ছিলো। হঠাৎ ঊর্মিলার ডাকে হুশ ফিরলো।– দাঁড়াইয়া রইলেন যে, ঘরে ঢোকেন—রাতে আর কই যাইবেন—দিন কালও ভাল না—কেমন মানুষ আপনে—বলি এই ভাবে কেউ বাড়ির বাইরে যায়? যাউক, রাত হইছে—যা ভাবার কাইল ভাইবেন—ঘরে ঢুইক্যা বসেন—বসার কিছু নাই—এই চওকিতেই বসেন। কচরমচর শব্দ থেমে গেছে। বাচ্চাগুলো হা করে তাদের মা আর আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে আছে। (ক্রমশঃ)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬

গেম চেঞ্জার বলেছেন: নিম্নবিত্তের জীবন নিয়ে লিখছেন!! বেশ ভাল। মোট কত পর্ব হতে পারে?

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২

রাজা সরকার বলেছেন: লেখাটি সম্পূর্ণ হয়েছে আগেই।ব্লগে দেয়ার জন্য পর্ব ভাগ করতে হচ্ছে। অনুমান ২০ পর্বের কাছাকাছি হবে মনে হয়।
লেখাটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.